ঢাকা ০৫:১৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

ছাত্রজীবনে পার্ট টাইম চাকরিতে অর্জিত হয় দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা

  • আপডেট সময় : ০৫:২০:০৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • ২৯ বার পড়া হয়েছে

খোঁজ নিলে দেখবেন, তারা ছাত্রজীবনে ফাঁকি দেওয়ার সম্পূর্ণ সুখ ভোগ না করে কোনো না কোনো পার্ট টাইম কাজে জড়িত ছিলেন। আর ওই কাজের নানামুখী অভিজ্ঞতাই তাদের জন্য গড়ে দিয়েছে শক্ত এক ভিত্তি। কারণ ক্যারিয়ার গঠনে তাত্ত্বিক পড়াশোনার পাশাপাশি বাস্তব অভিজ্ঞতাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই অভিজ্ঞতা অর্জনের অন্যতম কার্যকর উপায় হলো পার্ট টাইম চাকরি বা কাজ। উন্নত বিশ্বের দিকে তাকালে দেখা যায়, অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী পড়াশোনার পাশাপাশি পার্ট টাইম কাজে যুক্ত; যা তাদের দক্ষতা ও আত্মনির্ভরশীলতা বাড়ায়। কিন্তু আমাদের দেশে এই ধারণা এখনো পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হয়ে ওঠেনি। তবে অনেকেই নিজের চেষ্টায় তেমন কাজের সুযোগ করে নিচ্ছেন।
পার্ট টাইম কাজ কী: পার্ট টাইম কাজ বলতে বোঝায় এমন কর্মযজ্ঞ যা দিনে নির্দিষ্ট কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। এর মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী তার পড়াশোনার খরচ চালিয়ে নেওয়া বা পরিবারকে সহায়তা করতে অর্থ উপার্জনের সুযোগ পায়। তবে এর গুরুত্ব কেবল অর্থ উপার্জনেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি ব্যক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধিতে, আত্মবিশ্বাস বাড়াতে এবং ভবিষ্যৎ পেশাগত জীবনের জন্য প্রস্তুতি নিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে । যেমন, একজন শিক্ষার্থী কল সেন্টারে কাজ করে যোগাযোগ দক্ষতা বাড়াতে পারেন, কোনো প্রতিষ্ঠানে গ্রাফিক ডিজাইন বা কনটেন্ট ক্রিয়েশনের মতো কাজে যুক্ত হয়ে নিজেকে দক্ষ করে তুলতে পারেন; যা ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারের জন্য বড় সম্ভাবনা তৈরি করে। আবার অনেকেই আছেন যারা ফুড ডেলিভারি বা পার্সেল ডেলিভারির কাজ করে কিছুটা উপার্জন করছেন। সেটিও তাদের ধৈর্যশক্তি বাড়াচ্ছে। অন্যদিকে নিজের পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশনি বা অন্যদের পড়ানোও একটি ভালো পার্ট টাইম কাজ, এতেও পড়াশোনার ঝালাই হয়। তবে এটি সেই অর্থে চাকরি নয় ।
পার্ট টাইম চাকরির সুবিধা ও গুরুত্ব: ছাত্রজীবনে পার্ট টাইম চাকরি বা কাজের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, নিজের উপার্জনের টাকায় নিজের প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি কিছু সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে ওঠে। এতে আত্মবিশ্বাস বাড়ে এবং ভবিষ্যতে যেকোনো পরিস্থিতি সামলানো সহজ হয়। পাশাপাশি যাদের পরিবারে আর্থিক সংকট রয়েছে, পড়াশোনার টিউশন ফি জোগাতে সমস্যা হচ্ছে, তারা যেকোনো পার্ট টাইম কাজের মাধ্যমে সেই অবস্থা কাটিয়ে উঠতে পারে। পার্ট টাইম কাজের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী যোগাযোগ দক্ষতা, দলগতভাবে কাজ করার ক্ষমতা, সময় ব্যবস্থাপনা, সমস্যা সমাধানের কৌশল এবং সৃজনশীল উপস্থাপন দক্ষতা অর্জন করতে পারে। এসব দক্ষতা পড়াশোনার পাশাপাশি ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারে সম্পদ হিসেবে কাজ করে। এছাড়া একজন শিক্ষার্থী অনেক নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পায় । এই নেটওয়ার্কিং শুধু তার যোগাযোগ দক্ষতা বাড়ায় না, বরং ভবিষ্যতে চাকরি বা ব্যবসায়িক সুযোগ পেতে সাহায্য করে । এ কথা সকলেরই জানা যে, বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারে সিভি-তে অভিজ্ঞতার ঝুলি কিছুটা সমৃদ্ধ থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফলে কারোর পার্ট টাইম কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে চাকরিদাতারাও সেটি মূল্যায়ন করেন ।
