বিশেষ সংবাদদাতা : জমে উঠেছে শেষ মুহূর্তের ঈদ বাজার। পছন্দের পণ্য কিনতে ক্রেতারা ছুটে যাচ্ছেন বিপণিবিতানগুলোতে। বিক্রেতারাও ব্যস্ত শেষ সময়ের ঈদের ব্যবসা নিয়ে। রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। সরেজমিনে রাজধানীর নিউমার্কেট, গাউছিয়া, ইস্টার্ন মল্লিকা, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটসহ বিভিন্ন মার্কেটে ক্রেতাদের ভিড় লক্ষ করা গেছে। শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সীদের পদচারণায় জমে উঠেছে মার্কেট এলাকা। পরিবারের জন্য শেষ কেনাকাটা করতে এসেছেন অনেকেই। গত দুই বছর করোনার বিধিনিষেধ থাকায় আশানুরূপ ব্যবসা করতে পারেননি দোকানিরা। তবে এবার করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ায় এবং ক্রেতাদের উপস্থিতি বাড়ায় হাসি ফুটেছে ব্যবসায়ীদের মুখে। সকাল থেকেই প্রচ- গরম আর রোদ উপেক্ষা করে মার্কেটে আসছেন ক্রেতারা। কেনাকাটা করতে আসা ক্রেতাদের চাপে হিমশিম খাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। দুপুরের পর থেকে প্রায় প্রতিটি মার্কেট ও বিপণি বিতান এলাকায় ক্রেতা বাড়তে থাকায় পা ফেলার জায়গা নেই। চাঁদনী চক শপিং কমপ্লেক্সের লেটেস্ট ফ্যাশনের স্বত্ত্বাধিকারী লিমন শেখ বলেন, ঈদ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে ক্রেতাদের চাপ বাড়ছে। এ বছর রোজার প্রথম দিকে বিক্রি ভালো না হলেও শেষের সময়টায় আশানুরূপ বিক্রি হচ্ছে। আশা করছি ঈদের আগে চাঁদ রাতে কেনাবেচা আরো বাড়বে। গাউছিয়া মার্কেটের ব্যবসায়ী এনায়েত উল্লাহ বলেন, শেষ সময়ে কেনাকাটা বেড়ে গেছে। কয়েকদিন আগের ঝামেলার পর আমরা চিন্তিত ছিলাম যে, ক্রেতারা আসবে কি না। তবে আশানুরূপ ক্রেতা আসছে। আশা করছি আমাদের ক্ষতি পুষিয়ে যাবে। কলেজ শিক্ষক রাজু আহমেদ বলেন, রোজার শুরুতে কাজের চাপে ঈদের কেনাকাটা করতে পারিনি। ছুটি পেয়ে কেনাকাটা করতে এসেছি। মার্কেটে অনেক ভিড়, কিন্তু উপায় নেই। এখন কেনাকাটা না করলে আর সময় পাবো না। আরেক ক্রেতা নাহিদা সুলতানা বলেন, পরিবারের জন্য কিছু কেনাকাটা বাকি ছিল। তাই সেগুলো কিনতে চলে এলাম। এবার ঈদুল ফিতর গরম মৌসুমে পড়ায় সুতি কাপড়ের পোশাকের চাহিদা রয়েছে বেশি। শার্ট, পাঞ্জাবি, থ্রিপিস, ওয়ান পিস ইত্যাদি বেশি বিক্রি হচ্ছে। ঢাকা নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহীন বলেন, রোজার প্রথম দিকে তেমন বিক্রি না হলেও শেষ সময়ে বিক্রি বেড়েছে।
ফুটপাতে পা ফেলার জায়গা নেই
ঈদের ঠিক আগ মুহূর্তে রাজধানীর অভিজাত বিপণিবিতানে যেমন ক্রেতার ভিড়, একইভাবে ফুটপাতের দোকানগুলোতেও পা ফেলার জায়গা নেই। শুক্র ও শনিবার শপিংমল খোলার পর থেকে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ক্রেতাদের ভিড়। ইফতারির পরে ক্রেতা সমাগমে মুখরিত হতে থাকে শপিংমলগুলো। দুপুরে রাজধানীর মিরপুর-১ নম্বরের ক্যাপিটাল শপিংসেন্টারে দ্বিতীয় তলায় জুতার দোকানগুলোতে প্রচ- ভিড় দেখা যায়। জানা গেছে, পরপর দু’বছর করোনার জন্য ঈদ কেনাকাটায় যে মন্দা ভাব দেখা গেছে, এবার তা দূর হয়েছে। তবে অনেকেই ঈদ করতে ঢাকার বাইরে চলে গেছেন। ফলে শনিবার থেকে বেচাকেনা কমার আশঙ্কা করছেন বিক্রেতারা। জুতার হাট নামের দোকানের বিক্রয়কর্মী আরমান হোসেন বলেন, কয়েকদিন ধরে বেচাকেনা খুব ভালো। করোনার আগে ঈদের সময় যেমন বিক্রি হতো, এখন তেমনই বিক্রি হচ্ছে। রমজানের শেষ শুক্রবার মিরপুর-২ নম্বরের ফ্যাশন হাউজগুলোর বাইরে ও ভেতরেও ক্রেতাদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। সারা লাইফস্টাইলের বিক্রয়কর্মী নাফিস আহমেদ বলেন, ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে পুরুষদের আকর্ষণের তালিকায় বরাবরই প্রথমে থাকে পাঞ্জাবি। এবারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। আমাদের এখানে সাশ্রয়ী মূল্যে পাঞ্জাবিসহ বিভিন্ন ফ্যাশন আইটেমের সমাহার আছে। এ জন্য বিক্রিও খুব ভালো। সন্ধ্যার পর দাঁড়ানোর জায়গা পাওয়া যায় না। তবে শেষ সময়ে এসে অনেককেই পছন্দের পোশাক দিতে পারছি না। কারণ চাহিদার তুলনায় স্টক কমে এসেছে। আগারগাঁও থেকে পাঞ্জাবি কিনতে এসেছেন রাজধানীর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হুমায়ূন রশিদ। তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শপিংমলগুলোতে পাঞ্জাবির দাম একটু বেশি হলেও মান ও ডিজাইনের বৈচিত্র থাকায় এখানেই আসা হয়। তিনি বলেন, বাবার জন্য একটা পাঞ্জাবি পছন্দ করেছি, কিন্তু সাইজ পাচ্ছি না। স্মল, মিডিয়াম সব সাইজই স্টক আউট বলছে। দাম সম্পর্কে জানতে চাইলে হুমায়ূন রশিদ বলেন, এবার পোশাকের দাম এমনিতে একটু বেশি। তবে দুই থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকার মধ্যে ভালো পাঞ্জাবি পাওয়া সম্ভব। ফ্যাশন হাউজ নান্দনিকের বিক্রয়কর্মী হানিফ ক্রেতা সমাগম নিয়ে জানান, ঈদের আর বেশি দিন বাকি নেই। ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ইফতারের পর থেকে ক্রেতাদের ভিড় বাড়ছে, তা মধ্যরাত পর্যন্ত থাকছে। এমনকি ইফতারের আগ মুহূর্তেও ক্রেতা থাকছে। তবে আমরা পছন্দসই পোশাক দিতে পারছি না বলে অনেক ক্রেতা অভিযোগ করছে। কারণ এখন চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমে এসেছে।
গৃহকর্মী শারমিন শিলা বলেন, বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ডের দোকানে পোশাক কিনতে গেলে ডিজাইন পছন্দ হলেও কাঙ্খিত সাইজ পাওয়া যাচ্ছে না। এ জন্য জনপ্রিয় ফ্যাশন হাউজগুলো ছাড়াও অন্য ফ্যাশন হাউজগুলোতে গিয়ে পোশাক খুঁজতে হচ্ছে। তিনি বলেন, এই সময় ঈদের পোশাক বানানোর সুযোগ নাই। আবার জনপ্রিয় ব্র্যান্ড শপগুলোতেও পছন্দের জামা-কাপড় নেই। ফলে অন্য যেসব ফ্যাশন হাউজে সাধারণত যাওয়া হয় না সেখানেও গিয়েও জামা দেখছি। মিরপুর ১০ নম্বরের ম্যানহুড, নিপুন, কে ক্রাফটসের কয়েকজন বিক্রয়কর্মীর সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, গত সপ্তাহেই অনেক পোশাক বিক্রি হয়ে যাওয়ায় স্টকে কিছুটা টান পড়েছে। তবে অন্য আউটলেট থেকে এনে ঘাটতি পূরণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কেবল পাঞ্জাবি নয়, পুরুষ ক্রেতাদের আগ্রহ টি-শার্ট ও শার্টের প্রতিও। ক্যাজুয়াল ও আরামদায়ক হওয়ায় টি-শার্টের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় লক্ষ্য করা যায়। শার্ট-পাঞ্জাবি ছাড়াও প্যান্ট ও জুতার দোকানে পুরুষ ক্রেতাদের সমাগম ছিল চোখে পড়ার মতো। অন্যদিকে থ্রি-পিস, কাফকান, টপস, শাড়ি এসব পোশাকে নারীদের আগ্রহ বেশি। গরমে আরামদায়ক পোশাককে প্রাধান্য দিচ্ছেন নারীরা। শুক্রবার মিরপুর-২ ও ১০ নম্বরের ফুটপাতে ক্রেতার প্রচ- ভিড় ছিল। কোথাও কোথাও ফুটপাত ছাড়িয়ে রাস্তায় পণ্য বিক্রি করতে দেখা গেছে। হকার, ক্রেতাদের ভিড়ে সড়কগুলোতে তীব্র যানজট দেখা যায়। ক্রেতাদের অভিযোগ, ঈদের আগে বিক্রি বাড়ার সুযোগ দাম বাড়িয়ে ফেলেছেন বিক্রেতারা। নুপুর সুলতানা নামের এক ক্রেতা জানান, ঈদ উপলক্ষে ১০০ টাকার পণ্য এখন ১৫০ টাকা বলছেন বিক্রেতারা। যে পর্দা ৩০০ টাকা করে বিক্রি করতো এখন ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। একইভাবে সব ধরনের পোশাকের দামও বাড়তি চাওয়া হচ্ছে।
জমজমাট শেষ মুহূর্তের বাজার
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