লাইফস্টাইল ডেস্ক: জাপানের সংস্কৃতি ও ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে চেরি ফুল; যাকে জাপানি ভাষায় বলা হয় সাকুরা। শত শত বছর ধরে সাহিত্য, চলচ্চিত্র, সংগীত ইত্যাদির পাশাপাশি জাপানের মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এই ফুল। জাপানি কবি বাশো মৎসুও লিখেছেন, ‘আমাদের দুই জীবনের মধ্যে চেরি ব্লসমের জীবনও রয়েছে।’ অর্থাৎ ফুলটিকে জীবন-মৃত্যু-পুনর্জন্ম- এসবের প্রতীক হিসেবেও কল্পনা করা হয়। চীনে এর সাকুরাকো নামটি বেশ জনপ্রিয়। চীনা ভাষায় কো মানে সন্তান বা শিশু। সাকুরাকো অর্থ চেরি ব্লসমের সন্তান।
সাধারণত মার্চ ও এপ্রিল- এ দুটি মাস নিয়েই সাকুরা ঋতু। মার্চের শেষ থেকে এপ্রিলের শেষ পর্যন্ত ফোটে এ ফুল। তবে এপ্রিল মাস এ ফুল ফোটার চূড়ান্ত সময়। একেই বলা হয় চেরি ব্লসম অর্থাৎ সাকুরার ‘পিক ব্লুম’।
সাকুরা বা চেরি ফুলের বিভিন্ন জাত আছে। এই জাতের ওপর নির্ভর করে অনেক সময় এগুলো মে মাসের শুরু পর্যন্ত ফুটে থাকে। সাকুরা ফুলের ৬০০টির বেশি বিভিন্ন প্রজাতি রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে কিছু আছে হাইব্রিড প্রজাতি। প্রতিটি প্রজাতির পাপড়ির সংখ্যা, রঙ এবং আকার ভিন্ন। সাকুরার জনপ্রিয় প্রজাতি সোমে ইয়োশিনো। সাদার মধ্যে গোলাপি থাকে এ ফুলে। ছয় ধাপ সম্পন্ন একটি চক্রের মাধ্যমে এ ফুল ফোটে। জাপানের প্রাচীন সাকুরা গাছের বয়স দুই হাজার বছর বলে জানা যায়। এটি আছে ইয়ামানাশি প্রিফেকচারের জিসসো মন্দিরে।
জাপানের দক্ষিণাঞ্চলের উপসাগরীয় দ্বীপ ওকিনাওয়ায় চেরি ফুল জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে ফোটা শুরু করে। সেখানে ফুল দেখার সেরা সময় সাধারণত ফেব্রুয়ারির শুরুতে। কিউশু অঞ্চলের দক্ষিণাঞ্চলের শহরগুলো; যেমন কাগোশিমা, কুমামোতো এবং ফুকোকারও শহরে মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে ফুল ফোটা শুরু হয়। এখানে সাধারণত ফুল ফোটার চূড়ান্ত সময় এপ্রিলের শুরুতে। ওসাকা, কিয়োটো এবং নারা শহরে মার্চ থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত চেরি ফুল ফোটে। টোকিও এবং ইয়োকোহামায় ফুল ফোটা সাধারণত মার্চ মাসের শেষ কয়েক দিনে শুরু হয় এবং এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে পরিপূর্ণভাবে ফোটে। চেরি ফুলের মৌসুম মাত্র এক মাসের। সাধারণত এক সপ্তাহের জন্যই গাছগুলো ফুলে পূর্ণ থাকে।
নতুন ব্যবসায়িক ও একাডেমিক বছর জাপানে শুরু হয় এপ্রিল মাসে। এ সময়টাতেই গাছে গাছে সাকুরা ফোটে। এটা মানুষের সামাজিকীকরণ এবং উৎসবের সময় নির্দেশ করে। একসময় সাকুরা এপ্রিলে ফুটলেও জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য এটি এখন মার্চ থেকে ফুটতে শুরু করে। অন্তত বিজ্ঞানীরা সে রকমই বলছেন। অন্যদিকে কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা সাকুরাকে জেনেটিকভাবে পরিবর্তন করার একটি উপায় আবিষ্কার করেছেন। তারা এখন বসন্ত ও শরৎ- এ দুই ঋতুতে সাকুরা ফোটানোর চেষ্টা করছেন।