দেশে পার্ট টাইম চাকরির চ্যালেঞ্জ: ছাত্রজীবনে পার্ট টাইম কাজ করাকে এখনো অনেক পরিবার ভালোভাবে মেনে নিতে পারে না। অনেক অভিভাবকের ধারণা, এটি পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটায়। এছাড়া টিউশনি ছাড়া অন্যান্য কাজ খুঁজে পাওয়াও বেশ চ্যালেঞ্জিং। আবার ফুড ডেলিভারি বা যেকোনো প্রকার সেলসের কাজগুলোকে অনেকেই ছোট করে দেখেন। এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গির কারণে পার্ট টাইম কাজে যুক্ত থাকা অনেককেই হেয়-প্রতিপন্ন হতে হয় । এক্ষেত্রে মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি । সকলের উচিত প্রতিটা কাজকে মূল্যায়ন করা, ছোট-বড়র বিভেদ তৈরি না করা । আবারও উন্নত বিশ্বের উদাহরণ টানতে হচ্ছে। সেসব দেশে দেখা যায়, স্কুলের শিক্ষার্থীরা রাস্তা পরিষ্কার করছে। স্কুলে পড়াশোনার অংশ হিসেবেই বাগান পরিচর্যা করছে। অনেকেই সকালে পত্রিকা বিলি করছে। রাস্তার পাশে কফি শপ, রেস্টুরেন্ট বা সুপারশপে শিক্ষার্থীরা কাজ করছে হরহামেশাই। এমনকি বাংলাদেশ থেকেই যখন কোনো শিক্ষার্থী বিদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাচ্ছে, তাকেও নিজের খরচ চালাতে এ ধরনের কাজে যুক্ত হতে হচ্ছে । অথচ দেশে থাকাকালীন সে হয়তো কোনো কাজ করার সুযোগ পায়নি, কিংবা পেলেও তাতে পরিবারের সমর্থন ছিল না ।
কাজের সুযোগ না পেলে করণীয় কী যে সামাজিক পরিস্থিতির কথা বলছি সেটি একসময় নিশ্চয়ই বদলাবে। কিন্তু ততদিন তো বসে থাকা যাবে না। ধরে নিচ্ছি আপনি ছাত্রাবস্থায় কোনো পার্ট টাইম কাজের সুযোগ পাচ্ছেন না, বা পরিবার ও অন্যরা এতে সমর্থন দিচ্ছেন না। সেক্ষেত্রে আপনি কোনো প্রতিষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত হতে পারলেন না, কিন্তু নিজের মতো করে কোনো কাজ করার দরজা তো সবসময়ই খোলা! আপনি আপনার দক্ষতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনে কাজ করতে পারেন, বিভিন্ন পারিবারিক অনুষ্ঠান-উৎসব বা পিকনিক আয়োজনে নেতৃত্ব দিতে পারেন। প্রতি সপ্তাহে বাসার সাপ্তাহিক বাজার করার কাজটাই নিজের ঘাড়ে নিন, তাতে অন্তত অভিজ্ঞতা বাড়বে। ভবিষ্যতে যখন কোনো প্রতিষ্ঠানের পারচেজ ডিপার্টমেন্টের ম্যানেজার হওয়ার জন্য ইন্টারভিউ দেবেন, তখন এটুকু আত্মবিশ্বাস থাকবে যে, আপনি জানেন কীভাবে কেনাকাটা করতে হয়।
সর্বোপরি, অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীদের বুঝতে হবে যে, পার্ট টাইম কাজ কেবল অর্থ উপার্জনের জন্য নয়, এটি ব্যক্তিগত এবং পেশাগত দক্ষতা বাড়ানোরও একটি মাধ্যম। আর নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য এমন চাকরির সুযোগ তৈরি করতে হবে যা তাদের পড়াশোনার সময়সূচির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পার্ট টাইম চাকরি বা ইন্টার্নশিপের ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করতে হবে। দেশে শিক্ষার্থীদের মাঝে পার্ট টাইম কাজের গুরুত্ব যত বাড়বে, তত বেশি শিক্ষার্থী তাদের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হতে পারবে। পরবর্তী সময়ে তারাই হয়ে উঠবে দক্ষ জনশক্তি, যাদের মাধ্যমে উপকৃত হবে দেশ ও জাতি।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ছাত্রজীবনে পার্ট টাইম চাকরিতে অর্জিত হয় দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা

আপডেট সময় : ০৫:২০:০৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

খোঁজ নিলে দেখবেন, তারা ছাত্রজীবনে ফাঁকি দেওয়ার সম্পূর্ণ সুখ ভোগ না করে কোনো না কোনো পার্ট টাইম কাজে জড়িত ছিলেন। আর ওই কাজের নানামুখী অভিজ্ঞতাই তাদের জন্য গড়ে দিয়েছে শক্ত এক ভিত্তি। কারণ ক্যারিয়ার গঠনে তাত্ত্বিক পড়াশোনার পাশাপাশি বাস্তব অভিজ্ঞতাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই অভিজ্ঞতা অর্জনের অন্যতম কার্যকর উপায় হলো পার্ট টাইম চাকরি বা কাজ। উন্নত বিশ্বের দিকে তাকালে দেখা যায়, অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী পড়াশোনার পাশাপাশি পার্ট টাইম কাজে যুক্ত; যা তাদের দক্ষতা ও আত্মনির্ভরশীলতা বাড়ায়। কিন্তু আমাদের দেশে এই ধারণা এখনো পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হয়ে ওঠেনি। তবে অনেকেই নিজের চেষ্টায় তেমন কাজের সুযোগ করে নিচ্ছেন।
পার্ট টাইম কাজ কী: পার্ট টাইম কাজ বলতে বোঝায় এমন কর্মযজ্ঞ যা দিনে নির্দিষ্ট কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। এর মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী তার পড়াশোনার খরচ চালিয়ে নেওয়া বা পরিবারকে সহায়তা করতে অর্থ উপার্জনের সুযোগ পায়। তবে এর গুরুত্ব কেবল অর্থ উপার্জনেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি ব্যক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধিতে, আত্মবিশ্বাস বাড়াতে এবং ভবিষ্যৎ পেশাগত জীবনের জন্য প্রস্তুতি নিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে । যেমন, একজন শিক্ষার্থী কল সেন্টারে কাজ করে যোগাযোগ দক্ষতা বাড়াতে পারেন, কোনো প্রতিষ্ঠানে গ্রাফিক ডিজাইন বা কনটেন্ট ক্রিয়েশনের মতো কাজে যুক্ত হয়ে নিজেকে দক্ষ করে তুলতে পারেন; যা ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারের জন্য বড় সম্ভাবনা তৈরি করে। আবার অনেকেই আছেন যারা ফুড ডেলিভারি বা পার্সেল ডেলিভারির কাজ করে কিছুটা উপার্জন করছেন। সেটিও তাদের ধৈর্যশক্তি বাড়াচ্ছে। অন্যদিকে নিজের পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশনি বা অন্যদের পড়ানোও একটি ভালো পার্ট টাইম কাজ, এতেও পড়াশোনার ঝালাই হয়। তবে এটি সেই অর্থে চাকরি নয় ।
পার্ট টাইম চাকরির সুবিধা ও গুরুত্ব: ছাত্রজীবনে পার্ট টাইম চাকরি বা কাজের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, নিজের উপার্জনের টাকায় নিজের প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি কিছু সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে ওঠে। এতে আত্মবিশ্বাস বাড়ে এবং ভবিষ্যতে যেকোনো পরিস্থিতি সামলানো সহজ হয়। পাশাপাশি যাদের পরিবারে আর্থিক সংকট রয়েছে, পড়াশোনার টিউশন ফি জোগাতে সমস্যা হচ্ছে, তারা যেকোনো পার্ট টাইম কাজের মাধ্যমে সেই অবস্থা কাটিয়ে উঠতে পারে। পার্ট টাইম কাজের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী যোগাযোগ দক্ষতা, দলগতভাবে কাজ করার ক্ষমতা, সময় ব্যবস্থাপনা, সমস্যা সমাধানের কৌশল এবং সৃজনশীল উপস্থাপন দক্ষতা অর্জন করতে পারে। এসব দক্ষতা পড়াশোনার পাশাপাশি ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারে সম্পদ হিসেবে কাজ করে। এছাড়া একজন শিক্ষার্থী অনেক নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পায় । এই নেটওয়ার্কিং শুধু তার যোগাযোগ দক্ষতা বাড়ায় না, বরং ভবিষ্যতে চাকরি বা ব্যবসায়িক সুযোগ পেতে সাহায্য করে । এ কথা সকলেরই জানা যে, বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারে সিভি-তে অভিজ্ঞতার ঝুলি কিছুটা সমৃদ্ধ থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফলে কারোর পার্ট টাইম কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে চাকরিদাতারাও সেটি মূল্যায়ন করেন ।
