ঢাকা ০৭:০৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫

চীনের হুঁশিয়ারির মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট

  • আপডেট সময় : ১১:৪৬:০১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ ২০২৩
  • ৮৯ বার পড়া হয়েছে

বিদেশের খবর ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রকে গুরুতর প্রতিক্রিয়া দেখানোর হুঁশিয়ারি দেওয়া চীনের কঠোর সমালোচনার মধ্যেই মধ্য আমেরিকা যাওয়ার পথে নিউ ইয়র্কে নেমেছেন তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন। মধ্য আমেরিকা সফরে যাওয়া আসার পথে সাইয়ের দুইবার যুক্তরাষ্ট্রে ‘ট্রানজিট’ বা বিরতি নেওয়ার সূচি আগে থেকেই ঠিক করা আছে। ফিরতি পথে ক্যালিফোর্নিয়ায় যাত্রাবিরতি নেবেনে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট, তখন মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার কেভিন ম্যাককার্থির সঙ্গে তার বৈঠকও হতে পারে। তাইওয়ানকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন প্রদেশ দাবি করে আসা চীন এ ধরনের বৈঠকের নিন্দা জানিয়ে আসছে; সাই-ম্যাককার্থি সম্ভাব্য ওই বৈঠকটি হলে তা ‘গুরুতর সংঘাতের’ দিকে নিয়ে যেতে পারে বলে হুঁশিয়ারিও দিয়েছে তারা, জানিয়েছে বিবিসি। এর পাল্টায় যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, সাইয়ের সফর নিয়ে বেইজিংয়ের মাত্রাতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত নয়। “যুক্তরাষ্ট্র একটি স্বাভাবিক, ঘটনাহীন যাত্রাবিরতি দেখার আশা করছে,” বুধবার এমনটাই বলেছেন হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক মুখপাত্র জন কারবি। তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর এটা যুক্তরাষ্ট্রে সাইয়ের সপ্তম ‘ট্রানজিট’ বা যাত্রাবিরতি বলে জানিয়েছেন তিনি। “এটা নিয়মিতই হচ্ছে। তাইওয়ানের অন্যান্য প্রেসিডেন্টও যুক্তরাষ্ট্রে যাত্রাবিরতি নিয়েছে। এটার মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু নেই,” এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন কারবি। ১৯৯৪ সালে প্রথম তাইওয়ানের ক্ষমতাসীন কোনো প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্রে যাত্রাবিরতি নেওয়ার পর সাইয়েরটা হচ্ছে ২৯তম ট্রানজিট। বুধবার নিউ ইয়র্কে নামার পর হোটেলকক্ষের বাইরে সমর্থকদের জমায়েত সাইকে বরণ করে নেয়, কিন্তু বিরোধীরা সেখানে বিক্ষোভ দেখায়। মধ্য আমেরিকার মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত রাখার লক্ষ্যে গুয়াতেমালা ও বেলিজে যাচ্ছেন সাই, ফেরার পথে লস এঞ্জেলেসে যাত্রাবিরতির সূচি আছে তার। সেখানেই তার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের বৈঠক হতে পারে বলে জানিয়েছে মার্কিন গণমাধ্যমগুলো। সাই নিউ ইয়র্কে পৌঁছানোর পর দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় ওয়াশিংটনে নিযুক্ত চীনের ঊর্ধ্বতন দূত যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘তাইওয়ানের স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করার’ অভিযোগ এনেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে যাত্রাবিরতি নিতে দিয়ে সাই-কে স্বশাসিত দ্বীপটিতে ‘চমক দেখানোর’ সুযোগ করে দিয়েছে ওয়াশিংটন, বলেছেন তিনি।
