ঢাকা ১১:১৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৬ জুন ২০২৫

জাতীয় চার নেতাসহ মুজিবনগর সরকারের নেতারা মুক্তিযোদ্ধা, ইতিহাস পরিবর্তন করা যায় না: উপদেষ্টা

  • আপডেট সময় : ০৫:০৭:৪০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ জুন ২০২৫
  • ১৪ বার পড়া হয়েছে

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম -ছবি সংগৃহীত

প্রত্যাশা ডেস্ক: বঙ্গবন্ধু, জাতীয় চারনেতাসহ মুজিবনগর সরকারের নেতাদের ‘মুক্তিযোদ্ধা’ স্বীকৃতি বাতিলের খবরটি ‘সঠিক নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম।

বুধবার (৪ জুন) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা সঠিক নয়। সঠিক নয় এই অর্থে যে এখানে সুস্পষ্টভাবে লেখা আছে, ‘প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার (মুজিবনগর সরকার)। মুজিবনগর সরকার লেখা আছে, তাজউদ্দীন সাহেব ছিলেন, মনসুর আলী সাহেব ছিলেন, কামারুজ্জামান সাহেব ছিলেন, খন্দকার মোশতাক সাহেব ছিলেন, এরা সবাই মুক্তিযোদ্ধা।’

মুক্তিযোদ্ধার নতুন সংজ্ঞা দিয়ে তিন বছর আগের করা জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন সংশোধন করে মঙ্গলবার (৩ জুন) রাতে অধ্যাদেশ জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার। সেখানে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা পরিবর্তনের পাশাপাশি আগে যারা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃত ছিলেন, তাদের একটি অংশকে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ বলা হয়েছে। তাতে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতাসহ মুজিবনগর সরকারের এমএনএ বা এমপিএদের মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি আর থাকল না বলে খবর প্রকাশিত হয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে।

বুধবার (৪ জুন) সকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বলেন, ‘এই যুদ্ধটা এই সরকার (মুজিবনগর) পরিচালনা করেছে। এই সরকারের লেজিটিমেসির বাইরে কাউকে স্বীকৃতিই দেওয়া হয় নাই। এই সরকারটাই তখন ছিল বাংলাদেশে স্বীকৃত সরকার, যেটা প্রবাসী সরকার।’

অধ্যাদেশে নতুন সংজ্ঞায় বীর মুক্তিযোদ্ধা হলেন
১। যাহারা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরে গ্রামে-গঞ্জে যুদ্ধের প্রস্তুতি ও অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং যেসব ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করে ভারতের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন এবং

২। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে হানাদার ও দখলদার পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী এবং তাদের এদেশীয় সহযোগী রাজাকার, আলবদর, আলশামস, তৎকালীন মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম এবং দালাল ও শান্তি কমিটির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন, এরূপ সকল বেসামরিক নাগরিক (ওই সময়ে যাদের বয়স সরকার নির্ধারিত সর্বনিম্ন বয়সের মধ্যে); এবং

৩। সশস্ত্র বাহিনী, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর), পুলিশ বাহিনী, মুক্তি বাহিনী, প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার (মুজিবনগর সরকার) ও উক্ত সরকার কর্তৃক স্বীকৃত অন্যান্য বাহিনী, নৌ কমান্ডো, কিলো ফোর্স, আনসার সদস্যরা বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবেন।

৪। একই সঙ্গে অধ্যাদেশের নতুন সংজ্ঞায় ‘হানাদার ও দখলদার পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের সহযোগীর মাধ্যমে নির্যাতিত সব নারী (বীরাঙ্গনা)’ বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবেন।

৫। পাশাপাশি ‘মুক্তিযুদ্ধকালে আহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী ফিল্ড হাসপাতালের সব চিকিৎসক, নার্স ও চিকিৎসা সহকারীরারও; হবেন বীর মুক্তিযোদ্ধা।

উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বলছেন, অধ্যাদেশে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় ‘প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার (মুজিবনগর সরকার) আছে, সুতরাং ওই সরকারের সংশ্লিষ্ট নেতারাও মুক্তিযোদ্ধা।

অধ্যাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সহযোগীর সংজ্ঞায় যারা সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেননি, তাদের পাঁচ ক্যাটাগরি করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে দেশের অভ্যন্তরে বা প্রবাসে অবস্থান করে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দীপিত করা এবং মুক্তিযুদ্ধকে বেগবান ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনকে ত্বরান্বিত করার প্রয়াসে সংগঠকের ভূমিকা পালন, বিশ্বজনমত গঠন, কূটনৈতিক সমর্থন অর্জন এবং মনস্তাত্ত্বিক শক্তি অর্জনের প্রেক্ষাপটে যেসব বাংলাদেশের নাগরিক প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা করেছেন।’

যেসব ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধকালীন গঠিত প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর সরকার) অধীন কর্মকর্তা বা কর্মচারী বা দূত এবং ওই সরকারের নিয়োগ করা চিকিৎসক, নার্স বা অন্যান্য সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন; মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর সরকার) সঙ্গে সম্পৃক্ত সব এমএনএ বা এমপিএ; যারা পরে গণপরিষদের সদস্য গণ্য হয়েছিলেন; স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সব শিল্পী ও কলাকুশলী এবং দেশ ও বিদেশে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে দায়িত্ব পালনকারী সব বাংলাদেশি সাংবাদিক এবং স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের খেলোয়াড়-তাদের ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ বলা হয়েছে অধ্যাদেশে।

একজন সাংবাদিক জানতে চান, এই সংজ্ঞার অর্থ এরকম কি না যে যারা সরাসরি যুদ্ধ করেছেন তারাই মুক্তিযোদ্ধা?

জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘এইটা হয় নাই, কারণ রণাঙ্গনটা ওরা পরিচালনা করেছেন। তাহলে তো একই কথা আপনি সেক্টর কমান্ডারদের ব্যাপারেও বলতে পারেন। তারা কি যুদ্ধ করে নাই? যুদ্ধ ডিজাইন করেছে, যুদ্ধে কারা যাবে, না যাবে সেটা পরিচালনা করেছে। ঠিক একই রকমের, মুজিবনগর সরকার তো পুরা যুদ্ধটা পরিচালনা করেছে, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য রেশন কোথা থেকে আসবে, অস্ত্র কোথা থেকে আসবে, এগুলি সব এই সরকার করছে না? ফলে এইটা তো ঐতিহাসিক সত্য যে এই সরকার পুরা যুদ্ধটা পরিচালনা করেছে। তো এটা কেমন করে ইতিহাস পরিবর্তন করা যায়?’ উপদেষ্টা বলেন, এটা একটা মিসলিডিং নিউজ। আমার মনে হচ্ছে যেন এটা সত্য হয় নাই। এখানে (অধ্যাদেশে) সুস্পষ্ট ভাবেই বলা আছে।

মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী অংশে মুজিবনগর সরকারের যে বিষয় আছে, সেটা কেন-তা জানতে চান একজন সাংবাদিক। উপদেষ্টা বলেন, ‘ওইটা মুজিবনগরের কর্মচারীরা। ওইখানে মুজিবনগর সরকারের অধীনে যে সমস্ত বেতনধারী কর্মচারীরা ছিল, তাদেরকে বলা হয়েছে ‘সহযোগী’। সরকারকে বলা হয়নি। আর এমপিএ, এমএনএ দের মধ্যেও যারা সশস্ত্রভাবে এসে যুদ্ধ করেছে, তারাও মুক্তিযোদ্ধা।’

মুক্তিযোদ্ধা ও সহযোগীদের মর্যাদায় কোনো হেরফের করা হয়নি বলেও মন্তব্য করেন ফারুক ই আজম, যিনি নিজেও একজন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা।

