ঢাকা ০৭:৫৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫, ৭ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জাতীয় স্বার্থে সবার ঐক্যবদ্ধ থাকা জরুরি

  • আপডেট সময় : ০৫:০৫:১৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫
  • ৪ বার পড়া হয়েছে

দয়াল কুমার বড়ুয়া :জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এরপর থেকেই স্বার্থান্বেষী মহল নানা অঘটন ঘটানোর চেষ্টা করে আসছে। এরই অংশ হিসেবে দেশের ভেতরে ও সীমান্তের ওপারে চলছে অপপ্রচার ও উসকানি। এ অবস্থায় প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য। বাংলাদেশের মানুষ যে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক সমাজের স্বপ্ন দেখে, সেটি তখনই সম্ভব হবে যখন রাষ্ট্রীয় নীতি পরিকল্পনা গ্রহণ ও এর বাস্তবায়নে ধম- জাতি নির্বিশেষে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যাবে। কাউকে পেছনে ফেলে কিংবা অগ্রাহ্য করে গণতান্ত্রিক ও সমতাভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ে তোলা যাবে না।

বর্তমান সরকার ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফসল। দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের পটভূমিতে ছাত্র-জনতার এই আন্দোলন সফল হয়েছে। তাই এই সরকারের প্রতি সকলের সমর্থন রয়েছে। তাই এসব অন্যায়ের আইনি প্রতিকারে জাতীয় ঐকমত্যে পৌঁছানোও জরুরি। যে কোনো বিজয় অর্জন যত সোজা তা ধরে রাখা ততটাই কঠিন। এ ব্যাপারে ১৮ কোটি মানুষকে সচেতন হতে হবে।
আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ একটি কঠিন সময় অতিক্রম করছে।

প্রতিবেশী দেশ কিংবা পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকেই অপপ্রচার আসুক না কেন, আমরা সঠিক তথ্য দিয়ে তা খণ্ডন করব। তাদেরকে তাদের ভুল ধরিয়ে দিতে হবে। তবে কোনো পক্ষের উসকানিতে পা দেব না কিছুতেই। দেশের অভ্যন্তরে যাতে কোনো রকম বিশৃঙ্খল অবস্থা তৈরি না হয়, সে বিষয়েও সংশ্লিষ্ট সবাইকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। দেশের এই ক্রান্তিকালে এমন কিছু করা যাবে না, যাতে কোনো সম্প্রদায়ের একজন নাগরিকও নিজেকে অনিরাপদ ভাবেন।

দেশের চলমান পরিস্থিতিতে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করতে অন্তর্বরর্তী সরকার জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছে। এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য। দেশের স্থিতিশীলতা বিনষ্টকারীদের প্রতিহত করতে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতারা। এ বৈঠকে জাতীয় ঐক্যের ডাক দেন প্রধান উপদেষ্টা।

অন্যদের বক্তব্যেও উঠে আসে ঐকমত্যের কথা।
প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানকে নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্র চলছে। দেশের বিরুদ্ধেও চলছে ষড়যন্ত্র। এ ষড়যন্ত্র রুখে দিতে সব রাজনৈতিক দলের ঐক্য জরুরি। রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারাও প্রধান উপদেষ্টাকে আশ্বস্ত করেছেন যে, দেশের সার্বভৌমত্ব, অস্তিত্ব, স্বাধীনতা ও মর্যাদা রক্ষার প্রশ্নে তারা একসঙ্গে আছেন। আমরাও মনে করি, রাজনৈতিক দলগুলোর মতাদর্শ ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে, তাদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকতে পারে; কিন্তু জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে সবার ঐক্যবদ্ধ থাকা জরুরি।

অতীতে রাজনৈতিক নেতারা মুখে ঐক্যের কথা বললেও বিভিন্ন বক্তৃতা-বিবৃতিতে এক পক্ষ আরেক পক্ষকে ঘায়েল করতেই তৎপর ছিলেন, যার পরিণাম দেশের জন্য ভালো হয়নি। বস্তুত ঐক্য হলো শক্তির প্রতীক। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার প্রশ্নে গোটা জাতি ছিল ঐক্যবদ্ধ। আর এ কারণেই সম্ভব হয়েছিল আমাদের মহান বিজয় অর্জন।

দুর্ভাগ্যজনকভাবে স্বাধীনতার পর নানা ইস্যুতে দেশ বিভক্ত হয়ে পড়ে। এই বিভক্তি দিন দিন বাড়তে বাড়তে এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে, বিভিন্ন জাতীয় ইস্যুতেও জাতি অভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে অনেক সময় ব্যর্থ হয়। আর এর সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন বৈদেশিক শক্তি দেশের ক্ষমতাসীনদের ওপর প্রভাব বিস্তার করে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করে নেয়।

