নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকার কারওয়ান বাজারে বাসের ভেতর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর হাত থেকে ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোনটি বিক্রি করে দুই ছিনতাইকারী মদ কিনে খেয়েছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। সেই ফোনটি উদ্ধার এবং ওই ঘটনায় গ্রেপ্তার তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের পর গতকাল বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার রুবাইয়াত জামান। তিনি বলেন, কারওয়ান বাজারে শফিক নামের একজনের কাছে ৪ হাজার টাকায় মোবাইলটি বিক্রি করে দিয়েছিলেন মূল ছিনতাইকারী রিপন ওরফে আকাশ (২৪) এবং তার সহযোগী অপ্রাপ্তবয়স্ক একজন। “এর মধ্যে ১ হাজার টাকা নেন আকাশ আর ১৭ বছর বয়সী অপরজন নেন ৫০০ টাকা। বাকি টাকায় তারা মদ কিনে খান।”
যার ফোনটি তারা ছিনতাই করেছিল, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই ছাত্রী প্রাণিবিদ্যা বিভাগে স্নাতকোত্তর দ্বিতীয় সেমিস্টারে পড়ছেন। এক বছর ধরে হাতি নিয়ে থিসিস করছেন। সেই থিসিস পেপার জমা দেওয়ার কথা ছিল জুলাইয়ের শেষে।
২১ জুলাই বিকালে কাজ শেষে মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরছিলেন এই শিক্ষার্থী। পথে কারওয়ান বাজার এলাকায় বাসের জানালা দিয়ে এক ছিনতাইকারী তার মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। মোবাইলে ছিল তার থিসিসের ডেটা। সে কারণে মরিয়া হয়ে ছিনতাইকারীর পিছু ধাওয়া করে তিনি আরেক ছিনতাইয়ের সঙ্গে যুক্ত এক যুবককে ধরে ফেলেন। পরে তার সহযোগীকেও ধরে ফেলা হয়। কিন্তু মূল ছিনতাইকারীকে ধরতে না পারায় নিজের মোবাইল ফোনটি তিনি তখন ফিরে পাননি। তার সেই সাহসিকতার খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাড়া ফেলে দেয়। পুলিশও তখন তার ফোন উদ্ধারে তৎপর হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত ২১ জুলাই কারওয়ান বাজারের যেখানে ঘটনাটি ঘটেছিল, সেখানকার সিসিটিভি ভিডিওতে দেখা যায়, একজন মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে দৌড় দিয়েছে। তার পিছুপিছু অন্য একজন দ্রুত হাঁটছে। রুবাইয়াত জামান বলেন, ভিডিওতে যাকে হাঁটতে দেখা গেছে, সে ওই ১৭ বছরের তরুণ। সন্দেহজনক গতিবিধির কারণে ২৪ জুলাই কারওয়ানবাজার থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। “আদালতে তোলার আগে জিজ্ঞাসাবাদে সে স্বীকার করে, সেদিন বাস থেকে মোবাইল ফোন ছিনতাইয়ের সময় সেও ছিল। ফোনটি ছিনিয়ে নিয়েছিল আকাশ। সেটি বিক্রি করে তারা মদও খেয়েছে। পরে সেই রাতেই ডাকাতির প্রস্তুতিকালে আকাশ গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়।”
ওই তথ্য পাওয়ার পর আদালতে আবেদন করে আকাশকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। আকাশ তখন ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন বলে এই পুলিশ কর্মকর্তার ভাষ্য। তিনি বলেন, আকাশ ও তার কিশোর সহযোগীর দেওয়ার তথ্যে মঙ্গলবার কারওয়ান বাজারে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় শফিককে, যার কাছে বিক্রি করা হয়েছিল ওই ছাত্রীর ফোন। অভিযানে মোবাইলটিও উদ্ধার করা হয়।
বুধবার সংবাদ সম্মেলনে হাজির হয়ে সেই শিক্ষার্থী বলেন, “আমি আসলে অনেক খুশি। পুলিশ প্রতিনিয়ত আমাকে আপডেট জানিয়েছে। মোবাইলটা খুব দরকার ছিল। তাই ছিনিয়ে নেওয়ার পর ঝুঁকি নিয়ে ছিনতাইকারীকে তাড়া করি।” এদিকে ছিনতাইয়ের ওই ঘটনায় পুলিশের করা মামলায় আকাশ, শফিক ও অপ্রাপ্তবয়স্ক একজনসহ তিনজনের নামে বুধবারই আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হবে বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা রুবাইয়াত জামান।
জবি ছাত্রীর সেই মোবাইল বেচে ‘মদ খেয়েছিল’ ছিনতাইকারীরা
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