ঢাকা ০৩:২১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১১ জুন ২০২৫

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বামীকে আটকে স্ত্রীকে ধর্ষণ,ছাত্রলীগ নেতাসহ গ্রেপ্তার চার

  • আপডেট সময় : ০১:১৩:০১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • ১২২ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বামীকে আবাসিক হলে আটকে স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলায় ছাত্রলীগ নেতাসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সাভার মডেল থানার পুলিশ ও আশুলিয়া থানার পুলিশ যৌথভাবে এ ঘটনায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গত শনিবার দিবাগত রাতে গ্রেপ্তার করে।
ভুক্তভোগী নারীর স্বামী আশুলিয়া থানায় ছয়জনকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্র ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান, একই বিভাগের সাগর সিদ্দিকী ও হাসানুজ্জামান এবং উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাব্বির হাসান। পলাতক আছেন ভুক্তভোগীর পূর্বপরিচিত মো. মামুনুর রশিদ এবং স্বামীকে আটকে রাখায় সহায়তা ও মারধর করা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মুরাদ।
গতকাল রোববার দুপুর ১২টার দিকে আশুলিয়া থানায় সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানিয়েছেন সদ্য পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি পাওয়া ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস ও ট্রাফিক উত্তর বিভাগ) মো. আবদুল্লাহিল কাফী।
সংবাদ সম্মেলনে মামলায় উল্লিখিত ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আবদুল্লাহিল কাফী বলেন, ভুক্তভোগী নারী ও তাঁর স্বামী আশুলিয়ায় একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। পূর্বপরিচয়ের সূত্র ধরে একই বাসায় পাশাপাশি কক্ষে ভাড়া থাকতেন মামুনুর রশিদ। গত শনিবার মুঠোফোনে ভুক্তভোগী ওই নারীর স্বামীকে মামুন জানান, তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলে তাঁর পরিচিত মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে কিছুদিন থাকবেন। পরে তিনি ওই ব্যক্তিকে ক্যাম্পাসে এসে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে বলেন। ভুক্তভোগীর স্বামী ক্যাম্পাসে এলে হলের একটি কক্ষে মুস্তাফিজ ও মুরাদের সঙ্গে পরিচিত হন তিনি। একপর্যায়ে মামুন ভুক্তভোগীর স্বামীকে জানান, সাভারের একটি ইলেকট্রনিকসের দোকানে তাঁরা কিছু টাকা পাবেন, তবে দোকানদার টাকা দিতে চাচ্ছেন না। ওই টাকার বিনিময়ে ভুক্তভোগীর স্বামীকে বাসার জন্য টিভি, ফ্রিজসহ অন্যান্য আসবাব নিতে বলেন এবং সমপরিমাণ টাকা মামুনকে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, কিছুদিন ক্যাম্পাসে থাকবেন বলে ভুক্তভোগীর স্বামীকে মামুনের কাপড় নিয়ে ক্যাম্পাসে আসার জন্য স্ত্রীকে বলতে বলেন। স্বামী তাঁর স্ত্রীকে ক্যাম্পাসে ডেকে আনেন। রাত ৯টার দিকে ওই নারী ক্যাম্পাসে আসেন। ভুক্তভোগীর স্বামী, মামুন, মুস্তাফিজ ও মুরাদ মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনে আসেন। একপর্যায়ে মুরাদ ভুক্তভোগীর স্বামীকে হলের এ ব্লকের ৩১৭ নম্বর কক্ষে নিয়ে বেঁধে ফেলেন ও মারধর করেন। পরে মুস্তাফিজ ও মামুন ওই নারীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল সংলগ্ন বোটানিক্যাল গার্ডেনের পাশের জঙ্গলে নিয়ে ধর্ষণ করেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর ওই নারী ও তাঁর স্বামীকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ঘটনার বিচারের দাবিতে প্রথমে তাঁরা আশুলিয়া থানায় এবং পরে সাভার মডেল থানায় যান। এ ঘটনায় সাভার মডেল থানা ও আশুলিয়া থানার পুলিশ যৌথভাবে তদন্ত শুরু করে বলে জানান মো. আবদুল্লাহিল কাফী। তিনি বলেন, আসামিদের পালিয়ে যাওয়ায় সহায়তা করার অভিযোগে তিনজনকে ক্যাম্পাস থেকে আটক করা হয়। সাভার থানা এলাকা থেকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর রহমানকে আটক করা হয়। গতকাল রোববার সকালে মামলা হলে তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পলাতক আসামি মুরাদ ও মামুনকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। এ বিষয়ে সাভার মডেল থানার ওসি (তদন্ত) আব্দুর রাসিক বলেন, ভুক্তভোগী থানায় উপস্থিত হয়ে ঘটনা জানিয়েছেন। মামলা হয়েছে। চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
