ঢাকা ০৬:৫৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫

জাপান বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু : প্রধানমন্ত্রী

  • আপডেট সময় : ০৯:০৭:৩৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৩
  • ৭২ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : জাপানকে বাংলাদেশের ‘দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত বন্ধু’ হিসেবে বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, স্বাধীনতা অর্জনের দুই মাসের মধ্যে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়া এই দেশটি তার ‘হৃদয়ের খুব কাছের’। “জাপান আমাদের বিশ্বস্ত উন্নয়ন অংশীদার। বাংলাদেশ তার উন্নয়নের জন্য জাপানের অবিচল সমর্থন পেয়েছে এবং আমাদের স্বাধীনতার পর জাপানের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে সরকারি উন্নয়ন সহায়তা পেয়েছে।”
বাসস জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফরের মধ্যেই ২৫ এপ্রিল তার একটি নিবন্ধ ছাপা হয়েছে দেশটির সবচেয়ে পুরনো ইংরেজি দৈনিক ‘জাপান টাইমস’-এ। ‘জাপান হোল্ডস স্পেশাল প্লেস ইন আওয়ার হার্টস’ শিরোনামে ওই লেখায় দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক ও বন্ধুত্বের যাত্রাপথ, সহযোগিতার ইতিবৃত্ত তুলে ধরা হয়েছে।
শেখ হাসিনা লিখেছেন, “আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৫১তম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে আমার দেশ, বাংলাদেশ এবং জাপানের মধ্যে বিদ্যমান দ্বি-পক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করতে আমি আবার টোকিওতে এসেছি।
“আমি মহামান্য সম্রাট নারুহিতো এবং সম্রাজ্ঞী মাসাকোর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এবং আমাকে আমন্ত্রণের জন্য প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদাকে ধন্যবাদ জানাই। আমি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেকেও শ্রদ্ধা জানাই। আবে ছিলেন বাংলাদেশের একজন মহান বন্ধু।”
বাংলাদেশের স্বাধীনতার দুই মাসেরও কম সময়ের মধ্যে ১৯৭২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশকে দ্রুত স্বীকৃতি দেওয়া কয়েকটি দেশের মধ্যে জাপান অন্যতম। সে কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, “এমনকি ১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়ও জাপান অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়েছে, যা আমরা কখনও ভুলিনি বা ভুলব না।
“সবচেয়ে অবিস্মরণীয় ঘটনা ছিল জাপানি স্কুলের শিশুরা তাদের টিফিনের টাকা জমিয়ে সেই টাকা ঘূর্ণিঝড় এবং যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত আমাদের লোকদের জন্য পাঠিয়েছিল।”
তিনি বলেন, “তারপর থেকে জাপান আমাদের দীর্ঘকালের পরীক্ষিত বন্ধু হিসেবে রয়ে গেছে। জাপান আমার হৃদয়ের খুব কাছের একটি দেশ, ঠিক যেমন আমার পরিবার এবং আমাদের জনগণের কাছের।” এবারের জাপান সফরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আছেন তার ছোট বোন শেখ রেহানা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন ১৯৭৩ সালের অক্টোবরে প্রথমবার জাপান সফর করেন, তখনও তার সঙ্গে ছিলেন শেখ রেহানা এবং তার ছোট ভাই শেখ রাসেল। সে কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা লিখছেন, পিতার মতই জাপানের প্রতি ভালোবাসা লালন করার পাশাপাশি দেশটির বিস্ময়কর উন্নয়নের প্রতি তার গভীর শ্রদ্ধা রয়েছে।
“আমি জাপানের অমূল্য অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে বারবার এখানে আসি। এগুলো আমাকে এই মহান দেশের ভাবমূর্তির মত বাংলাদেশকে গড়ে তোলার জন্য আমার দেহ ও মনকে কাজে লাগাতে এবং আত্মনিয়োগ করতে উৎসাহিত করে। এখন আমি অনুভব করি, আমাদের দুই দেশের সম্পর্ক একটি ঈর্ষণীয় স্তরে উন্নীত হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের ব্যাপক অংশীদারত্ব থেকে একটি কৌশলগত অংশীদারত্বের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় এসেছে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাপানের উন্নয়ন দেখে মুগ্ধ ছিলেন, জাপানকে মডেল হিসেবে অনুসরণ করতে চেয়েছিলেন। “তিনি জাপানের জাতীয় পতাকার নকশা দেখেও অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। উভয় পতাকাই বাংলাদেশের জন্য গাঢ় সবুজ এবং জাপানের জন্য সাদা রঙের পটভূমির বিপরীতে কেন্দ্রে লাল বৃত্তসহ আয়তাকার।”
