নিজস্ব প্রতিবেদক : বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করতে পারায় বাংলাদেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গতকাল রোববার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সভায় তিনি এ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করার যে সুযোগটা পেয়েছি এবং এর আগে আমরা স্বাধীনতার রজতজয়ন্তীও উদযাপন করার সুযোগ পেয়েছিলাম, এজন্য কৃতজ্ঞতা জানাই বাংলাদেশের জনগণের প্রতি। তারা ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে সেবা করার সুযোগ দিয়েছে বলেই আজকে এই সৌভাগ্য হয়েছিল, আমরা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করতে পেরেছি।’
শিগগির দেশের সব ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষের আবাসন নিশ্চিত হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, জাতির পিতার স্বপ্ন ক্ষুধা-দারিদ্র মুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা। আমরা ২০২১ সালেই উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। ইনশাল্লাহ বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। আজকে আমরা শতভাগ বিদ্যুৎ দিয়েছি। সব ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষের জন্য বিনা পয়সায় ঘর তৈরি করে দিচ্ছি। সেদিন বেশি দূরে নয়, যেদিন বাংলাদেশের একটি মানুষও ঠিকানাবিহীন থাকবে না বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, মানুষ গৃহহীন থাকবে না, ভূমিহীন থাকবে না। অন্তত তাদের বেঁচে থাকার একটু সুযোগ আমরা করে দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের একটাই লক্ষ্য, বাংলাদেশটাকে আবার আমরা স্বাধীনতার চেতনায় ফিরিয়ে আনবো। আমরা স্বাধীনতার আদর্শে বাংলাদেশকে গড়ে তুলবো। ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বাংলাদেশ গড়ে উঠবে উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে। বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের যে অগ্রযাত্রা এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে, অপ্রতিরোধ্য গতিতে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। এটাই আমাদের আকাক্সক্ষা।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে অনুষ্ঠিত সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন-বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটিতে থাকা মন্ত্রীপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য, শিক্ষক, কবি-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সমাজের বিশিষ্ট জন, সরকারের ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা।
জাতির পিতার নাম মুছে ফেলার চেষ্টায় তারা ব্যর্থ হয়েছে: ইতিহাস সব সময় প্রতিশোধ নেয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পরে বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছে। আসলেই ইতিহাস সব সময় প্রতিশোধ নেয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) কার্যালয়ে স্থাপিত ‘মুজিব কর্নার’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পরের নানা প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পরে প্রবাসে ছিলাম রিফিউজি হিসাবে, কিন্তু নাম-পরিচয়টা দিতে পারেনি। কারণ নিরাপত্তার স্বার্থে যে দেশে আশ্রয় নিয়েছিলাম, তাদের এটাই ছিলো নির্দেশ।’
‘এই শোক-কষ্ট সহ্য করা কত কঠিন। তারপরেও আমার জীবনের একটা প্রতিজ্ঞা ছিলো। জীবনে একদিন না একদিন সময় আসবে। কারণ এত আত্মত্যাগ কোনদিন বৃথা যেতে পারে না।’
সরকারপ্রধান বলেন, পঁচাত্তরের পরে বাংলাদেশের ইতিহাস খেকে জাতির নাম মুছে ফেলা হয়েছিলো। বঙ্গবন্ধুর সাতেই মার্চের ভাষণ ও জয় বাংলা নিষিদ্ধ ছিলো। মুক্তিযুদ্ধের কয়েকটি বাছা বাছা গান বাজানো হতো। যে গানগুলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা দিতো, সেগুলো নিষিদ্ধ ছিলো। কোথাও বঙ্গবন্ধুর ছবি থাকলে, সেটা হয় কাগজ দিয়ে বন্ধ করা হতো, না হয় আঙ্গুল দিয়ে ঢেকে রাখা হতো।’ আর এভাবে একটি বিকৃত ইতিহাস সৃষ্টি করার চেষ্টা হয়েছিল জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মূল ইতিহাসটাকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিলো। আসলেই ইতিহাস সবসময় প্রতিশোধ নেয়। যারা সত্যকে মুছে ফেলার চেষ্টা করে মুছে ফেলা যায় না। আজকে সেটাই প্রমাণ হয়েছে।’
উন্নয়ন না দেখলে চোখের ডাক্তারের কাছে যান : সরকারের উন্নয়ন যারা দেখে না তাদের চোখের চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, অনেকে আছে দেশে কোনো উন্নতি দেখে না। তাদের চোখে কোনো উন্নয়নই নাকি দেশে হয়নি। তাদের যদি চোখ খারাপ থাকে আমার কিছু বলার নেই। এখন বলতে হয় আমরা তো একটি আই ইনস্টিটিউট করে দিয়েছি। যারা বক্তৃতা দেয় উন্নয়ন হয় না, চোখে দেখে না আমার মনে হয় তাদের চোখ একটু পরীক্ষা করা দরকার। তাহলে হয়তো দেখতে পারে উন্নয়ন হয়েছে কী না?