তিনি বলেন, ‘সর্বাঙ্গীণভাবে এইটাকে মর্যাদাশীল করা হয়েছে। এইটা এই নয় যে যারা সহযোগী হবেন, তাদের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়েছে। এইটা মোটেও না। কারণ ওই অবদানেও অসাধারণ এবং সেইভাবেই উনাদেরকে সম্মানিত করা হচ্ছে, যে কে কী ধরনের ভূমিকাতে সেই সময় অংশগ্রহণ করেছিলেন। এক্ষেত্রে সুবিধাদি, রাষ্ট্র কর্তৃক প্রদত্ত ভাতা ইত্যাদি নানা সুবিধার ক্ষেত্রেও কোনো বৈষম্য নেই, সবাই সমান।’

‘সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে আলাদা করার ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ‘যারা যুদ্ধ করেনি তারা কী করে (মুক্তিযোদ্ধা) হইতে পারে? যারা মুক্তিযুদ্ধের কারণে ভারতে গেছে, নানা রকমের কাজে তারা এনগেজ ছিল সেখানে হয়ত, কেউ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে, তারপরে কূটনৈতিক এবং অন্যান্য কাজে তারা ব্যস্ত ছিল, তারা সহযোগিতা করেছে, তারা তো রণাঙ্গনে এসে লড়াই করে নাই।’

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম দাবি করেন, মুক্তিযোদ্ধাদের দাবির কারণেই এই সময়ে এসে সংজ্ঞা পরিবর্তন করা হয়েছে। তবে এ সরকার নতুন করে কোনো সংজ্ঞা প্রবর্তন করেনি। ‘বাহাত্তরেও এমন সংজ্ঞা ছিল। এটা পরিবর্তন করা হয়েছে ২০১৮ সালে ও ২০২২ সালে। এখন বাহাত্তরের সংজ্ঞাটা দেওয়া হয়েছে। ইতিহাসকে ইতিহাসের জায়গায় রাখা। দেশের মানুষ জানে মুক্তিযুদ্ধ কারা করেছে। মুক্তিযুদ্ধটা যেন বিতর্কিত না হয় সে সে চেষ্টা করছি আমরা।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জাতীয় চার নেতাসহ মুজিবনগর সরকারের নেতারা মুক্তিযোদ্ধা, ইতিহাস পরিবর্তন করা যায় না: উপদেষ্টা

আপডেট সময় : ০৫:০৭:৪০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ জুন ২০২৫

প্রত্যাশা ডেস্ক: বঙ্গবন্ধু, জাতীয় চারনেতাসহ মুজিবনগর সরকারের নেতাদের ‘মুক্তিযোদ্ধা’ স্বীকৃতি বাতিলের খবরটি ‘সঠিক নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম।

বুধবার (৪ জুন) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা সঠিক নয়। সঠিক নয় এই অর্থে যে এখানে সুস্পষ্টভাবে লেখা আছে, ‘প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার (মুজিবনগর সরকার)। মুজিবনগর সরকার লেখা আছে, তাজউদ্দীন সাহেব ছিলেন, মনসুর আলী সাহেব ছিলেন, কামারুজ্জামান সাহেব ছিলেন, খন্দকার মোশতাক সাহেব ছিলেন, এরা সবাই মুক্তিযোদ্ধা।’

মুক্তিযোদ্ধার নতুন সংজ্ঞা দিয়ে তিন বছর আগের করা জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন সংশোধন করে মঙ্গলবার (৩ জুন) রাতে অধ্যাদেশ জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার। সেখানে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা পরিবর্তনের পাশাপাশি আগে যারা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃত ছিলেন, তাদের একটি অংশকে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ বলা হয়েছে। তাতে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতাসহ মুজিবনগর সরকারের এমএনএ বা এমপিএদের মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি আর থাকল না বলে খবর প্রকাশিত হয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে।