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৩ সালের সেই সফর থেকে ফেরার পর বঙ্গবন্ধু প্রায়ই তাদের জাপানের স্মরণীয় অভিজ্ঞতার কথা বলতেন। “সেগুলো আমাদের স্মৃতিতে রয়ে গেছে, যা আমাদেরকে এখন আরও বেশি বেদনার্ত করে, সেই ঐতিহাসিক সফরের পর রেহানা এবং আমি ছাড়া আমাদের পরিবারের সকল সদস্যকে মাত্র ২২ মাসের মাথায় নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে জাপানের বিনিয়োগ ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। সাম্প্রতিক ওডিএ ঋণ প্যাকেজে জাপান বাংলাদেশকে অন্য যে কোনো দেশের চেয়ে সহজ শর্তে ২ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে। দুই দেশের বাণিজ্য ২০২১-২০২২অর্থবছরে প্রথমবারের মত ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। ঢাকায় মেট্রেরেল, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর, ঢাকা বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল এবং আড়াইহাজারে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ বড় কয়েকটি অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়নে জাপানের ভূমিকার কথাও প্রধানমন্ত্রী তার নিবন্ধে লিখেছেন। মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজে থাকা কয়েকজন জাপানি নাগরিক ২০১৬ সালের জুলাই মাসে হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার দিন নিহত হন, সে কথাও স্মরণ করেন শেখ হাসিনা। তিনি লিখেছেন, “এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে অন্ধকার পর্বগুলোর একটি। আমি অনেক দুঃখের সাথে তাদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করছি এবং আবারও তাদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। এই দুঃখজনক ঘটনা সত্ত্বেও আমাদের জাপানি বন্ধুরা প্রকল্প থেকে সরে আসেনি বরং তার পরিবর্তে নিষ্ঠার সাথে তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। জাপানের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় ঢাকায় দেশের প্রথম এমআরটি লাইন-৬, স্থাপন করা হয়, যা গত ডিসেম্বরে উদ্বোধন করা হয়েছে।”
শেখ হাসিনা বলেন, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও তার সরকারের মেয়াদের ১৪ বছরে বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিকভাবে অনেক দূর এগিয়েছে। “আমাদের দেশ আর দারিদ্র্যপীড়িত নয়। বরং এটি এখন উন্নয়নের বিস্ময়কর উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত। এখানে দেড় দশকে মাথাপিছু আয় পাঁচ গুণের বেশি বেড়েছে। প্রকৃতপক্ষে, মানব সম্পদ উন্নয়ন, খাদ্য নিরাপত্তা, নারীর ক্ষমতায়ন, দারিদ্র্য বিমোচন এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নে বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।” তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে, কোভিড-১৯ মহামারীর আগে, বাংলাদেশের অর্থনীতি প্রায় এক দশক ধরে গড়ে ৬ দমমিক ৫ শতাংশ এবং ২০১৮ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও মহামারী বাংলাদেশের অর্থনীতিকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করেছিল, মানুষের জীবন এবং জীবিকার ভারসাম্যে প্রভাব পড়েছিল।
“দুঃখজনক হল, আমরা যখন মহামারী থেকে বেরিয়ে আসছিলাম, ঠিক তখনই রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধ এবং পরবর্তী নিষেধাজ্ঞা এবং পাল্টা নিষেধাজ্ঞা আমাদের উন্নয়নের উপর আঘাত হানে। ফলে জ্বালানি, খাদ্য এবং অন্যান্য পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি হয়েছে, সেই সাথে সরবরাহ ব্যবস্থায় ব্যাঘাত আমাদের মত দেশগুলোকে ভয়ঙ্কর বিপদের দিকে ঠেলে দিয়েছে।” তাছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব যে বাংলাদেশের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, সে কথাও শেখ হাসিনা বলেন। তিনি লিখেছেন, গত বছরের শেষ দিকে বাংলাদেশের প্রায় এক তৃতীয়াংশ এলাকায় ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং আঘাত হানে। তাতে অনেক মানুষ প্রাণ হারায়, পাশাপাশি, ফসল, বাড়িঘর এবং মাছের খামারের ব্যাপক ক্ষতি হয়। তার আগে মে ও জুন মাসে ভয়াবহ বন্যা বাংলাদেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্ব অঞ্চলকে প্লাবিত করে। “আমাদের মানুষ সহনশীল, এই ধরনের দুর্যোগের সাথে জীবনযাপন করতে অভ্যস্ত। সমস্ত বিপদ সত্ত্বেও, বাংলাদেশের অর্থনীতি সহনশীল এবং বিদেশি বিনিয়োগের জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে রয়ে গেছে। কারণ, বাংলাদেশের উদার নীতি ও আইন বিনিয়োগের জন্য অনুকূল এবং উৎসাহব্যঞ্জক।” এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের এফডিআই সম্পর্কিত নীতি, ট্যাক্স সুবিধা, রপ্তানির জন্য প্রণোদনা এবং তরুণ শ্রমশক্তির কথা বলেন। সরকারের নেওয়া ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ যে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, সে কথাও বলেন।
“মজার ব্যাপার হল, বাংলাদেশ কৌশলগত ভৌগোলিক অবস্থানের দিক থেকে অত্যন্ত সৌভাগ্যবান। এটি পশ্চিমে ভারতীয় উপমহাদেশকে পূর্বে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাথে সংযুক্ত করেছে। প্রায় ১৭ কোটি জনসংখ্যার নিজস্ব অভ্যন্তরীণ বাজার নিয়ে বাংলাদেশের গ্রাহক ভিত্তি ৩ বিলিয়ন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ধীরে ধীরে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের ব্যবসা ও অর্থনৈতিক কেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে। আমাদের উভয় দেশের পারস্পরিক সুবিধার জন্য জাপানিদের আরো বেশি বিনিয়োগ পেলে বাংলাদেশ খুশি হবে।” মিয়ানমার থেকে এসে আশ্রয় নিয়ে থাকা ১১ লাখ রোহিঙ্গার দেখাশোনা করতে গিয়ে বাংলাদেশ যে উভয়সঙ্কটে পড়েছে, সে কথাও প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন। “রোহিঙ্গা নামে পরিচিত এই লোকদের গণহত্যার মুখে মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছিল বাংলাদেশ। তাদের দীর্ঘ উপস্থিতি স্থানীয় সম্প্রদায়ের জীবন ও জীবিকাকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে। এখন তারা বাংলাদেশসহ সমগ্র অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠছে। জাপান এই অঞ্চলে তার ফলপ্রসূ প্রভাবের মাধ্যমে মধ্যস্থতা করতে পারে এবং এই রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে তাদের স্বদেশে ফিরে যেতে সাহায্য করতে পারে।” তিনি লিখেছেন, বাংলাদেশ ও জাপান উভয়ই শান্তি-প্রিয় দেশ, বৈশ্বিক শান্তি, স্থিতিশীলতা, টেকসই উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি সমুন্নত রাখতে আন্তর্জাতিক ফোরামে সহযোগিতা করছে। “আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আমাদের সহযোগিতা এবং বন্ধুত্ব উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে এবং সমৃদ্ধ হবে।”
বাংলাদেশ থেকে আলু নিতে চায় জাপান: বাংলাদেশে উৎপাদিত ভ্যালেনসিয়া জাতের আলু প্রক্রিয়াজাতকরণ ও আমদানি করতে জাপানের একটি কোম্পানি গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেছে। নেদারল্যান্ডস থেকে আমদানিকৃত ভ্যালেনসিয়া জাতের এই আলু বাংলাদেশে এসিআই কোম্পানি প্রচলন করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হিসেবে জাপানে সফররত কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে বৃহস্পতিবার টোকিওর ওয়েস্টইন হোটেলে জাপানি কোম্পানীর শীর্ষ কর্মকর্তা সিইয়া কাদৌ সাক্ষাৎকালে এ আগ্রহের কথা জানান। এসিআই এগ্রিবিজনেসের প্রেসিডেন্ট এফএইচ আনসারি এসময় উপস্থিত ছিলেন।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, দেশে বছরে আলুর চাহিদা রয়েছে ৬০ থেকে ৭০ লাখ টন। বছরে ১ কোটি টনেরও বেশি আলু উৎপাদন হয়। যেসব জাতের আলু উৎপাদিত হচ্ছে, তার চাহিদা বিদেশে অনেক কম। এজন্য রপ্তানিযোগ্য ও শিল্পে ব্যবহার উপযোগী আলুর জাত সম্প্রসারণে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সরকারিভাবে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) মাধ্যমে বিদেশ থেকে আলুর অনেকগুলো উন্নত জাত আনা হয়েছে উল্লেখ করে ড. রাজ্জাক বলেন, সেগুলো কৃষক পর্যায়ে সম্প্রসারণের কাজ চলমান আছে।
