ঢাকা ০২:৩৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশে বিএনপি নেতা জাহিদ জাতীয় নির্বাচনের জন্যই গণতন্ত্রের লড়াই

  • আপডেট সময় : ০৯:০২:২১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫
  • ১৮ বার পড়া হয়েছে

শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশে কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন -ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে গণতন্ত্র যাতে না ফেরে, সেজন্য ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন। তিনি বলেছেন, “আমাদের ভেতরে যারা আজকে গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করতে চায়, সেই ষড়যন্ত্রকারীরাও ঘাপটি মেরে আছে; তাদের চরিত্র উন্মোচন করা আজকে আমাদের দায়িত্ব। মিটফোর্ডের ঘটনার পর দ্রুততার সাথে বিএনপি ও তার অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এবং দাবি তুলেছে দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।
তার পরেও আমাদের নেতা তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ট্যাগিং করা হচ্ছে। আপনারা একবারও ভাবেন না আপনারা কী করছেন? আপনারা কেন আগুন নিয়ে খেলার চেষ্টা করছেন, অন্যের ক্রীড়ানক হয়ে কেন আপনারা দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে বিনষ্ট করার চেষ্টা করছেন। সকলকে সতর্ক থাকতে হবে, সকলকে ধৈর্য ধরতে হবে। ওদের (ষড়যন্ত্রকারীদের) উসকানিতে পা দেওয়া যাবে না।

শুক্রবার (১৮ জুলাই) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। ঐক্য বিনষ্টকারীদের উদ্দেশে অধ্যাপক জাহিদ বলেন, “রাজনীতি করুন, ময়দানে আসুন। বিএনপি ও সমমনা দলগুলো একত্রিত কর্মসূচি নিয়ে এসেছে। আপনাদের কী কর্মসূচি আছে, সেটি নিয়ে আসুন। কর্মসূচির নামের খবর নাই। কথায় কথায় পিআর (সংখ্যানুপাতিক হারে ভোট ব্যবস্থা) বলবেন, কথায় কথায় স্থানীয় সরকার নির্বাচন চাই।

আরে ভাই, গণতন্ত্রের লড়াই জাতীয় নির্বাচনের জন্য। স্থানীয় সরকারের নির্বাচনের জন্য গণতন্ত্রের লড়াই হয় না। আর পিআর পদ্ধতি বাংলাদেশে ৫৪ বছর কেন, ১৫৪ বছরেও কোনো প্র্যাকটিস হয় নাই। আজকে কেন এই সমস্ত কথা বলে বিবাদ-দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করছেন। তার অর্থ হচ্ছে আপনারা গণতন্ত্রকে প্রলম্বিত করতে চান, গণতন্ত্র যাতে ফিরে না আসে; তাহলে হয়ত আপনাদের অন্য সুবিধা আছে। তিনি বলেন, মনে রাখবেন, জনগণকে ক্ষমতাহীন করে বেশি দিন যদি রাখতে চান, এই জনগণ কিন্তু ফুঁসে উঠবে। তখন সেই আগুনে আপনারা জ্বলের পুড়ে ছারখার হয়ে যাবেন। আমি সকলকে উদাত্ত কণ্ঠে আহ্বান জানাতে চাই, ধৈর্য ধরুন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে স্বৈরাচারকে যেমন রুখেছি, তারা পালিয়ে গেছে এবং একইভাবে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার যে লড়াই- সেই লড়াইয়ে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে। কোনো অবস্থাতেই ষড়যন্ত্রকারীরা কামিয়াবি হবে না।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের উদ্যোগে দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিনষ্টের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে এই সমাবেশ হয়। সমাবেশের পর বের করা মৌন মিছিল কদম ফোয়ারা চত্বর ঘুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এসে শেষ হয়।

