ঢাকা ০৯:৩৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

জাতিসংঘে অনন্য উচ্চতায় বাংলাদেশ ও জনপ্রত্যাশা

  • আপডেট সময় : ১০:০২:০৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ অক্টোবর ২০২২
  • ১০৭ বার পড়া হয়েছে

মাসুদ রানা : বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে দেশের ভেতর ও বাইরে সমালোচনায় মুখর ছিল একটি মহল। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে ইস্যুটি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনায় মত্ত ছিল। এসব সমালোচনার মধ্যেই বিশ্ব দরবারে দারুণ একটা স্বীকৃতি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল ইউএনএইচআরসি’তে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চল থেকে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে আগামী তিন বছরের জন্য সদস্যপদ লাভ করেছে বাংলাদেশ। ১৬০টি দেশের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশকে মানবাধিকার কাউন্সিলের সদস্য হওয়ার জন্য সমর্থন করেছে, যা আমাদের দেশের জন্য নিঃসন্দেহে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অর্জন।

জাতিসংঘে এই অর্জন তাদের জন্য স্পষ্ট চপেটাঘাত— যারা বাংলাদেশের মানবাধিকার লঙ্ঘনের মিথ্যা তথ্য প্রচার করার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ ও সরকারকে বিব্রত করার চেষ্টায় মত্ত। এই ধরনের ‘প্ররোচিত’ তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ‘ভিকটিমস অব এনফোর্সড ডিসএপ্যারেনস’ শীর্ষক এক রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল জাতিসংঘ, যা পরে সংশোধিতও হয়েছে সংস্থাটির পক্ষ থেকে।

সেই রিপোর্ট প্রকাশের কিছু দিন পরে গত আগস্ট মাসে বাংলাদেশ সফর করে গেছেন বৈশ্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত জাতিসংঘের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট। বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে উদ্বেগজনক তেমন কিছু উল্লেখ করেননি জাতিসংঘের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। তার বক্তব্যে স্বার্থান্বেষী সেই গোষ্ঠী একটা বড় ধাক্কা খেয়েছিল। সেই গোষ্ঠী আবার একটা বড় ধাক্কা খেলো যখন বাংলাদেশ সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের সদস্যপদ লাভ করলো।

যদিও এটা বলা যাবে না যে বর্তমান সরকারের আমলে কখনই এমন কোনো ধরনের ঘটনা ঘটেনি, যাতে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অধিকার লঙ্ঘিত হয়নি। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা অবশ্যই ঘটেছে। তবে সেই ঘটনাকে ঢালাওভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে প্রচার করা উচিত হবে না। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসন কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অত্যুৎসাহী কিছু সদস্য বা কর্মকর্তার কার্যক্রমের কারণে কিছু ঘটনা ঘটেছে।

প্রকৃতপক্ষে, দেশে এমন কোনো ঘটনা দৃশ্যমান নয়, যাতে ঢালাওভাবে বলা যায় যে দেশে আপামর জনগণের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। স্বার্থান্বেষী ওই গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নামে গুম ও খুনের যে তালিকাটি বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার কাছে দেওয়া হয়েছিল সেটি ত্রুটিমুক্ত ছিল না। সে তালিকার প্রায় অর্ধেকই ভুল প্রমাণিত হয়েছে। আবার যাদের নিখোঁজ হওয়ার কথা বলা হয়েছে, তাদের অনেকেই ফিরেও এসেছেন। তাই আমরা বলতে পারি, যারা ঢালাওভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে দেশ ও বিদেশে প্রচার চালাচ্ছেন, তাদের উদ্দেশ্য কখনো হাসিল হবে না।

দেশের মানবাধিকার নিয়ে অপপ্রচারে লিপ্ত ছিল মানবাধিকার সংস্থা অধিকারও। সংস্থাটির সম্পাদক আদিলুর রহমান খান বিএনপি-জামায়াত জোট শাসনামলে ছিলেন পদস্থ আইন কর্মকর্তা—ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল। বিএনপি ক্ষমতায় এলে তিনি হয়তো অ্যাটর্নি জেনারেল হয়ে যেতেন। কিন্তু তার সে সৌভাগ্য আর হয়নি।

