সিলেট সংবাদদাতা: সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা জাফলং থেকে পাথর লুটের ঘটনায় অজ্ঞাত পরিচয় ১০০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে।
সোমবার (১৮ আগস্ট) রাত সাড়ে ১১টার দিকে গোয়াইনঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আবদুল মোনায়েম বাদী হয়ে পরিবেশ সংরক্ষণ ও খনিজ সম্পদ আইনে মামলাটি করেন বলে গোয়াইনঘাট থানার ওসি সরকার তোফায়েল আহমেদ জানিয়েছেন।
মামলার বরাতে ওসি বলেন, ৭, ৮ ও ৯ অগাস্ট রাত ১টা থেকে ৪টা পর্যন্ত প্রবল বৃষ্টির সময় জাফলং জিরো পয়েন্টে স্থানীয় পাথর চোরাকারবারীদের হুকুমে ৫০ থেকে ৬০টি বারকি নৌকা দিয়ে অজ্ঞাতনামা ১০০ থেকে ১৫০ পাথর চোরাকারবারী রাতের আঁধারে পাথর চুরি করে নিয়ে যায়। তারা ছোট-বড় বিভিন্ন আকারের ৪০ থেকে ৫০ হাজার ঘনফুট পাথর চুরি করে।
এসব পাথরের আনুমানিক দাম ৬০ লাখ টাকা। আসামিরা পরম্পরের যোগসাজশে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার সুযোগ নিয়ে ইসিএভুক্ত ডাইকি-পিয়াইন নদীর জিরো পয়েন্ট থেকে পাথর চুরি করে বিভিন্ন জলযান ও স্থলযানের মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় সরিয়ে নেয়।
পুলিশ পাথর লুটে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতারের চেষ্টা করছে বলে গোয়াইনঘাট থানার ওসি জানিয়েছেন।
এর আগে ১৫ অগাস্ট কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারি থেকে পাথর লুটের ঘটনায় খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর মহাপরিচালক মোহাম্মদ আনোয়ারুল হাবীব অজ্ঞাত পরিচয় ১৫০০ থেকে ২০০০ জনকে আসামি করে মামলা করেন।
ওই মামলায় পুলিশ এখন পর্যন্ত ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি উজায়ের মাহমুদ আদনান জানিয়েছেন।
ওই মামলার এজাহারে বলা হয়, কিছু দুষ্কৃতকারী গত বছরের ৫ অগাস্ট থেকে গেজেটভুক্ত পাথর কোয়ারি থেকে অবৈধ ও অননুমোদিতভাবে ‘কোটি কোটি’ টাকার পাথর লুটপাট করেছে মর্মে বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যারা এ ঘটনায় জড়িত রয়েছেন, তাদের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি।
সারা দেশে ৫১টি কোয়ারি (পাথর ও বালু উত্তোলনের নির্দিষ্ট স্থান) আছে। এর মধ্যে সিলেটের কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুরে আছে আটটি পাথর কোয়ারি। এর বাইরে সিলেটে সাদাপাথর, জাফলং, বিছনাকান্দি, উৎমাছড়াসহ আরও ১০টি জায়গায় পাথর আছে। এসব জায়গা পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।
সীমান্তের ওপারে ভারতের মেঘালয়ের পাহাড়ি নদী থেকে এসব পাথর আসে। ২০২০ সালের আগে সংরক্ষিত এলাকা বাদে সিলেটের আটটি কোয়ারি ইজারা দিয়ে পাথর উত্তোলনের সুযোগ দেওয়া হতো। তবে পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতির কারণে ২০২০ সালের পর আর পাথর কোয়ারি ইজারা দেওয়া হয়নি।
গত বছরের ৫ অগাস্টের পর থেকেই ব্যাপক লুটপাটের শিকার হয় সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারি, ১৩৬ একরের শাহ আরেফিন টিলা, পর্যটনকেন্দ্র সাদা পাথর এবং এর পাশের ১০ একরের রেলওয়ে বাঙ্কার। গোয়াইনঘাটের পর্যটনকেন্দ জাফলং, বিছনাকান্দি এবং জৈন্তাপুরের রাংপানি এলাকা।
স্থানীয় প্রশাসনের নাকের ডগায় দিনে-রাতে লুটপাট হয়েছে। ফলে পাথর শূন্য হয়ে পড়ে পর্যটন এলাকাগুলো। আর খানাখন্দে পরিণত হয়েছে রেলওয়ে বাঙ্কার ও শাহ আরেফিন টিলা।
তবে লুটপাট থামাতে প্রশাসনের লোক দেখানো অভিযান ছাড়া কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি।
এসি/

























