নিজস্ব প্রতিবেদক : চেক ডিজঅনার মামলায় কোনো ব্যক্তিকে কারাগারে পাঠানো সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদের পরিপন্থি বলে হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ ও এ সংক্রান্ত রায় স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত। রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিল আবেদনের বিষয়ে শুনানি নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার আপিল বিভাগের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের চেম্বারজজ আদালত স্থগিত করে আদেশ দেন। আদালতে মঙ্গলবার আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। তার সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সাইফুল আলম। এর আগে গত ২৮ আগস্ট চেক ডিজঅনার মামলায় কোনো ব্যক্তিকে জেলে পাঠানো সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদের পরিপন্থি বলে পর্যবেক্ষণ দেন হাইকোর্ট। রায়ে আদালত বলেন, নেগোসিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট আইনের চেক ডিজঅনার সংক্রান্ত মামলায় কোনো ব্যক্তিকে কারাগারে বন্দি রাখা ব্যক্তিগত স্বাধীনতা হরণের নামান্তর। চেক ডিজঅনার সংক্রান্ত কয়েকটি মামলা নিষ্পত্তি করে রোববার (২৮ আগস্ট) বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। আদালত নেগোসিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট আইনের ১৩৮ ধারা সংশোধন করে চেক ডিজঅনার মামলায় জেলে পাঠানোর বিধান বাতিল করার জন্য জাতীয় সংসদকে পরামর্শ দেন। এছাড়া একই আইনের একই ধারা সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত চেক ডিজঅনারের মামলা নিষ্পত্তির জন্য একটি গাইড লাইন করে দেওয়া হয়।
হাইকোর্ট রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেন, চেক ডিজঅনার মামলায় কোনো ব্যক্তিকে কারাগারে পাঠানো, কারাগারে ইন্টারন্যাশনাল কভেন্যান্ট অন সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটসের অনুচ্ছেদ-১১ এর পরিপন্থি। বাংলাদেশ এ পত্রে সই করা দেশ হিসেবে চেক ডিজঅনার মামলায় কোনো ব্যক্তিকে কারাগারে পাঠাতে পারে না। উন্নত বিশ্বের উদাহরণ টেনে হাইকোর্ট বলেন, সিঙ্গাপুর, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে চেক ডিজঅনার মামলায় জেলে পাঠানোর বিধান নেই। এসব দেশে চেক ডিজঅনারের মামলাগুলো দেওয়ানি মামলা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশ ১৯৯৪ সালে নেগোশিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট আইনে প্যানেল কোড সংযোজনের মাধ্যমে এটিকে আধা-ফৌজদারি অপরাধে পরিণত করেছে। আদালত পর্যবেক্ষণে আরও বলেন, কনট্রাকচ্যুয়াল অব নেগোসিয়েশন বা চুক্তিগত দায়-দায়িত্ব পূরণে ব্যর্থতার জন্য কোনো ব্যক্তিকে কারাগারে বন্দি রাখা যাবে না। চুক্তিগত দায়-দায়িত্ব পূরণে ব্যর্থতার জন্য যদি কারাগারে পাঠানো হয়, তাহলে অচিরেই বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ কারাগারে চলে যাবে। এটা কারও জন্য কাম্য নয়। আদালত মনে করেন, নেগোসিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট আইনের ১৩৮ ধারা দ্রুত সংশোধন করে চেক ডিজঅনারের মামলায় কোনো ব্যক্তিকে কারাগারে পাঠানোর বিধান বাতিল করা আবশ্যক। আদালত প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেন, জাতীয় সংসদ অতি দ্রুত নেগোসিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট আইনের ১৩৮ ধারা সংশোধন করবে বলে আমাদের প্রত্যাশা। আদালত আরও বলেন, মহান জাতীয় সংসদ যতদিন ১৩৮ ধারা সংশোধন না করবে, ততদিন পর্যন্ত নেগোসিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট আইনের ১৩৮ ধারার আওতায় চেক ডিজঅনারের মামলা আপসযোগ্য হবে। তাছাড়া, চেক ডিজঅনারের মামলা বিচারের এখতিয়ার সম্পন্ন দেশের সব আদালত সাজার পরিবর্তে তিনগুণ পর্যন্ত জরিমানা দিতে পারবে। আদালত এ রায়ের অনুলিপি দেশের সব আদালত ও আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
চেক ডিজঅনারে জেলে পাঠানো সংবিধান পরিপন্থি : হাইকোর্টের রায় স্থগিত
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