২০১৩ সালে মতিঝিলে হেফাজতে ইসলামের তা-ব নিয়ন্ত্রণকালে নিহতের ভুল তথ্য দিয়ে আলোচনায় আসে অধিকার। নানা অভিযোগে এনজিও ব্যুরো সংস্থাটির নিবন্ধন বাতিল করে দিয়েছে। হেফাজতে ইসলামের মতিঝিল সমাবেশে ৬১ জন নিহতের দাবি করেছিল সংস্থাটি। যদিও তার কোনো তথ্য-উপাত্ত দিতে পারেনি তারা। তালিকার অনেকেই বেঁচে আছেন। অনেকে চাকরিও করছেন বলে পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে।

এমনই অপপ্রচারে লিপ্ত ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান, যিনি ড. কামাল হোসেনের জামাতা এবং অর্থ পাচার এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হত্যা-ষড়যন্ত্রের সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকা অভিযোগে সাজাপ্রাপ্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বেতনভুক্ত উপদেষ্টা। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সময়ও তিনি বিচারের বিপক্ষে কাজ করেছেন।

দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা যুক্তরাষ্ট্রে বসে তারেক রহমান ও ড. কামালদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকারবিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত আছেন। ডেভিড বার্গম্যানই ড. কামাল, তারেক রহমান ও এস কে সিনহার মধ্যে লিয়াজোঁ হিসেবে কাজ করেন এবং দেশের সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনীকে নিয়ে মিথ্যা-বানোয়াট গুজব ছড়াচ্ছে।

যদিও এটা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না— দেশে কখনও ঢালাওভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়নি, এমনটা নয়। ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে বেগম খালেদা জিয়ার শাসনামলে পুরোপুরিভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে। সেসময় বিরোধীদের কণ্ঠস্বররোধে সর্বতৎপর ছিল বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার। বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে ২৩ জনকে হত্যা করা হয়। গ্রেনেড হামলায় হত্যা করা হয় সাবেক অর্থমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সদস্য শাহ এম এস কিবরিয়াকে।

ইউএনএইচআরসি’তে বাংলাদেশের অর্জন নিশ্চয়ই অনেক সংশয়ের জবাব হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এই স্বীকৃতি আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কেন? ইউএনএইচআরসি মানবাধিকারের সর্বজনীন মূল্যবোধকে সমুন্নত রাখার চেষ্টা করে এবং সেই অনুযায়ী সর্বজনীন পর্যায়ক্রমিক পর্যালোচনা, দেশভিত্তিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা, তথ্য অনুসন্ধান সংস্থা নিয়োগের মতো উদ্যোগ গ্রহণ করে; প্রতিটি সদস্যপদ রাষ্ট্র অন্য দেশগুলোকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য আহ্বান জানায়। এই সদস্যপদ নির্বাচিত হয় অন্য সদস্য রাষ্ট্রগুলোর ভোটের মাধ্যমে, যেখানে কিছু কঠোর মানদ- বিবেচনা করা হয়। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলো হলো- মানবাধিকার সমুন্নত রাখা, সমুন্নত রাখতে প্রার্থী রাষ্ট্রের প্রচেষ্টা, প্রতিশ্রুতি এবং এটি পূরণে রাষ্ট্রটির সর্বাত্মক সহযোগিতা।

বাংলাদেশ গত দেড় দেশকে পাঁচবার জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হয়েছে। এটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মানবাধিকারের উন্নয়ন ও সুরক্ষায় বাংলাদেশের অব্যাহত প্রচেষ্টা এবং প্রতিশ্রুতির প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বীকৃতি এবং আস্থার বহিঃপ্রকাশ। বাংলাদেশ মিয়ানমার থেকে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে, যা দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর তুলনায় সর্বোচ্চ সংখ্যক। পাশাপাশি ধর্মীয় সহনশীলতা, লিঙ্গ সমতা ও শিক্ষা উন্নয়নের দিকে অগ্রসর হয়েছে।

যারা এতদিন বাংলাদেশে মানবাধিকার নেই এবং দেশে সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে বলে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করলেন বাংলাদেশের জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের সদস্যপদ লাভের পরে তারা কী বলবেন? কারণ এ স্বীকৃতি যা নির্দেশ করে তা হলো বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি উদ্বেগজনক নয় এবং সরকার মানবাধিকার নিশ্চিতের বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন। শুধু সমালোচনার খাতিরে সমালোচনা না করে, আমাদের উচিত কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি বন্ধ করে সবাই মিলে দেশের উন্নয়নে একসাথে কাজ করা। ভিত্তিহীন তথ্য প্রচার বাদ দিয়ে দেশ ও দেশের বাইরে জাতীয় ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে সব গোষ্ঠী কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে যাবে- এটাই কাম্য।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জাতিসংঘে অনন্য উচ্চতায় বাংলাদেশ ও জনপ্রত্যাশা

