ঢাকা ০৩:৪৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫

জরুরি অবস্থা জারিতে প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি বিরোধী দলীয় নেতার মতামতে ঐকমত্য

  • আপডেট সময় : ০৯:২০:৩২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫
  • ২৫ বার পড়া হয়েছে

রোববার সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ তাহের -ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেছেন, জরুরি অবস্থা জারি করতে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি বিরোধী দলীয় নেতা বা উপনেতার মতামত নিতে হবে। এরপর অধ্যাদেশ জারি করবেন রাষ্ট্রপতি। এ বিষয়ে বেশিরভাগ দলই একমত হয়েছে।

রোববার (১৩ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের ১২তম দিনের সংলাপের মাঝে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. তাহের বলেন, বিদ্যমান আইনে জরুরি অবস্থা জারি করেন প্রেসিডেন্ট। এতে শুধু সই করেন প্রধানমন্ত্রী। আমরা বলেছি, এক্ষেত্রে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে বিরোধী দলীয় প্রধানেরও মতামত নিতে হবে। কোন গঠিত কারণে তিনি অনুপস্থিত থাকলে বিরোধী দলীয় উপনেতার মতামত নিতে হবে। আর যদি তখন সংসদ কার্যকর না থাকে, তাহলে সর্বশেষ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে গঠিত সংসদের সরকার ও প্রধান বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। অর্থাৎ সবার সম্মিলিত সিদ্ধান্ত থাকতে হবে। আবার এই আইনের অপব্যবহার হলেও প্রতিবাদ করতে পারবেন বিরোধী দলীয় নেতা। নাগরিকদের মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করা যাবে না। বিষয়টিতে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে বলে জানান ডা. তাহের।
অপরদিকে জামায়াত চায়, আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতিই হবেন প্রধান বিচারপতি। যদিও কয়েকটি দলের মতামত হচ্ছে- দুই জন বা তিন জনের প্যানেল থেকে একজনকে বাছাই করা হবে। ডা. তাহের বলেন, আমরা মনে করি, এতে ফ্যাসিবাদের সমর্থকদের ঢুকে পরার সুযোগ হয়ে যেতে পারে। অথবা রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে নিয়োগ হতে পারে। তিনি জানান, এ বিষয়ে এখনও পর্যন্ত একমত হওয়া যায়নি। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আলোচনা সম্পন্ন না হলেও আমরা চাই, এটি যেন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়।

মন্ত্রিসভার অনুমোদনে জরুরি অবস্থা জারির বিধানে একমত এনসিপি: জরুরি অবস্থা জারির ক্ষেত্রে মন্ত্রিসভার অনুমোদন নেওয়ার বিধান করার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবে একমত হয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি। তবে জরুরি অবস্থা যেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার না হয়, সেভাবে আইন করার জন্যও কমিশনকে বলেছে দলটি।
রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে বিষয়টি তুলে ধরেন এনসিপির কেন্দ্রীয় সদস্য জাবেদ রাসিম। তিনি বলেন, আমরা জরুরি অবস্থাকে তিনটি ভাগ করতে বলেছিলাম, যুদ্ধ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা মহামারি এবং অভ্যন্তরীণ গোলযোগের ক্ষেত্রে। অভ্যন্তরীণ গোলযোগের পরিবর্তে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বা ভৌগোলিক অক্ষণ্ডতার প্রশ্নে যদি জরুরি অবস্থা জারির মত পরিস্থিতি দেখা দেয় সেই ক্ষেত্রে সরকার জরুরি অবস্থা জারি করতে পারবে। আগে যেমন রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর অনুস্বাক্ষরে জরুরি অবস্থা জারি করতে পারতেন, সেখানে সেটা মন্ত্রী সভায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে, কলেবর একটু বর্ধিত করা হয়েছে, এ বিষয়ে আমরা এনসিপি একমত পোষণ করেছি। রাসিম বলেন, জরুরি অবস্থা যেহেতু একটা জরুরি বিষয় এবং এই সময়ে সরকারকে তড়িৎ সিদ্ধান্ত নিতে হয়, সেই ক্ষেত্র এটি নির্বাহীর কাছে থাকাই বাঞ্ছনীয়। বিরোধী দলের সিদ্ধান্তের বিষয়ে কথা হয়েছিল, আমরা বলেছি বিরোধী দলের প্রধান এই বৈঠকে উপস্থিত হতে পারেন, তার মতামত তিনি প্রদান করতে পারেন। জরুরি অবস্থা যেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার না হয়, সেটার ব্যাপারে আমরা বলেছি এবং সবগুলো রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে।
জরুরি অবস্থা ঘোষণার ক্ষেত্রে বিরোধী দলের প্রধানের মতামত মূল্যায়ন না করা হলে কী হবে? এমন প্রশ্নে এনসিপির এই নেতা বলেন, জরুরি অবস্থা ঘোষণার বৈঠক থেকে বের হয়ে বিরোধী দল নেতা যদি জরুরি অবস্থার বিরুদ্ধে বক্তব্য দেন, তাহলে এর প্রভাব পড়বে।