গোপালগঞ্জে কেন এরকম হলো: এনসিপির কর্মসূচির প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, মার্চ ফর গোপালগঞ্জ বলেন, আর পদযাত্রা বলেন, আমি তো বলি, সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সরকার নিদারুণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। কারণ এই গোপালগঞ্জ- আপনাদের খেয়াল আছে, কোটালিপাড়ায় বোমার হামলার কথা,, প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) থাকা অবস্থায় উনার এখানে এতো কিছু থাকার পরে কীভাবে বোমা ফুটল? সেখানে তখন কোথায় ছিল গোয়েন্দা বাহিনী। অর্থাৎ ষড়যন্ত্র যদি না হয়, তাহলে এরকম ঘটনা ঘটানো যায় না। তিনি বলেন, গতকালকে তো ফরিদপুরে সুন্দর প্রোগ্রাম হলো, সেখানে তো কিছু হলো না..গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজবাড়ী- সবই তো কাছাকাছি। আপনারা নড়াইল গেলেন- কিছু হলো না; সারা বাংলাদেশ ঘুরে বেড়াচ্ছেন, কোথাও কিছু হয় নাই- ওখানে কেন হচ্ছে?

কাজেই মনে রাখতে হবে স্বৈরাচারের দোসরদের ওপর দোষ চাপাচ্ছি, ঠিক আছে। কিন্তু আমাদের ভেতরে যারা আজকে গণতন্ত্রকে নসাৎ করতে চায়, সেই ষড়যন্ত্রকারীরাও ঘাপটি মেরে আছে; তাদের চরিত্র উন্মোচন করা আজকে আমাদের দায়িত্ব।

 

ঐক্য বিনষ্ট করলে কী হয় কিছু আলামত পাওয়া যাচ্ছে: অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে পেশাজীবীদের অবদানকে ছোট করে দেখার সুযোগ নাই। আজকে মনে রাখতে হবে, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে রাজনীতিবিদরাও ছিলেন, পেশাজীবীরাও ছিলেন এবং আছেন। এই অবস্থায় আমরা যখন দেখতে পাই রাজনীতিবিদদের মধ্যে ছোট ছোট স্বার্থের জন্য অনৈক্য, তখন আমরা হতাশাগ্রস্ত হই। আমরা সাবধান করে দেই, আপনারা (রাজনীতিবিদরা) দ্বিধা-বিভক্ত হবেন না। আপনারা ঐক্য বিনষ্ট করবেন না। ঐক্য বিনষ্ট করলে কী হয়, সেটি সত্যিকার অর্থেই কিছু আলামত পাওয়া যাচ্ছে। তিনি বলেন, জুলাই আন্দোলনে তো কোনো ধরনের অনৈক্য ছিল না, এক কাতারে ছিলাম। তারপরে যখন আমরা দেখলাম, প্রধান উপদেষ্টা বললেন, ‘শুধুমাত্র এরা (ছাত্ররা) আমাকে ক্ষমতায় বসিয়েছে’; তখন বিভক্তি শুরু হলো। কারণ আন্দোলনে যারা ছিলেন, তখন সেই আন্দোলনে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, পেশাজীবীরা নিজেরা নিজেদেরকে অত্যন্ত ছোট মনে করলেন। আমরা ইউনূস সাহেবের কাছ থেকে বড় কিছু আশা করেছিলাম। তার পরও আমরা সবাই মিলে উনার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সমর্থন দিয়েছি এবং দিয়ে যাচ্ছি।