আপডেট সময় : ১০:০২:০৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ অক্টোবর ২০২২

মাসুদ রানা : বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে দেশের ভেতর ও বাইরে সমালোচনায় মুখর ছিল একটি মহল। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে ইস্যুটি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনায় মত্ত ছিল। এসব সমালোচনার মধ্যেই বিশ্ব দরবারে দারুণ একটা স্বীকৃতি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল ইউএনএইচআরসি’তে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চল থেকে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে আগামী তিন বছরের জন্য সদস্যপদ লাভ করেছে বাংলাদেশ। ১৬০টি দেশের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশকে মানবাধিকার কাউন্সিলের সদস্য হওয়ার জন্য সমর্থন করেছে, যা আমাদের দেশের জন্য নিঃসন্দেহে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অর্জন।

জাতিসংঘে এই অর্জন তাদের জন্য স্পষ্ট চপেটাঘাত— যারা বাংলাদেশের মানবাধিকার লঙ্ঘনের মিথ্যা তথ্য প্রচার করার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ ও সরকারকে বিব্রত করার চেষ্টায় মত্ত। এই ধরনের ‘প্ররোচিত’ তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ‘ভিকটিমস অব এনফোর্সড ডিসএপ্যারেনস’ শীর্ষক এক রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল জাতিসংঘ, যা পরে সংশোধিতও হয়েছে সংস্থাটির পক্ষ থেকে।

সেই রিপোর্ট প্রকাশের কিছু দিন পরে গত আগস্ট মাসে বাংলাদেশ সফর করে গেছেন বৈশ্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত জাতিসংঘের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট। বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে উদ্বেগজনক তেমন কিছু উল্লেখ করেননি জাতিসংঘের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। তার বক্তব্যে স্বার্থান্বেষী সেই গোষ্ঠী একটা বড় ধাক্কা খেয়েছিল। সেই গোষ্ঠী আবার একটা বড় ধাক্কা খেলো যখন বাংলাদেশ সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের সদস্যপদ লাভ করলো।

যদিও এটা বলা যাবে না যে বর্তমান সরকারের আমলে কখনই এমন কোনো ধরনের ঘটনা ঘটেনি, যাতে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অধিকার লঙ্ঘিত হয়নি। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা অবশ্যই ঘটেছে। তবে সেই ঘটনাকে ঢালাওভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে প্রচার করা উচিত হবে না। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসন কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অত্যুৎসাহী কিছু সদস্য বা কর্মকর্তার কার্যক্রমের কারণে কিছু ঘটনা ঘটেছে।

প্রকৃতপক্ষে, দেশে এমন কোনো ঘটনা দৃশ্যমান নয়, যাতে ঢালাওভাবে বলা যায় যে দেশে আপামর জনগণের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। স্বার্থান্বেষী ওই গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নামে গুম ও খুনের যে তালিকাটি বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার কাছে দেওয়া হয়েছিল সেটি ত্রুটিমুক্ত ছিল না। সে তালিকার প্রায় অর্ধেকই ভুল প্রমাণিত হয়েছে। আবার যাদের নিখোঁজ হওয়ার কথা বলা হয়েছে, তাদের অনেকেই ফিরেও এসেছেন। তাই আমরা বলতে পারি, যারা ঢালাওভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে দেশ ও বিদেশে প্রচার চালাচ্ছেন, তাদের উদ্দেশ্য কখনো হাসিল হবে না।

দেশের মানবাধিকার নিয়ে অপপ্রচারে লিপ্ত ছিল মানবাধিকার সংস্থা অধিকারও। সংস্থাটির সম্পাদক আদিলুর রহমান খান বিএনপি-জামায়াত জোট শাসনামলে ছিলেন পদস্থ আইন কর্মকর্তা—ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল। বিএনপি ক্ষমতায় এলে তিনি হয়তো অ্যাটর্নি জেনারেল হয়ে যেতেন। কিন্তু তার সে সৌভাগ্য আর হয়নি।

