ঢাকা ০৫:২১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৫

জনকল্যাণে আওয়ামী লীগের বিকল্প নেই

  • আপডেট সময় : ১০:২৩:১৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৬ জুন ২০২১
  • ১৬৫ বার পড়া হয়েছে

তানভীর শাকিল জয় : ২৩ জুন ৭২ বছর পূর্ণ করলো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ভারত উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন এ দল এবং বাংলাদেশের জন্ম, বিকাশ, উত্থান-পতনের ইতিহাস যেন অভিন্ন। পাকিস্তানি পরাধীনতার আমলে আওয়ামী লীগের জন্ম। এরপর আওয়ামী লীগ যত বিকশিত হয়েছে, স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন এ দেশের মানুষের কাছে ততই বাস্তব হয়ে ধরা দিয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এ দেশের মানুষ স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে এনেছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই এ দেশে ভাত ও ভোটের লড়াই হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই অনুন্নত বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী লীগ ডাক দিলে এ দেশের আপামর জনতা রাজপথে প্রতিবাদে ফেটে পড়েছে। আওয়ামী লীগ হাসলে এ দেশ হেসেছে। আওয়ামী লীগের দুঃসময় মানে দেশে দুঃসময় দেখা দিয়েছে। ফলে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এ দেশের মানুষের জন্য বিশেষ তাৎপর্যময় একটি দিন।
বর্তমানে টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের এ অবস্থান হঠাৎ করে তৈরি হয়নি। এ দেশের অনেক রাজনৈতিক দলের মতো আওয়ামী লীগ ক্যান্টনমেন্টে জন্মগ্রহণ করেনি। জনআকাক্সক্ষার প্রতিফলন হিসেবে আওয়ামী লীগের জন্ম। গণমানুষের নেতাদের নেতৃত্বে জনগণের দল হিসেবেই আওয়ামী লীগ বিকাশ লাভ করেছে। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শামসুল হকের মতো নেতারা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ধীরে ধীরে আওয়ামী লীগ এ দেশের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের দলে পরিণত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগে তাঁর সহচররাই এ দেশের জনগণকে স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত করেছেন। পাকিস্তানি জান্তা আইয়ুব-বিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়ে এ দেশের মানুষের একক বৃহত্তম রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধু এ দেশের মানুষের রাজনৈতিক আকাক্সক্ষাকে পুরোপুরি বুঝতে ও ধারণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন বলেই প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ বিস্তৃতি লাভ করে। যার প্রতিফলন দেখা যায় ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একচেটিয়া বিপুল বিজয়ের মাধ্যমে।
১৯৭১ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমেদ, এম মনসুর আলী, এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে সঙ্গে নিয়ে দেশ গড়ার কাজে মনোনিবেশ করেছিলেন। কিন্তু জাতির দুর্ভাগ্য, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার মধ্য দিয়ে এ দেশের পিছিয়ে যাওয়া শুরু হয়। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ এবং আওয়ামী লীগের জন্য এক দুঃসময় শুরু হয়। জাতির ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা চলতে থাকে। আওয়ামী লীগের নেতারাও খানিকটা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েন। এমন পরিস্থিতিতে ১৯৮১ সালে বিদেশে নির্বাসিত বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ওই বছরই তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশে ফিরে এসে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। তরুণ বয়সে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে দলকে ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী করতে মনোনিবেশ করেন শেখ হাসিনা। পিতার অনুসরণে তিনিও এ দেশের গ্রাম থেকে গ্রামে ছুটে বেড়ান। বঙ্গবন্ধু যেমন পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে গ্রামগঞ্জে ঘুরে ঘুরে আওয়ামী লীগকে বিশাল একটি মহীরুহে পরিণত করেছিলেন তেমনি তার কন্যাও একই কাজ করে আওয়ামী লীগকে পুনর্জীবিত করেন। সফলতার সঙ্গে সামরিক স্বৈরাচার জিয়াউর রহমান ও এরশাদ-বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আবারও আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় যায় শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণেই।
