ঢাকা ১২:১৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫

জন্মাষ্টমীর মাধ্যমে শান্তি-সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা ও মঙ্গল প্রার্থনা

  • আপডেট সময় : ০৯:১৯:১১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৫
  • ৭৬ বার পড়া হয়েছে

 ঢাকায় জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রা -ছবি বাসস

প্রত্যাশা ডেস্ক: গীতাযজ্ঞ, নামসংকীর্তন, কৃষ্ণ পূজাসহ নানা আয়োজনে শান্তি-সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা আর কল্যাণ ও মঙ্গল কামনার মধ্য দিয়ে পালিত হলো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্মাষ্টমী উৎসব।

শনিবার (১৬ আগস্ট) সকালে চণ্ডীপাঠ ও গীতাযজ্ঞের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানমালার সূচনা হয়। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, প্রায় ৫ হাজার ২শ বছর আগে ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। তার জন্মতিথিকেই জন্মাষ্টমী হিসেবে পালন করে থাকেন অনুসারীরা। প্রেম, সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা, দুষ্টের দমন এবং শিষ্টের পালনেই শ্রীকৃষ্ণ অবতাররূপে পৃথিবীতে আবির্ভূত হন বলে ভক্তদের বিশ্বাস।

মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড শংকর মঠ ও মিশনের পরিচালনায় রাজধানীতে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে গীতাযজ্ঞ অনুষ্ঠিত হয়েছে। যজ্ঞে আহুতি দিয়ে শ্রীকৃষ্ণকে স্মরণ করেন সমবেতরা। এরপর দুপুর তিনটায় কেন্দ্রীয় জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রা ও রাতে শ্রীকৃষ্ণ পূজা অনুষ্ঠিত হয়। শোভাযাত্রাটি ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির থেকে বের হয়ে পলাশী বাজার, জগন্নাথ হল, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার হয়ে দোয়েল চত্বর আসে। এরপর হাই কোর্ট, বঙ্গবাজার, গুলিস্থান মোড়, নবাবপুর রোড ও রায় সাহেব বাজার মোড় হয়ে বাহাদুর শাহ্ পার্ক এসে শোভাযাত্রাটি শেষ হয়।

পলাশীর মোড়ে জন্মাষ্টমী শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন এবং নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মো. মঈন খান।

জন্মাষ্টমী উৎসব আয়োজন নিয়ে পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর সংবাদমাধ্যমকে বলেন, জন্মাষ্টমীর মাধ্যমে শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠিত হোক। শ্রী শ্রী কৃষ্ণের জন্মাষ্টমীর শুভ সূচনা সুন্দরভাবেই অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিকেলে বৃহৎ শোভাযাত্রা নিয়ে আমরা মন্দির থেকে বাহাদুর শাহ পার্কের দিকে যাত্রা করব। এরপর প্রতিবছরের ন্যায় রাতে শ্রীকৃষ্ণ পূজার বিশেষ অংশ থাকবে। সরকার পরিপূর্ণ নিরাপত্তার পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন বাসুদেব ধর।
দুইদিন ব্যাপী আয়োজিত জন্মাষ্টমী উৎসবের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) বেলা ৩টায় হবে আলোচনা সভা। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দারের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে বলে মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার জানিয়েছেন।
সনাতন ধর্মালম্বীদের বিশ্বাস জন্মাষ্টমী ব্রত (উপবাস) পালনে সমস্ত পাপমোচন ও পূণ্যলাভ হয়। যারা নিয়মিত এ ব্রত পালন করেন, তাদের সৌভাগ্য, আরোগ্য ও সন্তান লাভ হয়। এছাড়া পরকালে স্বর্গপ্রাপ্তি নিশ্চিত হয়।
জন্মাষ্টমী উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এক বাণীতে দেশের হিন্দু সম্প্রদায়কে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও।

হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব ধর্মাবতার শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি ‘শুভ জন্মাষ্টমী’ উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সমাজে সাম্য ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে শ্রীকৃষ্ণ আজীবন ন্যায়, মানবপ্রেম ও শান্তির বাণী প্রচার করেছেন। শ্রীকৃষ্ণ যেখানেই অন্যায়-অবিচার দেখেছেন, সেখানেই অপশক্তির হাত থেকে শুভশক্তিকে রক্ষার জন্য আবির্ভূত হয়েছেন। সৃষ্টিকর্তার বন্দনা ও সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় শ্রীকৃষ্ণের দর্শন ও মূল্যবোধ সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ সকলকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করে। ছাত্র-শ্রমিক-জনতার ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সম্প্রীতির এই বন্ধনকে অটুট রাখতে বদ্ধপরিকর বলেও বাণীতে বলেন তিনি।
জন্মাষ্টমী উপলক্ষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান ফেসবুক পেজে দেশের হিন্দু সম্প্রদায়কে প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তিনি তাদের অব্যাহত কল্যাণ, সমৃদ্ধি ও শান্তি কামনা করেন। তারেক রহমান লিখেছেন, ভগবান শ্রী কৃষ্ণ দ্বাপর যুগে পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং দুষ্টদের বধ করে এই পৃথিবীকে পাপ থেকে মুক্ত করেছিলেন। আবহমানকাল ধরে এই ধর্মীয় উৎসবটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়ে আসছে। উৎসব সার্বজনীন ও সম্প্রদায়গত বিভাজনকে সংযুক্ত করে মানুষকে ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের নিবিড় বন্ধনে আবদ্ধ করে। মানব সমাজকে এক শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করায়। তাদের মধ্যে সৃষ্টি করে এক অনন্য সংহতিবোধ। আনন্দরুপ বিনম্রতায় সমাজে সকলকে এক অভিন্ন আন্তরিকতায় আপ্লুত করে।
সকল ধর্মের মর্মবাণী সম্প্রীতি, মানব কল্যাণ ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। যুগে যুগে ধর্ম প্রচারকগণ মানুষকে সত্য ও ন্যায়ের পথ দেখিয়ে গিয়েছেন। ভগবান শ্রী কৃষ্ণ পাপিদের দুর করার জন্য অনেক মহৎ কাজ করেছেন, তাদের সাথে সম্পর্কিত প্রতিটি ইতিহাস বর্তমানে মানবসমাজের ওপর গভীর প্রভাব বিস্তার করে আছে। তিনি অন্যায়, অনাচার ও দুঃশাসনকে দমন করে পৃথিবীতে ন্যায়, সত্য ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠা করে সমাজে সদাচারী ও নিরপরাধ মানুষদের শান্তি, নিরাপত্তা ও স্বস্তি দান করেছিলেন। গণবিরোধী স্বৈরশক্তি দেশে দেশে মানুষের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ণের খড়গ নামিয়ে আনে। শ্রীকৃষ্ণের বাণী ও কৃতকর্ম অনুসরণে অত্যাচারীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধের শিক্ষা থেকে অসহায় ও মজলুম মানুষ প্রেরণা লাভ করবে। ধর্মীয় সহিষ্ণুতা বাংলাদেশের সংস্কৃতির অনুষঙ্গ। সুপ্রাচীনকাল থেকেই বাংলাদেশীরা কখনোই ঔদার্য, পারস্পরিক শুভেচ্ছাবোধ ও অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা হারায়নি। এখানে সকল ধর্মের মানুষেরা যুগ যুগ ধরে সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বসবাস করে আসছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি সেই বন্ধন অটুট রাখতে দৃঢ় অঙ্গীকারাবদ্ধ।
এদিকে, জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রা উপলক্ষে শনিবার ঢাকার বেশকিছু সড়ক বিকাল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত ‘যথাসম্ভব’ এড়িয়ে চলাচল করতে অনুরোধ জানায় ডিএমপি। শোভাযাত্রা চলাকালীন নগরবাসীকে বিকল্প সড়কে চলাচল করতে অনুরোধ জানিয়ে সকলের ‘সর্বাত্মক সহযোগিতা’ চেয়েছে পুলিশ।

চট্টগ্রামে জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রা থেকে সম্প্রীতির আহ্বান: শ্রীকৃষ্ণের জন্ম তিথিতে চট্টগ্রাম নগরীতে জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সম্প্রীতির আহ্বান এসেছে। শনিবার সকালে নগরীর আন্দরকিল্লা মোড়ে এই অনুষ্ঠান শেষে শোভযাত্রা শুরু হয়। যা নগরীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে জে এম সেন হল প্রাঙ্গনে গিয়ে শেষ হয়। তবে এবার শোভাযাত্রায় লোক সমাগম অন্যান্য বছরের তুলনায় কম দেখা গেছে।

জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির আয়োজনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বলেন, আজ থেকে যে কয়দিন জন্মাষ্টমীর অনুষ্ঠান উদযাপিত হবে, আমি একান্তভাবে কামনা করি চট্টগ্রামের সব সম্প্রদায়ের মানুষ সম্মিলিতভাবে সম্পৃক্ত থেকে আমাদের আগামীর অগ্রযাত্রাকে শক্তি এবং সাহস যোগাবে। যে সমস্ত দাবি এখানে উত্থাপন করা হয়েছে, আশা করছি আগামী দিনের যে নির্বাচিত সরকার আসবে তারা আপনাদেরই সরকার হবে। আপনাদের দাবি পূরণে তারা কাজ করবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই। এই কথাটা যেন আমরা ধারণ করি, লালন করি এবং নিজের জীবনে সেটাকে আমরা যেন পালন করি। এই দেশ হিন্দুর, এই দেশ খ্রিস্টানের, এই দেশ বৌদ্ধের, এই দেশ মুসলমানের। আমার যেটুকু অংশ আমার প্রতিটি ভাইয়ের অংশ ঠিক ততটুকু। এই কথাটা যদি আমরা স্মরণ রাখি, তাহলে যে সোনার বাংলাদেশের স্বপ্ন আমরা দেখি সেই বাংলাদেশকে অর্জন করতে পারব।

শোভাযাত্রা উদ্বোধক ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র শাহাদাত হোসেন। আর্শীবাদক ছিলেন পটিয়া পাচুরিয়া তপোবন আশ্রমের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ রবীশ্বরানন্দ পুরী মহারাজ। আরেক বিশেষ অতিথি ছিলেন হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি দীপক কুমার পালিত।

অনুষ্ঠান শেষে বেলুন উড়িয়ে শোভযাত্রা উদ্বোধন করেন অতিথিরা। এরপর বিভিন্ন যানবাহনে নানা রঙে ও সাজে সজ্জিত ভক্তদের অংশগ্রহণে শুরু হয় জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রা। ঢাক-ঢোলসহ নানা বাদ্যযন্ত্রের তালে নেচে গেয়ে ভক্তরা শোভাযাত্রায় অংশ নেন। শোভাযাত্রাটি আন্দরকিল্লা মোড় থেকে শুরু হয়ে লালদীঘি মোড়, নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন সড়ক ঘুরে জে এম সেন হলে গিয়ে শেষ হয়। এরপর দুপুরে জে এম সেন হল প্রাঙ্গনে মাতৃ সম্মেলন শুরু হয়। একই জায়গায় বিকালে ধর্ম মহাসম্মেলন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুররী প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

রোববার এবং পরদিন সোমবার চলবে ষোড়শপ্রহরব্যাপী মহানাম সংকীর্ত্তন। প্রতিদিন দুপুর ও রাতে ভক্তদের মাঝে বিতরণ করা হবে মহাপ্রসাদ।

শোভাযাত্রায় চিন্ময় কৃষ্ণের মুক্তির দাবিতে স্লোগান, আটক ৬: চট্টগ্রামে জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রা চলাকালে সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর মুক্তির দাবিতে প্ল্যকার্ড প্রদর্শন ও স্লোগান দেওয়ার অভিযোগে ছয়জনকে আটক করেছে পুলিশ। শনিবার দুপুরে শোভযাত্রাটি আন্দরকিল্লা মোড় থেকে শুরু হয়ে লালদীঘি পাড় হয়ে নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ঘুরে জে এম সেন হল প্রাঙ্গনে গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রা চলাকালে সেখান থেকে ছয়জনকে আটক করার কথা জানিয়েছেন নগরীর কোতোয়ালী থানার ওসি আবদুল করিম। তিনি বলেন, জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ আমাদের বলেছিল র‌্যালির সময় সজাগ থাকতে। সে কারণে আমরা এলার্ট ছিলাম যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা না হয়। র‌্যালি চলাকালে ছয়জনকে আটক করেছি। তাদের কাছে চিন্ময়ের মুক্তির দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড পেয়েছি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়েছে। পরে বিস্তারিত জানাতে পারবো। তবে কোন স্থান থেকে তাদের আটক করা হয়েছে সে বিষয়ে ওসি কিছু জানাননি।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

জন্মাষ্টমীর মাধ্যমে শান্তি-সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা ও মঙ্গল প্রার্থনা

আপডেট সময় : ০৯:১৯:১১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৫

প্রত্যাশা ডেস্ক: গীতাযজ্ঞ, নামসংকীর্তন, কৃষ্ণ পূজাসহ নানা আয়োজনে শান্তি-সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা আর কল্যাণ ও মঙ্গল কামনার মধ্য দিয়ে পালিত হলো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্মাষ্টমী উৎসব।

শনিবার (১৬ আগস্ট) সকালে চণ্ডীপাঠ ও গীতাযজ্ঞের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানমালার সূচনা হয়। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, প্রায় ৫ হাজার ২শ বছর আগে ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। তার জন্মতিথিকেই জন্মাষ্টমী হিসেবে পালন করে থাকেন অনুসারীরা। প্রেম, সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা, দুষ্টের দমন এবং শিষ্টের পালনেই শ্রীকৃষ্ণ অবতাররূপে পৃথিবীতে আবির্ভূত হন বলে ভক্তদের বিশ্বাস।

মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড শংকর মঠ ও মিশনের পরিচালনায় রাজধানীতে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে গীতাযজ্ঞ অনুষ্ঠিত হয়েছে। যজ্ঞে আহুতি দিয়ে শ্রীকৃষ্ণকে স্মরণ করেন সমবেতরা। এরপর দুপুর তিনটায় কেন্দ্রীয় জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রা ও রাতে শ্রীকৃষ্ণ পূজা অনুষ্ঠিত হয়। শোভাযাত্রাটি ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির থেকে বের হয়ে পলাশী বাজার, জগন্নাথ হল, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার হয়ে দোয়েল চত্বর আসে। এরপর হাই কোর্ট, বঙ্গবাজার, গুলিস্থান মোড়, নবাবপুর রোড ও রায় সাহেব বাজার মোড় হয়ে বাহাদুর শাহ্ পার্ক এসে শোভাযাত্রাটি শেষ হয়।

পলাশীর মোড়ে জন্মাষ্টমী শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন এবং নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মো. মঈন খান।

জন্মাষ্টমী উৎসব আয়োজন নিয়ে পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর সংবাদমাধ্যমকে বলেন, জন্মাষ্টমীর মাধ্যমে শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠিত হোক। শ্রী শ্রী কৃষ্ণের জন্মাষ্টমীর শুভ সূচনা সুন্দরভাবেই অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিকেলে বৃহৎ শোভাযাত্রা নিয়ে আমরা মন্দির থেকে বাহাদুর শাহ পার্কের দিকে যাত্রা করব। এরপর প্রতিবছরের ন্যায় রাতে শ্রীকৃষ্ণ পূজার বিশেষ অংশ থাকবে। সরকার পরিপূর্ণ নিরাপত্তার পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন বাসুদেব ধর।
দুইদিন ব্যাপী আয়োজিত জন্মাষ্টমী উৎসবের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) বেলা ৩টায় হবে আলোচনা সভা। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দারের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে বলে মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার জানিয়েছেন।
সনাতন ধর্মালম্বীদের বিশ্বাস জন্মাষ্টমী ব্রত (উপবাস) পালনে সমস্ত পাপমোচন ও পূণ্যলাভ হয়। যারা নিয়মিত এ ব্রত পালন করেন, তাদের সৌভাগ্য, আরোগ্য ও সন্তান লাভ হয়। এছাড়া পরকালে স্বর্গপ্রাপ্তি নিশ্চিত হয়।
জন্মাষ্টমী উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এক বাণীতে দেশের হিন্দু সম্প্রদায়কে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও।

হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব ধর্মাবতার শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি ‘শুভ জন্মাষ্টমী’ উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সমাজে সাম্য ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে শ্রীকৃষ্ণ আজীবন ন্যায়, মানবপ্রেম ও শান্তির বাণী প্রচার করেছেন। শ্রীকৃষ্ণ যেখানেই অন্যায়-অবিচার দেখেছেন, সেখানেই অপশক্তির হাত থেকে শুভশক্তিকে রক্ষার জন্য আবির্ভূত হয়েছেন। সৃষ্টিকর্তার বন্দনা ও সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় শ্রীকৃষ্ণের দর্শন ও মূল্যবোধ সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ সকলকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করে। ছাত্র-শ্রমিক-জনতার ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সম্প্রীতির এই বন্ধনকে অটুট রাখতে বদ্ধপরিকর বলেও বাণীতে বলেন তিনি।
জন্মাষ্টমী উপলক্ষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান ফেসবুক পেজে দেশের হিন্দু সম্প্রদায়কে প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তিনি তাদের অব্যাহত কল্যাণ, সমৃদ্ধি ও শান্তি কামনা করেন। তারেক রহমান লিখেছেন, ভগবান শ্রী কৃষ্ণ দ্বাপর যুগে পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং দুষ্টদের বধ করে এই পৃথিবীকে পাপ থেকে মুক্ত করেছিলেন। আবহমানকাল ধরে এই ধর্মীয় উৎসবটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়ে আসছে। উৎসব সার্বজনীন ও সম্প্রদায়গত বিভাজনকে সংযুক্ত করে মানুষকে ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের নিবিড় বন্ধনে আবদ্ধ করে। মানব সমাজকে এক শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করায়। তাদের মধ্যে সৃষ্টি করে এক অনন্য সংহতিবোধ। আনন্দরুপ বিনম্রতায় সমাজে সকলকে এক অভিন্ন আন্তরিকতায় আপ্লুত করে।
সকল ধর্মের মর্মবাণী সম্প্রীতি, মানব কল্যাণ ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। যুগে যুগে ধর্ম প্রচারকগণ মানুষকে সত্য ও ন্যায়ের পথ দেখিয়ে গিয়েছেন। ভগবান শ্রী কৃষ্ণ পাপিদের দুর করার জন্য অনেক মহৎ কাজ করেছেন, তাদের সাথে সম্পর্কিত প্রতিটি ইতিহাস বর্তমানে মানবসমাজের ওপর গভীর প্রভাব বিস্তার করে আছে। তিনি অন্যায়, অনাচার ও দুঃশাসনকে দমন করে পৃথিবীতে ন্যায়, সত্য ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠা করে সমাজে সদাচারী ও নিরপরাধ মানুষদের শান্তি, নিরাপত্তা ও স্বস্তি দান করেছিলেন। গণবিরোধী স্বৈরশক্তি দেশে দেশে মানুষের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ণের খড়গ নামিয়ে আনে। শ্রীকৃষ্ণের বাণী ও কৃতকর্ম অনুসরণে অত্যাচারীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধের শিক্ষা থেকে অসহায় ও মজলুম মানুষ প্রেরণা লাভ করবে। ধর্মীয় সহিষ্ণুতা বাংলাদেশের সংস্কৃতির অনুষঙ্গ। সুপ্রাচীনকাল থেকেই বাংলাদেশীরা কখনোই ঔদার্য, পারস্পরিক শুভেচ্ছাবোধ ও অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা হারায়নি। এখানে সকল ধর্মের মানুষেরা যুগ যুগ ধরে সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বসবাস করে আসছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি সেই বন্ধন অটুট রাখতে দৃঢ় অঙ্গীকারাবদ্ধ।
এদিকে, জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রা উপলক্ষে শনিবার ঢাকার বেশকিছু সড়ক বিকাল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত ‘যথাসম্ভব’ এড়িয়ে চলাচল করতে অনুরোধ জানায় ডিএমপি। শোভাযাত্রা চলাকালীন নগরবাসীকে বিকল্প সড়কে চলাচল করতে অনুরোধ জানিয়ে সকলের ‘সর্বাত্মক সহযোগিতা’ চেয়েছে পুলিশ।

চট্টগ্রামে জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রা থেকে সম্প্রীতির আহ্বান: শ্রীকৃষ্ণের জন্ম তিথিতে চট্টগ্রাম নগরীতে জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সম্প্রীতির আহ্বান এসেছে। শনিবার সকালে নগরীর আন্দরকিল্লা মোড়ে এই অনুষ্ঠান শেষে শোভযাত্রা শুরু হয়। যা নগরীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে জে এম সেন হল প্রাঙ্গনে গিয়ে শেষ হয়। তবে এবার শোভাযাত্রায় লোক সমাগম অন্যান্য বছরের তুলনায় কম দেখা গেছে।

জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির আয়োজনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বলেন, আজ থেকে যে কয়দিন জন্মাষ্টমীর অনুষ্ঠান উদযাপিত হবে, আমি একান্তভাবে কামনা করি চট্টগ্রামের সব সম্প্রদায়ের মানুষ সম্মিলিতভাবে সম্পৃক্ত থেকে আমাদের আগামীর অগ্রযাত্রাকে শক্তি এবং সাহস যোগাবে। যে সমস্ত দাবি এখানে উত্থাপন করা হয়েছে, আশা করছি আগামী দিনের যে নির্বাচিত সরকার আসবে তারা আপনাদেরই সরকার হবে। আপনাদের দাবি পূরণে তারা কাজ করবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই। এই কথাটা যেন আমরা ধারণ করি, লালন করি এবং নিজের জীবনে সেটাকে আমরা যেন পালন করি। এই দেশ হিন্দুর, এই দেশ খ্রিস্টানের, এই দেশ বৌদ্ধের, এই দেশ মুসলমানের। আমার যেটুকু অংশ আমার প্রতিটি ভাইয়ের অংশ ঠিক ততটুকু। এই কথাটা যদি আমরা স্মরণ রাখি, তাহলে যে সোনার বাংলাদেশের স্বপ্ন আমরা দেখি সেই বাংলাদেশকে অর্জন করতে পারব।

শোভাযাত্রা উদ্বোধক ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র শাহাদাত হোসেন। আর্শীবাদক ছিলেন পটিয়া পাচুরিয়া তপোবন আশ্রমের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ রবীশ্বরানন্দ পুরী মহারাজ। আরেক বিশেষ অতিথি ছিলেন হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি দীপক কুমার পালিত।

অনুষ্ঠান শেষে বেলুন উড়িয়ে শোভযাত্রা উদ্বোধন করেন অতিথিরা। এরপর বিভিন্ন যানবাহনে নানা রঙে ও সাজে সজ্জিত ভক্তদের অংশগ্রহণে শুরু হয় জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রা। ঢাক-ঢোলসহ নানা বাদ্যযন্ত্রের তালে নেচে গেয়ে ভক্তরা শোভাযাত্রায় অংশ নেন। শোভাযাত্রাটি আন্দরকিল্লা মোড় থেকে শুরু হয়ে লালদীঘি মোড়, নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন সড়ক ঘুরে জে এম সেন হলে গিয়ে শেষ হয়। এরপর দুপুরে জে এম সেন হল প্রাঙ্গনে মাতৃ সম্মেলন শুরু হয়। একই জায়গায় বিকালে ধর্ম মহাসম্মেলন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুররী প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

রোববার এবং পরদিন সোমবার চলবে ষোড়শপ্রহরব্যাপী মহানাম সংকীর্ত্তন। প্রতিদিন দুপুর ও রাতে ভক্তদের মাঝে বিতরণ করা হবে মহাপ্রসাদ।

শোভাযাত্রায় চিন্ময় কৃষ্ণের মুক্তির দাবিতে স্লোগান, আটক ৬: চট্টগ্রামে জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রা চলাকালে সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর মুক্তির দাবিতে প্ল্যকার্ড প্রদর্শন ও স্লোগান দেওয়ার অভিযোগে ছয়জনকে আটক করেছে পুলিশ। শনিবার দুপুরে শোভযাত্রাটি আন্দরকিল্লা মোড় থেকে শুরু হয়ে লালদীঘি পাড় হয়ে নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ঘুরে জে এম সেন হল প্রাঙ্গনে গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রা চলাকালে সেখান থেকে ছয়জনকে আটক করার কথা জানিয়েছেন নগরীর কোতোয়ালী থানার ওসি আবদুল করিম। তিনি বলেন, জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ আমাদের বলেছিল র‌্যালির সময় সজাগ থাকতে। সে কারণে আমরা এলার্ট ছিলাম যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা না হয়। র‌্যালি চলাকালে ছয়জনকে আটক করেছি। তাদের কাছে চিন্ময়ের মুক্তির দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড পেয়েছি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়েছে। পরে বিস্তারিত জানাতে পারবো। তবে কোন স্থান থেকে তাদের আটক করা হয়েছে সে বিষয়ে ওসি কিছু জানাননি।