ঢাকা ০৯:১৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫

জাতীয় ঐক্যের স্বপ্ন ও মুহাম্মদ ইউনূসের উদ্যোগ

  • আপডেট সময় : ০৫:৪০:২৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৪
  • ৪৬ বার পড়া হয়েছে

মোনায়েম সরকার : জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা বরাবরই বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস থেকে শুরু করে প্রতিটি বড় সংকট মোকাবিলায় ঐক্যের ভূমিকা অপরিসীম। বর্তমান রাজনৈতিক এবং সামাজিক সংকটের প্রেক্ষাপটে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান আবারও সামনে এসেছে। এ উদ্যোগ শুধু রাজনৈতিক দল বা ধর্মীয় নেতাদের একত্র করার প্রচেষ্টা নয়; এটি একটি বৃহত্তর সামাজিক পুনর্জাগরণের পরিকল্পনা, যা বিভক্ত বাংলাদেশকে একক শক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে পারে।
ড. ইউনূসের আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশের ডান-বাম মিলিয়ে বেশ কিছু রাজনৈতিক দল যে এক সঙ্গে বসে জাতীয় স্বার্থের বিষয়টি অগ্রাধিকার দিয়ে একমত পোষণ করেছে, এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। আমাদের দেশে রাজনীতি হলো অনৈক্য, বিদ্বেষ ও দোষারোপের। সেখানে বিভিন্ন মত-পথের এতগুলো দল একসঙ্গে বসাকে অবশ্যই ইতিবাচকভাবে দেখতে হবে।
মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচিত সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের পাশে জামায়াতের একজন শীর্ষ নেতার বসা এবং আলাপ করা কি দেশের মানুষের কাছে বিশেষ কোনো বার্তা দিচ্ছে?
ড. ইউনূসের সংলাপ এবং উদ্যোগের প্রাথমিক লক্ষ্য হলো বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা এবং মর্যাদা রক্ষায় একজোট হওয়া। রাজনৈতিক দলগুলোর মতপার্থক্য ও আদর্শগত ভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও জাতীয় স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ থাকার যে অঙ্গীকার করা হয়েছে, তা বর্তমান সংকটকালে এক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। বিশেষত অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক প্রোপাগান্ডার মুখে দাঁড়িয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর এই ঐক্যের ঘোষণাকে দেশপ্রেমের অন্যতম নিদর্শন বলা যায়।
সংলাপে সরকারের স্বচ্ছতা, আইনি দক্ষতা এবং প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তোলা হলেও, সবগুলো আলোচনা একত্র হয়েছে জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার প্রশ্নে। এই মনোভাব দেশের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির শক্তিশালী ভবিষ্যতের আশা জাগায়।
ড. ইউনূস সংলাপে যে কৌশল অনুসরণ করেছেন, তা প্রশংসনীয়। তিনি শুধু বক্তব্য দিয়েই সীমাবদ্ধ থাকেননি; বরং প্রতিটি দল ও শ্রেণির সঙ্গে সরাসরি আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যাগুলোর মূলে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে সংলাপের আয়োজনও একটি বড় পদক্ষেপ।
আমাদের সমাজ ও রাজনীতিতে ধর্মের প্রভাব আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেড়েছে। ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা, ধর্মীয় সম্প্রীতি এবং তথ্যের সত্যতা যাচাই করার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো উঠে এসেছে। এটি শুধু সংখ্যালঘুদের সমস্যার সমাধান নয়; বরং সমগ্র জাতির জন্য এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক স্থিতিশীলতা আনার প্রচেষ্টা।
এ উদ্যোগের মূল চ্যালেঞ্জ হলো ঐক্যের প্রতিফলনকে বাস্তবিক রূপ দেওয়া। অতীতে অনেকবার জাতীয় ঐক্যের ডাক দেওয়া হলেও তা রাজনৈতিক স্বার্থের কাছে পরাজিত হয়েছে। বিশেষ করে বর্তমান সময়ে যেখানে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূতকরণের প্রবণতা এবং মতবিরোধের রাজনীতি তীব্রতর, সেখানে এই ঐক্য কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
অন্যদিকে ড. ইউনূস যে ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার কথা বলেছেন, তার সঠিক রূপরেখা কী হবে; তাও স্পষ্ট নয়।
শুধু সঠিক তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করাই যথেষ্ট নয়; বরং এই তথ্যের ভিত্তিতে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং কার্যকর নীতিমালা তৈরি করাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। সবচেয়ে বড় কথা একাত্তর ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান স্পষ্ট না হলেও কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। অতীত অর্জনের গৌরব বাতিল করে নতুন অর্জনের গৌরবে মত্ত হওয়া কতটা সুবিবেচনার পরিচয় বহন করে, এ প্রশ্ন আছে।
জাতীয় ঐক্যের প্রকৃত রূপায়ণের জন্য প্রয়োজন কয়েকটি মৌলিক পদক্ষেপ।
প্রথমত, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থা গড়ে তোলা। সংলাপে যেসব বিষয় উঠে এসেছে, যেমন ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে স্বচ্ছতা এবং চুক্তিগুলো প্রকাশ করা, তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকারকে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে হবে।
দ্বিতীয়ত, সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষকে এই প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। শুধু রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতারা নয়; ছাত্র, নাগরিক সমাজ এবং স্থানীয় সংগঠনগুলোকেও জাতীয় ঐক্যের অংশ করতে হবে।
তৃতীয়ত, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং সংকট মোকাবিলার জন্য একটি শক্তিশালী রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে। ড. ইউনূসের উদ্যোগে জাতীয় ঐক্যের যে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে, তা ভবিষ্যতের জন্য একটি আশার আলো। তবে এটি কেবল তখনই ফলপ্রসূ হবে, যখন একে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নয়; বরং সত্যিকারের জাতীয় সংকট সমাধানের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হবে।
মতভিন্নতা থাকলেও দেশের সার্বভৌমত্ব এবং স্বাধীনতার প্রশ্নে একত্র হওয়া একটি ঐতিহাসিক সুযোগ। যদি এই সুযোগ সঠিকভাবে কাজে লাগানো যায়, তাহলে এটি কেবল বর্তমান সংকটকেই নিরসন করবে না; বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি উদাহরণ হিসেবে কাজ করবে।
ড. ইউনূসের আহ্বান শুধু একটি সংলাপ নয়; এটি জাতির উদ্দেশে একটি বার্তা। এটি আমাদের শিখিয়েছে, বিভক্তির রাজনীতি কতটা বিপজ্জনক এবং ঐক্যের শক্তি কতটা প্রভাবশালী। এখন সময় এসেছে, এই ঐক্যকে শক্তিশালী ভিত্তিতে দাঁড় করানোর এবং বিভেদের রাজনীতি থেকে মুক্তির। জাতীয় ঐক্যের স্বপ্ন যদি বাস্তবায়িত হয়, তবে বাংলাদেশ তার কাক্সিক্ষত সম্ভাবনার পথে এগিয়ে যাবে।

লেখক: প্রাবন্ধিক, গবেষক ও রাজনৈতিক কর্মী

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

কালো টাকা সাদা করার সব সুযোগ চিরতরে বাতিল চায় টিআইবি

জাতীয় ঐক্যের স্বপ্ন ও মুহাম্মদ ইউনূসের উদ্যোগ

আপডেট সময় : ০৫:৪০:২৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৪

মোনায়েম সরকার : জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা বরাবরই বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস থেকে শুরু করে প্রতিটি বড় সংকট মোকাবিলায় ঐক্যের ভূমিকা অপরিসীম। বর্তমান রাজনৈতিক এবং সামাজিক সংকটের প্রেক্ষাপটে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান আবারও সামনে এসেছে। এ উদ্যোগ শুধু রাজনৈতিক দল বা ধর্মীয় নেতাদের একত্র করার প্রচেষ্টা নয়; এটি একটি বৃহত্তর সামাজিক পুনর্জাগরণের পরিকল্পনা, যা বিভক্ত বাংলাদেশকে একক শক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে পারে।
ড. ইউনূসের আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশের ডান-বাম মিলিয়ে বেশ কিছু রাজনৈতিক দল যে এক সঙ্গে বসে জাতীয় স্বার্থের বিষয়টি অগ্রাধিকার দিয়ে একমত পোষণ করেছে, এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। আমাদের দেশে রাজনীতি হলো অনৈক্য, বিদ্বেষ ও দোষারোপের। সেখানে বিভিন্ন মত-পথের এতগুলো দল একসঙ্গে বসাকে অবশ্যই ইতিবাচকভাবে দেখতে হবে।
মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচিত সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের পাশে জামায়াতের একজন শীর্ষ নেতার বসা এবং আলাপ করা কি দেশের মানুষের কাছে বিশেষ কোনো বার্তা দিচ্ছে?
ড. ইউনূসের সংলাপ এবং উদ্যোগের প্রাথমিক লক্ষ্য হলো বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা এবং মর্যাদা রক্ষায় একজোট হওয়া। রাজনৈতিক দলগুলোর মতপার্থক্য ও আদর্শগত ভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও জাতীয় স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ থাকার যে অঙ্গীকার করা হয়েছে, তা বর্তমান সংকটকালে এক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। বিশেষত অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক প্রোপাগান্ডার মুখে দাঁড়িয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর এই ঐক্যের ঘোষণাকে দেশপ্রেমের অন্যতম নিদর্শন বলা যায়।
সংলাপে সরকারের স্বচ্ছতা, আইনি দক্ষতা এবং প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তোলা হলেও, সবগুলো আলোচনা একত্র হয়েছে জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার প্রশ্নে। এই মনোভাব দেশের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির শক্তিশালী ভবিষ্যতের আশা জাগায়।
ড. ইউনূস সংলাপে যে কৌশল অনুসরণ করেছেন, তা প্রশংসনীয়। তিনি শুধু বক্তব্য দিয়েই সীমাবদ্ধ থাকেননি; বরং প্রতিটি দল ও শ্রেণির সঙ্গে সরাসরি আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যাগুলোর মূলে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে সংলাপের আয়োজনও একটি বড় পদক্ষেপ।
আমাদের সমাজ ও রাজনীতিতে ধর্মের প্রভাব আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেড়েছে। ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা, ধর্মীয় সম্প্রীতি এবং তথ্যের সত্যতা যাচাই করার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো উঠে এসেছে। এটি শুধু সংখ্যালঘুদের সমস্যার সমাধান নয়; বরং সমগ্র জাতির জন্য এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক স্থিতিশীলতা আনার প্রচেষ্টা।
এ উদ্যোগের মূল চ্যালেঞ্জ হলো ঐক্যের প্রতিফলনকে বাস্তবিক রূপ দেওয়া। অতীতে অনেকবার জাতীয় ঐক্যের ডাক দেওয়া হলেও তা রাজনৈতিক স্বার্থের কাছে পরাজিত হয়েছে। বিশেষ করে বর্তমান সময়ে যেখানে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূতকরণের প্রবণতা এবং মতবিরোধের রাজনীতি তীব্রতর, সেখানে এই ঐক্য কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
অন্যদিকে ড. ইউনূস যে ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার কথা বলেছেন, তার সঠিক রূপরেখা কী হবে; তাও স্পষ্ট নয়।
শুধু সঠিক তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করাই যথেষ্ট নয়; বরং এই তথ্যের ভিত্তিতে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং কার্যকর নীতিমালা তৈরি করাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। সবচেয়ে বড় কথা একাত্তর ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান স্পষ্ট না হলেও কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। অতীত অর্জনের গৌরব বাতিল করে নতুন অর্জনের গৌরবে মত্ত হওয়া কতটা সুবিবেচনার পরিচয় বহন করে, এ প্রশ্ন আছে।
জাতীয় ঐক্যের প্রকৃত রূপায়ণের জন্য প্রয়োজন কয়েকটি মৌলিক পদক্ষেপ।
প্রথমত, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থা গড়ে তোলা। সংলাপে যেসব বিষয় উঠে এসেছে, যেমন ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে স্বচ্ছতা এবং চুক্তিগুলো প্রকাশ করা, তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকারকে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে হবে।
দ্বিতীয়ত, সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষকে এই প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। শুধু রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতারা নয়; ছাত্র, নাগরিক সমাজ এবং স্থানীয় সংগঠনগুলোকেও জাতীয় ঐক্যের অংশ করতে হবে।
তৃতীয়ত, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং সংকট মোকাবিলার জন্য একটি শক্তিশালী রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে। ড. ইউনূসের উদ্যোগে জাতীয় ঐক্যের যে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে, তা ভবিষ্যতের জন্য একটি আশার আলো। তবে এটি কেবল তখনই ফলপ্রসূ হবে, যখন একে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নয়; বরং সত্যিকারের জাতীয় সংকট সমাধানের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হবে।
মতভিন্নতা থাকলেও দেশের সার্বভৌমত্ব এবং স্বাধীনতার প্রশ্নে একত্র হওয়া একটি ঐতিহাসিক সুযোগ। যদি এই সুযোগ সঠিকভাবে কাজে লাগানো যায়, তাহলে এটি কেবল বর্তমান সংকটকেই নিরসন করবে না; বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি উদাহরণ হিসেবে কাজ করবে।
ড. ইউনূসের আহ্বান শুধু একটি সংলাপ নয়; এটি জাতির উদ্দেশে একটি বার্তা। এটি আমাদের শিখিয়েছে, বিভক্তির রাজনীতি কতটা বিপজ্জনক এবং ঐক্যের শক্তি কতটা প্রভাবশালী। এখন সময় এসেছে, এই ঐক্যকে শক্তিশালী ভিত্তিতে দাঁড় করানোর এবং বিভেদের রাজনীতি থেকে মুক্তির। জাতীয় ঐক্যের স্বপ্ন যদি বাস্তবায়িত হয়, তবে বাংলাদেশ তার কাক্সিক্ষত সম্ভাবনার পথে এগিয়ে যাবে।

লেখক: প্রাবন্ধিক, গবেষক ও রাজনৈতিক কর্মী