এ পরিস্থিতিতে অন্তত জাতীয় ইস্যুগুলোতে ঐকমত্য জরুরি হয়ে পড়েছিল। আশার কথা, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সেই সুযোগ তৈরি হয়েছে এবং প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন।
আমরা জানি, অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। এগুলো মোকাবিলার জন্য এবং যদি কোনো বাইরের শক্তি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায় অথবা দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে চায়, তাদের প্রতিরোধ করার জন্য আমাদের অবশ্যই জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।

জাতীয় নির্বাচন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক, আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নির্ধারণসহ বিভিন্ন ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলো ও ছাত্র আন্দোলনকারীদের মধ্যে মত পার্থক্য রয়েছে। এসব মত পার্থক্যের অবসান ঘটিয়ে সবাইকে অভিন্ন সিদ্ধান্তে আসতে হবে। প্রশ্ন হতে পারে, কীভাবে এই জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠবে? জাতীয় ঐক্য গড়তে শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক কর্মী, বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটা জাতীয় সভা ডাকার কথা বলছেন অনেকে। আবার

কারো কারো মতে, জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার বিষয়ে একটি রূপরেখা তৈরি করা যেতে পারে।
আমরা মনে করিÑ দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র, জনগণ ও সম্পদের নিরাপত্তার প্রশ্নে কোনো মতভিন্নতার অবকাশ নেই। এগুলো অভিন্ন স্বার্থের বিষয়। এক্ষেত্রে কোনো রূপরেখা বা পরিকল্পনার প্রয়োজন হয় না। এসব প্রশ্নে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে দৃঢ় অবস্থান ধরে রাখতে হবে। একই সঙ্গে সতর্ক থাকতে হবে, দেশে যেন এমন কোনো অবস্থার সৃষ্টি না হয়, যা থেকে জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভাজন তৈরি হয়।

ড. ইউনূসের সরকার রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে সংস্কার এবং সবকিছু সুস্থ ধারায় ফেরানোর চেষ্টা করছেন। বিশেষ করে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সাজাচ্ছেন নিষ্ঠার সঙ্গে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জনগণের বাহিনী হিসেবে রূপান্তরের চেষ্টা করছেন। ব্যবসা-বাণিজ্যে সুস্থ ধারা ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করছেন। দেড় দশক ধরে অপরাজনীতির কুশীলবদের কাছে জিম্মি হয়েছিলেন ব্যবসায়ী সম্প্রদায়। পরিণতিতে দেশে বিনিয়োগের খরা দেখা দেয়। এর প্রভাব পড়ে বিদেশি বিনিয়োগেও। রুদ্ধ হচ্ছিল কর্মসংস্থানের সুযোগ।

সে অবস্থার উত্তরণে ব্যবসা ক্ষেত্রে আস্থার পরিবেশ গড়ে তুলতে চেষ্টা করছে বর্তমান সরকার। কর্তৃত্ববাদ ও নব্য ফ্যাসিবাদ আর কখনো যাতে মাথাচাড়া দিতে না পারে তা নিশ্চিত করা সময়ের দাবি।
বর্তমান সরকার ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফসল। দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের পটভূমিতে ছাত্র-জনতার এই আন্দোলন সফল হয়েছে। তাই এই সরকারের প্রতি সবার সমর্থন রয়েছে।

ফলে এসব অন্যায়ের আইনি প্রতিকারে জাতীয় ঐকমত্যে পৌঁছানোও জরুরি। যে কোনো বিজয় অর্জন যত সোজা তা ধরে রাখা ততটাই কঠিন। এ ব্যাপারে ১৮ কোটি মানুষকে সচেতন হতে হবে; দিতে হবে সুবুদ্ধি ও সুবিবেচনার পরিচয়। ছাত্র-জনতার যুগপৎ বিপ্লবের মাধ্যমে দেশে স্বৈরাচারী ও ফ্যাসীবাদী শাসনের অবসান হয়েছে।

দেশে ফিরে আসছে ইতিবাচক পরিবেশ। শত-সহস্র প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এই গৌরবের বিজয়। তাই এ বিজয়কে কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেয়া যাবে না; বরং নতুন এ বিপ্লবকে মানুষের সত্যিকারের মুক্তির বিপ্লব, শান্তির বিপ্লব, নিরাপত্তার বিপ্লব, উন্নতির বিপ্লব, সমৃদ্ধির বিপ্লব, ভালোবাসার বিপ্লব ও সম্প্রীতির বিপ্লবে পরিণত করে দেশকে কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করতে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ফ্যাসিবাদ ও বাকশালী অপশক্তি যেন মাথাচাড়া দিতে না পারে এদিকে খেয়াল রাখতে হবে। লেখক: কলামিস্ট ও চবি অ্যালামনাই বসুন্ধরা, সভাপতি এবং সাবেক ট্রাস্টি, বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জাতীয় স্বার্থে সবার ঐক্যবদ্ধ থাকা জরুরি