মবজাস্টিস প্রসঙ্গে: জাহিদ বলেন, যেকথাগুলো মাঠে এসেছেৃমবোক্রেসি অথবা মবজাস্টিস। যখনই কোনো বিনা বিচারে কিছু হচ্ছে; বলা হচ্ছে- ‘কঠোরভাবে দমন করা হবে’। কিন্তু কঠোরতার কিছুই দেখা যাচ্ছে না। মাঠে সেনাবাহিনী ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার নিয়ে আছে, র‌্যাব আছে, বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থাকার পরেও আজকে দুষ্কৃতিকারীরা কীভাবে সেই মিটফোর্ড বলেন, মুরাদনগর বলেন, খুলনা বলেন, কক্সবাজার বলেন, সেই পটিয়া বলেন, সেই পাটগ্রাম বলেন, কচুয়া বলেন এবং গোপালগঞ্জের সর্বশেষ ঘটনা বলেন। কীভাবে এসব ঘটনা ঘটলো, আজকে দেশের মানুষ জানতে চায়। আপনারা কি এই সমস্ত ঘটনা সত্যি সত্যি প্রতিরোধ করার জন্য আন্তরিক? না, সত্যি আপনারা মুখে এক কথা বলেন, আরেক কথা মনে মনে পোষণ করেন। তিনি বলেন, অনেক উপদেষ্টার কথা শুনলে মনে হয়, যেন উনারা সারা জীবন ক্ষমতায় থাকবেন, জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি। কিন্তু মনে রাখতে হবে- আপনারা জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি নন; আন্দোলন-সংগ্রামে যারা ছিলেন, তাদের সমর্থিত হয়ে একটি নির্ধারিত সময়ের জন্য নির্ধারিত দায়িত্ব পালনে আপনারা দায়িত্ব নিয়েছেন। এই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করলে জনগণ আপনাদেরকে ফুলের মালা দেবে। আর যদি ব্যর্থ হন, অর্থাৎ গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে আপনারা যদি টালবাহানা করেন; মনে রাখবেন যেই জনগণ স্বৈরাচারকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করে, সেই জনগণ আগামী দিনে কোন ইতিহাস সৃষ্টি করবে- সেটি আপনাদের মনে রাখা উচিত। কোনো অবস্থাতেই এমন কোনো অনৈক্যের কথা বলবেন না, এমন কোনো দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে জড়াবেন না। মনে রাখবেন ওই কথাটি যে- ‘দিল্লিও নয়, পিন্ডিও নয়, সিদ্ধান্ত হবে বাংলাদেশে, সবার আগে বাংলাদেশ’।

এটা কিসের আলামত: গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য সুব্রত চৌধুরী বলেন, গোপালগঞ্জের ঘটনায় তদন্ত কমিটিকে সময় দিয়েছে ১৫ দিন। এটা কি জাতির সাথে মশকরা করেন? তদন্ত তো দুইদিনে রিপোর্ট দিতে পারেন, বড়জোর নইলে এক সপ্তাহ। ১৫ দিন করার মানে কী? কারণ ঘটনা ঘটিয়েছে এনসিপি। তোমরা সারা দেশে পদযাত্রা করছো…হঠাৎ করে বলছ, ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’। এটার উদ্দেশ্য কী? এখন আরো উত্তেজক বক্তব্য দিচ্ছে। বাংলাদেশে একটা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবেশ সৃষ্টির জন্য…এনসিপিসহ কয়েকটি দল বলছে যে, ‘বাংলাদেশে নির্বাচন করার কোনো পরিবেশ নাই’। এটা কিসের আলামত? দয়া করে এসব বন্ধ রাখেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের লালিত এই সংগঠন সারাদেশে যে উত্তেজনা সৃষ্টি করছে, দয়া করে আগামী দিনে বাংলাদেশকে আরেকটি বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দেবেন না অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সাহেব। আপনারা নোবেল পেয়েছেন, নোবেল লরেটের মতো কাজ করেন। কিন্তু যে ধরনের ঘটনাবলী আপনি এখানে সৃষ্টি করছেন, মবজাস্টিসের নামে মানুষের ন্যায্য বিচার অধিকার পাওয়ার থেকে বঞ্চিত করছেন। এটা বাংলাদেশের পক্ষে যাবে না। আমরা পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ আমরা বলছি, জনাব ইউনূস সাহেব- সময় থাকতে বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষা বুঝে দ্রুত সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা নিন। নইলে আপনিও ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিনের মতো পালিয়ে যেতে বাধ্য হবেন; আমরা আপনাদেরকে হুঁশিয়ার করে দিচ্ছি।

সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য আবদুল কাদের চৌধুরী সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পেশাজীবী নেতা সৈয়দ আলমগীর, এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, লুৎফুর রহমান, শামসুল আলম সেলিম, আবদুল বারী, সেলিম ভুঁইয়া, শামীমুর রহমান শামীম, এ এস হায়দার পারভেজ, রফিকুল কবীর লাবু, রফিকুল ইসলাম, রাশেদুল হক।

