ঢাকা ১২:১২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৫ মে ২০২৫

চেক ডিজঅনার ও আইনি প্রতিকার

  • আপডেট সময় : ০৫:১৮:০০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৪
  • ৫১ বার পড়া হয়েছে

আমিনুল ইসলাম মল্লিক : অনেক বন্ধু ও স্বজন ফোন দিয়ে আইনের ছোটখাট বিষয় জানতে চান। সময় করে তাদের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করি। তারা যেসব প্রশ্ন বেশি করেন তার মধ্যে অন্যতম চেকের মামলা, যৌতুকের মামলা, পারিবারিক আদালতের মামলা নিয়ে। এগুলোর মধ্যে বর্তমানে চেকের মামলাটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। চেকে লেনদেন নিয়ে ইদানীং ঝামেলা বেশি হচ্ছে। তার চেকের মামলা সম্পর্কে কিছু লেখার চেষ্টা করেছি।
নেগোশিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট অ্যাক্ট ১৮৮১ (ঘবমড়ঃরধনষব ওহংঃৎঁসবহঃং অপঃ ১৮৮১, অপঃ ঢঢঠর ড়ভ ১৮৮১)-এর বঙ্গানুবাদ সাধারণত হস্তান্তরযোগ্য আইন করা হয়। ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যক্তিগত লেনদেনে চেক, বিনিময়পত্র, অঙ্গীকার পত্র ইত্যাদি অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আর এই ডকুমেন্টগুলো হাতে হাতে দেওয়া যায়। ওই অর্থে এটিকে হস্তান্তরযোগ্য দলিল নাম করা হয়েছে।
ব্যক্তিগত লেনদেনের চেয়ে বর্তমানে ব্যবসায়িক লেনদেনের ক্ষেত্রে অবিশ্বাসের কারণ বেশি দেখা দিয়েছে। শুধু তাই নয়, লেনদেনে অস্বচ্ছতাও এসেছে।
পারিপার্শ্বিক অবস্থাগত ও সময়ের প্রয়োজনেই এই আইনের একাধিক সংশোধনী আনা হয়েছে। বিশেষ করে এই আইনের ১৩৮, ১৩৮/এ (নতুন সংযোজন) ১৪১ ধারাগুলোয় দৃষ্টান্তমূলক সংশোধনী আনা হয়েছে।
২০০৬ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি সর্বশেষ সংশোধন করার মাধ্যমে ১৪১ (সি) ধারা পরিবর্তন করে ম্যাজিস্ট্রেটের স্থলে দায়রা জজ এখন ১৩৮ ধারার অপরাধের বিচারক হয়েছেন।
চেক লেনদেন হওয়ার পর তা প্রত্যাখাত (ডিজঅনার) ও পরবর্তী কার্যক্রম সম্পর্কে কিছুটা তুলে ধরছি। সেগুলো জানা দরকার।
(ক) ব্যাংকের হিসাবে টাকার পরিমাণ অপ্রতুল বা না থাকা ইত্যাদি কারণে চেক ডিসঅনার [(ধারা ১৩৮ (১)]।
(খ) ছয় মাসের মধ্যে ব্যাংকে চেক জমা প্রদান [(ধারা ১৩৮ (ক)]।
(গ) চেক ক্যাশ হয়ে ব্যাংক থেকে ফেরদ এলে উহা জানিয়ে চেক দাতাকে ৩০ দিনের মধ্যে নোটিশ [ধারা ১৩৮ (খ)]…।
(ঘ) ৩০ দিনের মধ্যে নোটিশ পাওয়ার পর চেকের টাকা প্রদানে ব্যর্থ হলে [ধারা ১৩৮ (গ)]।
(ঙ) নোটিশ কোথায় কীভাবে দিতে হয় [ধারা ১৩৮-এর ১-এর (ক) উপ-ধারার ক, খ, গ]।
(চ) বিচার অন্তে আদায়কৃত অর্থ চেক গ্রহণকারীকে প্রদান [ধারা ১৩৮ (২)]…।
(ছ) চেকের টাকার দাবিতে দেওয়ানি আদালতে মামলা [ধারা ১৩৮ (৩) ধারা]
অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন চেক ডিসঅনারের মামলা কি খারিজ হয়? তাদের জন্য বলব।
দ্য নেগোসিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্টস অ্যাক্ট অনুযায়ী চেকের মামলা করার সময় যেসব বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখবেন, তা হলোÑ
মূল চেক, ডিজঅনার শিল্প, পোস্টাল রিসিভ ও প্রাপ্তি স্বীকারপত্র এবং আইনগত বিজ্ঞপ্তি (লিগ্যাল নোটিশ) প্রদর্শনকরত বিজ্ঞ আদালতে জমা দিতে হয়।
এনআই অ্যাক্টের মামলায় বিষয় সঠিক থাকলে এই মামলায় বাদীর জেতার সম্পূর্ণ নিশ্চয়তা আছে। কিন্তু এদের যেকোনো একটি উপাদান অনুপস্থিত থাকলে মামলা খারিজ হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
চেকের মামলায় জিততে হলে প্রয়োজনÑ
# ব্যাংক হিসাবটি চেক ইস্যুকারীর হতে হবে।
# চেকের স্বাক্ষর অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের হতে হবে।
# চেকটি অপর্যাপ্ত স্থিতির কারণে ডিজঅনার হতে হবে।
# চেক প্রদানের তারিখ থেকে ৬ মাসের মধ্যে ডিজঅনার হতে হবে।
# ডিজঅনারের ৩০ দিনের মধ্যে নোটিশ দিতে হবে।
# নোটিশপ্রাপ্তির ৩০ দিন পর মামলা করতে হবে।
লেখক: অ্যাডভোকেট,: ঢাকা ও সিরাজগঞ্জ বারের সদস্য

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

চেক ডিজঅনার ও আইনি প্রতিকার

আপডেট সময় : ০৫:১৮:০০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৪

আমিনুল ইসলাম মল্লিক : অনেক বন্ধু ও স্বজন ফোন দিয়ে আইনের ছোটখাট বিষয় জানতে চান। সময় করে তাদের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করি। তারা যেসব প্রশ্ন বেশি করেন তার মধ্যে অন্যতম চেকের মামলা, যৌতুকের মামলা, পারিবারিক আদালতের মামলা নিয়ে। এগুলোর মধ্যে বর্তমানে চেকের মামলাটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। চেকে লেনদেন নিয়ে ইদানীং ঝামেলা বেশি হচ্ছে। তার চেকের মামলা সম্পর্কে কিছু লেখার চেষ্টা করেছি।
নেগোশিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট অ্যাক্ট ১৮৮১ (ঘবমড়ঃরধনষব ওহংঃৎঁসবহঃং অপঃ ১৮৮১, অপঃ ঢঢঠর ড়ভ ১৮৮১)-এর বঙ্গানুবাদ সাধারণত হস্তান্তরযোগ্য আইন করা হয়। ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যক্তিগত লেনদেনে চেক, বিনিময়পত্র, অঙ্গীকার পত্র ইত্যাদি অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আর এই ডকুমেন্টগুলো হাতে হাতে দেওয়া যায়। ওই অর্থে এটিকে হস্তান্তরযোগ্য দলিল নাম করা হয়েছে।
ব্যক্তিগত লেনদেনের চেয়ে বর্তমানে ব্যবসায়িক লেনদেনের ক্ষেত্রে অবিশ্বাসের কারণ বেশি দেখা দিয়েছে। শুধু তাই নয়, লেনদেনে অস্বচ্ছতাও এসেছে।
পারিপার্শ্বিক অবস্থাগত ও সময়ের প্রয়োজনেই এই আইনের একাধিক সংশোধনী আনা হয়েছে। বিশেষ করে এই আইনের ১৩৮, ১৩৮/এ (নতুন সংযোজন) ১৪১ ধারাগুলোয় দৃষ্টান্তমূলক সংশোধনী আনা হয়েছে।
২০০৬ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি সর্বশেষ সংশোধন করার মাধ্যমে ১৪১ (সি) ধারা পরিবর্তন করে ম্যাজিস্ট্রেটের স্থলে দায়রা জজ এখন ১৩৮ ধারার অপরাধের বিচারক হয়েছেন।
চেক লেনদেন হওয়ার পর তা প্রত্যাখাত (ডিজঅনার) ও পরবর্তী কার্যক্রম সম্পর্কে কিছুটা তুলে ধরছি। সেগুলো জানা দরকার।
(ক) ব্যাংকের হিসাবে টাকার পরিমাণ অপ্রতুল বা না থাকা ইত্যাদি কারণে চেক ডিসঅনার [(ধারা ১৩৮ (১)]।
(খ) ছয় মাসের মধ্যে ব্যাংকে চেক জমা প্রদান [(ধারা ১৩৮ (ক)]।
(গ) চেক ক্যাশ হয়ে ব্যাংক থেকে ফেরদ এলে উহা জানিয়ে চেক দাতাকে ৩০ দিনের মধ্যে নোটিশ [ধারা ১৩৮ (খ)]…।
(ঘ) ৩০ দিনের মধ্যে নোটিশ পাওয়ার পর চেকের টাকা প্রদানে ব্যর্থ হলে [ধারা ১৩৮ (গ)]।
(ঙ) নোটিশ কোথায় কীভাবে দিতে হয় [ধারা ১৩৮-এর ১-এর (ক) উপ-ধারার ক, খ, গ]।
(চ) বিচার অন্তে আদায়কৃত অর্থ চেক গ্রহণকারীকে প্রদান [ধারা ১৩৮ (২)]…।
(ছ) চেকের টাকার দাবিতে দেওয়ানি আদালতে মামলা [ধারা ১৩৮ (৩) ধারা]
অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন চেক ডিসঅনারের মামলা কি খারিজ হয়? তাদের জন্য বলব।
দ্য নেগোসিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্টস অ্যাক্ট অনুযায়ী চেকের মামলা করার সময় যেসব বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখবেন, তা হলোÑ
মূল চেক, ডিজঅনার শিল্প, পোস্টাল রিসিভ ও প্রাপ্তি স্বীকারপত্র এবং আইনগত বিজ্ঞপ্তি (লিগ্যাল নোটিশ) প্রদর্শনকরত বিজ্ঞ আদালতে জমা দিতে হয়।
এনআই অ্যাক্টের মামলায় বিষয় সঠিক থাকলে এই মামলায় বাদীর জেতার সম্পূর্ণ নিশ্চয়তা আছে। কিন্তু এদের যেকোনো একটি উপাদান অনুপস্থিত থাকলে মামলা খারিজ হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
চেকের মামলায় জিততে হলে প্রয়োজনÑ
# ব্যাংক হিসাবটি চেক ইস্যুকারীর হতে হবে।
# চেকের স্বাক্ষর অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের হতে হবে।
# চেকটি অপর্যাপ্ত স্থিতির কারণে ডিজঅনার হতে হবে।
# চেক প্রদানের তারিখ থেকে ৬ মাসের মধ্যে ডিজঅনার হতে হবে।
# ডিজঅনারের ৩০ দিনের মধ্যে নোটিশ দিতে হবে।
# নোটিশপ্রাপ্তির ৩০ দিন পর মামলা করতে হবে।
লেখক: অ্যাডভোকেট,: ঢাকা ও সিরাজগঞ্জ বারের সদস্য