বুধবার (৪ জুন) সকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বলেন, ‘এই যুদ্ধটা এই সরকার (মুজিবনগর) পরিচালনা করেছে। এই সরকারের লেজিটিমেসির বাইরে কাউকে স্বীকৃতিই দেওয়া হয় নাই। এই সরকারটাই তখন ছিল বাংলাদেশে স্বীকৃত সরকার, যেটা প্রবাসী সরকার।’

অধ্যাদেশে নতুন সংজ্ঞায় বীর মুক্তিযোদ্ধা হলেন
১। যাহারা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরে গ্রামে-গঞ্জে যুদ্ধের প্রস্তুতি ও অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং যেসব ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করে ভারতের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন এবং

২। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে হানাদার ও দখলদার পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী এবং তাদের এদেশীয় সহযোগী রাজাকার, আলবদর, আলশামস, তৎকালীন মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম এবং দালাল ও শান্তি কমিটির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন, এরূপ সকল বেসামরিক নাগরিক (ওই সময়ে যাদের বয়স সরকার নির্ধারিত সর্বনিম্ন বয়সের মধ্যে); এবং

৩। সশস্ত্র বাহিনী, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর), পুলিশ বাহিনী, মুক্তি বাহিনী, প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার (মুজিবনগর সরকার) ও উক্ত সরকার কর্তৃক স্বীকৃত অন্যান্য বাহিনী, নৌ কমান্ডো, কিলো ফোর্স, আনসার সদস্যরা বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবেন।

৪। একই সঙ্গে অধ্যাদেশের নতুন সংজ্ঞায় ‘হানাদার ও দখলদার পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের সহযোগীর মাধ্যমে নির্যাতিত সব নারী (বীরাঙ্গনা)’ বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবেন।

৫। পাশাপাশি ‘মুক্তিযুদ্ধকালে আহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী ফিল্ড হাসপাতালের সব চিকিৎসক, নার্স ও চিকিৎসা সহকারীরারও; হবেন বীর মুক্তিযোদ্ধা।

উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বলছেন, অধ্যাদেশে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় ‘প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার (মুজিবনগর সরকার) আছে, সুতরাং ওই সরকারের সংশ্লিষ্ট নেতারাও মুক্তিযোদ্ধা।

অধ্যাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সহযোগীর সংজ্ঞায় যারা সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেননি, তাদের পাঁচ ক্যাটাগরি করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে দেশের অভ্যন্তরে বা প্রবাসে অবস্থান করে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দীপিত করা এবং মুক্তিযুদ্ধকে বেগবান ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনকে ত্বরান্বিত করার প্রয়াসে সংগঠকের ভূমিকা পালন, বিশ্বজনমত গঠন, কূটনৈতিক সমর্থন অর্জন এবং মনস্তাত্ত্বিক শক্তি অর্জনের প্রেক্ষাপটে যেসব বাংলাদেশের নাগরিক প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা করেছেন।’

যেসব ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধকালীন গঠিত প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর সরকার) অধীন কর্মকর্তা বা কর্মচারী বা দূত এবং ওই সরকারের নিয়োগ করা চিকিৎসক, নার্স বা অন্যান্য সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন; মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর সরকার) সঙ্গে সম্পৃক্ত সব এমএনএ বা এমপিএ; যারা পরে গণপরিষদের সদস্য গণ্য হয়েছিলেন; স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সব শিল্পী ও কলাকুশলী এবং দেশ ও বিদেশে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে দায়িত্ব পালনকারী সব বাংলাদেশি সাংবাদিক এবং স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের খেলোয়াড়-তাদের ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ বলা হয়েছে অধ্যাদেশে।

একজন সাংবাদিক জানতে চান, এই সংজ্ঞার অর্থ এরকম কি না যে যারা সরাসরি যুদ্ধ করেছেন তারাই মুক্তিযোদ্ধা?

জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘এইটা হয় নাই, কারণ রণাঙ্গনটা ওরা পরিচালনা করেছেন। তাহলে তো একই কথা আপনি সেক্টর কমান্ডারদের ব্যাপারেও বলতে পারেন। তারা কি যুদ্ধ করে নাই? যুদ্ধ ডিজাইন করেছে, যুদ্ধে কারা যাবে, না যাবে সেটা পরিচালনা করেছে। ঠিক একই রকমের, মুজিবনগর সরকার তো পুরা যুদ্ধটা পরিচালনা করেছে, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য রেশন কোথা থেকে আসবে, অস্ত্র কোথা থেকে আসবে, এগুলি সব এই সরকার করছে না? ফলে এইটা তো ঐতিহাসিক সত্য যে এই সরকার পুরা যুদ্ধটা পরিচালনা করেছে। তো এটা কেমন করে ইতিহাস পরিবর্তন করা যায়?’ উপদেষ্টা বলেন, এটা একটা মিসলিডিং নিউজ। আমার মনে হচ্ছে যেন এটা সত্য হয় নাই। এখানে (অধ্যাদেশে) সুস্পষ্ট ভাবেই বলা আছে।

মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী অংশে মুজিবনগর সরকারের যে বিষয় আছে, সেটা কেন-তা জানতে চান একজন সাংবাদিক। উপদেষ্টা বলেন, ‘ওইটা মুজিবনগরের কর্মচারীরা। ওইখানে মুজিবনগর সরকারের অধীনে যে সমস্ত বেতনধারী কর্মচারীরা ছিল, তাদেরকে বলা হয়েছে ‘সহযোগী’। সরকারকে বলা হয়নি। আর এমপিএ, এমএনএ দের মধ্যেও যারা সশস্ত্রভাবে এসে যুদ্ধ করেছে, তারাও মুক্তিযোদ্ধা।’

মুক্তিযোদ্ধা ও সহযোগীদের মর্যাদায় কোনো হেরফের করা হয়নি বলেও মন্তব্য করেন ফারুক ই আজম, যিনি নিজেও একজন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা।

তিনি বলেন, ‘সর্বাঙ্গীণভাবে এইটাকে মর্যাদাশীল করা হয়েছে। এইটা এই নয় যে যারা সহযোগী হবেন, তাদের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়েছে। এইটা মোটেও না। কারণ ওই অবদানেও অসাধারণ এবং সেইভাবেই উনাদেরকে সম্মানিত করা হচ্ছে, যে কে কী ধরনের ভূমিকাতে সেই সময় অংশগ্রহণ করেছিলেন। এক্ষেত্রে সুবিধাদি, রাষ্ট্র কর্তৃক প্রদত্ত ভাতা ইত্যাদি নানা সুবিধার ক্ষেত্রেও কোনো বৈষম্য নেই, সবাই সমান।’

‘সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে আলাদা করার ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ‘যারা যুদ্ধ করেনি তারা কী করে (মুক্তিযোদ্ধা) হইতে পারে? যারা মুক্তিযুদ্ধের কারণে ভারতে গেছে, নানা রকমের কাজে তারা এনগেজ ছিল সেখানে হয়ত, কেউ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে, তারপরে কূটনৈতিক এবং অন্যান্য কাজে তারা ব্যস্ত ছিল, তারা সহযোগিতা করেছে, তারা তো রণাঙ্গনে এসে লড়াই করে নাই।’

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম দাবি করেন, মুক্তিযোদ্ধাদের দাবির কারণেই এই সময়ে এসে সংজ্ঞা পরিবর্তন করা হয়েছে। তবে এ সরকার নতুন করে কোনো সংজ্ঞা প্রবর্তন করেনি। ‘বাহাত্তরেও এমন সংজ্ঞা ছিল। এটা পরিবর্তন করা হয়েছে ২০১৮ সালে ও ২০২২ সালে। এখন বাহাত্তরের সংজ্ঞাটা দেওয়া হয়েছে। ইতিহাসকে ইতিহাসের জায়গায় রাখা। দেশের মানুষ জানে মুক্তিযুদ্ধ কারা করেছে। মুক্তিযুদ্ধটা যেন বিতর্কিত না হয় সে সে চেষ্টা করছি আমরা।