“তাইওয়ানের নেতার যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া কিংবা মার্কিন নেতাদের তাইওয়ান সফর, যেটাই হোক না কেন, এগুলো চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ককে আরেকটি গুরতর, গুরুতর, গুরুতর সংঘাতের দিকে ঠেলে দিতে পারে,” সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন চীনের শার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স জু জুয়েউয়ান। সাই-কে যুক্তরাষ্ট্রে নামার সুযোগ দিয়ে ওয়াশিংটন ‘চীনের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখ-তাকে গুরুতরভাবে খাটো করল। তাইওয়ান প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রকে ফের আগুন নিয়ে না খেলতে আহ্বান জানাচ্ছি আমরা,” বলেছেন তিনি। বেইজিং তাইওয়ানকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন প্রদেশ মনে করে, যেটি একদিন না একদিন মূল ভূখ-ের সঙ্গে একত্রিত হবে বলেই তাদের আশা। তাইওয়ানকে চীনের অংশ বিবেচনা করে যে ‘এক চীন’ নীতি তাতে যুক্তরাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক সমর্থনও আছে। তবে অনানুষ্ঠানিকভাবে ওয়াশিংটন ও তাইপের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান; ত্ইাওয়ানের সুরক্ষায় সহায়তা দিতে যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের আইনেই বাধ্য। সাইয়ের সফরের কড়া প্রতিবাদ জানিয়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং দেশটির তাইয়ান বিষয়ক কার্যালয়ও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘এক চীন’ নীতি লংঘনের অভিযোগ এনেছে। “আমরা দৃঢ়ভাবে এর (সাইয়ের সফর) বিরোধিতা করছি এবং অবশ্যই পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়া হবে,” বুধবার সাংবাদিকদের এমনটাই বলেছেন তাইওয়ান বিষয়ক কার্যালয়ের মুখপাত্র ঝু ফেংলিয়ান। মধ্য আমেরিকা সফর শেষে ৭ এপ্রিল সাইয়ের তাইওয়ান ফেরার কথা রয়েছে। তাইওয়ান নিজেদের সার্বভৌম দেশ মনে করে; স্বশাসিত এই দ্বীপটিকে মূল ভূখ-ের সঙ্গে একত্রিত করতে প্রয়োজনে বল প্রয়োগের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়নি বেইজিং। গত বছর মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের তৎকালীন স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি তাইপেতে নেমে সাইয়ের সঙ্গে বৈঠক করার পর চীন, তাইওয়ান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছিল।
পেলোসির সফরের প্রতিক্রিয়ায় বেইজিং এক সপ্তাহ ধরে তাইওয়ানের আশপাশের জলসীমায় ব্যাপক সামরিক মহড়া চালিয়েছিল। মধ্য আমেরিকায় সাইয়ের সফরের কয়েকদিন আগেই তাইপের একসময়কার মিত্র হন্ডুরাস পক্ষ বদল করে চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে। হন্ডুরাস সম্পর্ক ছিন্ন করায় তাইওয়ানকে স্বীকৃতি দেওয়া দেশের সংখ্যা কমে এখন ১৩-তে দাঁড়িয়েছে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

