প্রত্যাশা ডেস্ক: মাত্র কয়েক মাস আগেই এই বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করতে গিয়েই প্রাণ হারিয়েছিলেন নুপুরের বাবা রুপলাল রবিদাস (৪০) এবং হবু জামাই প্রদীপ দাস (৩৫)। সেই ঘটনায় এখনো শোকের ছায়া কাটেনি পরিবারে। বাড়িতে চলছে বিয়ের সাজসজ্জা। গেট ও প্যান্ডেল ঝলমলে, অতিথি আপ্যায়নের জন্য জবাই করা হয়েছে তিনটি খাসি। অথচ আনন্দের এই আয়োজনের মাঝেই ঘরভর্তি কান্না। কারণ, এই বিয়ের ঘর সাজানো হয়েছে সেই রুপলাল রবিদাসের মেয়ে নুপুর রবিদাসের জন্য, যিনি চুরির অপবাদে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছিলেন। আজ রোববার (২ নভেম্বর) বিয়ের পিঁড়িতে বসছেন বাবা হারানো নুপুর।
রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের ঘনিরামপুর ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের জুতা সেলাই শ্রমিক রুপলাল রবিদাস ছিলেন সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। দুই মেয়ে ও এক ছেলে—তিন সন্তানের শিক্ষার খরচ জোগাতে হিমশিম খেতেন তিনি। স্ত্রী ভারতী রানী স্থানীয় এক জুতা কারখানায় কাজ করলেও অসুস্থতার কারণে দীর্ঘদিন ধরে কর্মহীন।
১০ আগস্ট নুপুরের বিয়ের তারিখ ঠিক করতে বাড়িতে আয়োজন ছিল। সেদিন হবু জামাই প্রদীপকে নিমন্ত্রণ জানিয়ে বাড়িতে ডাকা হয়েছিল। কিন্তু ৯ আগস্ট রাতে তারাগঞ্জ-কাজিরহাট এলাকায় চুরির সন্দেহে স্থানীয়রা রুপলাল ও প্রদীপকে ধরে গণপিটুনি দেয়। ঘটনাস্থলেই মারা যান রুপলাল, আর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রাণ হারান প্রদীপ। প্রায় ৪০০ অতিথিকে আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু এই আয়োজনের পেছনে হাসির চেয়ে কান্নাই বেশি।
নুপুর বলেন, বিয়ের আয়োজন হলেও মনে আনন্দ নেই। বাবা ছাড়া এই বিয়ের কোনো মানে নেই। আমার বাবার হত্যাকারীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে, অথচ কেউ কিছু বলছে না। পুলিশও গ্রেফতার করছে না।
রুপলালের ছেলে জয় রবিদাস জানান, বাবা না থাকায় বিয়ের সব কাজ আমাকে সামলাতে হচ্ছে। অনেক খরচ, অনেক দুশ্চিন্তা। এখন পর্যন্ত কেউ সহযোগিতা করেনি। মামা-খালারা পাশে আছেন।
স্ত্রী ভারতী রানী বলেন, ধারদেনা করে মেয়ের বিয়ে দিতে হচ্ছে। অনেকেই সহায়তার কথা বলেছিল, কিন্তু এখন কেউ খোঁজ নেয় না।
রুপলালের মৃত্যুর পর উপজেলা পরিষদের তহবিল থেকে এক লাখ টাকা ও সমাজসেবা কার্যালয় থেকে ১০ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রুবেল রানা। তিনি আরো জানান, রুপলালের পরিবারকে শিক্ষাভাতা, বিধবাভাতা ও ব্যবসার জন্য জায়গা বরাদ্দের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
গত ৯ আগস্ট রাতে তারাগঞ্জের বুড়িরহাট এলাকায় স্থানীয়দের সন্দেহে রুপলাল ও প্রদীপকে আটক করে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরে রুপলালের স্ত্রী ভারতী রানী বাদী হয়ে ৫০০-৭০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে হত্যা মামলা করেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
আজ নুপুরের মাথায় সিঁদুর পড়বে, কিন্তু আশীর্বাদের হাত রাখার কেউ আর নেই। শোক আর স্মৃতির মাঝেই চলছে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা।
এসি/আপ্র/০২/১১/২০২৫