দেশে পার্ট টাইম চাকরির চ্যালেঞ্জ: ছাত্রজীবনে পার্ট টাইম কাজ করাকে এখনো অনেক পরিবার ভালোভাবে মেনে নিতে পারে না। অনেক অভিভাবকের ধারণা, এটি পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটায়। এছাড়া টিউশনি ছাড়া অন্যান্য কাজ খুঁজে পাওয়াও বেশ চ্যালেঞ্জিং। আবার ফুড ডেলিভারি বা যেকোনো প্রকার সেলসের কাজগুলোকে অনেকেই ছোট করে দেখেন। এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গির কারণে পার্ট টাইম কাজে যুক্ত থাকা অনেককেই হেয়-প্রতিপন্ন হতে হয় । এক্ষেত্রে মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি । সকলের উচিত প্রতিটা কাজকে মূল্যায়ন করা, ছোট-বড়র বিভেদ তৈরি না করা । আবারও উন্নত বিশ্বের উদাহরণ টানতে হচ্ছে। সেসব দেশে দেখা যায়, স্কুলের শিক্ষার্থীরা রাস্তা পরিষ্কার করছে। স্কুলে পড়াশোনার অংশ হিসেবেই বাগান পরিচর্যা করছে। অনেকেই সকালে পত্রিকা বিলি করছে। রাস্তার পাশে কফি শপ, রেস্টুরেন্ট বা সুপারশপে শিক্ষার্থীরা কাজ করছে হরহামেশাই। এমনকি বাংলাদেশ থেকেই যখন কোনো শিক্ষার্থী বিদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাচ্ছে, তাকেও নিজের খরচ চালাতে এ ধরনের কাজে যুক্ত হতে হচ্ছে । অথচ দেশে থাকাকালীন সে হয়তো কোনো কাজ করার সুযোগ পায়নি, কিংবা পেলেও তাতে পরিবারের সমর্থন ছিল না ।
কাজের সুযোগ না পেলে করণীয় কী যে সামাজিক পরিস্থিতির কথা বলছি সেটি একসময় নিশ্চয়ই বদলাবে। কিন্তু ততদিন তো বসে থাকা যাবে না। ধরে নিচ্ছি আপনি ছাত্রাবস্থায় কোনো পার্ট টাইম কাজের সুযোগ পাচ্ছেন না, বা পরিবার ও অন্যরা এতে সমর্থন দিচ্ছেন না। সেক্ষেত্রে আপনি কোনো প্রতিষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত হতে পারলেন না, কিন্তু নিজের মতো করে কোনো কাজ করার দরজা তো সবসময়ই খোলা! আপনি আপনার দক্ষতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনে কাজ করতে পারেন, বিভিন্ন পারিবারিক অনুষ্ঠান-উৎসব বা পিকনিক আয়োজনে নেতৃত্ব দিতে পারেন। প্রতি সপ্তাহে বাসার সাপ্তাহিক বাজার করার কাজটাই নিজের ঘাড়ে নিন, তাতে অন্তত অভিজ্ঞতা বাড়বে। ভবিষ্যতে যখন কোনো প্রতিষ্ঠানের পারচেজ ডিপার্টমেন্টের ম্যানেজার হওয়ার জন্য ইন্টারভিউ দেবেন, তখন এটুকু আত্মবিশ্বাস থাকবে যে, আপনি জানেন কীভাবে কেনাকাটা করতে হয়।
সর্বোপরি, অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীদের বুঝতে হবে যে, পার্ট টাইম কাজ কেবল অর্থ উপার্জনের জন্য নয়, এটি ব্যক্তিগত এবং পেশাগত দক্ষতা বাড়ানোরও একটি মাধ্যম। আর নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য এমন চাকরির সুযোগ তৈরি করতে হবে যা তাদের পড়াশোনার সময়সূচির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পার্ট টাইম চাকরি বা ইন্টার্নশিপের ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করতে হবে। দেশে শিক্ষার্থীদের মাঝে পার্ট টাইম কাজের গুরুত্ব যত বাড়বে, তত বেশি শিক্ষার্থী তাদের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হতে পারবে। পরবর্তী সময়ে তারাই হয়ে উঠবে দক্ষ জনশক্তি, যাদের মাধ্যমে উপকৃত হবে দেশ ও জাতি।