আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পূর্ব আফ্রিকার দেশ ইথিওপিয়ায় বাড়তে থাকা সশস্ত্র সংঘাত ও অস্থিরতার মুখে জরুরি দায়িত্বে নেই এমন মার্কিন সরকারি কর্মীদের দেশটি ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
গত শনিবার আদ্দিস আবাবার মার্কিন দূতাবাস এ কথা জানিয়েছে। বিদ্রোহী তিগ্রাই বাহিনী ও তাদের মিত্ররা রাজধানী আদ্দিস আবাবার দিকে অগ্রসর হলেও বাণিজ্যিক ফ্লাইট এখনও চালু থাকায় ডেনমার্ক ও ইতালিও তাদের নাগরিকদের ইথিওপিয়া ছাড়তে বলেছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ, পশ্চিমা বিভিন্ন দেশ ও আফ্রিকার দেশগুলো ইথিওপিয়ায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেও তিগ্রাই বাহিনীর সঙ্গে বছরব্যাপী যুদ্ধে বিপর্যস্ত প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদের সরকার লড়াই চালিয়ে যাওয়ার পণ করেছে।
“পূর্বাভাস ছাড়াই সংঘাত এবং জাতিগত সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে এবং সরবরাহ চেইনে ঘাটতি, যোগাযোগ বন্ধ এবং ভ্রমণে বিঘœ ঘটতে পারে,” নিজেদের ওয়েবসাইটে এমনটাই বলেছে মার্কিন দূতবাস।
এ বিষয়ে ইথিওপিয়া সরকারের মুখপাত্র লেগেসে টুলু ও প্রধানমন্ত্রী আবির মুখপাত্র বিলেনে সেইওমের মন্তব্যর জন্য তাদের সঙ্গে যোগাযোগ চেষ্টা করে তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
শহর আক্রান্ত হলে প্রতিরক্ষা যেন জোরদার করা যায় তার জন্য আদ্দিস আবাবার পৌর কর্তৃপক্ষ অস্ত্র আছে এমন বাসিন্দাদেরকে তাদের অস্ত্র নিবন্ধনের নির্দেশ দিয়েছে। আদ্দিস আবাবায় এরই মধ্যে ১০ হাজারের বেশি অস্ত্র নিবন্ধিত হয়েছে বলে শনিবার সম্প্রচারমাধ্যম ইবিসিকে বলেছেন শহর কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র ইয়োনাস জেওদে।
গত সপ্তাহের মঙ্গলবার আবি সরকার দেশে জরুরি অবস্থা জারি করে বলেছিল, তারা ‘অস্তিত্বের যুদ্ধে’ জড়িয়ে পড়েছে।
রাজধানীর পুলিশ কমিশনার গেটু আরগাও ইবিসিকে বলেছেন, তিগ্রাই পিপলস লিবারেশন ফ্রন্ট (টিপিএলএফ) যদি ভেবেও থাকে তারা আদ্দিস আবাবা শহর দখল করতে পারবে, তা কেবল তাদের ‘স্বপ্নেই’ থেকে যাবে। পুলিশ এরই মধ্যে রাজধানীর কিছু মানুষের কাছ থেকে অস্ত্র ও ইউনিফর্ম জব্দ করেছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
টিপিএলএফের মুখপাত্র গেতাচিউ রেদার অভিযোগ, আবি জরুরি অবস্থাকে ব্যবহার করে ‘তিগ্রাই ও ওরোমো জাতিগোষ্ঠীর হাজার হাজার মানুষকে’ গ্রেপ্তার করছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, এ অভিযোগের বিষয়ে আবি সরকারের মুখপাত্র এবং কেন্দ্রীয় পুলিশের মুখপাত্র জেইলান আবদির মন্তব্য চাইলেও তাৎক্ষণিকভাবে তা পাওয়া যায়নি। পুলিশ অবশ্য গেতাচিউর অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছে। জাতিগত সংশ্লিষ্টতা দেখে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না বলে দাবি করছে তারা।
“আমরা কেবল তাদেরই গ্রেপ্তার করছি যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অবৈধ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন দিচ্ছে। এই সমর্থনের মধ্যে আছে নৈতিক, অর্থনৈতিক ও প্রচারমূলক সমর্থন,” গত বৃহস্পতিবার এমনটাই বলেছিলেন পুলিশের মুখপাত্র ফসিকা ফন্তে। টিপিএলএফ গত শুক্রবার আবিকে ক্ষমতা থেকে সরাতে আরও অনেক গোষ্ঠীর সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ার কথা জানায়। প্রয়োজন পড়লে আবিকে ‘জোর করে সরিয়ে দেওয়া হবে’ বলেও জানিয়েছে তারা।
তাৎক্ষণিকভাবে এর নিন্দা জানায় ইথিওপিয়ার সরকার। তারা বলে, জুনের নির্বাচনে বিপুল ভোটে জেতায় আবি-রই দেশ শাসনের এখতিয়ার রয়েছে। ইথিওপিয়ার গণতন্ত্র রক্ষায় সহযোগিতা করতে আন্তর্জাতিক অংশীদারদের প্রতি আহ্বানও জানায় তারা। বছরখানেক আগে টিপিএলফের অনুগত বাহিনীগুলো তিগ্রাই অঞ্চলের বিভিন্ন সামরিক ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর ইথিওপিয়ার উত্তরাঞ্চলে সংঘর্ষ বেধে যায়।
সামরিক ঘাঁটি দখলের জবাবে আবি ওই অঞ্চলে সেনা পাঠিয়ে প্রথমদিকে টিপিএলএফকে আঞ্চলিক রাজধানী থেকে তাড়িয়ে দিতে পারলেও চলতি বছরের জুন থেকে দান উল্টে যায়। টিপিএলএফ রাজধানী আদ্দিস আবাবার পথে কতটুকু অগ্রসর হতে পেরেছে তা নিশ্চিত হতে পারেনি রয়টার্স।
বিদ্রোহী এ বাহিনী ও তাদের মিত্ররা কয়েকদিন আগে বার্তা সংস্থাটিকে বলেছিল, তারা এখন আমহারা রাজ্যের কেমিসে শহরে অবস্থান করছে, রাজধানী থেকে যার দূরত্ব মাত্র ৩২৫ কিলোমিটার। অন্যদিকে ইথিওপিয়ার সরকারের ভাষ্য, টিপিএলএফ তাদের অগ্রগতি নিয়ে বাড়িয়ে বলছে। দুই পক্ষের এই সংঘাত এরই মধ্যে কয়েক হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে, ২০ লাখের বেশি মানুষকে ঘরছাড়া করেছে, দুর্ভিক্ষের দিকে ঠেলে দিয়েছে তিগ্রাইয়ের প্রায় চার লাখ মানুষকে।
‘জরুরি নয়’ এমন সরকারি কর্মীদের ইথিওপিয়া ছাড়তে বলল যুক্তরাষ্ট্র
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