প্রতিবাদে উত্তাল জাবি ক্যাম্পাস: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) মীর মশাররফ হোসেন হলে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করেছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। গতকাল রোববার দুপুর ১২টায় এই অবরোধ শুরু করেন তারা। অবরোধের একপর্যায়ে উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করেন আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এ সময় উপাচার্যের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বাগযুদ্ধ হয়। শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের কাছে তিনটি দাবি উত্থাপন করেন। সেগুলো হলো, একঘণ্টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়কে বাদী হয়ে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা করা, তিন দিনের মধ্যে হলগুলোতে থাকা অছাত্রদের বের করতে হবে এবং ধর্ষক ও তার সহযোগীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। এসব দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জরুরি সিন্ডিকেট সভা করে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দেন। কিন্তু এ প্রস্তাব নাকচ করে মামলা করার পর জরুরি সিন্ডিকেটে বসার প্রস্তাব করেন শিক্ষার্থীরা। একঘণ্টার মধ্যে মামলা করা না হলে সিন্ডিকেট সভা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেন তারা। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত প্রশাসনিক ভবনের সামনে আন্দোলন চলছিল।
ক্ষুব্ধ জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, নিরপেক্ষ তদন্ত ও দোষীদের শাস্তি দাবি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, জাবিতে এর আগেও কয়েকবার ধর্ষণ, যৌন নিপীড়নের নজিরবিহীন, নিকৃষ্ট এবং ন্যক্কারজনক ঘটনা সারা দেশকে হতবাক করেছিল। এ ঘটনায় দ্রুত, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ তদন্তপূর্বক দোষীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, যাতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা যায়। গতকাল রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে মানবাধিকার কমিশনের উপ-পরিচালক ফারহানা সাঈদ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক দম্পতিকে ডেকে এনে স্বামীকে আবাসিক হলে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ নেতাসহ দুজনের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাফিজসহ ৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বারবার একই স্থানে এমন ঘটনার পেছনের কারণ খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। অভিযুক্তকে দ্রুতসময় গ্রেপ্তার করায় কমিশন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সাধুবাদ জানাই। তবে তিনি বলেন, দ্রুত, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ তদন্তপূর্বক ছাত্র নামের এমন কুলাঙ্গারদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে যাতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা যায়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এঘটনায় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ নারীর জন্য নিরাপদ করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আহ্বান জানায় কমিশন।”

