ঢাকা ০২:১১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫

চুয়াডাঙ্গার কিশোর-কিশোরী ক্লাবে অর্ধেক খরচে দেওয়া হয় নাস্তা

  • আপডেট সময় : ১২:১৮:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২২
  • ৭৬ বার পড়া হয়েছে

চুয়াডাঙ্গা সংবাদদাতা : প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের অধীন চুয়াডাঙ্গার কিশোর-কিশোরী ক্লাবে শিক্ষার্থীদের জন্য খাবার বরাদ্দের অর্থ ও উপকরণ কেনাকাটায় অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। জেলার ৪১টি ক্লাবে প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য প্রতিদিনের নাস্তার জন্য ৩০ টাকার খাবার বরাদ্দ থাকলেও অর্ধেক টাকায় নাস্তা দেওয়া হয়। এছাড়া ক্লাবের সরঞ্জাম কেনাকাটার অধিকাংশ বরাদ্দের টাকার কোনও হিসাব নেই কারও কাছে। এছাড়া প্রশিক্ষকদের সন্মানি নিয়েও রয়েছে নয়-ছয়। এতে ক্ষোভ ছড়িয়েছে ক্লাবের শিক্ষার্থী ও প্রশিক্ষকদের মধ্যে।
তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দাবি, এ প্রকল্পের সব বরাদ্দই সুষ্ঠুভাবে বণ্টন করা হয়। এদিকে, অভিযোগের বিষয়টি নজরে এলে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রান্তিক পর্যায়ে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে সৃজনশীল ও গঠনমূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল এবং দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তর করতে চুয়াডাঙ্গায় চালু হয় কিশোর-কিশোরী ক্লাবের কার্যক্রম। জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের আওতায় সব ইউনিয়ন পর্যায়ে ৪১টি ক্লাবে অন্তত ১২শ’ কিশোর-কিশোরী সপ্তাহে দুইদিন বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকেন।
এ জন্য প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে নাস্তা ও খেলাধুলার উপকরণ সরবরাহ করা হয়। সপ্তাহের দু’দিনের প্রতি ক্লাসে শিক্ষার্থীদের জন্য ৩০ টাকা সমপরিমাণের নাস্তা সরবরাহের কথা রয়েছে। কিন্তু সে বরাদ্দের অর্ধেক টাকার নাস্তা দিয়েই দায় সারছে কর্তৃপক্ষ। বাকি অর্ধেক টাকা কোথায় যায় তার স্পষ্ট ধারণা নেই কারও। কিশোর-কিশোরীদের জন্য খেলা ও অন্যান্য সামগ্রীর জন্য বরাদ্দ রয়েছে এসব ক্লাবে। কিন্তু কিছু কিছু ক্লাবে এসব সামগ্রী দিলেও তার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এছাড়া সঠিক নজরদারি নিয়েও অভিযোগ তুলেছে শিক্ষার্থীরা। নেহালপুর কিশোর-কিশোরী ক্লাবের শিক্ষার্থী প্রিয়া আক্তার বলেন, আমাদের জন্য নাস্তার বরাদ্দ ৩০ টাকা থাকলেও আমাদের নাস্তা দেওয়া হয় ১২ থেকে ১৫ টাকার। একটি কলা একটা কেকের সঙ্গে ছোট লাড্ডু দেওয়া হয় আমাদের। রেল-বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কিশোর-কিশোরী ক্লাবের শিক্ষার্থী রাজু বলেন, নাস্তায় দুই টাকার একটি বিস্কুটের প্যাকেট, দুই টাকা দামের একটি লাড্ডু ও ৭ টাকা দামের একটি কমলা লেবু দেওয়া হয়। প্রতিদিনই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দের টাকার নয়-ছয় নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রশিক্ষকরাও। ক্লাবের প্রশিক্ষক সম্রাট অভিযোগ করেন, ক্লাবের সরঞ্জাম কেনাকাটার অধিকাংশ বরাদ্দের টাকার কোনও হিসাব নেই। গানের ক্লাসের বরাদ্দকৃত টাকায় তবলা, হারমনিয়ামসহ যেসব সরঞ্জাম কেনা হয়েছে তা দেখলেই বোঝা যায় কতটা দুর্নীতি হয়েছে। ক্লাবের আরেক প্রশিক্ষক আফসানা জানান, করোনাকালে ক্লাস নিলেও সেই সময়ে সম্মানি পাইনি। প্রশিক্ষণার্থী কোমলমতি শিশুদের দেওয়া হয়নি কোনও নাস্তা। দীর্ঘদিন ধরেই বরাদ্দের অর্ধেক টাকার হিসাব মেলে না। এ প্রশ্নের কোনও উত্তরও কেউ দিতে পারে না। এসব বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে ধর্ণা দিয়েও মেলেনি কোনও সমাধান। তবে চুয়াডাঙ্গা মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের উপ-পরিচালক মাকসুরা জান্নাতের দাবি সব অভিযোগই অসত্য। এ প্রকল্পের সব বরাদ্দ সুষ্ঠুভাবে বণ্টন করা হয়। শিক্ষার্থী ও প্রশিক্ষকদের অভিযোগও সঠিক না। মনগড়া কথা বলেছেন সবাই। চুয়াডাঙ্গায় কিশোর-কিশোরী ক্লাবে খাবারের অর্থ ও কেনাকাটায় অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়টি নজরে এলে বিষয়টির তদন্তে একটি কমিটি গঠন করেছেন জেলা প্রশাসন। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীম ভূঁইয়া জানান, কিশোর-কিশোরী ক্লাবে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়টি আমি শুনেছি। অভিযোগ শোনার পরে আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। কমিটির সদস্যরা এ বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছেন। জেলার সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলছে, অপসংস্কৃতি হটাতে কিশোর-কিশোরী ক্লাব সাহায্য করবে। সৃজনশীল ও গঠনমূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কিশোর-কিশোরীদের অবস্থান দৃঢ় করাসহ তাদের ক্লাবে সরকারি বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

চুয়াডাঙ্গার কিশোর-কিশোরী ক্লাবে অর্ধেক খরচে দেওয়া হয় নাস্তা

আপডেট সময় : ১২:১৮:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২২

চুয়াডাঙ্গা সংবাদদাতা : প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের অধীন চুয়াডাঙ্গার কিশোর-কিশোরী ক্লাবে শিক্ষার্থীদের জন্য খাবার বরাদ্দের অর্থ ও উপকরণ কেনাকাটায় অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। জেলার ৪১টি ক্লাবে প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য প্রতিদিনের নাস্তার জন্য ৩০ টাকার খাবার বরাদ্দ থাকলেও অর্ধেক টাকায় নাস্তা দেওয়া হয়। এছাড়া ক্লাবের সরঞ্জাম কেনাকাটার অধিকাংশ বরাদ্দের টাকার কোনও হিসাব নেই কারও কাছে। এছাড়া প্রশিক্ষকদের সন্মানি নিয়েও রয়েছে নয়-ছয়। এতে ক্ষোভ ছড়িয়েছে ক্লাবের শিক্ষার্থী ও প্রশিক্ষকদের মধ্যে।
তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দাবি, এ প্রকল্পের সব বরাদ্দই সুষ্ঠুভাবে বণ্টন করা হয়। এদিকে, অভিযোগের বিষয়টি নজরে এলে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রান্তিক পর্যায়ে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে সৃজনশীল ও গঠনমূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল এবং দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তর করতে চুয়াডাঙ্গায় চালু হয় কিশোর-কিশোরী ক্লাবের কার্যক্রম। জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের আওতায় সব ইউনিয়ন পর্যায়ে ৪১টি ক্লাবে অন্তত ১২শ’ কিশোর-কিশোরী সপ্তাহে দুইদিন বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকেন।
এ জন্য প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে নাস্তা ও খেলাধুলার উপকরণ সরবরাহ করা হয়। সপ্তাহের দু’দিনের প্রতি ক্লাসে শিক্ষার্থীদের জন্য ৩০ টাকা সমপরিমাণের নাস্তা সরবরাহের কথা রয়েছে। কিন্তু সে বরাদ্দের অর্ধেক টাকার নাস্তা দিয়েই দায় সারছে কর্তৃপক্ষ। বাকি অর্ধেক টাকা কোথায় যায় তার স্পষ্ট ধারণা নেই কারও। কিশোর-কিশোরীদের জন্য খেলা ও অন্যান্য সামগ্রীর জন্য বরাদ্দ রয়েছে এসব ক্লাবে। কিন্তু কিছু কিছু ক্লাবে এসব সামগ্রী দিলেও তার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এছাড়া সঠিক নজরদারি নিয়েও অভিযোগ তুলেছে শিক্ষার্থীরা। নেহালপুর কিশোর-কিশোরী ক্লাবের শিক্ষার্থী প্রিয়া আক্তার বলেন, আমাদের জন্য নাস্তার বরাদ্দ ৩০ টাকা থাকলেও আমাদের নাস্তা দেওয়া হয় ১২ থেকে ১৫ টাকার। একটি কলা একটা কেকের সঙ্গে ছোট লাড্ডু দেওয়া হয় আমাদের। রেল-বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কিশোর-কিশোরী ক্লাবের শিক্ষার্থী রাজু বলেন, নাস্তায় দুই টাকার একটি বিস্কুটের প্যাকেট, দুই টাকা দামের একটি লাড্ডু ও ৭ টাকা দামের একটি কমলা লেবু দেওয়া হয়। প্রতিদিনই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দের টাকার নয়-ছয় নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রশিক্ষকরাও। ক্লাবের প্রশিক্ষক সম্রাট অভিযোগ করেন, ক্লাবের সরঞ্জাম কেনাকাটার অধিকাংশ বরাদ্দের টাকার কোনও হিসাব নেই। গানের ক্লাসের বরাদ্দকৃত টাকায় তবলা, হারমনিয়ামসহ যেসব সরঞ্জাম কেনা হয়েছে তা দেখলেই বোঝা যায় কতটা দুর্নীতি হয়েছে। ক্লাবের আরেক প্রশিক্ষক আফসানা জানান, করোনাকালে ক্লাস নিলেও সেই সময়ে সম্মানি পাইনি। প্রশিক্ষণার্থী কোমলমতি শিশুদের দেওয়া হয়নি কোনও নাস্তা। দীর্ঘদিন ধরেই বরাদ্দের অর্ধেক টাকার হিসাব মেলে না। এ প্রশ্নের কোনও উত্তরও কেউ দিতে পারে না। এসব বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে ধর্ণা দিয়েও মেলেনি কোনও সমাধান। তবে চুয়াডাঙ্গা মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের উপ-পরিচালক মাকসুরা জান্নাতের দাবি সব অভিযোগই অসত্য। এ প্রকল্পের সব বরাদ্দ সুষ্ঠুভাবে বণ্টন করা হয়। শিক্ষার্থী ও প্রশিক্ষকদের অভিযোগও সঠিক না। মনগড়া কথা বলেছেন সবাই। চুয়াডাঙ্গায় কিশোর-কিশোরী ক্লাবে খাবারের অর্থ ও কেনাকাটায় অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়টি নজরে এলে বিষয়টির তদন্তে একটি কমিটি গঠন করেছেন জেলা প্রশাসন। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীম ভূঁইয়া জানান, কিশোর-কিশোরী ক্লাবে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়টি আমি শুনেছি। অভিযোগ শোনার পরে আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। কমিটির সদস্যরা এ বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছেন। জেলার সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলছে, অপসংস্কৃতি হটাতে কিশোর-কিশোরী ক্লাব সাহায্য করবে। সৃজনশীল ও গঠনমূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কিশোর-কিশোরীদের অবস্থান দৃঢ় করাসহ তাদের ক্লাবে সরকারি বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।