পাশাপাশি, আলুকে আমরা অনিয়ন্ত্রিত ফসল বা ডিনোটিফায়েড ঘোষণা করেছিলাম, যাতে করে বেসরকারিভাবে উন্নত জাত আনা সহজ হয়। এ ঘোষণার পর থেকে বেসরকারিভাবেও আলুর অনেক উন্নত জাত দেশে এসেছে, নিবন্ধিত হয়েছে। কৃষিমন্ত্রী বলেন, রপ্তানিযোগ্য এসব আলুর জাত চাষের ফলে আলু রপ্তানির বিরাট সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে ভ্যালেনসিয়া জাতের আলুর নমুনা নিয়ে জাপানের ল্যাবরেটরিতে টেস্ট করা হয়েছে বলে জানান জাপানি কোম্পানীর শীর্ষ কর্মকর্তা সেইয়া কাদৌ। তিনি কৃষিমন্ত্রীকে জানান, এ জাতের আলু মানসম্পন্ন ও সুস্বাদু। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আলুকে অনিয়ন্ত্রিত ফসল ঘোষণা বর্তমান সরকারের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এরই প্রেক্ষাপটে এসিআই সিড ২০২০ সালে এসিআই আলু-১০ (ভ্যালেনসিয়া) নামক আলুর বীজ নিবন্ধন পায়, যা নেদারল্যান্ডস থেকে আমদানিকৃত। জাতটিতে প্রায় ২১ শতাংশ ড্রাই ম্যাটার আছে বিধায় এটি শিল্পে ব্যবহার উপযোগী।
জাপান সফর শেষে ওয়াশিংটন ডিসির পথে প্রধানমন্ত্রী: জাপানে চার দিনের সরকারি সফর শেষে ওয়াশিংটন ডিসির উদ্দেশে টোকিও ত্যাগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীরা গতকাল শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকাল ৩টা ৫৫ মিনিটে ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে টোকিওর হানেদা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রওনা হন। ওয়াশিংটন ডিসিতে পৌঁছানোর পর ডালাস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানাবেন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরান। ১ মে বাংলাদেশ ও বিশ্ব ব্যাংকের অংশীদারত্বের ৫০ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
বিশ্ব ব্যাংকের সদরদপ্তরে ওই অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ওপর একটি সেমিনার আয়োজন করা হবে। সেমিনারে প্রধানমন্ত্রী ও বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস বক্তব্য দেবেন। ওই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের উন্নয়নের জয়যাত্রা ও গত পাঁচ দশকে বাংলাদেশে বিশ্ব ব্যাংকের কার্যক্রম তুলে ধরা হবে। অনুষ্ঠানে বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব নিয়ে একটি মাল্টিমিডিয়া প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে। এ প্রদর্শনীতে বাংলাদেশ ও বিশ্ব ব্যাংকের অংশীদারিত্বের পাশাপাশি বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও শিল্পকর্ম তুলে ধরা হবে। একই দিনে প্রধানমন্ত্রীর সাথে বিশ্ব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের বৈঠক হবে। ২ মে সকালে প্রধানমন্ত্রীর সাথে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের ঊর্ধ্বতন নির্বাহী কর্মকর্তারা একান্ত বৈঠক করবেন। এরপর যুক্তরাষ্ট্র চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জানে পি ক্লার্ক প্রধানমন্ত্রীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। একই দিনে প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট নিশা দেশাই বিসওয়ালের আমন্ত্রণের যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদলের সাথে একটি গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেবেন এবং মূল বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেবেন। সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের সাময়িকী ইকোনমিস্টকে একটি সাক্ষাৎকার দেবেন। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশিদের আয়োজনে একটি কমিউনিটি ইভেন্টেও উপস্থিত থাকবেন। প্রধানমন্ত্রীর সাথে বিশ্ব ব্যাংকের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা’র সৌজন্য সাক্ষাতের কথা রয়েছে। এর আগে ২৯ এপ্রিল বিকালে প্রধানমন্ত্রীর সাথে আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। ওয়াশিংটন সফর শেষ করে ৪ থেকে ৮ মে যুক্তরাজ্য সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৫ ও ৬ মে লন্ডনে ব্রিটেনের রাজা চার্লস এবং কুইন কনসোর্ট ক্যামিলার রাজ্যাভিষেক হবে। সেই অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন বাংলাদেশের সরকারপ্রধান। ৮ মে লন্ডন থেকে দেশের পথে রওনা করবেন প্রধানমন্ত্রী। পরদিন তার ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে। দুই সপ্তাহে তিন দেশ সফরে গত ২৫ এপ্রিল জাপানে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। তার এই সফরে দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতাসহ আটটি বিষয়ে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বক্ষরিত হয়।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জাপান বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু : প্রধানমন্ত্রী

