ঢাকা ০৪:৩৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

চ্যাটজিপিটির প্রভাবে একঘেয়ে হচ্ছে মানুষের ভাষা

  • আপডেট সময় : ০৭:৪৩:১৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫
  • ৪৮ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক: বিশ্বজুড়ে ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই); বিশেষ করে চ্যাটজিপিটির মতো বড় ভাষা মডেল (এলএলএম) মানুষের দৈনন্দিন কথাবার্তার ধরন বদলে দিচ্ছে এবং একঘেয়ে করে তুলছে বলে সতর্ক করেছে জার্মানির এক গবেষক দল।

জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাংক ইনস্টিটিউট ফর হিউম্যান ডেভেলপমেন্টের গবেষক দলের দাবি, ২০২২ সালে চ্যাটজিপিটি বাজারে আসার পর থেকে এআইয়ের পছন্দের কিছু নির্দিষ্ট শব্দের ব্যবহার মানুষের কথাবার্তায় বেশি দেখা যাচ্ছে। গবেষণাটি এখনো পিয়ার-রিভিউ হয়নি। তবে তারা বলছেন, এই প্রবণতা ভাষা ও সংস্কৃতি বৈচিত্র্যের ওপর দীর্ঘ মেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

গবেষকদের তথ্য মতে, ‘কমপ্রিহেন্ড’ (অনুধাবন করা), ‘বোস্ট’ (গর্ব করা), ‘সুইফট’ (দ্রুত), ‘মেটিকুলাস’, (পুঙ্খানুপুঙ্খ বা নিখুঁত), ‘ডেলভ’-এর (গভীরে অনুসন্ধান করা) মতো শব্দ বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। এর মধ্যে ডেলভ শব্দটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়। এসব শব্দকে বলা হচ্ছে ‘জিপিটি শব্দ’। ইউটিউবের ৩ লাখ ৬০ হাজার ৪৪৫টি একাডেমিক ভিডিও এবং ৭ লাখ ৭১ হাজার ৫৯১টি পডকাস্ট বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এই শব্দগুলোর ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।

গবেষণাটি মূলত এই শব্দগুলোর পরিসংখ্যান বিশ্লেষণেই সীমাবদ্ধ থাকলেও গবেষকেরা প্রশ্ন তুলেছেন, ‘এআই কি নিজস্ব এক ধরনের সংস্কৃতি তৈরি করছে; যা আমাদের ওপর প্রভাব ফেলছে?’

গবেষকেরা বলেছেন, ‘মানুষে মানুষে সরাসরি কথোপকথনে এলএলএমের পছন্দের শব্দগুলোর ব্যবহার বাড়া ইঙ্গিত দেয়, এর পেছনে হয়তো কোনো গভীর জ্ঞানীয় প্রক্রিয়া কাজ করছে।’ তবে তারা স্বীকার করেছেন, এই শব্দগুলো কীভাবে মানুষের ভাষায় ঢুকে পড়ছে; তা এখনো পরিষ্কার নয়।

গবেষকদের মতে, মানুষ এবং এআইয়ের কথাবার্তার এই আদান-প্রদান ভবিষ্যতে ভাষার ব্যবহারে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। এর ফলে একসময় তৈরি করতে হতে পারে একটি ‘বন্ধ সাংস্কৃতিক প্রতিক্রিয়া চক্র’। এই চক্রে মানুষ ও মেশিনের মধ্যে সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য আদান-প্রদান হতে হতে একসময় সেটা একরকম ঘুরেফিরে একই রকম হয়ে যেতে পারে।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘যদি এআই সিস্টেমগুলো নির্দিষ্ট কিছু সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যকে অগ্রাধিকার দেয়, তাহলে সেটি ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে দ্রুত ক্ষয় করে ফেলতে পারে।’

ওই হুমকি আরো বেড়ে যেতে পারে- যদি ভবিষ্যতের এআই মডেলগুলো এমন ভাষার তথ্য দিয়ে প্রশিক্ষিত হয়; যা আগেই অন্য এআইয়ের প্রভাবিত ডেটা থেকে এসেছে। এতে ভাষার একরকম একঘেয়েমি আরও শক্তভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে একটি চক্রাকার প্রক্রিয়ায় রূপ নিতে পারে। এটি শুধু ভাষার বিবর্তন নয়, একটি ‘বিষণ্ন ও নিরস ভবিষ্যৎ’; যেখানে যোগাযোগের ধরন নির্ধারণ করবে এমন একটি এআই- যার নিজস্ব কোনো বোঝার ক্ষমতা নেই।

গবেষকরা বলছেন, একই ধরনের শব্দ বা ভাষার ধরন বারবার ব্যবহার হতে থাকলে মডেল ভেঙে পড়ার (ধসে যাওয়ার) ঝুঁকি বাড়ে অর্থাৎ মডেল ব্যবহারের প্রতি মানুষদের আগ্রহ কমে যেতে পারে; এমনকি মডেল শেখানোর কাজে মানুষকে জড়ালেও। এতে ভাষার দরকারি বৈচিত্র্য নাও থাকতে পারে।

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

চ্যাটজিপিটির প্রভাবে একঘেয়ে হচ্ছে মানুষের ভাষা

আপডেট সময় : ০৭:৪৩:১৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক: বিশ্বজুড়ে ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই); বিশেষ করে চ্যাটজিপিটির মতো বড় ভাষা মডেল (এলএলএম) মানুষের দৈনন্দিন কথাবার্তার ধরন বদলে দিচ্ছে এবং একঘেয়ে করে তুলছে বলে সতর্ক করেছে জার্মানির এক গবেষক দল।

জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাংক ইনস্টিটিউট ফর হিউম্যান ডেভেলপমেন্টের গবেষক দলের দাবি, ২০২২ সালে চ্যাটজিপিটি বাজারে আসার পর থেকে এআইয়ের পছন্দের কিছু নির্দিষ্ট শব্দের ব্যবহার মানুষের কথাবার্তায় বেশি দেখা যাচ্ছে। গবেষণাটি এখনো পিয়ার-রিভিউ হয়নি। তবে তারা বলছেন, এই প্রবণতা ভাষা ও সংস্কৃতি বৈচিত্র্যের ওপর দীর্ঘ মেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

গবেষকদের তথ্য মতে, ‘কমপ্রিহেন্ড’ (অনুধাবন করা), ‘বোস্ট’ (গর্ব করা), ‘সুইফট’ (দ্রুত), ‘মেটিকুলাস’, (পুঙ্খানুপুঙ্খ বা নিখুঁত), ‘ডেলভ’-এর (গভীরে অনুসন্ধান করা) মতো শব্দ বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। এর মধ্যে ডেলভ শব্দটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়। এসব শব্দকে বলা হচ্ছে ‘জিপিটি শব্দ’। ইউটিউবের ৩ লাখ ৬০ হাজার ৪৪৫টি একাডেমিক ভিডিও এবং ৭ লাখ ৭১ হাজার ৫৯১টি পডকাস্ট বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এই শব্দগুলোর ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।

গবেষণাটি মূলত এই শব্দগুলোর পরিসংখ্যান বিশ্লেষণেই সীমাবদ্ধ থাকলেও গবেষকেরা প্রশ্ন তুলেছেন, ‘এআই কি নিজস্ব এক ধরনের সংস্কৃতি তৈরি করছে; যা আমাদের ওপর প্রভাব ফেলছে?’

গবেষকেরা বলেছেন, ‘মানুষে মানুষে সরাসরি কথোপকথনে এলএলএমের পছন্দের শব্দগুলোর ব্যবহার বাড়া ইঙ্গিত দেয়, এর পেছনে হয়তো কোনো গভীর জ্ঞানীয় প্রক্রিয়া কাজ করছে।’ তবে তারা স্বীকার করেছেন, এই শব্দগুলো কীভাবে মানুষের ভাষায় ঢুকে পড়ছে; তা এখনো পরিষ্কার নয়।

গবেষকদের মতে, মানুষ এবং এআইয়ের কথাবার্তার এই আদান-প্রদান ভবিষ্যতে ভাষার ব্যবহারে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। এর ফলে একসময় তৈরি করতে হতে পারে একটি ‘বন্ধ সাংস্কৃতিক প্রতিক্রিয়া চক্র’। এই চক্রে মানুষ ও মেশিনের মধ্যে সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য আদান-প্রদান হতে হতে একসময় সেটা একরকম ঘুরেফিরে একই রকম হয়ে যেতে পারে।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘যদি এআই সিস্টেমগুলো নির্দিষ্ট কিছু সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যকে অগ্রাধিকার দেয়, তাহলে সেটি ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে দ্রুত ক্ষয় করে ফেলতে পারে।’

ওই হুমকি আরো বেড়ে যেতে পারে- যদি ভবিষ্যতের এআই মডেলগুলো এমন ভাষার তথ্য দিয়ে প্রশিক্ষিত হয়; যা আগেই অন্য এআইয়ের প্রভাবিত ডেটা থেকে এসেছে। এতে ভাষার একরকম একঘেয়েমি আরও শক্তভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে একটি চক্রাকার প্রক্রিয়ায় রূপ নিতে পারে। এটি শুধু ভাষার বিবর্তন নয়, একটি ‘বিষণ্ন ও নিরস ভবিষ্যৎ’; যেখানে যোগাযোগের ধরন নির্ধারণ করবে এমন একটি এআই- যার নিজস্ব কোনো বোঝার ক্ষমতা নেই।

গবেষকরা বলছেন, একই ধরনের শব্দ বা ভাষার ধরন বারবার ব্যবহার হতে থাকলে মডেল ভেঙে পড়ার (ধসে যাওয়ার) ঝুঁকি বাড়ে অর্থাৎ মডেল ব্যবহারের প্রতি মানুষদের আগ্রহ কমে যেতে পারে; এমনকি মডেল শেখানোর কাজে মানুষকে জড়ালেও। এতে ভাষার দরকারি বৈচিত্র্য নাও থাকতে পারে।

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