প্রত্যাশা ডেস্ক : যেকোনও সংকট মোকাবিলা করে ঘুরে দাঁড়ানো জাতি হিসেবে বাংলাদেশের জুড়ি নেই। কেবল জাতীয় পরিসরে নয়, আন্তর্জাতিক সংকটেও সহিষ্ণুতার পরিচয় হিসেবে বাংলাদেশের অনবদ্যতার কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনা পরিস্থিতির পরপরই রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে অর্থনৈতিক সংকটে সুসংহত পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যেতে বিশ্বকে আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।সংকট মোকাবিলায় সু-সমন্বিত পদক্ষেপ : গত ২১ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বব্যাপী সংহতি জোরদার করার এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও কোভিড-১৯ মহামারির কারণে খাদ্য, বিদ্যুৎ ও আর্থিক সংকট মোকাবিলায় সু-সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে যুক্ত হয়ে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে শুক্রবার অনুষ্ঠিত ‘গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স গ্রুপের (জিসিআরজি) প্রথম উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে দেওয়া ভাষণে এ কথা বলেন।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং কোভিড-১৯ মহামারির কারণে সৃষ্ট চলমান বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলার লক্ষ্যে এ গ্রুপটি গঠন করেছেন। বৈশ্বিক সংকটের প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনা পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য চারটি প্রস্তাব রাখেন। প্রস্তাবে তিনি বলেন, আমাদের অবশ্যই বিশ্বব্যাপী সংহতি জোরদার করতে হবে এবং একটি সু-সমন্বিত প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হবে। জি-৭, জি-২০, ওইসিডি এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। অবিলম্বে বিশ্বব্যাপী লজিস্টিক এবং সরবরাহ শৃঙ্খলে বাধাগুলো মোকাবিলা করা প্রয়োজন। এ প্রয়াস পণ্যের ক্রমবর্ধমান মূল্য নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে। এছাড়া কার্যকর খাদ্য সঞ্চয় ও বিতরণ ব্যবস্থার জন্য কৃষি খাতের জন্য প্রযুক্তি সহায়তা এবং বিনিয়োগের ওপর আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া অপরিহার্য বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
শুরু হোক দেশ থেকেই : বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সংকটের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদের সবাইকে গাড়ির তেল খরচ কমানোর নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এমনকি গাড়ি ব্যবহার করে মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের ছোটাছুটি না করে ভার্চুয়ালি যোগাযোগ বাড়ানোরও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। সোমবার (২৫ জুলাই) মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনি এমন নির্দেশনা দেন। বৈঠক শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এই নির্দেশনার কথা জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। মন্ত্রী বলেন, ‘এখন যে সংকট হচ্ছে সেটা আসলে বৈশ্বিক, একইভাবে বাংলাদেশেরও। এই সংকট আরও বাড়বে কিনা, সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেকোনও সমস্যা সমাধানে পারদর্শী। তাই এই সমস্যাও বেশি দিন থাকবে না।’
জরুরি নয় এমন জিনিস কেনা বন্ধ : গত সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈশ্বিক সংকটের এই সময়ে সরকারি ব্যয় কমাতে কম গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র ক্রয় এড়াতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আইটেম ক্রয়, যা অবিলম্বে প্রয়োজন নয়, তা এখন বন্ধ থাকবে।’ প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি মন্ত্রিসভার বৈঠকে সভাপতিত্বকালে এ নির্দেশনা দেন।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বিমানের উড়োজাহাজের সংঘর্ষ, প্রকল্পের ব্যয় ও গাড়ির ব্যবহারসহ বেশ কিছু বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা সম্পর্কে সাংবাদিকদের অবহিত করেন। তিনি বলেন, ‘খরচ কমাতে প্রধানমন্ত্রী আজও সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন। এ জন্য আমাদের প্রকল্পগুলোর ক্যাটাগরি করা হয়েছে- এ, বি, সি। ‘এ’ ক্যাটাগরির যেগুলো, সেগুলো ইমিডিয়েটলি প্রয়োজন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় গুরুত্ব অনুযায়ী প্রকল্পগুলোকে ‘এ’, কোনোগুলো ‘বি’ ও কোনোগুলোকে ‘সি’ ক্যাটাগরিতে ফেলবে। ‘এ’ ক্যাটাগরির প্রকল্পের পুরো টাকা খরচ করা যাবে। ‘বি’ ক্যাটাগরির প্রকল্পগুলোতে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত খরচ করা যাবে। আর ‘সি’ ক্যাটাগরির প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন স্থগিত থাকবে।’
চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহিষ্ণুতার নাম শেখ হাসিনা
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