নানা ষড়যন্ত্রের কারণে ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যেতে না পারলেও রাজপথে শক্তিশালী বিরোধী দলের ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়।
বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্র নির্ভর রাজনীতি, একগুঁয়েমি ও হঠকারী সিদ্ধান্তের কারণে এ দেশে আলোচিত ১/১১ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। সে সময়েও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা রাজপথে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আবারও বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। সেই থেকে টানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় আছে। এ সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে বিপুল অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে। বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের উন্নয়ন আজ রোল মডেল। কোভিড মহামারির মধ্যেও আমাদের প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত আছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই উন্নয়ন যাত্রা গোটা বিশ্বের কাছেই এক বিস্ময়। উনার সততা এবং কঠোর পরিশ্রম, দূরদর্শী চিন্তার ফলেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পেরেছে। একসময়ের বিদেশি ঋণনির্ভর বাংলাদেশ সম্প্রতি শ্রীলঙ্কাকে ২০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে। এটিও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের একটি ভিন্ন পরিচয় নির্মাণের যাত্রা শুরু বলা যায়।
আওয়ামী লীগের এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে আরেকটি বিষয় উল্লেখ করতে চাই। এ বছরই আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দেওয়ার ৪০ বছর পূর্ণ হয়েছে। ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনা নির্বাসিত জীবন থেকে দেশে ফিরে এসেছিলেন। উনি এসেছিলেন বলেই আওয়ামী লীগ পুনর্জীবন লাভ করেছিল এতে কোনও সন্দেহ নেই। ওনার হাত ধরেই আওয়ামী লীগ এ দেশের মানুষের আশার প্রতীক হয়ে উঠেছে। এ দেশের বিপুল মানুষের সমর্থন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই আওয়ামী লীগ একটি উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে কাজ করে যাচ্ছে, ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন সম্ভব হয়েছে। চার দশকে নানা উত্থান পতন, প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করে তিনিই বাংলাদেশকে নিয়ে গেছেন অনন্য এক উচ্চতায়।
এ দেশের প্রগতিশীল, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, গণতন্ত্রমনা মানুষের আশ্রয়স্থল আওয়ামী লীগ। বৃষ্টি হলে মানুষ যেমন ছাতার নিচে আশ্রয় নিয়ে তার নিরাপদ গন্তব্যে পৌঁছায় তেমনি এ দেশে যেকোনও জাতীয় দুর্যোগে বা দুঃসময়ে দলমত নির্বিশেষে মানুষ বিপদ উত্তরণে আওয়ামী লীগের ওপরই ভরসা রাখে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই এ দেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করেছে, সামরিক স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন সংগ্রাম করেছে, ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করেছে, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও রায় কার্যকর করেছে, জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচার করেছে, এখন দারিদ্র্যতার বিরুদ্ধে লড়াই করে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করেছে।
আওয়ামী লীগ যেহেতু এ দেশের মানুষের আশাভরসার স্থল সেহেতু আওয়ামী লীগের প্রতি মান-অভিমানও বেশি। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কোথাও একটু বিচ্যুতি চোখে পড়লেই তীব্র সমালোচনায় অনেকে ফেটে পড়েন। এটি আওয়ামী লীগের প্রতি মানুষের প্রত্যাশা যে অনেক বেশি তা-ই নির্দেশ করে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ছোটখাটো ভুলভ্রান্তি কাটিয়ে উঠে নিরবচ্ছিন্নভাবে মানুষের জন্য যে কাজ করে যাচ্ছে তা অব্যাহত রাখবে, সেই প্রত্যাশা রাখছি।
পরিশেষে একটি কথা বলে শেষ করবো। আপনারা অনেকে আওয়ামী লীগের সমালোচনা করতে পারেন। আপনাদের সেই স্বাধীনতার প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু এটাও আপনাদের স্বীকার করতে দ্বিধা রাখা উচিত নয় যে এ দেশের জনগণের কল্যাণে কাজ করে, উন্নয়ন অগ্রযাত্রা নিয়ে ভাবে, এমন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ছাড়া আর নেই। দেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নে আওয়ামী লীগের বিকল্প আর নেই। ৭২ বছরে আওয়ামী লীগের খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ অর্জন এটি।