আপডেট সময় : ০৫:০৫:১৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫

দয়াল কুমার বড়ুয়া :জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এরপর থেকেই স্বার্থান্বেষী মহল নানা অঘটন ঘটানোর চেষ্টা করে আসছে। এরই অংশ হিসেবে দেশের ভেতরে ও সীমান্তের ওপারে চলছে অপপ্রচার ও উসকানি। এ অবস্থায় প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য। বাংলাদেশের মানুষ যে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক সমাজের স্বপ্ন দেখে, সেটি তখনই সম্ভব হবে যখন রাষ্ট্রীয় নীতি পরিকল্পনা গ্রহণ ও এর বাস্তবায়নে ধম- জাতি নির্বিশেষে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যাবে। কাউকে পেছনে ফেলে কিংবা অগ্রাহ্য করে গণতান্ত্রিক ও সমতাভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ে তোলা যাবে না।

বর্তমান সরকার ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফসল। দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের পটভূমিতে ছাত্র-জনতার এই আন্দোলন সফল হয়েছে। তাই এই সরকারের প্রতি সকলের সমর্থন রয়েছে। তাই এসব অন্যায়ের আইনি প্রতিকারে জাতীয় ঐকমত্যে পৌঁছানোও জরুরি। যে কোনো বিজয় অর্জন যত সোজা তা ধরে রাখা ততটাই কঠিন। এ ব্যাপারে ১৮ কোটি মানুষকে সচেতন হতে হবে।
আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ একটি কঠিন সময় অতিক্রম করছে।

প্রতিবেশী দেশ কিংবা পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকেই অপপ্রচার আসুক না কেন, আমরা সঠিক তথ্য দিয়ে তা খণ্ডন করব। তাদেরকে তাদের ভুল ধরিয়ে দিতে হবে। তবে কোনো পক্ষের উসকানিতে পা দেব না কিছুতেই। দেশের অভ্যন্তরে যাতে কোনো রকম বিশৃঙ্খল অবস্থা তৈরি না হয়, সে বিষয়েও সংশ্লিষ্ট সবাইকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। দেশের এই ক্রান্তিকালে এমন কিছু করা যাবে না, যাতে কোনো সম্প্রদায়ের একজন নাগরিকও নিজেকে অনিরাপদ ভাবেন।

দেশের চলমান পরিস্থিতিতে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করতে অন্তর্বরর্তী সরকার জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছে। এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য। দেশের স্থিতিশীলতা বিনষ্টকারীদের প্রতিহত করতে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতারা। এ বৈঠকে জাতীয় ঐক্যের ডাক দেন প্রধান উপদেষ্টা।

অন্যদের বক্তব্যেও উঠে আসে ঐকমত্যের কথা।
প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানকে নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্র চলছে। দেশের বিরুদ্ধেও চলছে ষড়যন্ত্র। এ ষড়যন্ত্র রুখে দিতে সব রাজনৈতিক দলের ঐক্য জরুরি। রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারাও প্রধান উপদেষ্টাকে আশ্বস্ত করেছেন যে, দেশের সার্বভৌমত্ব, অস্তিত্ব, স্বাধীনতা ও মর্যাদা রক্ষার প্রশ্নে তারা একসঙ্গে আছেন। আমরাও মনে করি, রাজনৈতিক দলগুলোর মতাদর্শ ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে, তাদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকতে পারে; কিন্তু জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে সবার ঐক্যবদ্ধ থাকা জরুরি।

অতীতে রাজনৈতিক নেতারা মুখে ঐক্যের কথা বললেও বিভিন্ন বক্তৃতা-বিবৃতিতে এক পক্ষ আরেক পক্ষকে ঘায়েল করতেই তৎপর ছিলেন, যার পরিণাম দেশের জন্য ভালো হয়নি। বস্তুত ঐক্য হলো শক্তির প্রতীক। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার প্রশ্নে গোটা জাতি ছিল ঐক্যবদ্ধ। আর এ কারণেই সম্ভব হয়েছিল আমাদের মহান বিজয় অর্জন।

দুর্ভাগ্যজনকভাবে স্বাধীনতার পর নানা ইস্যুতে দেশ বিভক্ত হয়ে পড়ে। এই বিভক্তি দিন দিন বাড়তে বাড়তে এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে, বিভিন্ন জাতীয় ইস্যুতেও জাতি অভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে অনেক সময় ব্যর্থ হয়। আর এর সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন বৈদেশিক শক্তি দেশের ক্ষমতাসীনদের ওপর প্রভাব বিস্তার করে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করে নেয়।

