ঢাকা ০২:২৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ জুন ২০২৫

জনস্বাস্থ্যে বড় চ্যালেঞ্জ সুচিকিৎসা ও দূষণ

  • আপডেট সময় : ০৭:৩৮:১২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ জানুয়ারী ২০২৫
  • ৯০ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ সংবাদদাতা : গেল বছরজুড়ে গ্রীষ্মকাল থেকে শুরু হয়ে মৌসুম পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রাদুর্ভাব রয়েছে মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু এবং দূষণজনিত নানা রোগ। রোগবালাইয়ের মধ্য দিয়ে যাপিত জীবনে জরুরি প্রয়োজন সুচিকিৎসা এবং ভালো স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। নতুন নতুন রোগের পাশাপাশি উদ্বেগ বাড়াচ্ছে নানা ধরনের দূষণ। বায়ু, শব্দ, পানি এই তিনটি দূষণের মাধ্যমে হচ্ছে নানাবিধ রোগ। সাধারণ সর্দি-কাশিও হচ্ছে দীর্ঘায়িত। এ নিয়েও মানুষের মাঝে আছে উদ্বেগ। বায়ুদূষণে বরাবরই শীর্ষে অবস্থান করছে ঢাকা। দূষণের কারণে অনেকেরই শরীরে দেখা দিচ্ছে নানা জটিলতা।

কেউ কেউ দিনভর কাশছেন। ফলে ঘন ঘন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হচ্ছে, এমন ঘটনাও কম নয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনস্বাস্থ্যের জন্য এখন বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সুচিকিৎসা ও বিভিন্ন ধরনের দূষণ। বাংলাদেশে করোনা মহামারিতে মারা গেছেন ২৯ হাজার ৪৯৯ জন। বছরে নানা রোগে মারা যান লক্ষাধিক মানুষ। ‘বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস ২০২২’-এর তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যান হৃদরোগে। হার্ট অ্যাটাকের পর তালিকার দ্বিতীয় স্থানে আছে শ্বাসতন্ত্রজনিত রোগ। এরপর আছে স্ট্রোক। এছাড়া শিশুদের মৃত্যুর সবচেয়ে বড় কারণ নিউমোনিয়া। চিকিৎসকদের মতে, সাধারণ সর্দিজ্বর ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে। একসময় ধারণা করা হতো—একটি বিশেষ ক্যাটাগরির ভাইরাসের মাধ্যমেই শুধু সর্দি হয়। তবে আশির দশকে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হন যে মোট সাতটি ক্যাটাগরির ভাইরাসের কারণে সর্দিজ্বর হয়ে থাকে। ঠান্ডার মৌসুমে বা শীতের সময় এই ভাইরাসগুলো দ্রুত সংক্রমিত হওয়ার মতো পরিবেশ পায় বলে শীতের সময় সর্দি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ পায় এবং শীতের সময় মানুষের বেশি সর্দি হওয়ার আশঙ্কাও থাকে।

আইকিউএয়ারের ২০২৩ সালের বছরভিত্তিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে বায়ুদূষণ বেশি। এ তালিকায় বিশ্বে এক নম্বরে বাংলাদেশ। এরপর রয়েছে পাকিস্তান, ভারত, তাজিকিস্তান ও বুরকিনা ফাসো। বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় এক নম্বরে ছিল ভারতের দিল্লি। এরপর রয়েছে ঢাকা, বুরকিনা ফাসোর ওয়াগাডুগু, তাজিকিস্তানের দুশানবে ও ইরাকের বাগদাদ।
চিকিৎসকরা বলছেন, শুষ্ক মৌসুমে সাধারণ মানুষের কাশি হওয়ার অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে দূষণ। এছাড়া শুষ্ক মৌসুম ও আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণেও কাশি হতে পারে। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে দেশে ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে। এই আন্দোলনে প্রাণ গেছে অনেকের এবং আহত হয়েছেন কয়েক হাজার। গণঅভ্যুত্থান সংক্রান্ত বিশেষ সেলের খসড়া তালিকা অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ৮৫৮ জনের মৃত্যু এবং ১১ হাজার ৫৫১ জন আহত হওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা নিয়ে আছে নানা অভিযোগ। আহতরা সুচিকিৎসার দাবিতে আন্দোলনও করেছেন।
গত ১৯ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আন্দোলনে আহতদের সুচিকিৎসার বিষয়ে একটি সভার আয়োজন করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্যের দায়িত্ব থাকা সরকারের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান।

সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়—আন্দোলনে শহীদদের পরিবার ও আহতদের জরুরি ভিত্তিতে ও গুরুত্বসহকারে সেবা দিতে হবে। প্রত্যেক হাসপাতালে ‘ফাস্ট ট্র্যাক চিকিৎসা সেবা’ দিতে হবে। এছাড়া আহতদের চিকিৎসায় পেয়িং বেড কিংবা কেবিনের ভাড়া মওকুফের কথাও জানানো হয়। এছাড়া বছরের একটি অংশজুড়ে আলোচনায় ছিল ডেঙ্গু। গত বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ লাখ ১ হাজার ১৩০ জন, আর মারা গেছেন ৫৭৩ জন। ২০২৩ সালের তুলনায় এই সংখ্যা বেশ কম। সে বছর আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন এবং মারা যান ১ হাজার ৭০৫ জন। সুস্বাস্থ্য রক্ষায় দূষণ একটা বড়

চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রধান চ্যালেঞ্জ বায়ুদূষণ। কারণ ঢাকা এবং বাংলাদেশের বায়ুদূষণ ক্রমান্বয়ে খারাপ থেকে অতি খারাপ হচ্ছে। দ্বিতীয়ত হচ্ছে খাদ্যদূষণ। কারণ খাবারে অতিরিক্ত কীটনাশক, রাসায়নিক সার, প্রিজারভেটিভ ব্যবহার হচ্ছে বিভিন্ন খাদ্যে, এগুলোর মান নিয়ন্ত্রিত নয়। এগুলো জনস্বাস্থ্যকে খুব নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের শহরে শব্দদূষণ অসহনীয় পর্যায়ে। এর বাইরে খুব কম মানুষের জন্য আমরা সত্যিকার অর্থে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করতে পেরেছি। এছাড়া মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য ফুটপাত, পার্ক, চিত্তবিনোদনের জায়গা নেই। সেগুলোকে আমরা একেবারেই নষ্ট করে ফেলছি। পার্কের জায়গা, খেলার মাঠ দখল হয়ে যাচ্ছে।’ ডা. লেলিন বলেন, ‘বাংলাদেশে আমরা মহামারি দেখেছি, পৃথিবীব্যাপী একটা বিষয় স্বীকৃত যে রোগ হওয়ার পর চিকিৎসা করার চেয়ে প্রতিরোধ জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।

সেক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ন্যূনতম পদক্ষেপ কিংবা কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে ২০২৪ সালে যেমন আমরা অগোছালো ছিলাম, সামনের দিনগুলোর পরিকল্পনা কিংবা ভাবনায় আশার আলো আমরা দেখতে পারছি না।’ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘আমাদের স্বাস্থ্যসেবায় হাসপাতাল আছে কিন্তু আমাদের যে কমিউনিটিভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা, সেটি তেমন এগোয়নি। মহামারি বা জনস্বাস্থ্যের জরুরি পরিস্থিতি তৈরি হলে আমাদের কমিউনিটিভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার দিকে বেশি জোর দিতে হবে। তারপর মাধ্যমিক স্বাস্থ্যসেবা এবং তৃতীয় পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা, যা কিনা বড় বড় হাসপাতাল। আমরা শুধু তৃতীয় পর্যায় নিয়ে ভাবছি। প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্বাস্থ্যসেবা যদি আমরা দৃঢ় ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে আমাদের বহু সমস্যা অনেক আগেই সমাধান হয়ে যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘তা না হলে আমাদের রোগী বাড়তেই থাকবে, চিকিৎসক-নার্সরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেও সামাল দিতে পারবেন না। আমাদের কর্তৃপক্ষের উচিত একটা সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা, জনগোষ্ঠীকে স্বাস্থ্যবান করে তোলা। রোগী যেন কম হয় এবং মানুষ যেন সুস্থ থাকে।’ সুত্র: বাংলা ট্রিবিউন

