ক্যাম্পাস ও ক্যারিয়ার ডেস্ক : হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) প্রতিটি বিভাগে তীব্র আকার ধারণ করেছে সেশনজট। শিক্ষার্থীরা কমপক্ষে এক থেকে দেড় বছরের সেশনজট নিয়ে পড়ালেখা করছে। এদিকে করোনাকালীন ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ছয় মাসের সেমিস্টার চার মাসে শেষ করার কথা বলেছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে তা বাস্তবায়ন হয়নি। এদিকে সেশনজটের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ এবং ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের আইডি কার্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ায় সরকারি-বেসরকারি নানান খাতে নিজেকে অছাত্র হিসেবে দেখাতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদেরকে। জানা যায়, ২০১৮ সালে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীরা এখনো চতুর্থ বর্ষের প্রথম সেমিস্টারে পড়ালেখা করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাকি ব্যাচগুলোর অবস্থাও প্রায় একইরকম। হাবিপ্রবির ১৯ ব্যাচের কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থী কান্তা ইসলাম বলেন, ‘কৃষি অনুষদে অনেক বেশি সেশনজট। হাবিপ্রবির ১৯ ব্যাচের অন্যান্য অনুষদের তুলনায় কৃষি অনুষদ প্রায় আরো ৬ মাস পিছিয়ে রয়েছে। ৪ মাসে সেমিস্টার নেওয়ার কথা থাকলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। ৪ মাসে সেমিস্টার দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য প্রশাসনের প্রতি আবেদন জানান তিনি।’ এ বিষয়ে ক্ষোভ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী রাজিন ইসলাম বলেন, ‘আইডি কার্ডের মেয়াদ শেষ হবার কারণে পাসপোর্ট করতে গিয়ে নিজেকে ছাত্র হিসেবে পরিচয় দিতে পারিনি। নিজেকে বেকার হিসেবে উপস্থাপন করতে হয়েছে। যেখানে আমার পড়াশোনার শেষ করতে আরো প্রায় দেড় বছর সময় লাগবে। গত ২ মাস আগে আমি আইডি কার্ড রিনিউ করতে দেই, সেই ক্ষেত্রে আমাকে আগের মেয়াদের কার্ডই প্রদান করা হয়। ব্যাংক একাউন্ট, জায়গা-জমির হিসেবেও নিজেকে বেকার দেখাতে হচ্ছে।
নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, ভারত, নেপাল, ভুটানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আগত শিক্ষার্থীরা অনেকটাই অসন্তোষ প্রকাশ করছে। তারা দীর্ঘসূত্রিতার কারণে পাসপোর্ট, ভিসা এবং ব্যক্তিগত জীবনে নানা সমস্যায় পড়ছেন। অধিক সময় ধরে একই সেমিস্টারে থাকার কারণে তাদের দৈনন্দিন ব্যয়ও বেড়েছে। এ বিষয়ে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক রাফিয়া আখতার বলেন, সেশনজটের প্রধান কারণ হলো বিভাগগুলোতে শিক্ষার্থী অনুপাতে পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকা। যদিও আমাদের অনুষদে এবছর আটজন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এরপরও আমাদের আরো শিক্ষক প্রয়োজন। শিক্ষক স্বল্পতা ছাড়াও পরীক্ষার রেজাল্ট প্রক্রিয়াকরণে দেরি হয়ে যাওয়ার কারণে অনেক সময় সেশনজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন কোর্সে এক্সটারনাল শিক্ষকরা পরীক্ষা নিচ্ছেন। অনেক সময় তারাও ফলাফল দিতে দেরি করেন। এজন্যও কিছুটা সেশনজটে পরে শিক্ষার্থীরা। ঘোষণা অনুযায়ী ছয় মাসের সেমিস্টার কেন চার মাসে শেষ করা যাচ্ছে না এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আদতে ছয় মাসের সেমিস্টার চার মাসে শেষ করা সম্ভবপর হচ্ছে না। কেননা, আমাদের নির্ধারিত কোর্স ক্রেডিট পরিপূর্ণভাবে শেষ না করে সেমিস্টার শেষ করে দিলে শিক্ষার্থীরা অনেক কিছুই শিখতে পারবে না। এ বিষয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শাখার পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. নাজিম উদ্দিন জানান, ফলাফল প্রক্রিয়া করণে কোন দেরি হয় না। বরং শিক্ষকরাই খাতা দেখতে দেরি করেন। এক্সাম কন্ট্রোলারে খাতা জমা হবার পর অনেক শিক্ষক দুই-তিন মাসেও খাতা নিয়ে যান না। আবার খাতা নেবার পর অনেকেই অনেক দেরিতে জমা দেন। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম কামরুজ্জামান বলেন, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সেশনজট কাটানোর জন্য বর্তমান প্রশাসন সর্বাত্মক কাজ করে যাচ্ছে।
জটে আটকে গেছে আইডি কার্ড, বিপাকে শিক্ষার্থীরা
ট্যাগস :
জটে আটকে গেছে আইডি কার্ড
জনপ্রিয় সংবাদ