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে রোববার আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। বিভিন্ন উন্নয়নকাজ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা জানি অনেকে আছে দেশে কোনো উন্নতি দেখে না। তাদের যদি চোখ খারাপ থাকে আমার কিছু বলার নেই। কেন দেখে না? সেটা হচ্ছে দেখার ইচ্ছে নেই তাই দেখে না। কিন্তু উন্নয়নের কর্মসূচি সুপরিকল্পতভাবে আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। ইশতেহারে যে ঘোষণা দিয়েছি- তা একে একে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। বিএনপিসহ যারা সরকারের উন্নয়ন চোখে দেখে না তাদের উদ্দেশ করে শেখ হাসিনা বলেন, তাদের চোখে পড়ে না যে শতভাগ বিদ্যুৎ। ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ তো বিদ্যুৎ ছাড়া চলতে পারে না। ডিজিটাল বাংলাদেশের সুযোগ তারাও নিচ্ছে। এটা উন্নতি নয়? আজকে পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র- এগুলো চোখে পড়ে না। এগুলো উন্নয়নের লক্ষণ নয়? দারিদ্র্য হার হ্রাস পেয়েছে সেটা তাদের চোখে পড়ে না। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা তাদের চোখে উন্নয়ন নয়। বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র নাকি নেই। গণতন্ত্র নাকি ধ্বংস করে ফেলেছি। তাদের গণতন্ত্রের ডেফিনেশনটা কী? যাদের জন্ম জনগণের মধ্য থেকে হয়নি, জন্ম হয়েছে সেনা ছাউনিতে ক্ষমতা দখলকারী পকেট থেকে। তারা এখন আমাদের গণতন্ত্র শেখায়। তিনি বলেন, কাদের মুখে গণতন্ত্রের ছবক শুনতে হয় সেটাই বড় কথা। যাদের জন্ম হয়েছে অগণতান্ত্রিকভাবে, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের মধ্য দিয়ে। সেই ধরনের ক্ষমতা দখলকারী অবৈধভাবে তাদের হাতে বিএনপির জন্ম। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান সেনাপ্রধান থেকে ক্ষমতা দখল করে রাষ্ট্রপতি হয়েছিল। ক্ষমতা নিষ্কণ্টক করার জন্য আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সেনা সদস্যদের হত্যা করেছে। কত পরিবার তাদের আপনজনের লাশটিও পায়নি। হাজার হাজার সেনা সদস্যদের যারা হত্যা করেছে তাদের থেকে আজ আমাদের গণতন্ত্রের ছবক শিখতে হবে এটাই জাতির দুর্ভাগ্য। শেখ হাসিনা বলেন, উচ্চ আদালত থেকেই জিয়াউর রহমান ও এরশাদের ক্ষমতা দখলকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। কারণ সংবিধান ও সামরিক আইন রুলস ভঙ্গ করে নিজেদের রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিয়ে ক্ষমতা দখল করেছিল তারা। তারপর হ্যাঁ-না ভোট, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, দল গঠন করে পুরো রাজনীতিতে অবতরণ। প্রথমে ক্ষমতার উত্তরণ তারপর রাজনীতিতে অবতরণ। তারা আসে রাজনীতিবিদদের গালি দিয়ে পরে আবার নিজেরাই উর্দি খুলে রাজনীতিবিদ হয়ে যায়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। বিশ্বের কাছে এখন বাংলাদেশকে ভিক্ষা চেয়ে চলতে হয় না। বাঙালিদের মাথানত করে চলতে হয় না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১০ লাখ মানুষকে ঘর-বাড়ি করে দিয়ে পুনর্বাসন করেছি। এই কাজটি করতে গিয়ে আমরা মুজিববর্ষের কর্মসূচি কিছু কাটছাঁট করেছি। কেউ গৃহহীন, ভিটাহীন থাকবে না এটাই আমাদের লক্ষ্য। নদী ভাঙনপ্রবণ এলাকায়ও আমরা এমন ঘর করে দিচ্ছি যেটা ভাঙনে আশঙ্কা দেখা গেলে দ্রুত সরিয়ে নিতে পারে। আমাদের লক্ষ্য এই দেশে কোনো মানুষ গৃহহীন থাকবে না, ভূমিহীন থাকবে না, অন্ধকারে থাকবে না। তিনি বলেন, আমরা প্রত্যেকের ঘর আলোকিত করার ঘোষণা দিয়েছিলাম। আমরা সেটা করতে সক্ষম হয়েছি। প্রত্যেকটি গ্রামে কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। সরকার প্রধান বলেন, আমরা বিনা পয়সায় করোনার করোনার পরীক্ষা ও ভ্যাকসিন দিয়েছি। অনেক উন্নত দেশও এটা পারেনি। বাজেটে আলাদা করে হাজা হাজার কোটি টাকা রেখে দিয়েছি। আমাদের কথা যত টাকা লাগুক, যেখান থেকেই হোক ভ্যাকসিন আনবো। দেশের মানুষকে দেবো। আমরা সেটা দিতে সক্ষম হয়েছি। ৭৩ শতাংশ মানুষ ভ্যাকসিন পেয়ে গেছে। আগামীকাল (আজ ২৮ মার্চ) থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত আবারও গণটিকা দিতে হবে। যারা দ্বিতীয় ডোজ নেয়নি সেটা আমরা দেবো। আমরা একদিনে এক কোটি ২৩ লাখ করোনার টিকা দিয়ে রেকর্ড করেছি। এবার কেউ যেন ভ্যাকসিন নিতে বাদ না থাকে সেটা দেখতে চাই। প্রথম ডোজ, দ্বিতীয় ডোজ, তৃতীয় ডোজ দেওয়া হবে। খাদ্য ও জীবিকার চাহিদা সরকারের লক্ষ্য উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, করোনার ধাক্কা ও যুদ্ধাবস্থা সবকিছু মিলে খাদ্যাভাবটা সারাবিশ্বে দেখা দিতে পারে। সেজন্য আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। এজন্য আমি আগেই বলেছি কোথাও যেন এক ইঞ্চি জমি অনাবাদি না থাকে। যার যেটুকু আছে সেটুকু করবে।
জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ প্রধানমন্ত্রীর
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