নিজস্ব প্রতিবেদক: উপদেষ্টা পরিষদ অনুমোদিত জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশ, ২০২৫-এ বৈষম্যমূলক ধারা সংশোধনের আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি বলছে, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশ, ২০২৫-এ বৈষম্যমূলক কমিশন গঠনে সহায়ক এবং প্রতিষ্ঠানটির স্বাধীন ও কার্যকর কার্যক্রম পরিচালনায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে। এমন ধারা অব্যাহত থাকায় টিআইবি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
রোববার (২ নভেম্বর) এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, জন্মলগ্ন থেকে কমিশনের অকার্যকরতার অভিজ্ঞতা বিবেচনায় নিয়ে টিআইবিসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনের দেওয়া অনেক প্রস্তাব অনুমোদিত খসড়ায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করা হলেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী গৃহীত হয়নি; যা কমিশনের কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে আরো শক্তিশালী ও কার্যকর করার লক্ষ্যে গত ৩১ অক্টোবর নতুন জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশ অনুমোদন করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ।
তিনি বলেন, কমিশনের চেয়ারম্যানসহ সাত সদস্যের মধ্যে দুজনকে খণ্ডকালীন নিয়োগের বিধান বৈষম্যমূলক এবং সদস্যদের মর্যাদা ও এখতিয়ারে বৈষম্য সৃষ্টি করে, যা কমিশনের অকার্যকরতার অন্যতম কারণ। সব কমিশনারের পদমর্যাদা ও সুবিধার সমতা নিশ্চিত করা জরুরি।
ড. ইফতেখারুজ্জামান আরো বলেন, স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় চেয়ারম্যান ও কমিশনার বাছাইয়ের পর প্রাথমিকভাবে মনোনীত প্রার্থীদের নাম প্রকাশের প্রস্তাব দেওয়া হলেও তা গ্রহণ করা হয়নি।
একইভাবে কোনো সংস্থার আটক স্থান আইনবহির্ভূত বিবেচিত হলে তা বন্ধ করা ও দায়ীদের জবাবদিহি নিশ্চিতের প্রস্তাবও উপেক্ষিত হয়েছে, যা টিআইবির মতে হতাশাজনক।
তিনি বলেন, কোনো আইন মানবাধিকার সংরক্ষণের পরিপন্থী হলে কমিশনকে তা পর্যালোচনা করে সরকারের কাছে সংশোধনের সুপারিশ করার সুযোগ থাকা উচিত ছিল। পাশাপাশি ধারা ১৪-তে এই আইনকে মানবাধিকারসংক্রান্ত অন্যান্য আইনের ওপর প্রাধান্য দেওয়ার বিধান থাকলে সাংঘর্ষিক পরিস্থিতিতে কমিশনের ভূমিকা শক্তিশালী হতো।
বিবৃতিতে টিআইবি উল্লেখ করে, সব অভিযোগে প্রাথমিক অনুসন্ধান বাধ্যতামূলক রাখার বিধান কমিশনের কাজে দীর্ঘসূত্রতা বাড়াবে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকারদের জন্য হয়রানি ও ন্যায়বিচার প্রাপ্তি আরো দুরূহ করবে।
এ ছাড়া কমিশনে বা তদন্ত দলে প্রেষণে নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারি কর্মচারীর সংখ্যা সর্বোচ্চ ১০ শতাংশে সীমিত করা, প্রেষণ প্রক্রিয়ায় কমিশনের মতামত বাধ্যতামূলক করা এবং এসব পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া সবার জন্য উন্মুক্ত ও যোগ্যতার ভিত্তিতে রাখার সুপারিশও বিবেচিত হয়নি বলে টিআইবি জানায়।
সংস্থাটি আরো প্রস্তাব করে, কমিশনের বাৎসরিক আর্থিক নিরীক্ষা সম্পন্নের পর প্রতিবেদনটি ওয়েবসাইটে প্রকাশের বাধ্যবাধকতা থাকা উচিত, যেন প্রতিষ্ঠানটির জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা আরও সুসংহত হয়।
টিআইবির মতে, গ্লোবাল অ্যাসোসিয়েশন অব ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস ইনস্টিটিউশনসের মানদণ্ড অনুসারে কমিশনকে স্বাধীন, কার্যকর ও বিশ্বাসযোগ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের উচিত অধ্যাদেশটি দ্রুত সংশোধন করা।
ওআ/আপ্র/২/১১/২০২৫
























