নিজস্ব প্রতিবেদক: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের চীন সফরে রেল, স্বাস্থ্য ও পানিবিষয়ক সহযোগিতাকে গুরুত্ব দেবে বাংলাদেশ। চীনের সহযোগিতায় ঢাকার পূর্বাচলে একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণের জন্য জমিসহ অন্যান্য সুবিধা দিতে প্রস্তুত বাংলাদেশ।
রোববার (১৯ জানুয়ারি) পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনের সৌজন্য সাক্ষাতের সময় বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
এছাড়া বাংলাদেশি নাগরিকদের উন্নতমানের চিকিৎসার জন্য চীনের কুনমিংয়ে তিন থেকে চারটি অত্যাধুনিক হাসপাতাল নির্ধারণ করে দেওয়ার অনুরোধ জানাবে ঢাকা। বাংলাদেশ রেলওয়ের সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগের আওতায় যাত্রীদের জন্য আরও রেলওয়ে কোচ যুক্ত করার জন্য চীনের সহায়তা চাইবেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। আলোচনায় চীনের রাষ্ট্রদূত জানান, চীনা ঋণের সুদের হার কমানোর বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছে বেইজিং।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈঠকে চীনা রাষ্ট্রদূত উপদেষ্টাকে ২০ থেকে ২৪ জানুয়ারি চীনে তার প্রথম আসন্ন দ্বিপাক্ষিক সফরের বিষয়ে অবহিত করেন। রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টার নেতৃত্বে আনুষ্ঠানিক আলোচনার সময় চীনা নেতাদের সঙ্গে আলোচনার বিষয়গুলো সম্পর্কে অবহিত করেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আলোচনায় উপদেষ্টা বিভিন্ন বিভাগে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা সম্প্রসারণের গুরুত্বও তুলে ধরেন। তিনি বাংলাদেশ রেলওয়ের সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগের আওতায় যাত্রীদের জন্য আরও রেলওয়ে কোচ যুক্ত করার জন্য চীনের সহায়তা কামনা করেন।
স্বাস্থ্য খাতে সহযোগিতার গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা উল্লেখ করেন যে, ঢাকার পূর্বাচলে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশেষায়িত চীনা হাসপাতাল তৈরি করার জন্য জমি এবং অন্যান্য সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত রয়েছে বাংলাদেশ। চীনের কুনমিংয়ে অন্তত তিন থেকে চারটি শীর্ষস্থানীয় হাসপাতাল মনোনীত করার জন্য অনুরোধ করেছেন, যাতে বাংলাদেশি নাগরিকরা সেখানে গিয়ে উন্নত চিকিৎসা নিতে পারেন। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আশা প্রকাশ করেন, আহত শিক্ষার্থীরা দ্রুত চীনে তাদের চিকিৎসা পাবেন। চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থে চীন সবকিছুই করবে।
রাষ্ট্রদূত পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে আরও জানান, আসন্ন সফরের সময় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পাঠানো জলবিদ্যুৎ সংক্রান্ত তথ্য বিনিময়ের বাস্তবায়ন পরিকল্পনা সংক্রান্ত সমঝোতা স্বাক্ষর করতে চীন প্রস্তুত।
সফরের গুরুত্ব তুলে ধরে রাষ্ট্রদূত উপদেষ্টাকে জানান, তার দেশের জনগণ চীনে পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে স্বাগত জানাতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। চীন বাংলাদেশের সব সময়ের পরীক্ষিত বন্ধু এবং সরকার নির্বিশেষে বাংলাদেশের জনগণের পাশে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়েছে। তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন যে, চীন বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে সম্মান করে। তিনি বলেন, চীন বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা, সংস্কার এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণ ও উন্নয়ন উদ্যোগের জন্য তাদের সমর্থন অব্যাহত রাখবে।
ভালো বন্ধু ও প্রতিবেশীর চেতনায় বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়ে চীন জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের তাদের মাতৃভূমিতে দ্রুত প্রত্যাবাসনে তার সমর্থন অব্যাহত রাখবে।
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য রোডম্যাপ তৈরির গুরুত্বের ওপর আলোকপাত করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ আশা করে, চীন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশকে সাহায্য করার জন্য একটি শক্তিশালী ও সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে।
চীনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ সর্বদা ‘এক চীননীতি’ সমর্থন করে এবং বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০ বছরপূর্তি উদযাপনের প্রাক্কালে এই সফর গভীর বোঝাপড়া, বন্ধুত্ব এবং সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করবে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ চীনে বাংলাদেশি পণ্যের ১০০ শতাংশ শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধার প্রশংসা করে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই বাজারে প্রবেশাধিকার ২০২৯ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে (তিন বছর এলডিসি-উত্তরণ পরবর্তী সময়ের পরে)।