বিদেশের খবর ডেস্ক : চীনের সর্বোচ্চ আইনসভা জাতীয় গণকংগ্রেসের (এনপিসি) তৃতীয় বার্ষিক অধিবেশন শুরু হয়েছে। গতকাল বুধবার সকালে বেইজিংয়ের মহাগণভবনে এই অধিবেশন উদ্বোধন করা হয়। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংসহ কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃবৃন্দ ও কর্মকর্তারা এবং এনপিসির ২ হাজার ৮৮০ জন প্রতিনিধি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অধিবেশনে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি ছিয়াং সরকারি কর্ম প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। এতে ২০২৪ সালের কাজকর্মের সারাংশ এবং ২০২৫ সালের অর্থনীতি ও সমাজের উন্নয়নের লক্ষ্য ও পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনে ২০২৫ সালের জন্য জিডিপি বৃদ্ধির লক্ষ্য ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া শহুরে বেকারত্বের হার ৫.৫ শতাংশ এবং শহরে ১.২ কোটিরও বেশি নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করা হয়েছে। চীনের জাতীয় গণকংগ্রেসের এই অধিবেশন ১১ মার্চ পর্যন্ত চলবে। এ সময় দেশের গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা, আইন ও কর্মী নিয়োগ নিয়ে আলোচনা করা হবে। প্রধানমন্ত্রী লি ছিয়াং বলেন, ২০২৫ সালে চীনের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের প্রধান লক্ষ্য হলো অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ানো, সবুজ রূপান্তর ত্বরান্বিত করা এবং উচ্চমানের উন্মুক্তকরণ নীতি অব্যাহত রাখা। তিনি আরও বলেন, আমরা ‘এক চীন নীতিতে’ অবিচল থাকব এবং তাইওয়ানের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরোধিতা করব।
অর্থনৈতিক লক্ষ্য ও পরিকল্পনা
সরকারি কর্ম প্রতিবেদনে ২০২৫ সালের জন্য বেশ কিছু অর্থনৈতিক লক্ষ্য উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে: জিডিপি বৃদ্ধি প্রায় ৫ শতাংশ, শহুরে বেকারত্বের হার ৫.৫ শতাংশে নিয়ে আসা, শস্য উৎপাদন ৭০০ বিলিয়ন কেজি, জিডিপির প্রতি ইউনিট জ্বালানির ব্যবহার প্রায় ৩ শতাংশ কমানো এবং পরিবেশের গুণগত মান অব্যাহতভাবে উন্নত করা। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০২৫ সালে কেন্দ্রীয় বাজেটে ৭ হাজার ৩৫০ কোটি ইউয়ান বিনিয়োগের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ ছাড়া ৩ হাজার কোটি ইউয়ানের অতি-দীর্ঘমেয়াদী বিশেষ সরকারি বন্ড বরাদ্দ করে ভোক্তাপণ্যের পুরানো জিনিস নতুন জিনিসের সঙ্গে বদল করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
২০২৪ সালের অর্জন
২০২৪ সালে চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের উল্লেখযোগ্য অর্জন হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। গত বছর চীনের জিডিপি ছিল ১৩৪.৯ ট্রিলিয়ন ইউয়ান, যা আগের বছরের চেয়ে ৫ শতাংশ বেশি। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে চীনের অবদান ছিল ৩০ শতাংশ। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে চীন এবং বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ৩.২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
উন্মুক্তকরণ ও বৈদেশিক নীতি
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীন উচ্চমানের উন্মুক্তকরণ নীতি অবিচলভাবে অনুসরণ করবে। ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগকে এগিয়ে নেওয়া হবে এবং বৈশ্বিক উচ্চমানের মুক্তবাণিজ্য অঞ্চল নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করা হবে। চীন শান্তিপূর্ণ স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি মেনে চলবে এবং আন্তর্জাতিক ন্যায্যতা ও ন্যায়বিচার রক্ষায় কাজ করবে।
সবুজ রূপান্তর ও পরিবেশ সুরক্ষা
প্রতিবেদনে পরিবেশ সুরক্ষা ও সবুজ রূপান্তরের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কার্বন নিরপেক্ষতা প্রচার, শূন্য-কার্বন পার্ক ও কারখানা স্থাপন এবং জাতীয় কার্বন নির্গমন বাণিজ্য বাজারের শিল্প কভারেজ প্রসারিত করার পরিকল্পনা উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া ইয়াংজি নদীতে দশ বছরের মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করা হবে। সূত্র: সিএমজি
চীনের জাতীয় গণকংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশন শুরু
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