ঢাকা ০২:১০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫

জনআকাঙক্ষার প্রতিফলন নেই

  • আপডেট সময় : ০৮:৫৩:৪০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩ জুন ২০২৩
  • ৯৯ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে জনগণের আকাঙ্ক্ষার কোনো প্রতিফলন চোখে পড়েনি। একইসঙ্গে ন্যূনতম কর ২০০০ টাকা চাপিয়ে দেওয়াকে ‘বৈষম্যমূলক’ বলছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। এ বাজেটে কাঠামোগত, অনুমিতিগত দুর্বলতা রয়েছে। এসব কারণে বাজেট বাস্তবায়নে নতুন ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে বলেও মনে করে সংস্থাটি।
গতকাল শুক্রবার (২ জুন) দুপুরে রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে প্রস্তাবিত বাজেট পর্যালোচনা অনুষ্ঠানে এ অভিমত তুলে ধরা হয়। এ পর্যালোচনা সভায় মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।
মূলপ্রবন্ধে ফাহমিদা খাতুন বলেন, প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে আর্থিক খাত সংস্কার, পুঁজিবাজার ও আইএমএফের শর্তের ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা নেই। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হয়নি। এমন বাজেট ‘বাস্তবতাহীন’।
বাজেটে ই-টিআইএন ধারীদের কাছ থেকে বাধ্যতামূলক ২০০০ টাকা কর নেওয়ার সমালোচনা করে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘সরকারি সেবা নিতে গেলে যদি কারও করযোগ্য আয় নাও থাকে, তবু তাকে ২০০০ টাকা কর দিতে হবে। যার করযোগ্য আয়ই নেই, তার ওপরে বাধ্যতামূলক কর চাপিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত অবশ্যই বৈষম্যমূলক। এ নিয়ম তুলে দেওয়া হোক।’
সভায় সিপিডির ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘কাঠামোগত, অনুমিতিগত দুর্বলতার কারণে বাজেট বাস্তবায়নে আবারও আমরা নতুন ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবো। আর্থিক খাতের সংস্কারে দীর্ঘদিন ধরে একটা ব্যাংকিং কমিশনের কথা বলেছি। ২০০৯ সালে ঋণখেলাপি ছিল ২১ হাজার কোটি টাকা। আজ এক লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা হয়েছে। এটা কেন হচ্ছে, কারা করছেন? এটা নিয়ে কারও কী কোনো দুশ্চিন্তা নেই, কারও ঘুম হারাম হচ্ছে না।’
সংস্থার পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘পুঁজিবাজারে স্মার্ট সংস্কার প্রয়োজন। দুর্ভাগ্যবশত আইএমএফের সংস্কার কাঠামোতে পুঁজিবাজারের বিষয়ে কোনো কিছু উল্লেখ নেই। অনুদাননির্ভর, সাহায্যনির্ভর পুঁজিবাজার গড়তে এখানে স্মার্ট সংস্কার প্রয়োজন।’ তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতির অভিঘাত থেকে কিছুটা স্বস্তি দেওয়ার জন্য করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তার আওতাও বাড়ানো হয়েছে। তবে পরিমাণে খুব কম বাড়ানো হয়েছে, যা নি¤œআয়ের মানুষের জন্য যথেষ্ট নয়।’
প্রত্যক্ষ কর বাড়ানোর ব্যাপারে চরম অনীহা রয়েছে উল্লেখ করে ড. মোয়াজ্জেম বলেন, ‘ডাইরেক্ট ট্যাক্সের (প্রত্যক্ষ কর) সুবিধাভোগী বড় বড় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী। তাদের আমরা টাচ (স্পর্শ) করতে চাচ্ছি না। ইনডাইরেক্ট ট্যাক্স (পরোক্ষ) বাড়াতে চাচ্ছি। সরকারের হাতে খুব বেশি রাজস্বও নেই। আইএমফের শর্তানুযায়ী- যে সুবিধাগুলো কমিয়ে আনার অঙ্গীকার করেছে, সেগুলোতে হাত দেওয়া হয়নি। বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর কথা মাথায় রেখে এটা করা হয়েছে বলে মনে করি। তার মধ্যে রয়েছে- কর কাঠামোতে হাত না দেওয়া, ব্যক্তিশ্রেণির আয়করে হাত না দেওয়া, এক্সপোর্ট ইনসেনটিভে হাত না দেওয়া। এ বছর থেকে সেগুলোতে হাত দেওয়ার কথা ছিল। সম্ভবত সরকার নির্বাচনের পরে এ সংস্কারে হাত দেবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাজেটের মাত্র তিন জায়গায় আইএমএফের কথা বলা হয়েছে। সেখানে সংস্কার কিংবা শর্তের কথা বলা হয়নি। সংস্কারসম্পর্কিত বিভিন্ন সূচকে আইএমফের শর্তের প্রতিফলন কম বেশি দেখতে পাচ্ছি। যদিও তা পর্যাপ্ত নয়। এখনো সরকার আইএমএফ নির্দেশিত সংস্কারের দিকে হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগোচ্ছে। বাস্তবতা অনুধাবন করছে না। কিন্তু সেটির লক্ষ্যে যে সংস্কার নেওয়া দরকার, সেদিকে এখনো পুরোপুরি ঢোকেনি। সাবসিডি (ভর্তুকি) মোটামুটি একই জায়গায় রাখা হয়েছে। কৃষি ও জ্বালানি খাতে মূল্য সমন্বয়ের বিষয়গুলো নির্বাচন-পরবর্তীকালে আমরা দেখতে পাবো।’

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনআকাঙক্ষার প্রতিফলন নেই

আপডেট সময় : ০৮:৫৩:৪০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩ জুন ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে জনগণের আকাঙ্ক্ষার কোনো প্রতিফলন চোখে পড়েনি। একইসঙ্গে ন্যূনতম কর ২০০০ টাকা চাপিয়ে দেওয়াকে ‘বৈষম্যমূলক’ বলছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। এ বাজেটে কাঠামোগত, অনুমিতিগত দুর্বলতা রয়েছে। এসব কারণে বাজেট বাস্তবায়নে নতুন ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে বলেও মনে করে সংস্থাটি।
গতকাল শুক্রবার (২ জুন) দুপুরে রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে প্রস্তাবিত বাজেট পর্যালোচনা অনুষ্ঠানে এ অভিমত তুলে ধরা হয়। এ পর্যালোচনা সভায় মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।
মূলপ্রবন্ধে ফাহমিদা খাতুন বলেন, প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে আর্থিক খাত সংস্কার, পুঁজিবাজার ও আইএমএফের শর্তের ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা নেই। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হয়নি। এমন বাজেট ‘বাস্তবতাহীন’।
বাজেটে ই-টিআইএন ধারীদের কাছ থেকে বাধ্যতামূলক ২০০০ টাকা কর নেওয়ার সমালোচনা করে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘সরকারি সেবা নিতে গেলে যদি কারও করযোগ্য আয় নাও থাকে, তবু তাকে ২০০০ টাকা কর দিতে হবে। যার করযোগ্য আয়ই নেই, তার ওপরে বাধ্যতামূলক কর চাপিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত অবশ্যই বৈষম্যমূলক। এ নিয়ম তুলে দেওয়া হোক।’
সভায় সিপিডির ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘কাঠামোগত, অনুমিতিগত দুর্বলতার কারণে বাজেট বাস্তবায়নে আবারও আমরা নতুন ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবো। আর্থিক খাতের সংস্কারে দীর্ঘদিন ধরে একটা ব্যাংকিং কমিশনের কথা বলেছি। ২০০৯ সালে ঋণখেলাপি ছিল ২১ হাজার কোটি টাকা। আজ এক লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা হয়েছে। এটা কেন হচ্ছে, কারা করছেন? এটা নিয়ে কারও কী কোনো দুশ্চিন্তা নেই, কারও ঘুম হারাম হচ্ছে না।’
সংস্থার পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘পুঁজিবাজারে স্মার্ট সংস্কার প্রয়োজন। দুর্ভাগ্যবশত আইএমএফের সংস্কার কাঠামোতে পুঁজিবাজারের বিষয়ে কোনো কিছু উল্লেখ নেই। অনুদাননির্ভর, সাহায্যনির্ভর পুঁজিবাজার গড়তে এখানে স্মার্ট সংস্কার প্রয়োজন।’ তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতির অভিঘাত থেকে কিছুটা স্বস্তি দেওয়ার জন্য করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তার আওতাও বাড়ানো হয়েছে। তবে পরিমাণে খুব কম বাড়ানো হয়েছে, যা নি¤œআয়ের মানুষের জন্য যথেষ্ট নয়।’
প্রত্যক্ষ কর বাড়ানোর ব্যাপারে চরম অনীহা রয়েছে উল্লেখ করে ড. মোয়াজ্জেম বলেন, ‘ডাইরেক্ট ট্যাক্সের (প্রত্যক্ষ কর) সুবিধাভোগী বড় বড় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী। তাদের আমরা টাচ (স্পর্শ) করতে চাচ্ছি না। ইনডাইরেক্ট ট্যাক্স (পরোক্ষ) বাড়াতে চাচ্ছি। সরকারের হাতে খুব বেশি রাজস্বও নেই। আইএমফের শর্তানুযায়ী- যে সুবিধাগুলো কমিয়ে আনার অঙ্গীকার করেছে, সেগুলোতে হাত দেওয়া হয়নি। বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর কথা মাথায় রেখে এটা করা হয়েছে বলে মনে করি। তার মধ্যে রয়েছে- কর কাঠামোতে হাত না দেওয়া, ব্যক্তিশ্রেণির আয়করে হাত না দেওয়া, এক্সপোর্ট ইনসেনটিভে হাত না দেওয়া। এ বছর থেকে সেগুলোতে হাত দেওয়ার কথা ছিল। সম্ভবত সরকার নির্বাচনের পরে এ সংস্কারে হাত দেবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাজেটের মাত্র তিন জায়গায় আইএমএফের কথা বলা হয়েছে। সেখানে সংস্কার কিংবা শর্তের কথা বলা হয়নি। সংস্কারসম্পর্কিত বিভিন্ন সূচকে আইএমফের শর্তের প্রতিফলন কম বেশি দেখতে পাচ্ছি। যদিও তা পর্যাপ্ত নয়। এখনো সরকার আইএমএফ নির্দেশিত সংস্কারের দিকে হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগোচ্ছে। বাস্তবতা অনুধাবন করছে না। কিন্তু সেটির লক্ষ্যে যে সংস্কার নেওয়া দরকার, সেদিকে এখনো পুরোপুরি ঢোকেনি। সাবসিডি (ভর্তুকি) মোটামুটি একই জায়গায় রাখা হয়েছে। কৃষি ও জ্বালানি খাতে মূল্য সমন্বয়ের বিষয়গুলো নির্বাচন-পরবর্তীকালে আমরা দেখতে পাবো।’