ঢাকা ১২:৩৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫
শিক্ষক নেটওয়ার্কের বিবৃতি

জাকসু নির্বাচন নিয়ে অভিযোগগুলোর নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান

  • আপডেট সময় : ০৭:২৫:০২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ৪০ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচন-২০২৫ নিয়ে ওঠা অভিযোগগুলোর নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। গতকাল সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ৩৩ বছর পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচন ছিল সেপ্টেম্বর ১১ তারিখে। শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবির পর এই নির্বাচন ভীষণ আগ্রহ ও উদ্দীপনা তৈরি করেছিল। কিন্তু বাস্তবে অনুষ্ঠিত নির্বাচনটি একদিকে যেমন ছিল ত্রুটিপূর্ণ, তেমনই বিতর্কিত। অব্যবস্থাপনায় ভরা নির্বাচনটির এই প্রক্রিয়ায় মাশুল গুনতে হয়েছে একজন তরুণ শিক্ষককে তার জীবন দিয়ে। নির্বাচন কমিশন গঠনের শুরু থেকেই এর অদক্ষতা, লোকবল বাড়াতে অনীহা, সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনার অভাব, প্রার্থী বিশেষের প্রতি বিরূপতা ইত্যাদি বিবেচনা করলে জান্নাতুল ফেরদৌসের মৃত্যুর পটভূমিতে মারাত্মক অদক্ষতার একটা পরিবেশ আমরা দেখতে পাই। তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আমরা সমবেদনা জানাই। একই সঙ্গে অদূরদর্শী কর্মপরিকল্পনারহিত নির্বাচন কমিশনের নিন্দা করি।

নির্বাচন প্রক্রিয়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বেশকিছু সমস্যা দৃশ্যমান হয়েছে বলে মনে করে শিক্ষক নেটওয়ার্ক। সেগুলো হলো-

১. ত্রুটিপূর্ণ ভোটার তালিকা ও ত্রুটিপূর্ণ ব্যালট।

২. একজন ভিপি প্রার্থী অমর্ত্য রায়কে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর, নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হওয়ার পরে অনিয়মিত ছাত্র হিসেবে দেখিয়ে নির্বাচনের চার দিন আগে তার প্রার্থিতা বাতিল করা হয়। অমর্ত্যরে বিরুদ্ধে এই সিদ্ধান্ত উচ্চতর আদালত স্থগিত করলেও চেম্বার আদালতে আপিল করে বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যালট পেপার ছাপা হয়ে যাওয়ার যুক্তিতে, ৯ সেপ্টেম্বর উচ্চতর আদালতের সিদ্ধান্তটিকে স্থগিত করে দেওয়া হয়। প্রশাসন উচ্চতর আদালতের রায় মেনে নিয়ে অমর্ত্যের প্রার্থিতা ফিরিয়ে দিতে পারতো, কিন্তু তারা সেটা করেনি। প্রশাসনের এই আচরণ এবং একজন প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলের পুরো প্রক্রিয়াটিকে আমাদের কাছে প্রশাসনের পক্ষপাতদুষ্ট দুরভিসন্ধি বলে মনে হয়েছে।

৩. ৯ সেপ্টেম্বর প্রার্থীদের ডোপ টেস্টের দিন ধার্য করা হয়। ব্যালট পেপার ছাপানো হয়ে যাওয়ার পর ডোপ টেস্টের প্রাসঙ্গিকতা জানতে চাইলে বলা হয় ব্যালট পেপার ছাপানো হয়নি। এ ধরনের পরস্পরবিরোধী কথা নির্বাচন কমিশনকে খেলো করে তোলে।

৪. নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালট বাক্স হলে হলে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে। অথচ এই ক্যাম্পাসে ব্যালট বাক্স নির্বাচনের দিন সকালে পাঠানোতে কোনো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।

৫. নির্বাচন কমিশন প্রার্থীদের পোলিং এজেন্ট রাখতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া নেয়। পরে শেষ মুহূর্তে নির্বাচনের আগের রাত ২টা ৩০ মিনিটে পোলিং এজেন্ট রাখা যাবে বলে ঘোষণা দেয়; যা প্রার্থীদের মধ্যে বড় ধরনের বৈষম্যের সৃষ্টি করে। পাশাপাশি পোলিং এজেন্টদের পরিচয়পত্র দিতে গড়িমসি করা এবং সকালে কয়েক ঘণ্টা ধরে ভোট চললেও কোনো কোনো প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট না থাকা, নির্বাচনের স্বচ্ছতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

৬. ভোট কেন্দ্রে প্রার্থীদের ঢুকতে বাধা দেওয়া। ছাত্রীদের হল পরিদর্শনে প্রার্থী ও সাংবাদিকদের বাধা দেওয়া।

৭. নির্ধারিত ভোটারের চেয়ে অতিরিক্ত ব্যালট পেপার সরবরাহ করার ঘটনা বড় রকমের সংশয় তৈরি করে। কোনো কোনো হলে মাটিতে ব্যালট পেপার পড়ে থাকতে দেখা যায়।

৮. অমোচনীয় কালির দাগ উঠে যাওয়ার ঘটনাও ভোট কারচুপির সুযোগ সৃষ্টি করে।

৯. ভোটার তালিকায় নাম না থাকায়, বৈধ শিক্ষার্থী হওয়া সত্ত্বেও অনেকে ভোট দিতে পারেনি। জাল ভোটের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

১০. কোনো কোনো হলের একাধিক প্রার্থীর নাম ছাপা না হওয়া বা কয়জন সদস্যকে ভোট দিতে হবে সেই নির্দেশনায় ভুল অঙ্ক লেখা থাকা।

১১. নির্ধারিত সময়ে সব হলে ভোট দেওয়া শেষ না হওয়া। নির্ধারিত সময়ের আড়াই ঘণ্টা পরও ভোট গ্রহণ চলতে থাকা।

১২. ওএমআর পদ্ধতিতে ভোট গণনায় প্রশ্ন উঠায়, হাতে ভোট গণনার সিদ্ধান্তের পর বাস্তব পদ্ধতি অনুসরণ না করা। এতে ধীরগতিতে ভোট গণনা চলে এবং ৪৮ ঘণ্টা পর নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়। এত দীর্ঘ সময় ব্যালট বাক্সগুলো নিচ্ছিদ্র থাকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

১৩. নির্বাচনে নানা দায়িত্বে থাকা তিন জন সহকর্মী নির্বাচনের অতিরিক্ত ব্যালট পেপার সরবরাহ ও অমোচনীয় কালির দাগ উঠে যাওয়ার অভিযোগ তুলে দায়িত্ব থেকে সরে যান।

১৪. একইভাবে নির্বাচনের দিন দুপুরের পর এইসব অভিযোগ তুলে অংশগ্রহণকারী আটটি প্যানেলের মধ্যে পাঁচটি প্যানেল এই নির্বাচন বর্জন করে।

১৫. ক্যাম্পাসে সব খাবার দোকান ও চা এর দোকান বন্ধ রেখে ক্যাম্পাসের উৎসবমুখর পরিবেশকে দমবন্ধ দশায় পরিণত করা হয়। অন্যদিকে নির্বাচনের দিন দুপুরের পর থেকে জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গেটে জড়ো হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষার্থী, নির্বাচন কমিশন তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বাসিন্দার ওপর মানসিক চাপ প্রয়োগ করতে দেখা যায়।

১৬. সর্বশেষ পাঁচ জনের মধ্যে দুই জন নির্বাচন কমিশনার নির্বাচনে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনে পদত্যাগ করেন। এসব কিছু সত্ত্বেও তিন জন কমিশনারের স্বাক্ষরে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, এসব থেকে প্রতীয়মান হয়, যেকোনও প্রকারে একটি দলকে জিতিয়ে নিয়ে আসার লক্ষ্যে সব মনোযোগ দেওয়া হয়েছে এবং প্রার্থী, রিটানিং অফিসার ও নির্বাচন কমিশনারদের বর্জন, পদত্যাগ ও সমস্ত অভিযোগকে উপেক্ষা করা হয়েছে। দুজন কমিশন সদস্যের পদত্যাগকে আমরা নির্বাচন পরিচালনায় প্রশাসনের সর্বাত্মক ব্যর্থতা হিসেবে দেখি। নির্বাচনের প্রাক্কালে ওএমআর যন্ত্রের দরপত্র বিষয়ক অভিযোগ ওঠে। একাধিক দল পরস্পরকে দোষারোপ করেন। প্রশাসন সমস্যা সমাধানের রাস্তা হিসেবে ওএমআর ব্যবহার না করে সনাতনি ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে গণনা শুরু করেন। এই ধরনের কর্মকাণ্ড নেহায়েত প্রশাসনের দুর্বলতাকেই তুলে ধরে। এই বিপুল টাকা লগ্নির পর যন্ত্র ব্যবহার করতে না-পারা নিছকই লজ্জাজনক। উপরন্তু সহকর্মীদের ওপর অকথ্য পরিশ্রম চাপানোর কারণ তৈরি করেছে এটা। তখনই প্রশাসনের তাৎক্ষণিক জনবল বৃদ্ধি আবশ্যক ছিল।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমরা মনে করি, উল্লেখিত কারণগুলো থেকে এটা স্পষ্টত হয় যে, নির্বাচনটি পক্ষপাতদুষ্ট হয়েছে এবং গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। এর দায়ভার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ওপরই বর্তায়। একই কারণে আমরা এই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করি এবং মনে করি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এইসব কারসাজি উন্মোচন হওয়া জরুরি।

সানা/কেএমএএ/আপ্র/১৫/০৯/২০২৫

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

শিক্ষক নেটওয়ার্কের বিবৃতি

জাকসু নির্বাচন নিয়ে অভিযোগগুলোর নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান

আপডেট সময় : ০৭:২৫:০২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচন-২০২৫ নিয়ে ওঠা অভিযোগগুলোর নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। গতকাল সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ৩৩ বছর পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচন ছিল সেপ্টেম্বর ১১ তারিখে। শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবির পর এই নির্বাচন ভীষণ আগ্রহ ও উদ্দীপনা তৈরি করেছিল। কিন্তু বাস্তবে অনুষ্ঠিত নির্বাচনটি একদিকে যেমন ছিল ত্রুটিপূর্ণ, তেমনই বিতর্কিত। অব্যবস্থাপনায় ভরা নির্বাচনটির এই প্রক্রিয়ায় মাশুল গুনতে হয়েছে একজন তরুণ শিক্ষককে তার জীবন দিয়ে। নির্বাচন কমিশন গঠনের শুরু থেকেই এর অদক্ষতা, লোকবল বাড়াতে অনীহা, সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনার অভাব, প্রার্থী বিশেষের প্রতি বিরূপতা ইত্যাদি বিবেচনা করলে জান্নাতুল ফেরদৌসের মৃত্যুর পটভূমিতে মারাত্মক অদক্ষতার একটা পরিবেশ আমরা দেখতে পাই। তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আমরা সমবেদনা জানাই। একই সঙ্গে অদূরদর্শী কর্মপরিকল্পনারহিত নির্বাচন কমিশনের নিন্দা করি।

নির্বাচন প্রক্রিয়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বেশকিছু সমস্যা দৃশ্যমান হয়েছে বলে মনে করে শিক্ষক নেটওয়ার্ক। সেগুলো হলো-

১. ত্রুটিপূর্ণ ভোটার তালিকা ও ত্রুটিপূর্ণ ব্যালট।

২. একজন ভিপি প্রার্থী অমর্ত্য রায়কে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর, নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হওয়ার পরে অনিয়মিত ছাত্র হিসেবে দেখিয়ে নির্বাচনের চার দিন আগে তার প্রার্থিতা বাতিল করা হয়। অমর্ত্যরে বিরুদ্ধে এই সিদ্ধান্ত উচ্চতর আদালত স্থগিত করলেও চেম্বার আদালতে আপিল করে বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যালট পেপার ছাপা হয়ে যাওয়ার যুক্তিতে, ৯ সেপ্টেম্বর উচ্চতর আদালতের সিদ্ধান্তটিকে স্থগিত করে দেওয়া হয়। প্রশাসন উচ্চতর আদালতের রায় মেনে নিয়ে অমর্ত্যের প্রার্থিতা ফিরিয়ে দিতে পারতো, কিন্তু তারা সেটা করেনি। প্রশাসনের এই আচরণ এবং একজন প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলের পুরো প্রক্রিয়াটিকে আমাদের কাছে প্রশাসনের পক্ষপাতদুষ্ট দুরভিসন্ধি বলে মনে হয়েছে।

৩. ৯ সেপ্টেম্বর প্রার্থীদের ডোপ টেস্টের দিন ধার্য করা হয়। ব্যালট পেপার ছাপানো হয়ে যাওয়ার পর ডোপ টেস্টের প্রাসঙ্গিকতা জানতে চাইলে বলা হয় ব্যালট পেপার ছাপানো হয়নি। এ ধরনের পরস্পরবিরোধী কথা নির্বাচন কমিশনকে খেলো করে তোলে।

৪. নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালট বাক্স হলে হলে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে। অথচ এই ক্যাম্পাসে ব্যালট বাক্স নির্বাচনের দিন সকালে পাঠানোতে কোনো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।

৫. নির্বাচন কমিশন প্রার্থীদের পোলিং এজেন্ট রাখতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া নেয়। পরে শেষ মুহূর্তে নির্বাচনের আগের রাত ২টা ৩০ মিনিটে পোলিং এজেন্ট রাখা যাবে বলে ঘোষণা দেয়; যা প্রার্থীদের মধ্যে বড় ধরনের বৈষম্যের সৃষ্টি করে। পাশাপাশি পোলিং এজেন্টদের পরিচয়পত্র দিতে গড়িমসি করা এবং সকালে কয়েক ঘণ্টা ধরে ভোট চললেও কোনো কোনো প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট না থাকা, নির্বাচনের স্বচ্ছতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

৬. ভোট কেন্দ্রে প্রার্থীদের ঢুকতে বাধা দেওয়া। ছাত্রীদের হল পরিদর্শনে প্রার্থী ও সাংবাদিকদের বাধা দেওয়া।

৭. নির্ধারিত ভোটারের চেয়ে অতিরিক্ত ব্যালট পেপার সরবরাহ করার ঘটনা বড় রকমের সংশয় তৈরি করে। কোনো কোনো হলে মাটিতে ব্যালট পেপার পড়ে থাকতে দেখা যায়।

৮. অমোচনীয় কালির দাগ উঠে যাওয়ার ঘটনাও ভোট কারচুপির সুযোগ সৃষ্টি করে।

৯. ভোটার তালিকায় নাম না থাকায়, বৈধ শিক্ষার্থী হওয়া সত্ত্বেও অনেকে ভোট দিতে পারেনি। জাল ভোটের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

১০. কোনো কোনো হলের একাধিক প্রার্থীর নাম ছাপা না হওয়া বা কয়জন সদস্যকে ভোট দিতে হবে সেই নির্দেশনায় ভুল অঙ্ক লেখা থাকা।

১১. নির্ধারিত সময়ে সব হলে ভোট দেওয়া শেষ না হওয়া। নির্ধারিত সময়ের আড়াই ঘণ্টা পরও ভোট গ্রহণ চলতে থাকা।

১২. ওএমআর পদ্ধতিতে ভোট গণনায় প্রশ্ন উঠায়, হাতে ভোট গণনার সিদ্ধান্তের পর বাস্তব পদ্ধতি অনুসরণ না করা। এতে ধীরগতিতে ভোট গণনা চলে এবং ৪৮ ঘণ্টা পর নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়। এত দীর্ঘ সময় ব্যালট বাক্সগুলো নিচ্ছিদ্র থাকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

১৩. নির্বাচনে নানা দায়িত্বে থাকা তিন জন সহকর্মী নির্বাচনের অতিরিক্ত ব্যালট পেপার সরবরাহ ও অমোচনীয় কালির দাগ উঠে যাওয়ার অভিযোগ তুলে দায়িত্ব থেকে সরে যান।

১৪. একইভাবে নির্বাচনের দিন দুপুরের পর এইসব অভিযোগ তুলে অংশগ্রহণকারী আটটি প্যানেলের মধ্যে পাঁচটি প্যানেল এই নির্বাচন বর্জন করে।

১৫. ক্যাম্পাসে সব খাবার দোকান ও চা এর দোকান বন্ধ রেখে ক্যাম্পাসের উৎসবমুখর পরিবেশকে দমবন্ধ দশায় পরিণত করা হয়। অন্যদিকে নির্বাচনের দিন দুপুরের পর থেকে জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গেটে জড়ো হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষার্থী, নির্বাচন কমিশন তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বাসিন্দার ওপর মানসিক চাপ প্রয়োগ করতে দেখা যায়।

১৬. সর্বশেষ পাঁচ জনের মধ্যে দুই জন নির্বাচন কমিশনার নির্বাচনে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনে পদত্যাগ করেন। এসব কিছু সত্ত্বেও তিন জন কমিশনারের স্বাক্ষরে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, এসব থেকে প্রতীয়মান হয়, যেকোনও প্রকারে একটি দলকে জিতিয়ে নিয়ে আসার লক্ষ্যে সব মনোযোগ দেওয়া হয়েছে এবং প্রার্থী, রিটানিং অফিসার ও নির্বাচন কমিশনারদের বর্জন, পদত্যাগ ও সমস্ত অভিযোগকে উপেক্ষা করা হয়েছে। দুজন কমিশন সদস্যের পদত্যাগকে আমরা নির্বাচন পরিচালনায় প্রশাসনের সর্বাত্মক ব্যর্থতা হিসেবে দেখি। নির্বাচনের প্রাক্কালে ওএমআর যন্ত্রের দরপত্র বিষয়ক অভিযোগ ওঠে। একাধিক দল পরস্পরকে দোষারোপ করেন। প্রশাসন সমস্যা সমাধানের রাস্তা হিসেবে ওএমআর ব্যবহার না করে সনাতনি ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে গণনা শুরু করেন। এই ধরনের কর্মকাণ্ড নেহায়েত প্রশাসনের দুর্বলতাকেই তুলে ধরে। এই বিপুল টাকা লগ্নির পর যন্ত্র ব্যবহার করতে না-পারা নিছকই লজ্জাজনক। উপরন্তু সহকর্মীদের ওপর অকথ্য পরিশ্রম চাপানোর কারণ তৈরি করেছে এটা। তখনই প্রশাসনের তাৎক্ষণিক জনবল বৃদ্ধি আবশ্যক ছিল।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমরা মনে করি, উল্লেখিত কারণগুলো থেকে এটা স্পষ্টত হয় যে, নির্বাচনটি পক্ষপাতদুষ্ট হয়েছে এবং গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। এর দায়ভার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ওপরই বর্তায়। একই কারণে আমরা এই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করি এবং মনে করি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এইসব কারসাজি উন্মোচন হওয়া জরুরি।

সানা/কেএমএএ/আপ্র/১৫/০৯/২০২৫