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বামীকে আটকে স্ত্রীকে ধর্ষণ,ছাত্রলীগ নেতাসহ গ্রেপ্তার চার

আপডেট সময় : ০১:১৩:০১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

প্রত্যাশা ডেস্ক : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বামীকে আবাসিক হলে আটকে স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলায় ছাত্রলীগ নেতাসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সাভার মডেল থানার পুলিশ ও আশুলিয়া থানার পুলিশ যৌথভাবে এ ঘটনায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গত শনিবার দিবাগত রাতে গ্রেপ্তার করে।
ভুক্তভোগী নারীর স্বামী আশুলিয়া থানায় ছয়জনকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্র ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান, একই বিভাগের সাগর সিদ্দিকী ও হাসানুজ্জামান এবং উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাব্বির হাসান। পলাতক আছেন ভুক্তভোগীর পূর্বপরিচিত মো. মামুনুর রশিদ এবং স্বামীকে আটকে রাখায় সহায়তা ও মারধর করা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মুরাদ।
গতকাল রোববার দুপুর ১২টার দিকে আশুলিয়া থানায় সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানিয়েছেন সদ্য পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি পাওয়া ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস ও ট্রাফিক উত্তর বিভাগ) মো. আবদুল্লাহিল কাফী।
সংবাদ সম্মেলনে মামলায় উল্লিখিত ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আবদুল্লাহিল কাফী বলেন, ভুক্তভোগী নারী ও তাঁর স্বামী আশুলিয়ায় একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। পূর্বপরিচয়ের সূত্র ধরে একই বাসায় পাশাপাশি কক্ষে ভাড়া থাকতেন মামুনুর রশিদ। গত শনিবার মুঠোফোনে ভুক্তভোগী ওই নারীর স্বামীকে মামুন জানান, তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলে তাঁর পরিচিত মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে কিছুদিন থাকবেন। পরে তিনি ওই ব্যক্তিকে ক্যাম্পাসে এসে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে বলেন। ভুক্তভোগীর স্বামী ক্যাম্পাসে এলে হলের একটি কক্ষে মুস্তাফিজ ও মুরাদের সঙ্গে পরিচিত হন তিনি। একপর্যায়ে মামুন ভুক্তভোগীর স্বামীকে জানান, সাভারের একটি ইলেকট্রনিকসের দোকানে তাঁরা কিছু টাকা পাবেন, তবে দোকানদার টাকা দিতে চাচ্ছেন না। ওই টাকার বিনিময়ে ভুক্তভোগীর স্বামীকে বাসার জন্য টিভি, ফ্রিজসহ অন্যান্য আসবাব নিতে বলেন এবং সমপরিমাণ টাকা মামুনকে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, কিছুদিন ক্যাম্পাসে থাকবেন বলে ভুক্তভোগীর স্বামীকে মামুনের কাপড় নিয়ে ক্যাম্পাসে আসার জন্য স্ত্রীকে বলতে বলেন। স্বামী তাঁর স্ত্রীকে ক্যাম্পাসে ডেকে আনেন। রাত ৯টার দিকে ওই নারী ক্যাম্পাসে আসেন। ভুক্তভোগীর স্বামী, মামুন, মুস্তাফিজ ও মুরাদ মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনে আসেন। একপর্যায়ে মুরাদ ভুক্তভোগীর স্বামীকে হলের এ ব্লকের ৩১৭ নম্বর কক্ষে নিয়ে বেঁধে ফেলেন ও মারধর করেন। পরে মুস্তাফিজ ও মামুন ওই নারীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল সংলগ্ন বোটানিক্যাল গার্ডেনের পাশের জঙ্গলে নিয়ে ধর্ষণ করেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর ওই নারী ও তাঁর স্বামীকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ঘটনার বিচারের দাবিতে প্রথমে তাঁরা আশুলিয়া থানায় এবং পরে সাভার মডেল থানায় যান। এ ঘটনায় সাভার মডেল থানা ও আশুলিয়া থানার পুলিশ যৌথভাবে তদন্ত শুরু করে বলে জানান মো. আবদুল্লাহিল কাফী। তিনি বলেন, আসামিদের পালিয়ে যাওয়ায় সহায়তা করার অভিযোগে তিনজনকে ক্যাম্পাস থেকে আটক করা হয়। সাভার থানা এলাকা থেকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর রহমানকে আটক করা হয়। গতকাল রোববার সকালে মামলা হলে তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পলাতক আসামি মুরাদ ও মামুনকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। এ বিষয়ে সাভার মডেল থানার ওসি (তদন্ত) আব্দুর রাসিক বলেন, ভুক্তভোগী থানায় উপস্থিত হয়ে ঘটনা জানিয়েছেন। মামলা হয়েছে। চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
প্রতিবাদে উত্তাল জাবি ক্যাম্পাস: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) মীর মশাররফ হোসেন হলে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করেছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। গতকাল রোববার দুপুর ১২টায় এই অবরোধ শুরু করেন তারা। অবরোধের একপর্যায়ে উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করেন আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এ সময় উপাচার্যের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বাগযুদ্ধ হয়। শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের কাছে তিনটি দাবি উত্থাপন করেন। সেগুলো হলো, একঘণ্টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়কে বাদী হয়ে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা করা, তিন দিনের মধ্যে হলগুলোতে থাকা অছাত্রদের বের করতে হবে এবং ধর্ষক ও তার সহযোগীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। এসব দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জরুরি সিন্ডিকেট সভা করে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দেন। কিন্তু এ প্রস্তাব নাকচ করে মামলা করার পর জরুরি সিন্ডিকেটে বসার প্রস্তাব করেন শিক্ষার্থীরা। একঘণ্টার মধ্যে মামলা করা না হলে সিন্ডিকেট সভা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেন তারা। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত প্রশাসনিক ভবনের সামনে আন্দোলন চলছিল।
ক্ষুব্ধ জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, নিরপেক্ষ তদন্ত ও দোষীদের শাস্তি দাবি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, জাবিতে এর আগেও কয়েকবার ধর্ষণ, যৌন নিপীড়নের নজিরবিহীন, নিকৃষ্ট এবং ন্যক্কারজনক ঘটনা সারা দেশকে হতবাক করেছিল। এ ঘটনায় দ্রুত, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ তদন্তপূর্বক দোষীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, যাতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা যায়। গতকাল রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে মানবাধিকার কমিশনের উপ-পরিচালক ফারহানা সাঈদ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক দম্পতিকে ডেকে এনে স্বামীকে আবাসিক হলে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ নেতাসহ দুজনের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাফিজসহ ৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বারবার একই স্থানে এমন ঘটনার পেছনের কারণ খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। অভিযুক্তকে দ্রুতসময় গ্রেপ্তার করায় কমিশন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সাধুবাদ জানাই। তবে তিনি বলেন, দ্রুত, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ তদন্তপূর্বক ছাত্র নামের এমন কুলাঙ্গারদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে যাতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা যায়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এঘটনায় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ নারীর জন্য নিরাপদ করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আহ্বান জানায় কমিশন।”