প্রযুক্তি ডেস্ক : বিভিন্ন শীর্ষ প্রযুক্তি কোম্পানি প্রধানদের জনগণকে সুনিশ্চিতভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংশ্লিষ্ট ঝুঁকি থেকে সুরক্ষার আহ্বান জানিয়েছে হোয়াইট হাউজ।
গত বৃহস্পতিবার এআই সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর প্রধানদের হোয়াইট হাউজে ডেকে সমাজ রক্ষায় তাদের ‘নৈতিক দায়িত্বের’ বিষয়টি জানানোর কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে বিবিসি। হোয়াইট হাউজ পরিষ্কার করে বলেছে, তারা এই খাতে আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ আনতে পারে। চ্যাটজিপিটি ও বার্ডের মতো সম্প্রতি আত্মপ্রকাশ করা বিভিন্ন এআই চ্যাটবট এরইমধ্যে জনগণের নজর কেড়েছে। এইসব চ্যাটবট সাধারণ ব্যবহারকারীদের ‘জেনারেটিভ এআই’ নামে পরিচিত এক ব্যবস্থার সঙ্গে কথোপকথনের সুযোগ দেয়। আর এগুলো মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই একাধিক সূত্র থেকে তথ্য সংক্ষেপে আনতে, কম্পিউটার কোড ডিবাগ করতে, প্রেজেন্টেশন লিখতে এমনকি বিভিন্ন এমন কবিতা শোনাতে পারে, যা খালি চোখে মানুষের লেখা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটন স্থানীয় সময় সকাল ১১ টা ৪৫ মিনিটে শুরু হওয়া দুই ঘণ্টার ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন গুগলের সিইও সুন্দার পিচাই, মাইক্রোসফট প্রধান সাত্যিয়া নাদেলা, ওপেন এআই প্রতিষ্ঠাতা স্যাম অল্টম্যান, অ্যান্থ্রোপিকস-এর দারিও অ্যামোদেই। বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস, বাইডেনের চিফ স্টাফ জেফ জিয়েন্টস, ন্যাশনাল ইকোনোমিক কাউন্সিলের পরিচালক লায়েই ব্রেইনার্ড, মার্কিন নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সালিভান এবং বাণিজ্যমন্ত্রী জিনা রাইমন্ডো।
বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসে জড়ো হওয়া প্রযুক্তি নির্বাহীদের জানানো হয়, ‘নিজস্ব পণ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করার’ বিষয়টি নির্ভর করে কোম্পানির নিজের ওপরই। আর দেশটির প্রশাসন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন নতুন প্রবিধান ও আইনের জন্যেও উন্মুক্ত বলে তাদের সতর্ক করেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট দপ্তর। চ্যাটজিপিটি’র নির্মাতা কোম্পানি ওপেনএআই’র প্রধান নির্বাহী স্যাম অল্টম্যান প্রতিবেদকদের বলেন, এআই নিয়ন্ত্রণে করণীয় বিষয়ে ‘চমকপ্রদভাবেই একমত ছিলেন’ নির্বাহীরা।
বৈঠকের পর মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস এক বিবৃতিতে বলেন, নতুন প্রযুক্তি জনগণের নিরাপত্তা, প্রাইভেসি ও নাগরিক অধিকারের জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তবে, এতে মানুষের জীবন উন্নত করার সম্ভাবনাও রয়েছে। তিনি আরও বলেন, নিজেদের পণ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বেসরকারি খাতের ‘একটি নৈতিক ও আইনি দায়িত্ব’।
এদিকে, সাতটি নতুন এআই গবেষণা প্রতিষ্ঠান চালুর উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন’ থেকে ১৪ কোটি ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে হোয়াইট হাউজ। এর আগে বিভিন্ন রাজনীতিবিদ ও প্রযুক্তি নেতা উভয় পক্ষ থেকেই উদীয়মান কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবস্থার নাটকীয় উত্থান নিয়ন্ত্রণের আহ্বান এসেছে। এই সপ্তাহের শুরুতে গুগলে নিজের চাকরী ছেড়ে দিয়ে এআই’র ‘গডফাদার’ হিসেবে পরিচিত জেফ্রি হিনটন বলেন, তিনি এখন নিজের কার্যক্রমের জন্য অনুতপ্ত। বিবিসিকে তিনি বলেন, এআই চ্যাটবটগুলোর কয়েকটি বিপজ্জনক ব্যবস্থা ‘বেশ ভয়ানক’। মার্চে ইলন মাস্ক ও অ্যাপলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ ওজনিয়াকের স্বাক্ষর করা এক চিঠিতে এই প্রযুক্তির বিকাশ সাময়িকভাবে স্থগিত করার আহ্বান জানানো হয়। আর গেল বুধবার ‘কীভাবে ও কী কারণে এআই নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন’, সে সম্পর্কে নিজের মতামত তুলে ধরেন মার্কিন নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘ফেডারেল ট্রেড কমিশন (এফটিসি)’র প্রধান লিনা খান। অন্যদিকে, এআই দ্রুতই মানুষের ‘চাকরি নিয়ে নিতে’ পারে, এমন শঙ্কাও রয়েছে। সেইসঙ্গে চ্যাটজিপিটি ও বার্ডের মতো বিভিন্ন চ্যাটবট ভুল হতে পারে বা ভুল তথ্য প্রচার করতে পারে, এমন শঙ্কাও আছে। জেনারেটিভ এআই দেশটির কপিরাইট আইন লঙ্ঘন করতে পারে, এমন উদ্বেগও রয়েছে। আর জালিয়াতির মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে ‘ভয়েস ক্লোনিং এআই’। এ ছাড়া, এআই’র তৈরি বিভিন্ন ভিডিও ভুয়া খবর ছড়াতে পারে এমন শঙ্কার কথাও প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে বিবিসি। যাইহোক, বিল গেটসের মতো এআই সমর্থকরা এই ব্যবস্থায় ‘বিরতির আহ্বানের’ বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, এই ধরনের পদক্ষেপ সামনের দিকে আসন্ন বিভিন্ন ‘চ্যালেঞ্জের সমাধান’ করবে না। গেটসের যুক্তি হলো, কীভাবে এআই’র বিকাশের সর্বোত্তম ব্যবহার করা যায়, সেদিকে মনোযোগ দিলে বেশি ভালো হয়।