ঢাকা ০৯:০০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৫

চীনা পেশাজীবীদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করলো ভারত

  • আপডেট সময় : ০৭:১৫:১৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৫
  • ১৩ বার পড়া হয়েছে

ছবি রয়টার্স

প্রত্যাশা ডেস্ক: চীনা পেশাজীবীদের জন্য ব্যবসায়িক ভিসা দ্রুত দেওয়ার লক্ষ্যে ভারত জটিল আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া কমিয়েছে বলে দুই কর্মকর্তা জানিয়েছেন। এটি এশিয়ার দুই প্রতিবেশীর সম্পর্ক জোরদার করার একটি বড় পদক্ষেপ, যা প্রযুক্তিবিদের ঘাটতির কারণে বিলিয়ন ডলার মূল্যের উৎপাদন ক্ষতির অবসান ঘটাতে পারে।

চীনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে নতুন পদক্ষেপ নিচ্ছে ভারত। দেশটির দুই সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন চীনা পেশাজীবীদের জন্য বিজনেস ভিসা প্রদান দ্রুততর করতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা হ্রাসের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই পদক্ষেপ ঠিকঠাক কাজ করলে, দুই দেশের বিলিয়ন ডলার ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

কঠোর মার্কিন শুল্কনীতি বিবেচনা করে বেইজিংয়ের সঙ্গে সতর্কভাবে সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কর্মকর্তারা জানান, চীনা ভিসার জন্য দিল্লি এখন থেকে একটি যাচাই ধাপ বাদ দিয়েছে, যা ভিসা অনুমোদনের সময় এক মাসের মধ্যে নামিয়ে এনেছে।

ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স প্রথম এ সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করছে। অবশ্য, ২০২০ সালে সীমান্তে ক্ষণস্থায়ী এক সংঘাতের পর কার্যত চীনাদের জন্য ভিসা প্রদান প্রায় বন্ধই হয়ে গিয়েছিল এবং পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভিসা যাচাইয়ের পরিধি বৃদ্ধি করে।

এখন এসব জটিলতা পুরোপুরি সমাধান হয়েছে বলে জানান বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত এক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, আমরা প্রশাসনিক যাচাইয়ের স্তরটি সরিয়ে দিয়েছি এবং চার সপ্তাহের মধ্যে বিজনেস ভিসা প্রক্রিয়াকরণ করছি।

ভারতের পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং শীর্ষ পর্যায়ের চিন্তক সংস্থা রয়টার্সের অনুরোধে কোনো সাড়া দেয়নি। এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, তারা ভারত থেকে “ইতিবাচক পদক্ষেপ” লক্ষ্য করেছে, যা দুই দেশের মধ্যে মানবিক ও পেশাগত বিনিময়ের স্বার্থে সহায়ক। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গুও জিয়াকুন বলেন, ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখতে ও বিনিময় সহজীকরণের মাত্রা বৃদ্ধিতে ইচ্ছুক চীন।

অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের হিসেবে, কঠোর যাচাইয়ের কারণে গত চার বছরে ভারতীয় ইলেকট্রনিক্স নির্মাতাদের প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলারের উৎপাদন ক্ষতি হয়েছে। মোবাইল ফোন তৈরিতে ব্যবহৃত মূল যন্ত্রপাতির বড় অংশই চীন থেকে আসে।

রয়টার্সের আগের খবরে বলা হয়েছিল, শাওমির মতো বড় চীনা কোম্পানিগুলো ভিসা পেতে হিমশিম খাচ্ছিল। শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এসব সীমাবদ্ধতা তাদের ভারতের সম্প্রসারণ পরিকল্পনায় বাধা দেয় এবং সোলার শিল্পেও দক্ষ শ্রমিকের ঘাটতি সৃষ্টি হয়।

লালফিতার দৌরাত্ম্য কমানোর সিদ্ধান্তটি মোদির চীন সফর এবং প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকের পর এসেছে। বৈঠক শেষে দুই দেশ ২০২০ সালের পর প্রথমবারের মতো সরাসরি ফ্লাইট পুনরায় চালু করেছে।

ভারতের সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব রাজীব গৌবার নেতৃত্বে গঠিত উচ্চপর্যায়ের কমিটির সুপারিশে এসব শিথিলতা আনা হয়, যা চীনের ওপর বিনিয়োগসংক্রান্ত বিধিনিষেধ কমাতেও কাজ করছে। ইন্ডিয়ান সেলুলার অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান পঙ্কজ মোহিন্দরু বলেন, স্থলসীমান্ত লাগোয়া দেশগুলোর দক্ষ পেশাজীবীদের ভিসা দ্রুত দেওয়ার সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। এটি সহযোগিতামূলক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয়।

রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনার জন্য ২৫ শতাংশ শাস্তিমূলক শুল্কসহ ভারতীয় পণ্যের ওপর মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরপর থেকে ভারত তার কূটনৈতিক হিসাব-নিকাশ নতুনভাবে সাজাতে শুরু করে। চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠন, রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার এবং ওয়াশিংটনের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির আলোচনাও একই সময় চালু থাকে। এই সময় মোদি বিদেশি বিনিয়োগে বাধা কমাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ জোরদার করেছেন। সম্প্রতি ভোগ্যকর কমানো এবং শ্রম আইন শিথিল করাও ছিল তার অংশ। দ্বিতীয় কর্মকর্তা বলেন, আমরা সতর্কভাবে চীন-সংশ্লিষ্ট কিছু নিয়ম শিথিল করছি, যা সামগ্রিক ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নত করবে বলে আশা করি।

সূত্র: রয়টার্স

সানা/ওআ/আপ্র/১২/১২/২০২৫

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

চীনা পেশাজীবীদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করলো ভারত

আপডেট সময় : ০৭:১৫:১৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৫

প্রত্যাশা ডেস্ক: চীনা পেশাজীবীদের জন্য ব্যবসায়িক ভিসা দ্রুত দেওয়ার লক্ষ্যে ভারত জটিল আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া কমিয়েছে বলে দুই কর্মকর্তা জানিয়েছেন। এটি এশিয়ার দুই প্রতিবেশীর সম্পর্ক জোরদার করার একটি বড় পদক্ষেপ, যা প্রযুক্তিবিদের ঘাটতির কারণে বিলিয়ন ডলার মূল্যের উৎপাদন ক্ষতির অবসান ঘটাতে পারে।

চীনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে নতুন পদক্ষেপ নিচ্ছে ভারত। দেশটির দুই সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন চীনা পেশাজীবীদের জন্য বিজনেস ভিসা প্রদান দ্রুততর করতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা হ্রাসের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই পদক্ষেপ ঠিকঠাক কাজ করলে, দুই দেশের বিলিয়ন ডলার ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

কঠোর মার্কিন শুল্কনীতি বিবেচনা করে বেইজিংয়ের সঙ্গে সতর্কভাবে সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কর্মকর্তারা জানান, চীনা ভিসার জন্য দিল্লি এখন থেকে একটি যাচাই ধাপ বাদ দিয়েছে, যা ভিসা অনুমোদনের সময় এক মাসের মধ্যে নামিয়ে এনেছে।

ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স প্রথম এ সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করছে। অবশ্য, ২০২০ সালে সীমান্তে ক্ষণস্থায়ী এক সংঘাতের পর কার্যত চীনাদের জন্য ভিসা প্রদান প্রায় বন্ধই হয়ে গিয়েছিল এবং পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভিসা যাচাইয়ের পরিধি বৃদ্ধি করে।

এখন এসব জটিলতা পুরোপুরি সমাধান হয়েছে বলে জানান বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত এক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, আমরা প্রশাসনিক যাচাইয়ের স্তরটি সরিয়ে দিয়েছি এবং চার সপ্তাহের মধ্যে বিজনেস ভিসা প্রক্রিয়াকরণ করছি।

ভারতের পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং শীর্ষ পর্যায়ের চিন্তক সংস্থা রয়টার্সের অনুরোধে কোনো সাড়া দেয়নি। এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, তারা ভারত থেকে “ইতিবাচক পদক্ষেপ” লক্ষ্য করেছে, যা দুই দেশের মধ্যে মানবিক ও পেশাগত বিনিময়ের স্বার্থে সহায়ক। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গুও জিয়াকুন বলেন, ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখতে ও বিনিময় সহজীকরণের মাত্রা বৃদ্ধিতে ইচ্ছুক চীন।

অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের হিসেবে, কঠোর যাচাইয়ের কারণে গত চার বছরে ভারতীয় ইলেকট্রনিক্স নির্মাতাদের প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলারের উৎপাদন ক্ষতি হয়েছে। মোবাইল ফোন তৈরিতে ব্যবহৃত মূল যন্ত্রপাতির বড় অংশই চীন থেকে আসে।

রয়টার্সের আগের খবরে বলা হয়েছিল, শাওমির মতো বড় চীনা কোম্পানিগুলো ভিসা পেতে হিমশিম খাচ্ছিল। শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এসব সীমাবদ্ধতা তাদের ভারতের সম্প্রসারণ পরিকল্পনায় বাধা দেয় এবং সোলার শিল্পেও দক্ষ শ্রমিকের ঘাটতি সৃষ্টি হয়।

লালফিতার দৌরাত্ম্য কমানোর সিদ্ধান্তটি মোদির চীন সফর এবং প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকের পর এসেছে। বৈঠক শেষে দুই দেশ ২০২০ সালের পর প্রথমবারের মতো সরাসরি ফ্লাইট পুনরায় চালু করেছে।

ভারতের সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব রাজীব গৌবার নেতৃত্বে গঠিত উচ্চপর্যায়ের কমিটির সুপারিশে এসব শিথিলতা আনা হয়, যা চীনের ওপর বিনিয়োগসংক্রান্ত বিধিনিষেধ কমাতেও কাজ করছে। ইন্ডিয়ান সেলুলার অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান পঙ্কজ মোহিন্দরু বলেন, স্থলসীমান্ত লাগোয়া দেশগুলোর দক্ষ পেশাজীবীদের ভিসা দ্রুত দেওয়ার সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। এটি সহযোগিতামূলক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয়।

রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনার জন্য ২৫ শতাংশ শাস্তিমূলক শুল্কসহ ভারতীয় পণ্যের ওপর মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরপর থেকে ভারত তার কূটনৈতিক হিসাব-নিকাশ নতুনভাবে সাজাতে শুরু করে। চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠন, রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার এবং ওয়াশিংটনের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির আলোচনাও একই সময় চালু থাকে। এই সময় মোদি বিদেশি বিনিয়োগে বাধা কমাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ জোরদার করেছেন। সম্প্রতি ভোগ্যকর কমানো এবং শ্রম আইন শিথিল করাও ছিল তার অংশ। দ্বিতীয় কর্মকর্তা বলেন, আমরা সতর্কভাবে চীন-সংশ্লিষ্ট কিছু নিয়ম শিথিল করছি, যা সামগ্রিক ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নত করবে বলে আশা করি।

সূত্র: রয়টার্স

সানা/ওআ/আপ্র/১২/১২/২০২৫