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশে বিএনপি নেতা জাহিদ জাতীয় নির্বাচনের জন্যই গণতন্ত্রের লড়াই

আপডেট সময় : ০৯:০২:২১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে গণতন্ত্র যাতে না ফেরে, সেজন্য ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন। তিনি বলেছেন, “আমাদের ভেতরে যারা আজকে গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করতে চায়, সেই ষড়যন্ত্রকারীরাও ঘাপটি মেরে আছে; তাদের চরিত্র উন্মোচন করা আজকে আমাদের দায়িত্ব। মিটফোর্ডের ঘটনার পর দ্রুততার সাথে বিএনপি ও তার অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এবং দাবি তুলেছে দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।
তার পরেও আমাদের নেতা তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ট্যাগিং করা হচ্ছে। আপনারা একবারও ভাবেন না আপনারা কী করছেন? আপনারা কেন আগুন নিয়ে খেলার চেষ্টা করছেন, অন্যের ক্রীড়ানক হয়ে কেন আপনারা দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে বিনষ্ট করার চেষ্টা করছেন। সকলকে সতর্ক থাকতে হবে, সকলকে ধৈর্য ধরতে হবে। ওদের (ষড়যন্ত্রকারীদের) উসকানিতে পা দেওয়া যাবে না।

শুক্রবার (১৮ জুলাই) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। ঐক্য বিনষ্টকারীদের উদ্দেশে অধ্যাপক জাহিদ বলেন, “রাজনীতি করুন, ময়দানে আসুন। বিএনপি ও সমমনা দলগুলো একত্রিত কর্মসূচি নিয়ে এসেছে। আপনাদের কী কর্মসূচি আছে, সেটি নিয়ে আসুন। কর্মসূচির নামের খবর নাই। কথায় কথায় পিআর (সংখ্যানুপাতিক হারে ভোট ব্যবস্থা) বলবেন, কথায় কথায় স্থানীয় সরকার নির্বাচন চাই।

আরে ভাই, গণতন্ত্রের লড়াই জাতীয় নির্বাচনের জন্য। স্থানীয় সরকারের নির্বাচনের জন্য গণতন্ত্রের লড়াই হয় না। আর পিআর পদ্ধতি বাংলাদেশে ৫৪ বছর কেন, ১৫৪ বছরেও কোনো প্র্যাকটিস হয় নাই। আজকে কেন এই সমস্ত কথা বলে বিবাদ-দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করছেন। তার অর্থ হচ্ছে আপনারা গণতন্ত্রকে প্রলম্বিত করতে চান, গণতন্ত্র যাতে ফিরে না আসে; তাহলে হয়ত আপনাদের অন্য সুবিধা আছে। তিনি বলেন, মনে রাখবেন, জনগণকে ক্ষমতাহীন করে বেশি দিন যদি রাখতে চান, এই জনগণ কিন্তু ফুঁসে উঠবে। তখন সেই আগুনে আপনারা জ্বলের পুড়ে ছারখার হয়ে যাবেন। আমি সকলকে উদাত্ত কণ্ঠে আহ্বান জানাতে চাই, ধৈর্য ধরুন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে স্বৈরাচারকে যেমন রুখেছি, তারা পালিয়ে গেছে এবং একইভাবে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার যে লড়াই- সেই লড়াইয়ে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে। কোনো অবস্থাতেই ষড়যন্ত্রকারীরা কামিয়াবি হবে না।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের উদ্যোগে দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিনষ্টের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে এই সমাবেশ হয়। সমাবেশের পর বের করা মৌন মিছিল কদম ফোয়ারা চত্বর ঘুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এসে শেষ হয়।

