নিজস্ব প্রতিবেদক : ছেলে জঙ্গিবাদে জড়িত বলে স্বীকার করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির। গতকাল বৃহস্পতিবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) প্রধান মো. আসাদুজ্জামান এ কথা বলেন। সিটিটিসি প্রধান বলেন, ‘জামায়াতের আমিরকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তিনি আমাদের কাছে স্বীকার করেছেন তার ছেলে নতুন জঙ্গি সংগঠনে জড়িত। বিষয়টি তিনি (আমির) জানতেন। তার ছেলে ‘হিজরত’ থেকে ফেরত এসেছে। নতুন জঙ্গি সংগঠনে আমিরের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’ ‘এ বিষয়ে জানতে পারলে বিস্তারিত জানানো হবে’ বলে জানান মো. আসাদুজ্জামান। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে সিটিটিসি প্রধান বলেন, ‘জামায়াত আমির জানতেন তার সন্তান (রাফাত) জঙ্গিবাদে জড়িয়ে যাচ্ছে, এটা তার (আমিরের) অপরাধ। আমির জানত তার ছেলে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদে জড়িয়ে গেছে, হিজরত করেছে। তার ছেলে নতুন জঙ্গিদের একটা গ্রুপসহ বান্দরবানের উদ্দেশ্যে রওনা করেছে। সেখান থেকে জামায়াতের আমির ছেলেকে নিয়ে আসতে সব ধরনের যোগাযোগ করেছে। পরে তাকে নিয়ে এসেছে। এটা সন্ত্রাসবাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা। এসব বিষয়ে জামায়াতের আমির আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কারও সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।’ অনেককেই জঙ্গিবাদ থেকে ফিরিয়ে আনার বা আসার সুযোগ আপনারা দিয়েছেন। অনেক উদাহরণ আছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে সিটিটিসি প্রধান বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি মনে করে এই ছেলে জঙ্গিবাদ থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চায়, পরিবার আবেদন করে তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া যেতো। কিন্তু বাবা ডা. শফিকুর রহমানই তো জানতেন ছেলে জঙ্গিবাদে জড়িয়েছেন। কিন্তু তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাননি। পুরো বিষয়টি তিনি গোপন করেছিলেন।
আদালত প্রাঙ্গণ থেকে পালানো দুই জঙ্গি কোথায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা বলার এখনো সময় আসেনি। দেশেই আছে, এখনো দেশ থেকে পালাতে পারেনি।
এদিকে আমির ডা. শফিকুর রহমানকে ‘মিথ্যা মামলায়’ গ্রেপ্তার করে বারবার রিমান্ডে নেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। সাতদিনের পর পুনরায় তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়ার প্রতিবাদে ও তার মুক্তির দাবিতে গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে জামায়াত ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ। কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিনের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিলটি রাজধানীর বংশাল রায়সাহেব বাজার মোড় থেকে শুরু হয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রতিবাদ সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। উল্লেখ্য, জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ততার অভিযোগে জামায়াত আমিরের ছেলে ডা. রাফাতকে গ্রেপ্তার করে ডিএমপির সিটিটিসির বোম ডিসপোজাল ইউনিট। গত ৯ নভেম্বর দুপুরে সিলেট এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। সিটিটিসির দাবি, গ্রেপ্তার ডা. রাফাত চৌধুরী নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সিলেট অঞ্চলের প্রধান সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করছিল। নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা, ছেলের জড়ানো, ছেলেসহ জড়িতদের হিজরতে ব্যয়ভার বহনের অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানকে গত ১৩ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার করে সিটিটিসি। সেদিন দুপুরে সিটিটিসি প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, জামায়াত আমির তার ছেলে ডাক্তার রাফাত নতুন জঙ্গি সংগঠনে জড়িয়েছেন, এটা জেনেও সমর্থন দিয়ে গেছেন। ছেলে পরে সিলেট অঞ্চলের প্রধান সমন্বয়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’য় জড়ানো অনেকেই শিবিরের সাথি, কর্মী ছিলেন। তাদের হিজরতের খরচও দিয়েছেন জামায়াত আমির।
জামায়াত আমির স্বীকার করেছে ছেলে জঙ্গিবাদে জড়িত ছিল: সিটিটিসি প্রধান
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