এ পরিস্থিতিতে অন্তত জাতীয় ইস্যুগুলোতে ঐকমত্য জরুরি হয়ে পড়েছিল। আশার কথা, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সেই সুযোগ তৈরি হয়েছে এবং প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন।
আমরা জানি, অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। এগুলো মোকাবিলার জন্য এবং যদি কোনো বাইরের শক্তি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায় অথবা দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে চায়, তাদের প্রতিরোধ করার জন্য আমাদের অবশ্যই জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।

জাতীয় নির্বাচন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক, আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নির্ধারণসহ বিভিন্ন ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলো ও ছাত্র আন্দোলনকারীদের মধ্যে মত পার্থক্য রয়েছে। এসব মত পার্থক্যের অবসান ঘটিয়ে সবাইকে অভিন্ন সিদ্ধান্তে আসতে হবে। প্রশ্ন হতে পারে, কীভাবে এই জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠবে? জাতীয় ঐক্য গড়তে শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক কর্মী, বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটা জাতীয় সভা ডাকার কথা বলছেন অনেকে। আবার

কারো কারো মতে, জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার বিষয়ে একটি রূপরেখা তৈরি করা যেতে পারে।
আমরা মনে করিÑ দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র, জনগণ ও সম্পদের নিরাপত্তার প্রশ্নে কোনো মতভিন্নতার অবকাশ নেই। এগুলো অভিন্ন স্বার্থের বিষয়। এক্ষেত্রে কোনো রূপরেখা বা পরিকল্পনার প্রয়োজন হয় না। এসব প্রশ্নে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে দৃঢ় অবস্থান ধরে রাখতে হবে। একই সঙ্গে সতর্ক থাকতে হবে, দেশে যেন এমন কোনো অবস্থার সৃষ্টি না হয়, যা থেকে জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভাজন তৈরি হয়।

ড. ইউনূসের সরকার রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে সংস্কার এবং সবকিছু সুস্থ ধারায় ফেরানোর চেষ্টা করছেন। বিশেষ করে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সাজাচ্ছেন নিষ্ঠার সঙ্গে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জনগণের বাহিনী হিসেবে রূপান্তরের চেষ্টা করছেন। ব্যবসা-বাণিজ্যে সুস্থ ধারা ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করছেন। দেড় দশক ধরে অপরাজনীতির কুশীলবদের কাছে জিম্মি হয়েছিলেন ব্যবসায়ী সম্প্রদায়। পরিণতিতে দেশে বিনিয়োগের খরা দেখা দেয়। এর প্রভাব পড়ে বিদেশি বিনিয়োগেও। রুদ্ধ হচ্ছিল কর্মসংস্থানের সুযোগ।

সে অবস্থার উত্তরণে ব্যবসা ক্ষেত্রে আস্থার পরিবেশ গড়ে তুলতে চেষ্টা করছে বর্তমান সরকার। কর্তৃত্ববাদ ও নব্য ফ্যাসিবাদ আর কখনো যাতে মাথাচাড়া দিতে না পারে তা নিশ্চিত করা সময়ের দাবি।
বর্তমান সরকার ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফসল। দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের পটভূমিতে ছাত্র-জনতার এই আন্দোলন সফল হয়েছে। তাই এই সরকারের প্রতি সবার সমর্থন রয়েছে।

ফলে এসব অন্যায়ের আইনি প্রতিকারে জাতীয় ঐকমত্যে পৌঁছানোও জরুরি। যে কোনো বিজয় অর্জন যত সোজা তা ধরে রাখা ততটাই কঠিন। এ ব্যাপারে ১৮ কোটি মানুষকে সচেতন হতে হবে; দিতে হবে সুবুদ্ধি ও সুবিবেচনার পরিচয়। ছাত্র-জনতার যুগপৎ বিপ্লবের মাধ্যমে দেশে স্বৈরাচারী ও ফ্যাসীবাদী শাসনের অবসান হয়েছে।

দেশে ফিরে আসছে ইতিবাচক পরিবেশ। শত-সহস্র প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এই গৌরবের বিজয়। তাই এ বিজয়কে কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেয়া যাবে না; বরং নতুন এ বিপ্লবকে মানুষের সত্যিকারের মুক্তির বিপ্লব, শান্তির বিপ্লব, নিরাপত্তার বিপ্লব, উন্নতির বিপ্লব, সমৃদ্ধির বিপ্লব, ভালোবাসার বিপ্লব ও সম্প্রীতির বিপ্লবে পরিণত করে দেশকে কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করতে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ফ্যাসিবাদ ও বাকশালী অপশক্তি যেন মাথাচাড়া দিতে না পারে এদিকে খেয়াল রাখতে হবে। লেখক: কলামিস্ট ও চবি অ্যালামনাই বসুন্ধরা, সভাপতি এবং সাবেক ট্রাস্টি, বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট