প্রত্যাশা ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদক, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। এই ব্যাপারে সবাই সতর্ক থাকবেন। নিজেদের সন্তান যেন মাদক, জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত না হয়।
ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কথা তুলে শেখ হাসিনা বলেন, মহামারির কারণে অনেক সমস্যা দেখা দিয়েছে। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে সারাবিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে। শত সমস্যার মধ্যেও আমরা দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রেখে যাচ্ছি।
গতকাল শনিবার গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার ভাঙ্গার হাটের টিটি (তালিমপুর তেলিহাটি) উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কোটালীপাড়াবাসিকে আগে শুধু পানি, খাল-বিল, বাঁশের সাঁকো পার হতে হতো। আজকে শুধু এখানে রাস্তাঘাট, পুল, ব্রিজ করে এই অঞ্চলের মানুষের আর্থিক সুবিধা করে দিয়েছি। ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জ, টুঙ্গিপাড়া আসতে ২২ ঘণ্টা সময় লাগতো লঞ্চ বা স্টিমারে। মাত্র আড়াই ঘণ্টার মধ্যে আমরা এখানে পৌঁছে গেছি।
পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম। কারণ, দুর্নীতি করে নিজের ভাগ্য বদলাতে আসিনি, জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন করতে এসেছি। কেউ যখন মিথ্যা অপবাদ দেয়, সেই অপবাদ নিতে আমি রাজি না। বিশ্বব্যাংক এই অপবাদ দিতে চেষ্টা করেছিল। তারা সফল হয়নি, তারা সেটা পারেনি। আমরা নিজেদের টাকায় পদ্মাসেতু নির্মাণ করেছি বলে আজ এতো দ্রুত কোটালীপাড়ায় আসতে পারছি। বাংলাদেশের মানুষ আত্মমর্যাদা নিয়ে চলে, আমাদের কেউ অপবাদ দিলে আমরা তা মানব না।
আ. লীগ ও বিএনপি এক হয় কীভাবে, প্রশ্ন শেখ হাসিনার: আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির তুলনা চলে না উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, অনেকে অনেক কথা বলেন। কেউ কেউ আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির তুলনা করেন। কেউ কেউ বলেন বড় দুই দল। যারা দুই বড় দল বলবেন, তারা ভুল করেন। আওয়ামী লীগ মানুষের সংগঠন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নতি হয়। আর বিএনপির সময়ে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসের সৃষ্টি হয়। দেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়। তারা মানুষকে কিছু দেয়নি। মানুষের অর্থ লুটপাট করে বিদেশে নিয়ে গেছে। এসময় জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও সরকারপ্রধান ঘোষণা দেন। যারা বিএনপিকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে তুলনা করতে চান তাদের উদ্দেশ করে শেখ হাসিনা আরও বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে ৩০০ সিটের মধ্যে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট পেয়েছিল মাত্র ৩০টি সিট। আর বাকি সিট আওয়ামী লীগ জোট। তাহলে দুই দল এক পর্যায়ের হয় কীভাবে? তিনি বলেন, বিএনপির সময়ে দেশ ছিল জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, দুর্নীতিকে চ্যাম্পিয়ন। তারা মানুষকে কিছু দেয়নি। মানুষের অর্থ লুটপাট করে বিদেশে নিয়ে গেছে। বিএনপি এমন একটি রাজনৈতিক দল যারা নিজেদের গঠনতন্ত্র মানে না। খালেদা জিয়া ও তার ছেলে দুজনই সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তারা সেই দলের নেতা। যারা দলের নিয়ম আইন ও গঠনতন্ত্র মানে না সেই দলের সঙ্গে আওয়ামী লীগের তুলনা চলে না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ মানুষের সংগঠন। এদেশের মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এ দল গড়ে উঠেছে। তাই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নতি হয়। এদেশের মাটি মানুষের সংগঠন আওয়ামী লীগ জনগণের জন্য কাজ করে। কোটালীপাড়া ও টুঙ্গিপাড়াবাসীকে উদ্দেশ করে সরকারপ্রধান বলেন, কোটালীপাড়া ও টুঙ্গিপাড়াবাসী সবসময় আমার পাশে থাকেন বলে আমি নিশ্চিন্ত মনে কাজ করতে পারি। সুসময়-দুঃসময়ে সব সময় আমি কাছে পাই। এটাই আমার সব থেকে বড় শক্তি। তিনি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে এখনও আমরা অর্থনীতির গতি অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছি। আমরা বাংলাদেশের মানুষের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।
শেখ হাসিনা তার নির্বাচনি এলাকাসহ সারা দেশের উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরে বলেন, এসব বিশেষ উপহার (উন্নয়ন প্রকল্প) আজ আপনাদের দিয়ে যাচ্ছি। এতগুলো ব্রিজ এর আগেও করেছি। কোটালীপাড়াবাসীর আগে শুধু পানি-খাল-বিল বাঁশের সাঁকো পার হতে হতো। আজ রাস্তঘাট, পুল, ব্রিজ, স্কুল কলেজ করে এই অঞ্চলের মানুষের সুবিধা করে দিয়েছি। একদিনে শত সড়ক উদ্বোধন করেছি। একদিনে শত সেতু উদ্বোধন করেছি।
পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির অপবাদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা দুর্নীতির অপবাদ চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম। কারণ দুর্নীতি করে নিজের ভাগ্য গড়তে আসিনি। জনগণের ভাগ্য গড়তে এসেছি। তাই কোনও মিথ্যা অপবাদ নিতে আমি রাজি নই। বিশ্বব্যাংক অপবাদ দিতে চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তারা সফল হয়নি। বাংলাদেশের মানুষ আত্মমর্যাদা নিয়েই চলে। আমাদের কেউ অপবাদ দিলে আমরা তা মানবো না। আমরা নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি বলেই দ্রুত সময়ের মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে পেরেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। এ ব্যাপারে সবাই সতর্ক থাকবেন। আপনাদের সন্তানেরা যেন মাদক, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত না হয়। তিনি বলেন, আমরা শতভাগ বিদ্যুৎ দিতে পেরেছি। এখন বিশ্ববাজারে তেল-গ্যাসসহ সব কিছুর মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। বিদ্যুৎ ব্যবহারে সবাই সতর্ক হবেন। যত কম ব্যবহার করা যায়। লন্ডনে দেড়শ ভাগ বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। আমরা কিন্তু যে টাকা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করি তার অর্ধেক মূল্যে মানুষকে দিচ্ছি। আর সেচ কাজের জন্য আমরা ২০ শতাংশ ভর্তুকি দিচ্ছি। সোলার প্যানেলের মাধ্যমে সেচের ব্যবস্থা করছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। সারা বিশ্বে ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে।দেশকে আমরা উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবো।
গোপালগঞ্জে ৪৩ উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন: প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তার নিজ জেলা গোপালগঞ্জের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ৩২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪৩টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও অন্য পাঁচটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন।
গতকাল শনিবার কোটালিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত সাদুল্যাপুর ইউনিয়নের তালিমপুর তেলিহাটি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত জনসভায় তিনি বাটন চেপে এসব প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। উন্নয়ন প্রকল্পগুলো উদ্বোধনের সময় আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা তার সঙ্গে ছিলেন। ৪৩টি উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে পাইপলাইনে পানি সরবরাহের দুটি গ্রামীণ প্রকল্প। এর একটি টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ডুমুরিয়া ইউনিয়নে এবং অন্যটি কোটালিপাড়া উপজেলার রামশীল ইউনিয়নে।
গোপালপুর ইউপি অফিস-কাজুলিয়া ইউপি ভায়া বোরাইহাটি পোলশাইর বাজার সড়কে ২৪ মিটার আরসিসি গার্ডার ব্রিজ ও কুশলি জিসি-ধারাবাশাইল জিসি ভায়া মিত্রাডাঙ্গা সড়কে ৯৯ মিটার গার্ডার ব্রিজ, টুঙ্গিপাড়া উপজেলার সোনাখালী সড়ক, কোটালিপাড়ায় চারতলা বিশিষ্ট শুয়াগ্রাম বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়, কোটালিপাড়ায় শেখ হাসিনা আদর্শ ডিগ্রি কলেজের তিনতলা বিশিষ্ট গার্লস হোস্টেল (১০০ শয্যা), কোটালিপাড়া এসএন ইনস্টিটিউটের চারতলা বিশিষ্ট শিক্ষা ভবন, কোটালিপাড়া পৌর কিচেন মার্কেট ও কোটালিপাড়া উপজেলা পরিষদ ভবন নির্মাণ, কোটালিপাড়া উপজেলার ভাঙ্গারহাট তালিমপুর তেলিহাটি উচ্চবিদ্যালয়ে শেখ রাসেল লাইব্রেরি, কোটালিপাড়ায় কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের পৈতৃক বাড়িতে ‘মুক্তমঞ্চ’, কোটালিপাড়ার উত্তর কোটালিপাড়া রামমোহন উচ্চ বিদ্যালয়ে বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বড় বাজারে একতলা বাণিজ্যিক ভবনকে ১০ তলায় উন্নীতকরণ ভবনের উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রী গণপূর্ত বিভাগের আওতায় গোপালগঞ্জ জেলা তথ্য কমপ্লেক্স ভবন ও কোটালিপাড়া মডেল মসজিদ এবং ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের আওতায় রাধাগঞ্জ ইউনিয়ন ভাঙ্গারহাট বাজার উন্নয়ন ও কোটালিপাড়া উপজেলায় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ওপর ম্যুরাল নির্মাণ এবং কোটালিপাড়া উপজেলা পরিষদের আওতায় ১১টি ইউনিয়নে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এর আগে দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে শেখ হাসিনা কোটালিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশস্থলে পৌঁছালে সেখানে স্লোগানের মাধ্যমে তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়। এসময় তিনিও হাত নেড়ে সাড়া দেন। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর কোটালিপাড়া আগমন উপলক্ষে পুরো জেলায় উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে। গোপালগঞ্জ-৩ (টুঙ্গিপড়া-কোটালিপাড়া) আসনের এমপি শেখ হাসিনা ২০১৮ সালের ১২ ডিসেম্বর এক নির্বাচনী জনসভায় ভাষণ দেওয়ার চার বছর পর এক বিশাল সমাবেশে ভাষণ দেন। আগের নির্বাচনী সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল কোটালিপাড়া উপজেলার শেখ লুৎফর রহমান আদর্শ সরকারি কলেজ মাঠে। সমাবেশে অংশ নেওয়ার পরপরই তিনি টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধে গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন এবং প্রার্থনা করেন। প্রধানমন্ত্রীর বিকেলে সেখান থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা দেওয়ার কথা রয়েছে। তিনি দিনব্যাপী তার নিজ জেলা সফরের জন্য আজ সকালে পদ্মা সেতু হয়ে সড়কপথে গোপালগঞ্জে পৌঁছান।
জঙ্গিবাদ সন্ত্রাস দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান চলবে : প্রধানমন্ত্রী
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