ঢাকা ০৫:২৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫

‘জনগণকে নিয়েই নীতিমালা হালনাগাদ করতে হবে’

  • আপডেট সময় : ০৫:৩৬:০১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ অক্টোবর ২০২৪
  • ৭১ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের টেলিযোগাযোগ খাত ও ইন্টারনেট পরিষেবা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। দেশের ইন্টারনেট ব্যবস্থা স্মার্ট বা ডিজিটাল নয়, আফ্রিকার পর্যায়ে এবং আফগানিস্তানের কিছুটা উপরে রয়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে বিটিআরসির জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। গত শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে ‘বিটিআরসির ক্ষমতায়ন, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনী ২০১০ ও বর্তমান প্রেক্ষাপট’ নিয়ে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় এসব কথা তুলে ধরা হয়।
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে টেলিকম বিশেষজ্ঞ ও অ্যামটবের সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহতাব উদ্দিন। সংস্কারের রূপরেখা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা ডিজিটালও না স্মার্টও না। আমরা আফ্রিকার পর্যায়ে রয়েছি। আফগানিস্তানের কিছুটা ওপরে। ভয়েসের দিন শেষ হলেও এখনো দেশের মোবাইল অপারেটরদের এখান থেকেই ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ আয় আসে। মানসম্মত সেবা দিতে হলে এখনই টেলিযোগাযোগ নীতিমালা হালনাগাদ করা দরকার।
মাহতাব উদ্দিন বলেন, ইন্টারনেটের শুধু দাম কমালেই হবে না; মানসম্মত হতে হবে। ডিজিটাল বৈষম্য দূর করতে হবে। তাই এখনো যারা ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পাননি তাদের অন্তর্ভুক্ত করতে ইন্টারনেটের দাম কমাতে ভ্যাট-ট্যাক্স মডারেট করতে হবে। কেননা এই দামের ৫০ শতাংশই ট্যাক্স-ভ্যাটের জন্য পরিশোধ করতে হয়। এক্ষেত্রে আগে রাজনৈতিক বিবেচনায় অতিরিক্ত যে লেয়ার তৈরি করা হয়েছে তা ছাঁটাই করতে হবে। বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরে তিনি বলেন, ডেটার মতো ভয়েস কলেরও ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করা উচিত। সেবার মান বৃদ্ধিতে টাওয়ার নীতিমালার উন্নয়ন করতে হবে। ফাইবার ও টাওয়ার শেয়ারিং না করায় রিসোর্স নষ্ট হচ্ছে। ৪টি কোম্পানির ফাইবার লাইসেন্স থাকলেও দুটি কোম্পানির কাছে এগুলো বন্দি। একইভাবে দুটি এনটিটি প্রতিষ্ঠানের কব্জায় রয়েছে সরকারের ইনফো সরকার প্রকল্প। এটি উন্মুক্ত করা না হলে তৃণমূলে ইন্টারনেট ছড়িয়ে দেওয়া যাবে না। একই সঙ্গে টেলিকম মন্ত্রণালয় নয় ডট ও বিটিআরসিকে একীভূত করে পলিসি প্রণয়ন ও ইনফোর্সমেন্স করা হলে গ্রাহকের স্বার্থ সংরক্ষণ করা সহজ হবে।
খাত সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় বিভিন্ন লেয়ারে লাইসেন্স দিয়ে খাতে খাতে কর-ভ্যাট আরোপ করায় বাড়ছে দাম। ভোক্তা পর্যায়ে ইন্টারনেটের মূল্য, মান ও সুলভ করতে হলে লাইসেন্সের জঞ্জাল এবং ফাইবারের জঞ্জাল কমাতে উদ্যোগ নিতে হবে। তাই কথিত স্টেকহোল্ডার দিয়ে নয়, জনগণকে নিয়েই নীতিমালা হালনাগাদ করতে হবে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে টেলিকম খাতের ভোক্তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় স্টেকহোল্ডার বৈঠকের আহ্বান জানান আইআইজিএবি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাকতবর রহমান।
রবি আজিয়াটা লিমিটেডের টেকনিক্যাল রেগুলেশন্স অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের সিনিয়র ডিরেক্টর অনামিকা ভক্ত জানান, প্রতি বছর রবি বিপুল অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করলেও মুনাফা ৩ শতাংশের বেশি হয় না। ফলে মান রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই সরকার এ দিকটায় দৃষ্টি দেবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
টেলিযোগাযোগ ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ফিদা হক বলেন, ডাটার দাম যৌক্তিককরণ ও ইন্টারনেট পরিকাঠামো পুনর্বিন্যাস করা জরুরি। সহজলভ্য ও দেশের সব প্রান্তে সমান গতিশীল ইন্টারনেট আমাদের লাইফ লাইন। ভয়েস ও এসএমএসের দিন এখন শেষ। তাই ডাটার প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া দরকার।
প্রতিযোগিতা কমিশনের সাবেক পরিচালক খালেদ আবু নাসের বলেন, বিটিআরসি রাজস্ব আদায় করবে নাকি সেবা নিশ্চিত করবে সেটা আমাদের আগে পরিষ্কার করতে হবে। এই বাজারের মনোপলি ভেঙে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করতে হবে। এখানে বিস্ময়করভাবে শুধু একটি প্রতিষ্ঠান আকাশকে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। করাপশন ও ডিক্টেটরশিপ কমাতে বিটিআরসিকে এই জায়গায় রোল প্লে করতে হবে। ইনস্টিটিউশন শক্তিশালী হলেই বৈষম্য কমবে।
সভাপতির বক্তব্যে মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, গণঅভ্যুত্থানের সময় ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়েছিল। আমরা চাই সেই শিক্ষা নিয়ে অতিদ্রুত অন্তর্র্বতীকালীন সরকার ইন্টারনেটকে মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে ঘোষণা করবেন। আমারা আশা করব, আইএসপি বা টেলিকমরা কখনোই সরকারের সঙ্গে থাকবেন না। ইন্টারনেট বন্ধ করবে না। বিটিআরসিকে জবাবদিহিতার অধীনে আনতে হবে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের দিদারুল ভূঁইয়া, গণসংহতি আন্দোলনের ঢাকা মহানগর সভাপতি বাচ্চু ভূঁইয়া, ঢাকা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট ইয়ারুল ইসলাম প্রমুখ।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে: তারেক রহমান

‘জনগণকে নিয়েই নীতিমালা হালনাগাদ করতে হবে’

আপডেট সময় : ০৫:৩৬:০১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ অক্টোবর ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের টেলিযোগাযোগ খাত ও ইন্টারনেট পরিষেবা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। দেশের ইন্টারনেট ব্যবস্থা স্মার্ট বা ডিজিটাল নয়, আফ্রিকার পর্যায়ে এবং আফগানিস্তানের কিছুটা উপরে রয়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে বিটিআরসির জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। গত শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে ‘বিটিআরসির ক্ষমতায়ন, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনী ২০১০ ও বর্তমান প্রেক্ষাপট’ নিয়ে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় এসব কথা তুলে ধরা হয়।
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে টেলিকম বিশেষজ্ঞ ও অ্যামটবের সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহতাব উদ্দিন। সংস্কারের রূপরেখা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা ডিজিটালও না স্মার্টও না। আমরা আফ্রিকার পর্যায়ে রয়েছি। আফগানিস্তানের কিছুটা ওপরে। ভয়েসের দিন শেষ হলেও এখনো দেশের মোবাইল অপারেটরদের এখান থেকেই ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ আয় আসে। মানসম্মত সেবা দিতে হলে এখনই টেলিযোগাযোগ নীতিমালা হালনাগাদ করা দরকার।
মাহতাব উদ্দিন বলেন, ইন্টারনেটের শুধু দাম কমালেই হবে না; মানসম্মত হতে হবে। ডিজিটাল বৈষম্য দূর করতে হবে। তাই এখনো যারা ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পাননি তাদের অন্তর্ভুক্ত করতে ইন্টারনেটের দাম কমাতে ভ্যাট-ট্যাক্স মডারেট করতে হবে। কেননা এই দামের ৫০ শতাংশই ট্যাক্স-ভ্যাটের জন্য পরিশোধ করতে হয়। এক্ষেত্রে আগে রাজনৈতিক বিবেচনায় অতিরিক্ত যে লেয়ার তৈরি করা হয়েছে তা ছাঁটাই করতে হবে। বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরে তিনি বলেন, ডেটার মতো ভয়েস কলেরও ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করা উচিত। সেবার মান বৃদ্ধিতে টাওয়ার নীতিমালার উন্নয়ন করতে হবে। ফাইবার ও টাওয়ার শেয়ারিং না করায় রিসোর্স নষ্ট হচ্ছে। ৪টি কোম্পানির ফাইবার লাইসেন্স থাকলেও দুটি কোম্পানির কাছে এগুলো বন্দি। একইভাবে দুটি এনটিটি প্রতিষ্ঠানের কব্জায় রয়েছে সরকারের ইনফো সরকার প্রকল্প। এটি উন্মুক্ত করা না হলে তৃণমূলে ইন্টারনেট ছড়িয়ে দেওয়া যাবে না। একই সঙ্গে টেলিকম মন্ত্রণালয় নয় ডট ও বিটিআরসিকে একীভূত করে পলিসি প্রণয়ন ও ইনফোর্সমেন্স করা হলে গ্রাহকের স্বার্থ সংরক্ষণ করা সহজ হবে।
খাত সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় বিভিন্ন লেয়ারে লাইসেন্স দিয়ে খাতে খাতে কর-ভ্যাট আরোপ করায় বাড়ছে দাম। ভোক্তা পর্যায়ে ইন্টারনেটের মূল্য, মান ও সুলভ করতে হলে লাইসেন্সের জঞ্জাল এবং ফাইবারের জঞ্জাল কমাতে উদ্যোগ নিতে হবে। তাই কথিত স্টেকহোল্ডার দিয়ে নয়, জনগণকে নিয়েই নীতিমালা হালনাগাদ করতে হবে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে টেলিকম খাতের ভোক্তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় স্টেকহোল্ডার বৈঠকের আহ্বান জানান আইআইজিএবি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাকতবর রহমান।
রবি আজিয়াটা লিমিটেডের টেকনিক্যাল রেগুলেশন্স অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের সিনিয়র ডিরেক্টর অনামিকা ভক্ত জানান, প্রতি বছর রবি বিপুল অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করলেও মুনাফা ৩ শতাংশের বেশি হয় না। ফলে মান রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই সরকার এ দিকটায় দৃষ্টি দেবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
টেলিযোগাযোগ ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ফিদা হক বলেন, ডাটার দাম যৌক্তিককরণ ও ইন্টারনেট পরিকাঠামো পুনর্বিন্যাস করা জরুরি। সহজলভ্য ও দেশের সব প্রান্তে সমান গতিশীল ইন্টারনেট আমাদের লাইফ লাইন। ভয়েস ও এসএমএসের দিন এখন শেষ। তাই ডাটার প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া দরকার।
প্রতিযোগিতা কমিশনের সাবেক পরিচালক খালেদ আবু নাসের বলেন, বিটিআরসি রাজস্ব আদায় করবে নাকি সেবা নিশ্চিত করবে সেটা আমাদের আগে পরিষ্কার করতে হবে। এই বাজারের মনোপলি ভেঙে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করতে হবে। এখানে বিস্ময়করভাবে শুধু একটি প্রতিষ্ঠান আকাশকে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। করাপশন ও ডিক্টেটরশিপ কমাতে বিটিআরসিকে এই জায়গায় রোল প্লে করতে হবে। ইনস্টিটিউশন শক্তিশালী হলেই বৈষম্য কমবে।
সভাপতির বক্তব্যে মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, গণঅভ্যুত্থানের সময় ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়েছিল। আমরা চাই সেই শিক্ষা নিয়ে অতিদ্রুত অন্তর্র্বতীকালীন সরকার ইন্টারনেটকে মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে ঘোষণা করবেন। আমারা আশা করব, আইএসপি বা টেলিকমরা কখনোই সরকারের সঙ্গে থাকবেন না। ইন্টারনেট বন্ধ করবে না। বিটিআরসিকে জবাবদিহিতার অধীনে আনতে হবে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের দিদারুল ভূঁইয়া, গণসংহতি আন্দোলনের ঢাকা মহানগর সভাপতি বাচ্চু ভূঁইয়া, ঢাকা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট ইয়ারুল ইসলাম প্রমুখ।