আপডেট সময় : ০৯:০৭:৩৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৩

প্রত্যাশা ডেস্ক : জাপানকে বাংলাদেশের ‘দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত বন্ধু’ হিসেবে বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, স্বাধীনতা অর্জনের দুই মাসের মধ্যে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়া এই দেশটি তার ‘হৃদয়ের খুব কাছের’। “জাপান আমাদের বিশ্বস্ত উন্নয়ন অংশীদার। বাংলাদেশ তার উন্নয়নের জন্য জাপানের অবিচল সমর্থন পেয়েছে এবং আমাদের স্বাধীনতার পর জাপানের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে সরকারি উন্নয়ন সহায়তা পেয়েছে।”
বাসস জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফরের মধ্যেই ২৫ এপ্রিল তার একটি নিবন্ধ ছাপা হয়েছে দেশটির সবচেয়ে পুরনো ইংরেজি দৈনিক ‘জাপান টাইমস’-এ। ‘জাপান হোল্ডস স্পেশাল প্লেস ইন আওয়ার হার্টস’ শিরোনামে ওই লেখায় দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক ও বন্ধুত্বের যাত্রাপথ, সহযোগিতার ইতিবৃত্ত তুলে ধরা হয়েছে।
শেখ হাসিনা লিখেছেন, “আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৫১তম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে আমার দেশ, বাংলাদেশ এবং জাপানের মধ্যে বিদ্যমান দ্বি-পক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করতে আমি আবার টোকিওতে এসেছি।
“আমি মহামান্য সম্রাট নারুহিতো এবং সম্রাজ্ঞী মাসাকোর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এবং আমাকে আমন্ত্রণের জন্য প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদাকে ধন্যবাদ জানাই। আমি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেকেও শ্রদ্ধা জানাই। আবে ছিলেন বাংলাদেশের একজন মহান বন্ধু।”
বাংলাদেশের স্বাধীনতার দুই মাসেরও কম সময়ের মধ্যে ১৯৭২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশকে দ্রুত স্বীকৃতি দেওয়া কয়েকটি দেশের মধ্যে জাপান অন্যতম। সে কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, “এমনকি ১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়ও জাপান অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়েছে, যা আমরা কখনও ভুলিনি বা ভুলব না।
“সবচেয়ে অবিস্মরণীয় ঘটনা ছিল জাপানি স্কুলের শিশুরা তাদের টিফিনের টাকা জমিয়ে সেই টাকা ঘূর্ণিঝড় এবং যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত আমাদের লোকদের জন্য পাঠিয়েছিল।”
তিনি বলেন, “তারপর থেকে জাপান আমাদের দীর্ঘকালের পরীক্ষিত বন্ধু হিসেবে রয়ে গেছে। জাপান আমার হৃদয়ের খুব কাছের একটি দেশ, ঠিক যেমন আমার পরিবার এবং আমাদের জনগণের কাছের।” এবারের জাপান সফরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আছেন তার ছোট বোন শেখ রেহানা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন ১৯৭৩ সালের অক্টোবরে প্রথমবার জাপান সফর করেন, তখনও তার সঙ্গে ছিলেন শেখ রেহানা এবং তার ছোট ভাই শেখ রাসেল। সে কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা লিখছেন, পিতার মতই জাপানের প্রতি ভালোবাসা লালন করার পাশাপাশি দেশটির বিস্ময়কর উন্নয়নের প্রতি তার গভীর শ্রদ্ধা রয়েছে।
“আমি জাপানের অমূল্য অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে বারবার এখানে আসি। এগুলো আমাকে এই মহান দেশের ভাবমূর্তির মত বাংলাদেশকে গড়ে তোলার জন্য আমার দেহ ও মনকে কাজে লাগাতে এবং আত্মনিয়োগ করতে উৎসাহিত করে। এখন আমি অনুভব করি, আমাদের দুই দেশের সম্পর্ক একটি ঈর্ষণীয় স্তরে উন্নীত হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের ব্যাপক অংশীদারত্ব থেকে একটি কৌশলগত অংশীদারত্বের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় এসেছে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাপানের উন্নয়ন দেখে মুগ্ধ ছিলেন, জাপানকে মডেল হিসেবে অনুসরণ করতে চেয়েছিলেন। “তিনি জাপানের জাতীয় পতাকার নকশা দেখেও অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। উভয় পতাকাই বাংলাদেশের জন্য গাঢ় সবুজ এবং জাপানের জন্য সাদা রঙের পটভূমির বিপরীতে কেন্দ্রে লাল বৃত্তসহ আয়তাকার।”