 

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনস্বাস্থ্যে বড় চ্যালেঞ্জ সুচিকিৎসা ও দূষণ

আপডেট সময় : ০৭:৩৮:১২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ জানুয়ারী ২০২৫

বিশেষ সংবাদদাতা : গেল বছরজুড়ে গ্রীষ্মকাল থেকে শুরু হয়ে মৌসুম পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রাদুর্ভাব রয়েছে মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু এবং দূষণজনিত নানা রোগ। রোগবালাইয়ের মধ্য দিয়ে যাপিত জীবনে জরুরি প্রয়োজন সুচিকিৎসা এবং ভালো স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। নতুন নতুন রোগের পাশাপাশি উদ্বেগ বাড়াচ্ছে নানা ধরনের দূষণ। বায়ু, শব্দ, পানি এই তিনটি দূষণের মাধ্যমে হচ্ছে নানাবিধ রোগ। সাধারণ সর্দি-কাশিও হচ্ছে দীর্ঘায়িত। এ নিয়েও মানুষের মাঝে আছে উদ্বেগ। বায়ুদূষণে বরাবরই শীর্ষে অবস্থান করছে ঢাকা। দূষণের কারণে অনেকেরই শরীরে দেখা দিচ্ছে নানা জটিলতা।

কেউ কেউ দিনভর কাশছেন। ফলে ঘন ঘন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হচ্ছে, এমন ঘটনাও কম নয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনস্বাস্থ্যের জন্য এখন বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সুচিকিৎসা ও বিভিন্ন ধরনের দূষণ। বাংলাদেশে করোনা মহামারিতে মারা গেছেন ২৯ হাজার ৪৯৯ জন। বছরে নানা রোগে মারা যান লক্ষাধিক মানুষ। ‘বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস ২০২২’-এর তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যান হৃদরোগে। হার্ট অ্যাটাকের পর তালিকার দ্বিতীয় স্থানে আছে শ্বাসতন্ত্রজনিত রোগ। এরপর আছে স্ট্রোক। এছাড়া শিশুদের মৃত্যুর সবচেয়ে বড় কারণ নিউমোনিয়া। চিকিৎসকদের মতে, সাধারণ সর্দিজ্বর ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে। একসময় ধারণা করা হতো—একটি বিশেষ ক্যাটাগরির ভাইরাসের মাধ্যমেই শুধু সর্দি হয়। তবে আশির দশকে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হন যে মোট সাতটি ক্যাটাগরির ভাইরাসের কারণে সর্দিজ্বর হয়ে থাকে। ঠান্ডার মৌসুমে বা শীতের সময় এই ভাইরাসগুলো দ্রুত সংক্রমিত হওয়ার মতো পরিবেশ পায় বলে শীতের সময় সর্দি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ পায় এবং শীতের সময় মানুষের বেশি সর্দি হওয়ার আশঙ্কাও থাকে।

আইকিউএয়ারের ২০২৩ সালের বছরভিত্তিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে বায়ুদূষণ বেশি। এ তালিকায় বিশ্বে এক নম্বরে বাংলাদেশ। এরপর রয়েছে পাকিস্তান, ভারত, তাজিকিস্তান ও বুরকিনা ফাসো। বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় এক নম্বরে ছিল ভারতের দিল্লি। এরপর রয়েছে ঢাকা, বুরকিনা ফাসোর ওয়াগাডুগু, তাজিকিস্তানের দুশানবে ও ইরাকের বাগদাদ।
চিকিৎসকরা বলছেন, শুষ্ক মৌসুমে সাধারণ মানুষের কাশি হওয়ার অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে দূষণ। এছাড়া শুষ্ক মৌসুম ও আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণেও কাশি হতে পারে। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে দেশে ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে। এই আন্দোলনে প্রাণ গেছে অনেকের এবং আহত হয়েছেন কয়েক হাজার। গণঅভ্যুত্থান সংক্রান্ত বিশেষ সেলের খসড়া তালিকা অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ৮৫৮ জনের মৃত্যু এবং ১১ হাজার ৫৫১ জন আহত হওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা নিয়ে আছে নানা অভিযোগ। আহতরা সুচিকিৎসার দাবিতে আন্দোলনও করেছেন।
গত ১৯ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আন্দোলনে আহতদের সুচিকিৎসার বিষয়ে একটি সভার আয়োজন করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্যের দায়িত্ব থাকা সরকারের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান।

সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়—আন্দোলনে শহীদদের পরিবার ও আহতদের জরুরি ভিত্তিতে ও গুরুত্বসহকারে সেবা দিতে হবে। প্রত্যেক হাসপাতালে ‘ফাস্ট ট্র্যাক চিকিৎসা সেবা’ দিতে হবে। এছাড়া আহতদের চিকিৎসায় পেয়িং বেড কিংবা কেবিনের ভাড়া মওকুফের কথাও জানানো হয়। এছাড়া বছরের একটি অংশজুড়ে আলোচনায় ছিল ডেঙ্গু। গত বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ লাখ ১ হাজার ১৩০ জন, আর মারা গেছেন ৫৭৩ জন। ২০২৩ সালের তুলনায় এই সংখ্যা বেশ কম। সে বছর আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন এবং মারা যান ১ হাজার ৭০৫ জন। সুস্বাস্থ্য রক্ষায় দূষণ একটা বড়

চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রধান চ্যালেঞ্জ বায়ুদূষণ। কারণ ঢাকা এবং বাংলাদেশের বায়ুদূষণ ক্রমান্বয়ে খারাপ থেকে অতি খারাপ হচ্ছে। দ্বিতীয়ত হচ্ছে খাদ্যদূষণ। কারণ খাবারে অতিরিক্ত কীটনাশক, রাসায়নিক সার, প্রিজারভেটিভ ব্যবহার হচ্ছে বিভিন্ন খাদ্যে, এগুলোর মান নিয়ন্ত্রিত নয়। এগুলো জনস্বাস্থ্যকে খুব নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের শহরে শব্দদূষণ অসহনীয় পর্যায়ে। এর বাইরে খুব কম মানুষের জন্য আমরা সত্যিকার অর্থে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করতে পেরেছি। এছাড়া মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য ফুটপাত, পার্ক, চিত্তবিনোদনের জায়গা নেই। সেগুলোকে আমরা একেবারেই নষ্ট করে ফেলছি। পার্কের জায়গা, খেলার মাঠ দখল হয়ে যাচ্ছে।’ ডা. লেলিন বলেন, ‘বাংলাদেশে আমরা মহামারি দেখেছি, পৃথিবীব্যাপী একটা বিষয় স্বীকৃত যে রোগ হওয়ার পর চিকিৎসা করার চেয়ে প্রতিরোধ জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।

সেক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ন্যূনতম পদক্ষেপ কিংবা কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে ২০২৪ সালে যেমন আমরা অগোছালো ছিলাম, সামনের দিনগুলোর পরিকল্পনা কিংবা ভাবনায় আশার আলো আমরা দেখতে পারছি না।’ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘আমাদের স্বাস্থ্যসেবায় হাসপাতাল আছে কিন্তু আমাদের যে কমিউনিটিভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা, সেটি তেমন এগোয়নি। মহামারি বা জনস্বাস্থ্যের জরুরি পরিস্থিতি তৈরি হলে আমাদের কমিউনিটিভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার দিকে বেশি জোর দিতে হবে। তারপর মাধ্যমিক স্বাস্থ্যসেবা এবং তৃতীয় পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা, যা কিনা বড় বড় হাসপাতাল। আমরা শুধু তৃতীয় পর্যায় নিয়ে ভাবছি। প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্বাস্থ্যসেবা যদি আমরা দৃঢ় ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে আমাদের বহু সমস্যা অনেক আগেই সমাধান হয়ে যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘তা না হলে আমাদের রোগী বাড়তেই থাকবে, চিকিৎসক-নার্সরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেও সামাল দিতে পারবেন না। আমাদের কর্তৃপক্ষের উচিত একটা সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা, জনগোষ্ঠীকে স্বাস্থ্যবান করে তোলা। রোগী যেন কম হয় এবং মানুষ যেন সুস্থ থাকে।’ সুত্র: বাংলা ট্রিবিউন