চীনের হুঁশিয়ারির মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট

আপডেট সময় : ১১:৪৬:০১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ ২০২৩

বিদেশের খবর ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রকে গুরুতর প্রতিক্রিয়া দেখানোর হুঁশিয়ারি দেওয়া চীনের কঠোর সমালোচনার মধ্যেই মধ্য আমেরিকা যাওয়ার পথে নিউ ইয়র্কে নেমেছেন তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন। মধ্য আমেরিকা সফরে যাওয়া আসার পথে সাইয়ের দুইবার যুক্তরাষ্ট্রে ‘ট্রানজিট’ বা বিরতি নেওয়ার সূচি আগে থেকেই ঠিক করা আছে। ফিরতি পথে ক্যালিফোর্নিয়ায় যাত্রাবিরতি নেবেনে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট, তখন মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার কেভিন ম্যাককার্থির সঙ্গে তার বৈঠকও হতে পারে। তাইওয়ানকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন প্রদেশ দাবি করে আসা চীন এ ধরনের বৈঠকের নিন্দা জানিয়ে আসছে; সাই-ম্যাককার্থি সম্ভাব্য ওই বৈঠকটি হলে তা ‘গুরুতর সংঘাতের’ দিকে নিয়ে যেতে পারে বলে হুঁশিয়ারিও দিয়েছে তারা, জানিয়েছে বিবিসি। এর পাল্টায় যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, সাইয়ের সফর নিয়ে বেইজিংয়ের মাত্রাতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত নয়। “যুক্তরাষ্ট্র একটি স্বাভাবিক, ঘটনাহীন যাত্রাবিরতি দেখার আশা করছে,” বুধবার এমনটাই বলেছেন হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক মুখপাত্র জন কারবি। তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর এটা যুক্তরাষ্ট্রে সাইয়ের সপ্তম ‘ট্রানজিট’ বা যাত্রাবিরতি বলে জানিয়েছেন তিনি। “এটা নিয়মিতই হচ্ছে। তাইওয়ানের অন্যান্য প্রেসিডেন্টও যুক্তরাষ্ট্রে যাত্রাবিরতি নিয়েছে। এটার মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু নেই,” এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন কারবি। ১৯৯৪ সালে প্রথম তাইওয়ানের ক্ষমতাসীন কোনো প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্রে যাত্রাবিরতি নেওয়ার পর সাইয়েরটা হচ্ছে ২৯তম ট্রানজিট। বুধবার নিউ ইয়র্কে নামার পর হোটেলকক্ষের বাইরে সমর্থকদের জমায়েত সাইকে বরণ করে নেয়, কিন্তু বিরোধীরা সেখানে বিক্ষোভ দেখায়। মধ্য আমেরিকার মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত রাখার লক্ষ্যে গুয়াতেমালা ও বেলিজে যাচ্ছেন সাই, ফেরার পথে লস এঞ্জেলেসে যাত্রাবিরতির সূচি আছে তার। সেখানেই তার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের বৈঠক হতে পারে বলে জানিয়েছে মার্কিন গণমাধ্যমগুলো। সাই নিউ ইয়র্কে পৌঁছানোর পর দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় ওয়াশিংটনে নিযুক্ত চীনের ঊর্ধ্বতন দূত যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘তাইওয়ানের স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করার’ অভিযোগ এনেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে যাত্রাবিরতি নিতে দিয়ে সাই-কে স্বশাসিত দ্বীপটিতে ‘চমক দেখানোর’ সুযোগ করে দিয়েছে ওয়াশিংটন, বলেছেন তিনি।
“তাইওয়ানের নেতার যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া কিংবা মার্কিন নেতাদের তাইওয়ান সফর, যেটাই হোক না কেন, এগুলো চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ককে আরেকটি গুরতর, গুরুতর, গুরুতর সংঘাতের দিকে ঠেলে দিতে পারে,” সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন চীনের শার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স জু জুয়েউয়ান। সাই-কে যুক্তরাষ্ট্রে নামার সুযোগ দিয়ে ওয়াশিংটন ‘চীনের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখ-তাকে গুরুতরভাবে খাটো করল। তাইওয়ান প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রকে ফের আগুন নিয়ে না খেলতে আহ্বান জানাচ্ছি আমরা,” বলেছেন তিনি। বেইজিং তাইওয়ানকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন প্রদেশ মনে করে, যেটি একদিন না একদিন মূল ভূখ-ের সঙ্গে একত্রিত হবে বলেই তাদের আশা। তাইওয়ানকে চীনের অংশ বিবেচনা করে যে ‘এক চীন’ নীতি তাতে যুক্তরাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক সমর্থনও আছে। তবে অনানুষ্ঠানিকভাবে ওয়াশিংটন ও তাইপের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান; ত্ইাওয়ানের সুরক্ষায় সহায়তা দিতে যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের আইনেই বাধ্য। সাইয়ের সফরের কড়া প্রতিবাদ জানিয়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং দেশটির তাইয়ান বিষয়ক কার্যালয়ও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘এক চীন’ নীতি লংঘনের অভিযোগ এনেছে। “আমরা দৃঢ়ভাবে এর (সাইয়ের সফর) বিরোধিতা করছি এবং অবশ্যই পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়া হবে,” বুধবার সাংবাদিকদের এমনটাই বলেছেন তাইওয়ান বিষয়ক কার্যালয়ের মুখপাত্র ঝু ফেংলিয়ান। মধ্য আমেরিকা সফর শেষে ৭ এপ্রিল সাইয়ের তাইওয়ান ফেরার কথা রয়েছে। তাইওয়ান নিজেদের সার্বভৌম দেশ মনে করে; স্বশাসিত এই দ্বীপটিকে মূল ভূখ-ের সঙ্গে একত্রিত করতে প্রয়োজনে বল প্রয়োগের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়নি বেইজিং। গত বছর মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের তৎকালীন স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি তাইপেতে নেমে সাইয়ের সঙ্গে বৈঠক করার পর চীন, তাইওয়ান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছিল।
পেলোসির সফরের প্রতিক্রিয়ায় বেইজিং এক সপ্তাহ ধরে তাইওয়ানের আশপাশের জলসীমায় ব্যাপক সামরিক মহড়া চালিয়েছিল। মধ্য আমেরিকায় সাইয়ের সফরের কয়েকদিন আগেই তাইপের একসময়কার মিত্র হন্ডুরাস পক্ষ বদল করে চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে। হন্ডুরাস সম্পর্ক ছিন্ন করায় তাইওয়ানকে স্বীকৃতি দেওয়া দেশের সংখ্যা কমে এখন ১৩-তে দাঁড়িয়েছে।