নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ডাকা জাতীয় সমাবেশ ঘিরে রাজধানীর সড়কে দেখা দিয়েছে গণপরিবহন সংকট। দূর-দূরান্ত থেকে আগত নেতাকর্মী ও কর্মমুখী মানুষের চলাচলে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। ফলে দাপট বাড়ে ব্যটারিচালিত অটোরিকশার। বিভিন্ন সড়কে শনিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত যান চলাচল সীমিত হতে দেখা গেছে। অনেক রাস্তায় যানজটও সৃষ্টি হয়েছে। যাতায়াতে ভোগান্তিতে পড়েন রাজধানীবাসী।
শনিবার (১৯ জুলাই) রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে গণপরিবহন সংকটের এমন চিত্র দেখা গেছে। সরেজমিনে দেখা যায়, এদিন সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সমাবেশে অংশ নিতে ছুটে এসেছেন জামায়াতের নেতাকর্মীরা। নির্ধারিত স্থানে গাড়ি রেখে পায়ে হেঁটে এবং অটোরিকশায় করে সমাবেশস্থলে যাচ্ছেন মানুষ। এছাড়াও সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে কর্মমুখী মানুষের উপস্থিতিও দেখা গেছে। সড়কে গণপরিবহন কম থাকায় এসব কর্মমুখী মানুষদের অটোরিকশা ব্যবহার করতেও দেখা যায়।
এদিকে গণপরিবহন সংকট থাকায় সাধারণ মানুষের চলাচলে দীর্ঘ ভোগান্তি ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে রিকশাচালকদের বিরুদ্ধে। রাজধানীর বাংলামোটর থেকে পল্টনগামী যাত্রী মোর্শেদ বলেন, রাস্তায় কোনো গাড়ি নেই। টুকটাক যেসব গাড়ি চলছে সেগুলোও রাস্তা বন্ধের কারনে যানজটে দাঁড়িয়ে আছে। এখন আর কী করার? যেতে তো হবেই। তাই বেশি ভাড়া দিয়ে রিকশা নিতে হলো। সাব্বির হোসেন নামের আর একজন বলেন, রাস্তায় শুধু মানুষ আর মানুষ। কোনো গাড়ি নেই। গাড়ি না থাকার কারণে রিকশায় যে ভাড়া ৪০ টাকা সেই ভাড়া ৮০ টাকা দিতে হচ্ছে। এখন রিকশা ছাড়া চলাচলের কোনো উপায় নেই। তাই ভাড়া বেশি হলেও বাধ্য হয়ে যেতে হচ্ছে। এদিকে রিকশাচালক দুলাল হোসেন বলেন, বিভিন্ন জায়গায় রাস্তা বন্ধ। ভেতরের রাস্তা দিয়ে ঘুরে ঘুরে যেতে হচ্ছে। তাই ভাড়া একটু বেশি।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সকাল থেকে জামায়াতে ইসলামীর জাতীয় সমাবেশ চলে। সারা দেশ থেকে দলটির বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী সমাবেশে অংশ নিতে রাজধানীতে এসেছেন। এতেই রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে মন্থরতার সৃষ্টি। এই জাতীয় সমাবেশের জন্য রাজধানীতে যানজট ও জনগণের ভোগান্তির উল্লেখ করে জামায়াতে ইসলামীর ফেসবুকের ভেরিফায়েড পেজে নগরবাসীর কাছে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে।
গত শুক্রবার (১৮ জুলাই) রাত থেকেই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে দলের নেতা-কর্মীরা ঢাকায় আসতে শুরু করেন। শনিবার সকাল থেকে এই সংখ্যা বাড়তে থাকে। গাবতলী, মহাখালী, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল ও কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে রাজধানীতে প্রবেশ করতে থাকেন নেতা-কর্মীরা। অসংখ্য মানুষ ও তাঁদের বহনকারী বাড়তি যানের চাপে ঢাকার প্রবেশমুখের সড়কগুলোতে যানজটের সৃষ্টি হয়।
সমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বিশেষ কারণ ছাড়া সাধারণ যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ ছাড়া লোকসমাগম বৃদ্ধির কারণে শাহবাগ থেকে ধানমন্ডি, ফার্মগেট এলাকার যানবাহন চলাচলও সীমিত হয়ে পড়ে। মিরপুর রোড থেকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ হয়ে খামারবাড়ির সামনের সড়কটিতে শত শত যানবাহন ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকে। একইভাবে রমনা থেকে মৎস্য ভবন হয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে তোপখানা রোড, পুরানা পল্টন, গুলিস্তান, দক্ষিণ দিকে চানখাঁরপুল এলাকায়ও দীর্ঘ সময় যানবাহন পথে আটকে পড়ে।
মহানগরীর উত্তর দিকে মহাখালী থেকে তেজগাঁও সাতরাস্তা হয়ে কাকরাইল পর্যন্ত সড়কেও ছিল একই দৃশ্য। নিচের সড়কে যানজটের কারণে বিমানবন্দর থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে যানগুলো নিচে নামতে গিয়ে বনানী, তেজগাঁও, কারওয়ান বাজার র্যাম্পে দীর্ঘ সময় আটকে থাকে। বাসে করে যেসব নেতা-কর্মী সমাবেশে আসছিলেন, তাঁদের গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে সমাবেশের দিকে যেতে দেখা গেছে।
মোহাম্মদপুর থেকে বাসে করে মতিঝিল যাওয়ার পথে খামারবাড়ির সামনে যানজটে আটকে পড়েন ব্যবসায়ী সোলায়মান। ঘণ্টাখানেক অপেক্ষার পর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বাস থেকে নেমে হেঁটে রওনা দিয়েছিলেন তিনি। ঘর্মাক্ত কলেবরে কারওয়ান বাজারের সামনে তিনি জানালেন, ‘বাস তো যাচ্ছেই না, রাইডশেয়ারের মোটরসাইকেলও পাওয়া যাচ্ছে না। কতক্ষণে কীভাবে মতিঝিল যাবেন, ভাবতে পারছেন না।’
যানজটের কারণে শাহবাগকে কেন্দ্র করে আশপাশের সড়কে রাইডশেয়ারের মোটরসাইকেল বা ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের সংখ্যাও ছিল খুব কম। যানবাহন স্বল্পতার প্রভাব পড়েছিল মেট্রোরেলেও। প্রতিটি স্টেশনেই বিপুলসংখ্যক যাত্রীর ভিড় দেখা গেছে। মেট্রো থেকে নেমে রিকশা বা অন্য যান না পেয়ে হেঁটেই গন্তব্যের দিকে যেতে হয়েছে নগরবাসীদের।