২০১৩ সালে মতিঝিলে হেফাজতে ইসলামের তা-ব নিয়ন্ত্রণকালে নিহতের ভুল তথ্য দিয়ে আলোচনায় আসে অধিকার। নানা অভিযোগে এনজিও ব্যুরো সংস্থাটির নিবন্ধন বাতিল করে দিয়েছে। হেফাজতে ইসলামের মতিঝিল সমাবেশে ৬১ জন নিহতের দাবি করেছিল সংস্থাটি। যদিও তার কোনো তথ্য-উপাত্ত দিতে পারেনি তারা। তালিকার অনেকেই বেঁচে আছেন। অনেকে চাকরিও করছেন বলে পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে।

এমনই অপপ্রচারে লিপ্ত ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান, যিনি ড. কামাল হোসেনের জামাতা এবং অর্থ পাচার এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হত্যা-ষড়যন্ত্রের সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকা অভিযোগে সাজাপ্রাপ্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বেতনভুক্ত উপদেষ্টা। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সময়ও তিনি বিচারের বিপক্ষে কাজ করেছেন।

দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা যুক্তরাষ্ট্রে বসে তারেক রহমান ও ড. কামালদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকারবিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত আছেন। ডেভিড বার্গম্যানই ড. কামাল, তারেক রহমান ও এস কে সিনহার মধ্যে লিয়াজোঁ হিসেবে কাজ করেন এবং দেশের সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনীকে নিয়ে মিথ্যা-বানোয়াট গুজব ছড়াচ্ছে।

যদিও এটা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না— দেশে কখনও ঢালাওভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়নি, এমনটা নয়। ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে বেগম খালেদা জিয়ার শাসনামলে পুরোপুরিভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে। সেসময় বিরোধীদের কণ্ঠস্বররোধে সর্বতৎপর ছিল বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার। বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে ২৩ জনকে হত্যা করা হয়। গ্রেনেড হামলায় হত্যা করা হয় সাবেক অর্থমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সদস্য শাহ এম এস কিবরিয়াকে।

ইউএনএইচআরসি’তে বাংলাদেশের অর্জন নিশ্চয়ই অনেক সংশয়ের জবাব হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এই স্বীকৃতি আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কেন? ইউএনএইচআরসি মানবাধিকারের সর্বজনীন মূল্যবোধকে সমুন্নত রাখার চেষ্টা করে এবং সেই অনুযায়ী সর্বজনীন পর্যায়ক্রমিক পর্যালোচনা, দেশভিত্তিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা, তথ্য অনুসন্ধান সংস্থা নিয়োগের মতো উদ্যোগ গ্রহণ করে; প্রতিটি সদস্যপদ রাষ্ট্র অন্য দেশগুলোকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য আহ্বান জানায়। এই সদস্যপদ নির্বাচিত হয় অন্য সদস্য রাষ্ট্রগুলোর ভোটের মাধ্যমে, যেখানে কিছু কঠোর মানদ- বিবেচনা করা হয়। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলো হলো- মানবাধিকার সমুন্নত রাখা, সমুন্নত রাখতে প্রার্থী রাষ্ট্রের প্রচেষ্টা, প্রতিশ্রুতি এবং এটি পূরণে রাষ্ট্রটির সর্বাত্মক সহযোগিতা।

বাংলাদেশ গত দেড় দেশকে পাঁচবার জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হয়েছে। এটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মানবাধিকারের উন্নয়ন ও সুরক্ষায় বাংলাদেশের অব্যাহত প্রচেষ্টা এবং প্রতিশ্রুতির প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বীকৃতি এবং আস্থার বহিঃপ্রকাশ। বাংলাদেশ মিয়ানমার থেকে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে, যা দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর তুলনায় সর্বোচ্চ সংখ্যক। পাশাপাশি ধর্মীয় সহনশীলতা, লিঙ্গ সমতা ও শিক্ষা উন্নয়নের দিকে অগ্রসর হয়েছে।

যারা এতদিন বাংলাদেশে মানবাধিকার নেই এবং দেশে সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে বলে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করলেন বাংলাদেশের জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের সদস্যপদ লাভের পরে তারা কী বলবেন? কারণ এ স্বীকৃতি যা নির্দেশ করে তা হলো বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি উদ্বেগজনক নয় এবং সরকার মানবাধিকার নিশ্চিতের বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন। শুধু সমালোচনার খাতিরে সমালোচনা না করে, আমাদের উচিত কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি বন্ধ করে সবাই মিলে দেশের উন্নয়নে একসাথে কাজ করা। ভিত্তিহীন তথ্য প্রচার বাদ দিয়ে দেশ ও দেশের বাইরে জাতীয় ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে সব গোষ্ঠী কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে যাবে- এটাই কাম্য।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।