গোপালগঞ্জে কেন এরকম হলো: এনসিপির কর্মসূচির প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, মার্চ ফর গোপালগঞ্জ বলেন, আর পদযাত্রা বলেন, আমি তো বলি, সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সরকার নিদারুণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। কারণ এই গোপালগঞ্জ- আপনাদের খেয়াল আছে, কোটালিপাড়ায় বোমার হামলার কথা,, প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) থাকা অবস্থায় উনার এখানে এতো কিছু থাকার পরে কীভাবে বোমা ফুটল? সেখানে তখন কোথায় ছিল গোয়েন্দা বাহিনী। অর্থাৎ ষড়যন্ত্র যদি না হয়, তাহলে এরকম ঘটনা ঘটানো যায় না। তিনি বলেন, গতকালকে তো ফরিদপুরে সুন্দর প্রোগ্রাম হলো, সেখানে তো কিছু হলো না..গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজবাড়ী- সবই তো কাছাকাছি। আপনারা নড়াইল গেলেন- কিছু হলো না; সারা বাংলাদেশ ঘুরে বেড়াচ্ছেন, কোথাও কিছু হয় নাই- ওখানে কেন হচ্ছে?

কাজেই মনে রাখতে হবে স্বৈরাচারের দোসরদের ওপর দোষ চাপাচ্ছি, ঠিক আছে। কিন্তু আমাদের ভেতরে যারা আজকে গণতন্ত্রকে নসাৎ করতে চায়, সেই ষড়যন্ত্রকারীরাও ঘাপটি মেরে আছে; তাদের চরিত্র উন্মোচন করা আজকে আমাদের দায়িত্ব।

 

ঐক্য বিনষ্ট করলে কী হয় কিছু আলামত পাওয়া যাচ্ছে: অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে পেশাজীবীদের অবদানকে ছোট করে দেখার সুযোগ নাই। আজকে মনে রাখতে হবে, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে রাজনীতিবিদরাও ছিলেন, পেশাজীবীরাও ছিলেন এবং আছেন। এই অবস্থায় আমরা যখন দেখতে পাই রাজনীতিবিদদের মধ্যে ছোট ছোট স্বার্থের জন্য অনৈক্য, তখন আমরা হতাশাগ্রস্ত হই। আমরা সাবধান করে দেই, আপনারা (রাজনীতিবিদরা) দ্বিধা-বিভক্ত হবেন না। আপনারা ঐক্য বিনষ্ট করবেন না। ঐক্য বিনষ্ট করলে কী হয়, সেটি সত্যিকার অর্থেই কিছু আলামত পাওয়া যাচ্ছে। তিনি বলেন, জুলাই আন্দোলনে তো কোনো ধরনের অনৈক্য ছিল না, এক কাতারে ছিলাম। তারপরে যখন আমরা দেখলাম, প্রধান উপদেষ্টা বললেন, ‘শুধুমাত্র এরা (ছাত্ররা) আমাকে ক্ষমতায় বসিয়েছে’; তখন বিভক্তি শুরু হলো। কারণ আন্দোলনে যারা ছিলেন, তখন সেই আন্দোলনে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, পেশাজীবীরা নিজেরা নিজেদেরকে অত্যন্ত ছোট মনে করলেন। আমরা ইউনূস সাহেবের কাছ থেকে বড় কিছু আশা করেছিলাম। তার পরও আমরা সবাই মিলে উনার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সমর্থন দিয়েছি এবং দিয়ে যাচ্ছি।

মবজাস্টিস প্রসঙ্গে: জাহিদ বলেন, যেকথাগুলো মাঠে এসেছেৃমবোক্রেসি অথবা মবজাস্টিস। যখনই কোনো বিনা বিচারে কিছু হচ্ছে; বলা হচ্ছে- ‘কঠোরভাবে দমন করা হবে’। কিন্তু কঠোরতার কিছুই দেখা যাচ্ছে না। মাঠে সেনাবাহিনী ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার নিয়ে আছে, র‌্যাব আছে, বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থাকার পরেও আজকে দুষ্কৃতিকারীরা কীভাবে সেই মিটফোর্ড বলেন, মুরাদনগর বলেন, খুলনা বলেন, কক্সবাজার বলেন, সেই পটিয়া বলেন, সেই পাটগ্রাম বলেন, কচুয়া বলেন এবং গোপালগঞ্জের সর্বশেষ ঘটনা বলেন। কীভাবে এসব ঘটনা ঘটলো, আজকে দেশের মানুষ জানতে চায়। আপনারা কি এই সমস্ত ঘটনা সত্যি সত্যি প্রতিরোধ করার জন্য আন্তরিক? না, সত্যি আপনারা মুখে এক কথা বলেন, আরেক কথা মনে মনে পোষণ করেন। তিনি বলেন, অনেক উপদেষ্টার কথা শুনলে মনে হয়, যেন উনারা সারা জীবন ক্ষমতায় থাকবেন, জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি। কিন্তু মনে রাখতে হবে- আপনারা জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি নন; আন্দোলন-সংগ্রামে যারা ছিলেন, তাদের সমর্থিত হয়ে একটি নির্ধারিত সময়ের জন্য নির্ধারিত দায়িত্ব পালনে আপনারা দায়িত্ব নিয়েছেন। এই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করলে জনগণ আপনাদেরকে ফুলের মালা দেবে। আর যদি ব্যর্থ হন, অর্থাৎ গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে আপনারা যদি টালবাহানা করেন; মনে রাখবেন যেই জনগণ স্বৈরাচারকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করে, সেই জনগণ আগামী দিনে কোন ইতিহাস সৃষ্টি করবে- সেটি আপনাদের মনে রাখা উচিত। কোনো অবস্থাতেই এমন কোনো অনৈক্যের কথা বলবেন না, এমন কোনো দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে জড়াবেন না। মনে রাখবেন ওই কথাটি যে- ‘দিল্লিও নয়, পিন্ডিও নয়, সিদ্ধান্ত হবে বাংলাদেশে, সবার আগে বাংলাদেশ’।

এটা কিসের আলামত: গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য সুব্রত চৌধুরী বলেন, গোপালগঞ্জের ঘটনায় তদন্ত কমিটিকে সময় দিয়েছে ১৫ দিন। এটা কি জাতির সাথে মশকরা করেন? তদন্ত তো দুইদিনে রিপোর্ট দিতে পারেন, বড়জোর নইলে এক সপ্তাহ। ১৫ দিন করার মানে কী? কারণ ঘটনা ঘটিয়েছে এনসিপি। তোমরা সারা দেশে পদযাত্রা করছো…হঠাৎ করে বলছ, ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’। এটার উদ্দেশ্য কী? এখন আরো উত্তেজক বক্তব্য দিচ্ছে। বাংলাদেশে একটা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবেশ সৃষ্টির জন্য…এনসিপিসহ কয়েকটি দল বলছে যে, ‘বাংলাদেশে নির্বাচন করার কোনো পরিবেশ নাই’। এটা কিসের আলামত? দয়া করে এসব বন্ধ রাখেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের লালিত এই সংগঠন সারাদেশে যে উত্তেজনা সৃষ্টি করছে, দয়া করে আগামী দিনে বাংলাদেশকে আরেকটি বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দেবেন না অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সাহেব। আপনারা নোবেল পেয়েছেন, নোবেল লরেটের মতো কাজ করেন। কিন্তু যে ধরনের ঘটনাবলী আপনি এখানে সৃষ্টি করছেন, মবজাস্টিসের নামে মানুষের ন্যায্য বিচার অধিকার পাওয়ার থেকে বঞ্চিত করছেন। এটা বাংলাদেশের পক্ষে যাবে না। আমরা পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ আমরা বলছি, জনাব ইউনূস সাহেব- সময় থাকতে বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষা বুঝে দ্রুত সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা নিন। নইলে আপনিও ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিনের মতো পালিয়ে যেতে বাধ্য হবেন; আমরা আপনাদেরকে হুঁশিয়ার করে দিচ্ছি।

সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য আবদুল কাদের চৌধুরী সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পেশাজীবী নেতা সৈয়দ আলমগীর, এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, লুৎফুর রহমান, শামসুল আলম সেলিম, আবদুল বারী, সেলিম ভুঁইয়া, শামীমুর রহমান শামীম, এ এস হায়দার পারভেজ, রফিকুল কবীর লাবু, রফিকুল ইসলাম, রাশেদুল হক।