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৩ সালের সেই সফর থেকে ফেরার পর বঙ্গবন্ধু প্রায়ই তাদের জাপানের স্মরণীয় অভিজ্ঞতার কথা বলতেন। “সেগুলো আমাদের স্মৃতিতে রয়ে গেছে, যা আমাদেরকে এখন আরও বেশি বেদনার্ত করে, সেই ঐতিহাসিক সফরের পর রেহানা এবং আমি ছাড়া আমাদের পরিবারের সকল সদস্যকে মাত্র ২২ মাসের মাথায় নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে জাপানের বিনিয়োগ ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। সাম্প্রতিক ওডিএ ঋণ প্যাকেজে জাপান বাংলাদেশকে অন্য যে কোনো দেশের চেয়ে সহজ শর্তে ২ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে। দুই দেশের বাণিজ্য ২০২১-২০২২অর্থবছরে প্রথমবারের মত ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। ঢাকায় মেট্রেরেল, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর, ঢাকা বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল এবং আড়াইহাজারে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ বড় কয়েকটি অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়নে জাপানের ভূমিকার কথাও প্রধানমন্ত্রী তার নিবন্ধে লিখেছেন। মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজে থাকা কয়েকজন জাপানি নাগরিক ২০১৬ সালের জুলাই মাসে হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার দিন নিহত হন, সে কথাও স্মরণ করেন শেখ হাসিনা। তিনি লিখেছেন, “এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে অন্ধকার পর্বগুলোর একটি। আমি অনেক দুঃখের সাথে তাদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করছি এবং আবারও তাদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। এই দুঃখজনক ঘটনা সত্ত্বেও আমাদের জাপানি বন্ধুরা প্রকল্প থেকে সরে আসেনি বরং তার পরিবর্তে নিষ্ঠার সাথে তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। জাপানের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় ঢাকায় দেশের প্রথম এমআরটি লাইন-৬, স্থাপন করা হয়, যা গত ডিসেম্বরে উদ্বোধন করা হয়েছে।”
শেখ হাসিনা বলেন, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও তার সরকারের মেয়াদের ১৪ বছরে বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিকভাবে অনেক দূর এগিয়েছে। “আমাদের দেশ আর দারিদ্র্যপীড়িত নয়। বরং এটি এখন উন্নয়নের বিস্ময়কর উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত। এখানে দেড় দশকে মাথাপিছু আয় পাঁচ গুণের বেশি বেড়েছে। প্রকৃতপক্ষে, মানব সম্পদ উন্নয়ন, খাদ্য নিরাপত্তা, নারীর ক্ষমতায়ন, দারিদ্র্য বিমোচন এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নে বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।” তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে, কোভিড-১৯ মহামারীর আগে, বাংলাদেশের অর্থনীতি প্রায় এক দশক ধরে গড়ে ৬ দমমিক ৫ শতাংশ এবং ২০১৮ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও মহামারী বাংলাদেশের অর্থনীতিকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করেছিল, মানুষের জীবন এবং জীবিকার ভারসাম্যে প্রভাব পড়েছিল।
“দুঃখজনক হল, আমরা যখন মহামারী থেকে বেরিয়ে আসছিলাম, ঠিক তখনই রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধ এবং পরবর্তী নিষেধাজ্ঞা এবং পাল্টা নিষেধাজ্ঞা আমাদের উন্নয়নের উপর আঘাত হানে। ফলে জ্বালানি, খাদ্য এবং অন্যান্য পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি হয়েছে, সেই সাথে সরবরাহ ব্যবস্থায় ব্যাঘাত আমাদের মত দেশগুলোকে ভয়ঙ্কর বিপদের দিকে ঠেলে দিয়েছে।” তাছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব যে বাংলাদেশের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, সে কথাও শেখ হাসিনা বলেন। তিনি লিখেছেন, গত বছরের শেষ দিকে বাংলাদেশের প্রায় এক তৃতীয়াংশ এলাকায় ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং আঘাত হানে। তাতে অনেক মানুষ প্রাণ হারায়, পাশাপাশি, ফসল, বাড়িঘর এবং মাছের খামারের ব্যাপক ক্ষতি হয়। তার আগে মে ও জুন মাসে ভয়াবহ বন্যা বাংলাদেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্ব অঞ্চলকে প্লাবিত করে। “আমাদের মানুষ সহনশীল, এই ধরনের দুর্যোগের সাথে জীবনযাপন করতে অভ্যস্ত। সমস্ত বিপদ সত্ত্বেও, বাংলাদেশের অর্থনীতি সহনশীল এবং বিদেশি বিনিয়োগের জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে রয়ে গেছে। কারণ, বাংলাদেশের উদার নীতি ও আইন বিনিয়োগের জন্য অনুকূল এবং উৎসাহব্যঞ্জক।” এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের এফডিআই সম্পর্কিত নীতি, ট্যাক্স সুবিধা, রপ্তানির জন্য প্রণোদনা এবং তরুণ শ্রমশক্তির কথা বলেন। সরকারের নেওয়া ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ যে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, সে কথাও বলেন।
“মজার ব্যাপার হল, বাংলাদেশ কৌশলগত ভৌগোলিক অবস্থানের দিক থেকে অত্যন্ত সৌভাগ্যবান। এটি পশ্চিমে ভারতীয় উপমহাদেশকে পূর্বে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাথে সংযুক্ত করেছে। প্রায় ১৭ কোটি জনসংখ্যার নিজস্ব অভ্যন্তরীণ বাজার নিয়ে বাংলাদেশের গ্রাহক ভিত্তি ৩ বিলিয়ন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ধীরে ধীরে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের ব্যবসা ও অর্থনৈতিক কেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে। আমাদের উভয় দেশের পারস্পরিক সুবিধার জন্য জাপানিদের আরো বেশি বিনিয়োগ পেলে বাংলাদেশ খুশি হবে।” মিয়ানমার থেকে এসে আশ্রয় নিয়ে থাকা ১১ লাখ রোহিঙ্গার দেখাশোনা করতে গিয়ে বাংলাদেশ যে উভয়সঙ্কটে পড়েছে, সে কথাও প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন। “রোহিঙ্গা নামে পরিচিত এই লোকদের গণহত্যার মুখে মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছিল বাংলাদেশ। তাদের দীর্ঘ উপস্থিতি স্থানীয় সম্প্রদায়ের জীবন ও জীবিকাকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে। এখন তারা বাংলাদেশসহ সমগ্র অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠছে। জাপান এই অঞ্চলে তার ফলপ্রসূ প্রভাবের মাধ্যমে মধ্যস্থতা করতে পারে এবং এই রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে তাদের স্বদেশে ফিরে যেতে সাহায্য করতে পারে।” তিনি লিখেছেন, বাংলাদেশ ও জাপান উভয়ই শান্তি-প্রিয় দেশ, বৈশ্বিক শান্তি, স্থিতিশীলতা, টেকসই উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি সমুন্নত রাখতে আন্তর্জাতিক ফোরামে সহযোগিতা করছে। “আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আমাদের সহযোগিতা এবং বন্ধুত্ব উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে এবং সমৃদ্ধ হবে।”
বাংলাদেশ থেকে আলু নিতে চায় জাপান: বাংলাদেশে উৎপাদিত ভ্যালেনসিয়া জাতের আলু প্রক্রিয়াজাতকরণ ও আমদানি করতে জাপানের একটি কোম্পানি গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেছে। নেদারল্যান্ডস থেকে আমদানিকৃত ভ্যালেনসিয়া জাতের এই আলু বাংলাদেশে এসিআই কোম্পানি প্রচলন করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হিসেবে জাপানে সফররত কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে বৃহস্পতিবার টোকিওর ওয়েস্টইন হোটেলে জাপানি কোম্পানীর শীর্ষ কর্মকর্তা সিইয়া কাদৌ সাক্ষাৎকালে এ আগ্রহের কথা জানান। এসিআই এগ্রিবিজনেসের প্রেসিডেন্ট এফএইচ আনসারি এসময় উপস্থিত ছিলেন।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, দেশে বছরে আলুর চাহিদা রয়েছে ৬০ থেকে ৭০ লাখ টন। বছরে ১ কোটি টনেরও বেশি আলু উৎপাদন হয়। যেসব জাতের আলু উৎপাদিত হচ্ছে, তার চাহিদা বিদেশে অনেক কম। এজন্য রপ্তানিযোগ্য ও শিল্পে ব্যবহার উপযোগী আলুর জাত সম্প্রসারণে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সরকারিভাবে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) মাধ্যমে বিদেশ থেকে আলুর অনেকগুলো উন্নত জাত আনা হয়েছে উল্লেখ করে ড. রাজ্জাক বলেন, সেগুলো কৃষক পর্যায়ে সম্প্রসারণের কাজ চলমান আছে।
পাশাপাশি, আলুকে আমরা অনিয়ন্ত্রিত ফসল বা ডিনোটিফায়েড ঘোষণা করেছিলাম, যাতে করে বেসরকারিভাবে উন্নত জাত আনা সহজ হয়। এ ঘোষণার পর থেকে বেসরকারিভাবেও আলুর অনেক উন্নত জাত দেশে এসেছে, নিবন্ধিত হয়েছে। কৃষিমন্ত্রী বলেন, রপ্তানিযোগ্য এসব আলুর জাত চাষের ফলে আলু রপ্তানির বিরাট সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে ভ্যালেনসিয়া জাতের আলুর নমুনা নিয়ে জাপানের ল্যাবরেটরিতে টেস্ট করা হয়েছে বলে জানান জাপানি কোম্পানীর শীর্ষ কর্মকর্তা সেইয়া কাদৌ। তিনি কৃষিমন্ত্রীকে জানান, এ জাতের আলু মানসম্পন্ন ও সুস্বাদু। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আলুকে অনিয়ন্ত্রিত ফসল ঘোষণা বর্তমান সরকারের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এরই প্রেক্ষাপটে এসিআই সিড ২০২০ সালে এসিআই আলু-১০ (ভ্যালেনসিয়া) নামক আলুর বীজ নিবন্ধন পায়, যা নেদারল্যান্ডস থেকে আমদানিকৃত। জাতটিতে প্রায় ২১ শতাংশ ড্রাই ম্যাটার আছে বিধায় এটি শিল্পে ব্যবহার উপযোগী।
জাপান সফর শেষে ওয়াশিংটন ডিসির পথে প্রধানমন্ত্রী: জাপানে চার দিনের সরকারি সফর শেষে ওয়াশিংটন ডিসির উদ্দেশে টোকিও ত্যাগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীরা গতকাল শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকাল ৩টা ৫৫ মিনিটে ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে টোকিওর হানেদা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রওনা হন। ওয়াশিংটন ডিসিতে পৌঁছানোর পর ডালাস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানাবেন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরান। ১ মে বাংলাদেশ ও বিশ্ব ব্যাংকের অংশীদারত্বের ৫০ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
বিশ্ব ব্যাংকের সদরদপ্তরে ওই অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ওপর একটি সেমিনার আয়োজন করা হবে। সেমিনারে প্রধানমন্ত্রী ও বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস বক্তব্য দেবেন। ওই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের উন্নয়নের জয়যাত্রা ও গত পাঁচ দশকে বাংলাদেশে বিশ্ব ব্যাংকের কার্যক্রম তুলে ধরা হবে। অনুষ্ঠানে বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব নিয়ে একটি মাল্টিমিডিয়া প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে। এ প্রদর্শনীতে বাংলাদেশ ও বিশ্ব ব্যাংকের অংশীদারিত্বের পাশাপাশি বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও শিল্পকর্ম তুলে ধরা হবে। একই দিনে প্রধানমন্ত্রীর সাথে বিশ্ব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের বৈঠক হবে। ২ মে সকালে প্রধানমন্ত্রীর সাথে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের ঊর্ধ্বতন নির্বাহী কর্মকর্তারা একান্ত বৈঠক করবেন। এরপর যুক্তরাষ্ট্র চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জানে পি ক্লার্ক প্রধানমন্ত্রীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। একই দিনে প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট নিশা দেশাই বিসওয়ালের আমন্ত্রণের যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদলের সাথে একটি গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেবেন এবং মূল বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেবেন। সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের সাময়িকী ইকোনমিস্টকে একটি সাক্ষাৎকার দেবেন। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশিদের আয়োজনে একটি কমিউনিটি ইভেন্টেও উপস্থিত থাকবেন। প্রধানমন্ত্রীর সাথে বিশ্ব ব্যাংকের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা’র সৌজন্য সাক্ষাতের কথা রয়েছে। এর আগে ২৯ এপ্রিল বিকালে প্রধানমন্ত্রীর সাথে আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। ওয়াশিংটন সফর শেষ করে ৪ থেকে ৮ মে যুক্তরাজ্য সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৫ ও ৬ মে লন্ডনে ব্রিটেনের রাজা চার্লস এবং কুইন কনসোর্ট ক্যামিলার রাজ্যাভিষেক হবে। সেই অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন বাংলাদেশের সরকারপ্রধান। ৮ মে লন্ডন থেকে দেশের পথে রওনা করবেন প্রধানমন্ত্রী। পরদিন তার ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে। দুই সপ্তাহে তিন দেশ সফরে গত ২৫ এপ্রিল জাপানে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। তার এই সফরে দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতাসহ আটটি বিষয়ে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বক্ষরিত হয়।