প্রধান বিচারপতি নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে রাসিম বলেন, কর্মে জ্যেষ্ঠতম আপিল বিভাগের বিচারপতিকেই রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ করবেন, এমন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে ঐকমত্য কমিশনের তরফে। কিন্তু বৈঠকে কর্মে জ্যেষ্ঠতম দুইজন না একজন সেটা নিয়ে মতপার্থক্য দেখা দেয়। তিনি বলেন, পরে কমিশন সিদ্ধান্ত নেয়, কর্মে জ্যেষ্ঠতমকেই প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার বিধান করা হবে। তবে কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় গিয়ে সংবিধান সংশোধন করে ‘জ্যেষ্ঠ দুইজনের মধ্যে একজন’ এর বিধান করতে পারবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে অর্থাৎ শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের একটা রূপরেখা এনসিপি দিয়েছে জানিয়ে রাসিম বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে এই বিচারাঙ্গনে নিয়ে আসার কারণে যে রাজনীতিকীকরণ করা হয়েছে আমরা সেটার ঘোর বিরোধী। আমরা বিচারাঙ্গনকে এই ভূমিকায় দেখতে চাই না।
ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের দ্বাদশতম দিনে জরুরি অবস্থা ঘোষণা, প্রধান বিচারপতির নিয়োগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জরুরি অবস্থা জারিতে প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি বিরোধী দলীয় নেতার মতামতে ঐকমত্য

আপডেট সময় : ০৯:২০:৩২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেছেন, জরুরি অবস্থা জারি করতে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি বিরোধী দলীয় নেতা বা উপনেতার মতামত নিতে হবে। এরপর অধ্যাদেশ জারি করবেন রাষ্ট্রপতি। এ বিষয়ে বেশিরভাগ দলই একমত হয়েছে।

রোববার (১৩ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের ১২তম দিনের সংলাপের মাঝে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. তাহের বলেন, বিদ্যমান আইনে জরুরি অবস্থা জারি করেন প্রেসিডেন্ট। এতে শুধু সই করেন প্রধানমন্ত্রী। আমরা বলেছি, এক্ষেত্রে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে বিরোধী দলীয় প্রধানেরও মতামত নিতে হবে। কোন গঠিত কারণে তিনি অনুপস্থিত থাকলে বিরোধী দলীয় উপনেতার মতামত নিতে হবে। আর যদি তখন সংসদ কার্যকর না থাকে, তাহলে সর্বশেষ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে গঠিত সংসদের সরকার ও প্রধান বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। অর্থাৎ সবার সম্মিলিত সিদ্ধান্ত থাকতে হবে। আবার এই আইনের অপব্যবহার হলেও প্রতিবাদ করতে পারবেন বিরোধী দলীয় নেতা। নাগরিকদের মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করা যাবে না। বিষয়টিতে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে বলে জানান ডা. তাহের।
অপরদিকে জামায়াত চায়, আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতিই হবেন প্রধান বিচারপতি। যদিও কয়েকটি দলের মতামত হচ্ছে- দুই জন বা তিন জনের প্যানেল থেকে একজনকে বাছাই করা হবে। ডা. তাহের বলেন, আমরা মনে করি, এতে ফ্যাসিবাদের সমর্থকদের ঢুকে পরার সুযোগ হয়ে যেতে পারে। অথবা রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে নিয়োগ হতে পারে। তিনি জানান, এ বিষয়ে এখনও পর্যন্ত একমত হওয়া যায়নি। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আলোচনা সম্পন্ন না হলেও আমরা চাই, এটি যেন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়।

মন্ত্রিসভার অনুমোদনে জরুরি অবস্থা জারির বিধানে একমত এনসিপি: জরুরি অবস্থা জারির ক্ষেত্রে মন্ত্রিসভার অনুমোদন নেওয়ার বিধান করার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবে একমত হয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি। তবে জরুরি অবস্থা যেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার না হয়, সেভাবে আইন করার জন্যও কমিশনকে বলেছে দলটি।
রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে বিষয়টি তুলে ধরেন এনসিপির কেন্দ্রীয় সদস্য জাবেদ রাসিম। তিনি বলেন, আমরা জরুরি অবস্থাকে তিনটি ভাগ করতে বলেছিলাম, যুদ্ধ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা মহামারি এবং অভ্যন্তরীণ গোলযোগের ক্ষেত্রে। অভ্যন্তরীণ গোলযোগের পরিবর্তে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বা ভৌগোলিক অক্ষণ্ডতার প্রশ্নে যদি জরুরি অবস্থা জারির মত পরিস্থিতি দেখা দেয় সেই ক্ষেত্রে সরকার জরুরি অবস্থা জারি করতে পারবে। আগে যেমন রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর অনুস্বাক্ষরে জরুরি অবস্থা জারি করতে পারতেন, সেখানে সেটা মন্ত্রী সভায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে, কলেবর একটু বর্ধিত করা হয়েছে, এ বিষয়ে আমরা এনসিপি একমত পোষণ করেছি। রাসিম বলেন, জরুরি অবস্থা যেহেতু একটা জরুরি বিষয় এবং এই সময়ে সরকারকে তড়িৎ সিদ্ধান্ত নিতে হয়, সেই ক্ষেত্র এটি নির্বাহীর কাছে থাকাই বাঞ্ছনীয়। বিরোধী দলের সিদ্ধান্তের বিষয়ে কথা হয়েছিল, আমরা বলেছি বিরোধী দলের প্রধান এই বৈঠকে উপস্থিত হতে পারেন, তার মতামত তিনি প্রদান করতে পারেন। জরুরি অবস্থা যেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার না হয়, সেটার ব্যাপারে আমরা বলেছি এবং সবগুলো রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে।
জরুরি অবস্থা ঘোষণার ক্ষেত্রে বিরোধী দলের প্রধানের মতামত মূল্যায়ন না করা হলে কী হবে? এমন প্রশ্নে এনসিপির এই নেতা বলেন, জরুরি অবস্থা ঘোষণার বৈঠক থেকে বের হয়ে বিরোধী দল নেতা যদি জরুরি অবস্থার বিরুদ্ধে বক্তব্য দেন, তাহলে এর প্রভাব পড়বে।

প্রধান বিচারপতি নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে রাসিম বলেন, কর্মে জ্যেষ্ঠতম আপিল বিভাগের বিচারপতিকেই রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ করবেন, এমন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে ঐকমত্য কমিশনের তরফে। কিন্তু বৈঠকে কর্মে জ্যেষ্ঠতম দুইজন না একজন সেটা নিয়ে মতপার্থক্য দেখা দেয়। তিনি বলেন, পরে কমিশন সিদ্ধান্ত নেয়, কর্মে জ্যেষ্ঠতমকেই প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার বিধান করা হবে। তবে কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় গিয়ে সংবিধান সংশোধন করে ‘জ্যেষ্ঠ দুইজনের মধ্যে একজন’ এর বিধান করতে পারবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে অর্থাৎ শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের একটা রূপরেখা এনসিপি দিয়েছে জানিয়ে রাসিম বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে এই বিচারাঙ্গনে নিয়ে আসার কারণে যে রাজনীতিকীকরণ করা হয়েছে আমরা সেটার ঘোর বিরোধী। আমরা বিচারাঙ্গনকে এই ভূমিকায় দেখতে চাই না।
ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের দ্বাদশতম দিনে জরুরি অবস্থা ঘোষণা, প্রধান বিচারপতির নিয়োগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আলোচনা হয়েছে।