ঢাকা ১০:৩৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫

জঙ্গলে পরিত্যাক্ত সরকারি কোয়ার্টার

  • আপডেট সময় : ০১:৫৮:২৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ নভেম্বর ২০২১
  • ৮৩ বার পড়া হয়েছে

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংবাদদাতা : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের পৈরতলার সরকারি কলোনি এখন জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। তবে হাতেগোনা কয়েকটি পরিবারের বসবাস রয়েছে একসময়ের জমজমাট এ কলোনিতে। যারা এখনো রয়ে গেছেন তারা চলে যাওয়ার সুযোগ খুঁজছেন। জানা গেছে, কলোনির পরিত্যক্ত ভবনগুলোতে প্রায়ই মাদকের আসর বসে। এরই মধ্যে মাদকসেবী ও চোরের অত্যাচারে কলোনি ছেড়ে গেছে অনেক পরিবার।
সরেজমিন দক্ষিণ পৈরতলার কলোনিতে গিয়ে দেখা যায়, গণপূর্ত কার্যালয়ের অধীন এই কলোনির নিরাপত্তা দেওয়ালের ভেতরে ভুতুড়ে পরিবেশ। ঝোপঝাড়ে ছেয়ে গেছে পুরো কলোনি। এসব ঝোপঝাড়ের ভেতরেই রয়েছে একতলা ও দোতলা মিলিয়ে আটটি ভবন। একটি ছাড়া বাকি সাতটি ভবনই পরিত্যক্ত। ভবনগুলোর কোনোটিতে দরজা-জানালা নেই। পরিত্যক্ত ভাঙাচোরা এসব ভবনের প্রতিটি কক্ষেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মাদক সেবনের আলামত।
কলোনির ভেতরে কথা হয় পারভেজ নামের এক তরুণের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার বাবা সরকারি চাকরিজীবী হওয়ার সুবাদে পাঁচ বছর আগেও এই কলোনিতে আমরা বসবাস করেছি। এখন পাশের একটি ভবনে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করছি।’ সবাই কলোনি ছেড়ে চলে যাওয়ার কারণ প্রসঙ্গে পারভেজ বলেন, ‘সরকার বেতন থেকে বাসা ভাড়া কেটে রাখে। এই টাকা দিয়ে বাইরে ভালো বাসায় থাকা যায়।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া গণপূর্ত কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির সরকারি কর্মচারীরা দক্ষিণ পৈরতলার এই কলোনিতে বসবাস করতেন। এখন মাত্র পাঁচটি পরিবার কলোনির একটি ভবনে বসবাস করেন। এছাড়া জেলা শহরের দাতিয়ারার অবকাশ এলাকায় সমনা, বিশাখা ও চিত্রা নামের তিনটি ভবনে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তারা পরিবার নিয়ে বসবাস করেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া গণপূর্ত কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ের অধীন কোয়ার্টারের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা উপসহকারী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, শহরের বেশিরভাগ সরকারি কোয়ার্টার আমাদের অধীনে, আমরাই এর রক্ষণাবেক্ষণ করি। তবে পৌরতলা কলোনিটি পরিত্যক্ত হয়ে গেছে। কারণ এই কলোনিতে যারা বসবাস করতেন তাদের অভিযোগ ছিল, সেখানে চোরের উপদ্রব বেশি। চোরেরা বিভিন্ন সময় স্যানিটারি পাইপ, জানালার গ্রিল খুলে নিয়ে যেত। এছাড়া ভবনগুলোর ছাদে তখন মাদকসেবীদের আড্ডা বসতো। এসব বিষয় জানার পর একাধিকবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি। তাই এই কলোনিতে কেউই বসবাস করতে চায় না। ফলে এটি জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। সরকার যদি কোনো আবাসন প্রকল্পের উদ্যোগ নেয় তাহলে আমরা পৌরতলা কলোনির জায়গাটি প্রস্তাব করবো। ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার কাজিপাড়ায় একটি কোয়ার্টারে ছয়টি ও মধ্যপাড়ায় একটি কোয়ার্টারে সাতটি পরিচ্ছন্নতাকর্মীর পরিবার বসবাস করে। এরমধ্যে কাজিপাড়ার কোয়ার্টারটি জরাজীর্ণ হওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে পৌরকর্মীরা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার সচিব মো. শামসুদ্দিন বলেন, আমাদের দুই শতাধিক স্টাফের জন্য কোয়ার্টারে বাসা প্রয়োজন। এতো বিপুলসংখ্যক পরিবারের জন্য আবাসিক কোয়ার্টার নির্মাণ শুধু পৌরসভার রাজস্ব দিয়ে করা সম্ভব না। আমরা চেষ্টা করছি যেন একটি প্রজেক্টের মাধ্যমে পৌরকর্মীদের আবাসস্থল তৈরি করতে পারি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীনে জেলা শহরের তিন জায়গায় ২৬টি পরিবারের জন্য সরকারি কোয়ার্টার রয়েছে। জেলা শহরের কাউতুলীতে কুরুলিয়া খাল সংলগ্ন, দাতিয়ারা ও দক্ষিণ মৌড়াইলে এসব কোয়ার্টার। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পঙ্কজ ভৌমিক বলেন, তিনটি কোয়ার্টারে ২৬টির মধ্যে এখন ১৯টি পরিবার বসবাস করছে। কোয়ার্টারগুলোর সংস্কার প্রয়োজনমাফিক করা হয়। এগুলো আরও ব্যাপকভাবে সংস্কার করতে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের স্টাফদের জন্য কোয়ার্টারটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের পাশে। সেখানে আটটি দোতলা ও তিনতলা ভবনে হাসপাতালের ২৭ জন স্টাফের পরিবার বসবাস করছে। রজনীগন্ধায় চারটি, শাপলায় দুটি, গোলাপে তিনটি, জবায় ছয়টি, বেলীতে তিনটি, জুঁইয়ে তিনটি, হাসনাহেনায় তিনটি ও চামেলীতে তিনটি পরিবার বসবাস করছে। এরমধ্যে ছয়টি ভবন মাঝে মধ্যে মেরামত করা হলেও হাসনাহেনা ও বেলী ভবনটি দীর্ঘদিন ধরে মেরামত করা হয়নি। এই দুই ভবনের কলাপসিবল গেট, দরজা-জানালা ও ছাদের অনেকাংশে নষ্ট হয়ে গেছে। জবা ভবনে থাকা হাসপাতালের অফিস সহায়ক জহিরুল হক বলেন, ‘আমি নিচতলায় থাকি। ওপরের তলার বাথরুমের পানি ছাদ চুয়ে চুয়ে আমার বাথরুমে পড়ে। এনিয়ে অভিযোগ করেও কোনো কাজ হয়নি।’ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, কোয়ার্টারের রক্ষণাবেক্ষণ করে গণপূর্ত বিভাগ। বেশ কয়েকটি কোয়ার্টারের মেরামত করতে এরই মধ্যে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করছি দ্রুত এসব সমস্যার সমাধান হবে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জঙ্গলে পরিত্যাক্ত সরকারি কোয়ার্টার

আপডেট সময় : ০১:৫৮:২৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ নভেম্বর ২০২১

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংবাদদাতা : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের পৈরতলার সরকারি কলোনি এখন জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। তবে হাতেগোনা কয়েকটি পরিবারের বসবাস রয়েছে একসময়ের জমজমাট এ কলোনিতে। যারা এখনো রয়ে গেছেন তারা চলে যাওয়ার সুযোগ খুঁজছেন। জানা গেছে, কলোনির পরিত্যক্ত ভবনগুলোতে প্রায়ই মাদকের আসর বসে। এরই মধ্যে মাদকসেবী ও চোরের অত্যাচারে কলোনি ছেড়ে গেছে অনেক পরিবার।
সরেজমিন দক্ষিণ পৈরতলার কলোনিতে গিয়ে দেখা যায়, গণপূর্ত কার্যালয়ের অধীন এই কলোনির নিরাপত্তা দেওয়ালের ভেতরে ভুতুড়ে পরিবেশ। ঝোপঝাড়ে ছেয়ে গেছে পুরো কলোনি। এসব ঝোপঝাড়ের ভেতরেই রয়েছে একতলা ও দোতলা মিলিয়ে আটটি ভবন। একটি ছাড়া বাকি সাতটি ভবনই পরিত্যক্ত। ভবনগুলোর কোনোটিতে দরজা-জানালা নেই। পরিত্যক্ত ভাঙাচোরা এসব ভবনের প্রতিটি কক্ষেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মাদক সেবনের আলামত।
কলোনির ভেতরে কথা হয় পারভেজ নামের এক তরুণের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার বাবা সরকারি চাকরিজীবী হওয়ার সুবাদে পাঁচ বছর আগেও এই কলোনিতে আমরা বসবাস করেছি। এখন পাশের একটি ভবনে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করছি।’ সবাই কলোনি ছেড়ে চলে যাওয়ার কারণ প্রসঙ্গে পারভেজ বলেন, ‘সরকার বেতন থেকে বাসা ভাড়া কেটে রাখে। এই টাকা দিয়ে বাইরে ভালো বাসায় থাকা যায়।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া গণপূর্ত কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির সরকারি কর্মচারীরা দক্ষিণ পৈরতলার এই কলোনিতে বসবাস করতেন। এখন মাত্র পাঁচটি পরিবার কলোনির একটি ভবনে বসবাস করেন। এছাড়া জেলা শহরের দাতিয়ারার অবকাশ এলাকায় সমনা, বিশাখা ও চিত্রা নামের তিনটি ভবনে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তারা পরিবার নিয়ে বসবাস করেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া গণপূর্ত কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ের অধীন কোয়ার্টারের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা উপসহকারী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, শহরের বেশিরভাগ সরকারি কোয়ার্টার আমাদের অধীনে, আমরাই এর রক্ষণাবেক্ষণ করি। তবে পৌরতলা কলোনিটি পরিত্যক্ত হয়ে গেছে। কারণ এই কলোনিতে যারা বসবাস করতেন তাদের অভিযোগ ছিল, সেখানে চোরের উপদ্রব বেশি। চোরেরা বিভিন্ন সময় স্যানিটারি পাইপ, জানালার গ্রিল খুলে নিয়ে যেত। এছাড়া ভবনগুলোর ছাদে তখন মাদকসেবীদের আড্ডা বসতো। এসব বিষয় জানার পর একাধিকবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি। তাই এই কলোনিতে কেউই বসবাস করতে চায় না। ফলে এটি জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। সরকার যদি কোনো আবাসন প্রকল্পের উদ্যোগ নেয় তাহলে আমরা পৌরতলা কলোনির জায়গাটি প্রস্তাব করবো। ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার কাজিপাড়ায় একটি কোয়ার্টারে ছয়টি ও মধ্যপাড়ায় একটি কোয়ার্টারে সাতটি পরিচ্ছন্নতাকর্মীর পরিবার বসবাস করে। এরমধ্যে কাজিপাড়ার কোয়ার্টারটি জরাজীর্ণ হওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে পৌরকর্মীরা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার সচিব মো. শামসুদ্দিন বলেন, আমাদের দুই শতাধিক স্টাফের জন্য কোয়ার্টারে বাসা প্রয়োজন। এতো বিপুলসংখ্যক পরিবারের জন্য আবাসিক কোয়ার্টার নির্মাণ শুধু পৌরসভার রাজস্ব দিয়ে করা সম্ভব না। আমরা চেষ্টা করছি যেন একটি প্রজেক্টের মাধ্যমে পৌরকর্মীদের আবাসস্থল তৈরি করতে পারি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীনে জেলা শহরের তিন জায়গায় ২৬টি পরিবারের জন্য সরকারি কোয়ার্টার রয়েছে। জেলা শহরের কাউতুলীতে কুরুলিয়া খাল সংলগ্ন, দাতিয়ারা ও দক্ষিণ মৌড়াইলে এসব কোয়ার্টার। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পঙ্কজ ভৌমিক বলেন, তিনটি কোয়ার্টারে ২৬টির মধ্যে এখন ১৯টি পরিবার বসবাস করছে। কোয়ার্টারগুলোর সংস্কার প্রয়োজনমাফিক করা হয়। এগুলো আরও ব্যাপকভাবে সংস্কার করতে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের স্টাফদের জন্য কোয়ার্টারটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের পাশে। সেখানে আটটি দোতলা ও তিনতলা ভবনে হাসপাতালের ২৭ জন স্টাফের পরিবার বসবাস করছে। রজনীগন্ধায় চারটি, শাপলায় দুটি, গোলাপে তিনটি, জবায় ছয়টি, বেলীতে তিনটি, জুঁইয়ে তিনটি, হাসনাহেনায় তিনটি ও চামেলীতে তিনটি পরিবার বসবাস করছে। এরমধ্যে ছয়টি ভবন মাঝে মধ্যে মেরামত করা হলেও হাসনাহেনা ও বেলী ভবনটি দীর্ঘদিন ধরে মেরামত করা হয়নি। এই দুই ভবনের কলাপসিবল গেট, দরজা-জানালা ও ছাদের অনেকাংশে নষ্ট হয়ে গেছে। জবা ভবনে থাকা হাসপাতালের অফিস সহায়ক জহিরুল হক বলেন, ‘আমি নিচতলায় থাকি। ওপরের তলার বাথরুমের পানি ছাদ চুয়ে চুয়ে আমার বাথরুমে পড়ে। এনিয়ে অভিযোগ করেও কোনো কাজ হয়নি।’ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, কোয়ার্টারের রক্ষণাবেক্ষণ করে গণপূর্ত বিভাগ। বেশ কয়েকটি কোয়ার্টারের মেরামত করতে এরই মধ্যে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করছি দ্রুত এসব সমস্যার সমাধান হবে।