লেখক : সংসদ সদস্য ও আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

জনকল্যাণে আওয়ামী লীগের বিকল্প নেই

আপডেট সময় : ১০:২৩:১৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৬ জুন ২০২১

তানভীর শাকিল জয় : ২৩ জুন ৭২ বছর পূর্ণ করলো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ভারত উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন এ দল এবং বাংলাদেশের জন্ম, বিকাশ, উত্থান-পতনের ইতিহাস যেন অভিন্ন। পাকিস্তানি পরাধীনতার আমলে আওয়ামী লীগের জন্ম। এরপর আওয়ামী লীগ যত বিকশিত হয়েছে, স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন এ দেশের মানুষের কাছে ততই বাস্তব হয়ে ধরা দিয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এ দেশের মানুষ স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে এনেছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই এ দেশে ভাত ও ভোটের লড়াই হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই অনুন্নত বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী লীগ ডাক দিলে এ দেশের আপামর জনতা রাজপথে প্রতিবাদে ফেটে পড়েছে। আওয়ামী লীগ হাসলে এ দেশ হেসেছে। আওয়ামী লীগের দুঃসময় মানে দেশে দুঃসময় দেখা দিয়েছে। ফলে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এ দেশের মানুষের জন্য বিশেষ তাৎপর্যময় একটি দিন।
বর্তমানে টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের এ অবস্থান হঠাৎ করে তৈরি হয়নি। এ দেশের অনেক রাজনৈতিক দলের মতো আওয়ামী লীগ ক্যান্টনমেন্টে জন্মগ্রহণ করেনি। জনআকাক্সক্ষার প্রতিফলন হিসেবে আওয়ামী লীগের জন্ম। গণমানুষের নেতাদের নেতৃত্বে জনগণের দল হিসেবেই আওয়ামী লীগ বিকাশ লাভ করেছে। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শামসুল হকের মতো নেতারা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ধীরে ধীরে আওয়ামী লীগ এ দেশের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের দলে পরিণত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগে তাঁর সহচররাই এ দেশের জনগণকে স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত করেছেন। পাকিস্তানি জান্তা আইয়ুব-বিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়ে এ দেশের মানুষের একক বৃহত্তম রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধু এ দেশের মানুষের রাজনৈতিক আকাক্সক্ষাকে পুরোপুরি বুঝতে ও ধারণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন বলেই প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ বিস্তৃতি লাভ করে। যার প্রতিফলন দেখা যায় ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একচেটিয়া বিপুল বিজয়ের মাধ্যমে।
১৯৭১ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমেদ, এম মনসুর আলী, এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে সঙ্গে নিয়ে দেশ গড়ার কাজে মনোনিবেশ করেছিলেন। কিন্তু জাতির দুর্ভাগ্য, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার মধ্য দিয়ে এ দেশের পিছিয়ে যাওয়া শুরু হয়। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ এবং আওয়ামী লীগের জন্য এক দুঃসময় শুরু হয়। জাতির ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা চলতে থাকে। আওয়ামী লীগের নেতারাও খানিকটা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েন। এমন পরিস্থিতিতে ১৯৮১ সালে বিদেশে নির্বাসিত বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ওই বছরই তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশে ফিরে এসে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। তরুণ বয়সে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে দলকে ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী করতে মনোনিবেশ করেন শেখ হাসিনা। পিতার অনুসরণে তিনিও এ দেশের গ্রাম থেকে গ্রামে ছুটে বেড়ান। বঙ্গবন্ধু যেমন পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে গ্রামগঞ্জে ঘুরে ঘুরে আওয়ামী লীগকে বিশাল একটি মহীরুহে পরিণত করেছিলেন তেমনি তার কন্যাও একই কাজ করে আওয়ামী লীগকে পুনর্জীবিত করেন। সফলতার সঙ্গে সামরিক স্বৈরাচার জিয়াউর রহমান ও এরশাদ-বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আবারও আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় যায় শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণেই।
নানা ষড়যন্ত্রের কারণে ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যেতে না পারলেও রাজপথে শক্তিশালী বিরোধী দলের ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়।
বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্র নির্ভর রাজনীতি, একগুঁয়েমি ও হঠকারী সিদ্ধান্তের কারণে এ দেশে আলোচিত ১/১১ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। সে সময়েও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা রাজপথে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আবারও বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। সেই থেকে টানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় আছে। এ সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে বিপুল অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে। বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের উন্নয়ন আজ রোল মডেল। কোভিড মহামারির মধ্যেও আমাদের প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত আছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই উন্নয়ন যাত্রা গোটা বিশ্বের কাছেই এক বিস্ময়। উনার সততা এবং কঠোর পরিশ্রম, দূরদর্শী চিন্তার ফলেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পেরেছে। একসময়ের বিদেশি ঋণনির্ভর বাংলাদেশ সম্প্রতি শ্রীলঙ্কাকে ২০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে। এটিও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের একটি ভিন্ন পরিচয় নির্মাণের যাত্রা শুরু বলা যায়।
আওয়ামী লীগের এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে আরেকটি বিষয় উল্লেখ করতে চাই। এ বছরই আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দেওয়ার ৪০ বছর পূর্ণ হয়েছে। ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনা নির্বাসিত জীবন থেকে দেশে ফিরে এসেছিলেন। উনি এসেছিলেন বলেই আওয়ামী লীগ পুনর্জীবন লাভ করেছিল এতে কোনও সন্দেহ নেই। ওনার হাত ধরেই আওয়ামী লীগ এ দেশের মানুষের আশার প্রতীক হয়ে উঠেছে। এ দেশের বিপুল মানুষের সমর্থন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই আওয়ামী লীগ একটি উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে কাজ করে যাচ্ছে, ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন সম্ভব হয়েছে। চার দশকে নানা উত্থান পতন, প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করে তিনিই বাংলাদেশকে নিয়ে গেছেন অনন্য এক উচ্চতায়।
এ দেশের প্রগতিশীল, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, গণতন্ত্রমনা মানুষের আশ্রয়স্থল আওয়ামী লীগ। বৃষ্টি হলে মানুষ যেমন ছাতার নিচে আশ্রয় নিয়ে তার নিরাপদ গন্তব্যে পৌঁছায় তেমনি এ দেশে যেকোনও জাতীয় দুর্যোগে বা দুঃসময়ে দলমত নির্বিশেষে মানুষ বিপদ উত্তরণে আওয়ামী লীগের ওপরই ভরসা রাখে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই এ দেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করেছে, সামরিক স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন সংগ্রাম করেছে, ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করেছে, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও রায় কার্যকর করেছে, জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচার করেছে, এখন দারিদ্র্যতার বিরুদ্ধে লড়াই করে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করেছে।
আওয়ামী লীগ যেহেতু এ দেশের মানুষের আশাভরসার স্থল সেহেতু আওয়ামী লীগের প্রতি মান-অভিমানও বেশি। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কোথাও একটু বিচ্যুতি চোখে পড়লেই তীব্র সমালোচনায় অনেকে ফেটে পড়েন। এটি আওয়ামী লীগের প্রতি মানুষের প্রত্যাশা যে অনেক বেশি তা-ই নির্দেশ করে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ছোটখাটো ভুলভ্রান্তি কাটিয়ে উঠে নিরবচ্ছিন্নভাবে মানুষের জন্য যে কাজ করে যাচ্ছে তা অব্যাহত রাখবে, সেই প্রত্যাশা রাখছি।
পরিশেষে একটি কথা বলে শেষ করবো। আপনারা অনেকে আওয়ামী লীগের সমালোচনা করতে পারেন। আপনাদের সেই স্বাধীনতার প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু এটাও আপনাদের স্বীকার করতে দ্বিধা রাখা উচিত নয় যে এ দেশের জনগণের কল্যাণে কাজ করে, উন্নয়ন অগ্রযাত্রা নিয়ে ভাবে, এমন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ছাড়া আর নেই। দেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নে আওয়ামী লীগের বিকল্প আর নেই। ৭২ বছরে আওয়ামী লীগের খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ অর্জন এটি।
লেখক : সংসদ সদস্য ও আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি