ঢাকা ০৯:১২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫

চুরির অপবাদ দিয়ে গাজীপুরে কারখানায় শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যা

  • আপডেট সময় : ০৫:০০:২৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫
  • ৮ বার পড়া হয়েছে

কারখানার একটি কক্ষ থেকে হৃদয়কে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় টেনেহিঁচড়ে বের করেন কয়েকজন -ছবি কারখানার সিসিটিভি ফুটেজ থেকে সরবরাহকৃত

প্রত্যাশা ডেস্ক: গাজীপুরে চুরির অপবাদ দিয়ে কারখানায় এক শ্রমিককে রশি দিয়ে বেঁধে পিটিয়ে হত্যা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মারধরের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর কারখানাটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। শনিবার (২৮ জুন) ভোরের দিকে কারখানার ভেতর তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয় বলে পরিবার মামলায় অভিযোগ করেছে।

এ ঘটনায় থানায় একটি হত্যা মামলা হলেও জড়িত কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি। ওই মামলায় গত রোববার (২৯ জুন) রাতে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

গত শনিবার ভোরের দিকে গাজীপুর নগরের কোনাবাড়ীতে গ্রিনল্যান্ড লিমিটেড নামের কারখানায় ওই ঘটনা ঘটে। নিহত শ্রমিক হৃদয় (১৯) টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার শুকতার বাইদ গ্রামের আবুল কালামের ছেলে। তিনি কারখানাটিতে মেকানিক্যাল মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতেন।

হৃদয়কে মারধরের ১ মিনিট ১৬ সেকেন্ডের ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দেখা যায়, তাঁকে কারখানার একটি কক্ষের জানালার সঙ্গে রশি দিয়ে হাত-পা বেঁধে খালি গায়ে একটি সোফার ওপর বসিয়ে রাখা হয়েছে। তিনি যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন। একপর্যায়ে হৃদয়ের মুখ ও নাক দিয়ে রক্ত ঝরতে দেখা যায়। তাঁর জিনসের প্যান্টেও রক্তের দাগ লেগে ছিল। এ সময় আশপাশের কয়েকজনকে বলতে শোনা যায়, ‘এত করে পিটানো হইছে, (তারপরও) কিছুই হয় নাই, মরে নাই।’

ভিডিওর আরেকটি অংশে দেখা যায়, হৃদয়কে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় একটি কক্ষ থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করছেন কয়েকজন। তাঁদের মধ্যে একজনের হাতে কাঠের লাঠি ছিল। তখনো পিঠের দিকে হাত মুড়িয়ে মাঝে লাঠি জুড়ে রশি দিয়ে বাঁধা অবস্থায় ছিলেন হৃদয়। রশির একটি অংশ দিয়ে তাঁর দুই পা–ও বাঁধা ছিল। ওই অবস্থায় কয়েকজন তাঁকে দাঁড় করানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু হৃদয় ঠিকমতো দাঁড়াতে পারছিলেন না।

এ ঘটনায় হৃদয়ের বড় ভাই লিটন মিয়া বাদী হয়ে কোনাবাড়ী থানায় গত শনিবার রাতে অজ্ঞানামা আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। গতকাল রোববার পুলিশ অভিযান চালিয়ে হাসান মাহমুদ নামের একজনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার ব্যক্তি ওই কারখানারই শ্রমিক।

পুলিশ ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, হৃদয় ডিউটি শেষে বাসায় না ফেরায় শনিবার বিকেলে তাঁর ভাই লিটন ও মা কারখানার দিকে যান। সেখানে গিয়ে কারখানায় শ্রমিকদের বিক্ষোভ দেখে জানতে পারেন, চুরির অপবাদ দিয়ে হৃদয়কে হত্যা করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ করা হয়েছে। পরে তাঁরা লাশের সন্ধান চাইলে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজে আছে বলে জানানো হয়। সেখানে গিয়ে গিয়ে তাঁরা মরদেহটি শনাক্ত করেন।

মামলার বাদী লিটন মিয়া বলেন, ‘গ্রিনল্যান্ড লিমিটেড কারখানার ভেতরে আমার ভাইকে ম্যালা মারধর করে হত্যা করা হইছে। পরে এটিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য তাঁর লাশ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। আমরা ভাইয়ের হত্যার বিচার চাই।’

হৃদয়কে পিটিয়ে হত্যার সঙ্গে জড়িত সবাইকে শনাক্ত করার দাবি করেছেন কোনাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহউদ্দিন। তিনি বলেন, এরই মধ্যে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।

ওই ঘটনার পর কারখানা কর্তৃপক্ষ এক নোটিশে অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটি ঘোষণা করেছে। তবে গাজীপুর শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার এ কে এম জহিরুল ইসলাম সোমবার (৩০ জুন) দুপুরে বলেন, ওই ঘটনার পর কারখানাটি দুই দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১ জুলাই) সেটি খুলে দেওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। এ ব্যাপারে কথা বলতে গ্রিনল্যান্ড লিমিটেড কারখানার ডিজিএম কামরুল হাসানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি বলে একটি শীর্ষ সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে।

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

আওয়ামী লীগ শাসন পতনের অভূতপূর্ব সূচনার ঐতিহাসিক জুলাই

চুরির অপবাদ দিয়ে গাজীপুরে কারখানায় শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যা

আপডেট সময় : ০৫:০০:২৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫

প্রত্যাশা ডেস্ক: গাজীপুরে চুরির অপবাদ দিয়ে কারখানায় এক শ্রমিককে রশি দিয়ে বেঁধে পিটিয়ে হত্যা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মারধরের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর কারখানাটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। শনিবার (২৮ জুন) ভোরের দিকে কারখানার ভেতর তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয় বলে পরিবার মামলায় অভিযোগ করেছে।

এ ঘটনায় থানায় একটি হত্যা মামলা হলেও জড়িত কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি। ওই মামলায় গত রোববার (২৯ জুন) রাতে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

গত শনিবার ভোরের দিকে গাজীপুর নগরের কোনাবাড়ীতে গ্রিনল্যান্ড লিমিটেড নামের কারখানায় ওই ঘটনা ঘটে। নিহত শ্রমিক হৃদয় (১৯) টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার শুকতার বাইদ গ্রামের আবুল কালামের ছেলে। তিনি কারখানাটিতে মেকানিক্যাল মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতেন।

হৃদয়কে মারধরের ১ মিনিট ১৬ সেকেন্ডের ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দেখা যায়, তাঁকে কারখানার একটি কক্ষের জানালার সঙ্গে রশি দিয়ে হাত-পা বেঁধে খালি গায়ে একটি সোফার ওপর বসিয়ে রাখা হয়েছে। তিনি যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন। একপর্যায়ে হৃদয়ের মুখ ও নাক দিয়ে রক্ত ঝরতে দেখা যায়। তাঁর জিনসের প্যান্টেও রক্তের দাগ লেগে ছিল। এ সময় আশপাশের কয়েকজনকে বলতে শোনা যায়, ‘এত করে পিটানো হইছে, (তারপরও) কিছুই হয় নাই, মরে নাই।’

ভিডিওর আরেকটি অংশে দেখা যায়, হৃদয়কে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় একটি কক্ষ থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করছেন কয়েকজন। তাঁদের মধ্যে একজনের হাতে কাঠের লাঠি ছিল। তখনো পিঠের দিকে হাত মুড়িয়ে মাঝে লাঠি জুড়ে রশি দিয়ে বাঁধা অবস্থায় ছিলেন হৃদয়। রশির একটি অংশ দিয়ে তাঁর দুই পা–ও বাঁধা ছিল। ওই অবস্থায় কয়েকজন তাঁকে দাঁড় করানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু হৃদয় ঠিকমতো দাঁড়াতে পারছিলেন না।

এ ঘটনায় হৃদয়ের বড় ভাই লিটন মিয়া বাদী হয়ে কোনাবাড়ী থানায় গত শনিবার রাতে অজ্ঞানামা আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। গতকাল রোববার পুলিশ অভিযান চালিয়ে হাসান মাহমুদ নামের একজনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার ব্যক্তি ওই কারখানারই শ্রমিক।

পুলিশ ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, হৃদয় ডিউটি শেষে বাসায় না ফেরায় শনিবার বিকেলে তাঁর ভাই লিটন ও মা কারখানার দিকে যান। সেখানে গিয়ে কারখানায় শ্রমিকদের বিক্ষোভ দেখে জানতে পারেন, চুরির অপবাদ দিয়ে হৃদয়কে হত্যা করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ করা হয়েছে। পরে তাঁরা লাশের সন্ধান চাইলে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজে আছে বলে জানানো হয়। সেখানে গিয়ে গিয়ে তাঁরা মরদেহটি শনাক্ত করেন।

মামলার বাদী লিটন মিয়া বলেন, ‘গ্রিনল্যান্ড লিমিটেড কারখানার ভেতরে আমার ভাইকে ম্যালা মারধর করে হত্যা করা হইছে। পরে এটিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য তাঁর লাশ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। আমরা ভাইয়ের হত্যার বিচার চাই।’

হৃদয়কে পিটিয়ে হত্যার সঙ্গে জড়িত সবাইকে শনাক্ত করার দাবি করেছেন কোনাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহউদ্দিন। তিনি বলেন, এরই মধ্যে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।

ওই ঘটনার পর কারখানা কর্তৃপক্ষ এক নোটিশে অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটি ঘোষণা করেছে। তবে গাজীপুর শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার এ কে এম জহিরুল ইসলাম সোমবার (৩০ জুন) দুপুরে বলেন, ওই ঘটনার পর কারখানাটি দুই দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১ জুলাই) সেটি খুলে দেওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। এ ব্যাপারে কথা বলতে গ্রিনল্যান্ড লিমিটেড কারখানার ডিজিএম কামরুল হাসানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি বলে একটি শীর্ষ সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে।