নিজস্ব প্রতিবেদক: ক্ষমতায় গেলে জনগণের মালিক না হয়ে সেবক হতে কাজ করবে জামায়াতে ইসলামী বলে তুলে ধরেছেন দলটির আমির শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, আগামীতে যারা সংসদ সদস্য বা মন্ত্রী নির্বাচিত হবেন, তারা সরকারি কোনো প্লট গ্রহণ করবে না; শুল্কবিহীন কোনো গাড়িতে চড়বে না। কোনো এমপি এবং মন্ত্রী তার নিজের হাতে টাকা চালাচালি করবে না।
শনিবার (১৯ জুলাই) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সংগঠনটির জাতীয় সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি। দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় তুলে ধরে জামায়াত আমির বলেন, যদি বলেন, আগামীর বাংলাদেশটা কেমন হবে? আমি বলতে চাই, আরেকটা লড়াই হবে। একটা লড়াই হয়েছে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে; আরেকটা লড়াই হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে। দুর্নীতির মূলোৎপাটন করার জন্য যা করা দরকার আমরা তারুণ্য এবং যৌবনের শক্তিকে একত্রিত করে ইনশাআল্লাহ সেই লড়াইয়েও বিজয় লাভ করব। দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ আমরা গড়ব। সোহরাওয়ার্দীর এ জাতীয় সমাবেশের সভাপতি ছিলেন শফিকুর রহমান। সবার শেষে বিকাল ৫টার দিকে বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন তিনি। বক্তব্যের এক পর্যায়ে ৫টা ২৫ মিনিটের দিকে তিনি অসুস্থ হয়ে মঞ্চে লুটিয়ে পড়েন। পরে আবারও উঠে বক্তব্য দিতে গিয়ে পড়ে যান। পরে মঞ্চে বসেই তিনি বক্তব্য শেষ করেন।
সব গণহত্যার বিচার, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনসহ সাত দাবিতে এদিন ঢাকায় এ সমাবেশ করে জামায়াতে ইসলামী। এতদিন ঢাকায় বায়তুল মোকাররমের সামনের সড়ক ও পুরানা পল্টনের মোড়ে সভা-সমাবেশ করলেও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এটাই জামায়াতে ইসলামীর প্রথম সমাবেশ। এতে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর সমাগম হয়। সভাপতির বক্তব্যে দলটির আমির বলেন, আবু সাঈদরা যদি বুক পেতে না দাঁড়াত, এই জাতির মুক্তির জন্য যদি বুকে গুলি লুফে না নিত, হয়তবা আজকের এই বাংলাদেশ আমরা দেখতাম না। ইতোমধ্যে হয়ত আরো অনেক মানুষের জীবন হয়ত ফ্যাসিবাদীদের হাতে চলে যেত। তিনি বলেন, আল্লাহ যতসময় হায়াত দিয়েছেন, ততসময় মানুষের জন্য লড়াই করব। এ লড়াই বন্ধ হবে না। বাংলার মানুষের মুক্তি অর্জন হওয়া পর্যন্ত আমাদের লড়াই চলবে।
শফিকুর বলেন, আমার আফসোস, ২৪ সালে জাতিকে মুক্তি দিতে গিয়ে যারা শহীদ হল, আমি তাদের একজন হতে পারলাম না। আমি দোয়া চাই, আগামীতে ইনসাফের ভিত্তিতে দেশ গড়ার যে লড়াই হবে, আমি যেন সে লড়াইয়ে একজন শহীদ হতে পারি।
নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় তুলে ধরে তিনি বলেন, পুরনো ব্যবস্থাপত্রে বাংলাদেশ আর চলবে না। এতগুলা মানুষ এমনি-এমনি জীবন দেয় নাই। জীবন দিয়েছে জাতির মুক্তির জন্য। যদি বস্তাপঁচা, পুরনো সব কিছুই টিকে থাকবে, তাহলে কেন তারা জীবন দিয়েছিল?
যারা ওই বস্তাপঁচা ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশকে আবার গড়তে চান, তাদেরকে আমরা বলি, জুলাই যুদ্ধ করে যারা জীবন দিয়েছে, যদি শক্তি থাকে আগে তাদের জীবনটা ফেরত এনে দেন। তনি বলেন, আপনারা পারবেন না, যেহেতু পারবেন না কাজেই নতুন ব্যবস্থায়, নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলা হবে। শিশু, কিশোর, যুবক, মা-বোন, শ্রমিক, ছাত্র-জনতা, ব্যবসায়ীকে সবাইকে যে দেশ, যে সংবিধান, যে রাষ্ট্র নিরাপত্তা দিতে পারবে, সেই নতুন বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলতে চাই।
সমাবেশে জামায়াত ছাড়াও অন্য দলের নেতারাও বক্তব্য দেন। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন ও উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব ইউনূস আহমদ, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) মুখপাত্র রাশেদ প্রধান, জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক, গণ আন্দোলনের সময় রংপুরে নিহত আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী, নেজামে ইসলামী পার্টির মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইজহার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ, রফিকুল ইসলাম খান, জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য এ টি এম আজহারুল ইসলাম, নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের, সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, ঢাকা মহনগরী দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, উত্তরের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, , কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন পারভেজ বক্তব্য রাখেন। সঞ্চালনা করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ, উত্তরের সেক্রেটারি রেজাউল করিম।