আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি আগামী মাস থেকে চীন থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন। বেইজিং যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় বিরল খনিজ রপ্তানিতে সীমাবদ্ধতা আরোপ করায় এমন ঘোষণা দেন তিনি। শুক্রবার (১০ অক্টোবর) নিজের সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে এ ঘোষণা দেন ট্রাম্প। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
শুক্রবারের পোস্টে তিনি চীনের এই সপ্তাহে বিরল খনিজ রপ্তানির নিয়ম কঠোর করার পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়া জানান। অভিযোগ করেন, বেইজিং অত্যন্ত বৈরী হয়ে উঠছে এবং বিশ্বকে বন্দি করে রাখার চেষ্টা করছে।
তিনি হুমকি দেন যে, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে নির্ধারিত বৈঠক থেকে তিনি সরে আসতে পারেন। পরে তিনি বলেন যে, তিনি বৈঠক বাতিল করেননি। তবে ‘আমাদের সেই বৈঠক হবে কি না, তা জানি না।’ হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমি যেভাবেই হোক বৈঠকে থাকব।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্প আরো বলেন, ১ নভেম্বরের মধ্যে ‘সব ধরনের গুরুত্বপূর্ণ সফটওয়্যার’-এর ওপর নতুন রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ জারি করা হবে—যা বর্তমান শুল্ক ছাড়ের মেয়াদ শেষ হওয়ার নয় দিন আগে কার্যকর হবে।
ট্রাম্পের এসব মন্তব্যের পর মার্কিন শেয়ার বাজারে ব্যাপক পতন ঘটে। এপ্রিলের পর এটিই ছিল সবচেয়ে বড় পতন।
গাড়ি, স্মার্টফোন এবং অন্য আরো কিছু পণ্য তৈরিতে বিরল খনিজ অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এই উপাদান উৎপাদনে চীনের আধিপত্য রয়েছে।
চলতি বছরের শুরুতে ট্রাম্প যখন চীনের ওপর শুল্ক আরোপের হুমকি দেন। তখন বেইজিং তাদের বিরল খনিজ রপ্তানিতে কঠোরতা আরোপ করে। যেসব মার্কিন সংস্থা এ পণ্যের ওপর নির্ভরশীল তারা এতে শঙ্কা প্রকাশ করে। এমনকি গাড়ি নির্মাতা ফোর্ডকে তাদের উৎপাদন কয়েকদিন বন্ধ রাখতে হয়।
বিরল খনিজ রপ্তানিতে কঠোরতার পাশাপাশি চীন মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান কোয়ালকমের বিরুদ্ধে একচেটিয়ার ব্যবসার তদন্ত শুরু করেছে। এতে করে আরেকটি চিপ তৈরিকারী প্রতিষ্ঠান কেনার যে প্রক্রিয়া কোয়ালকম চালাচ্ছিল সেটি থমকে যেতে পারে। যদিও কোয়ালকম যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু তাদের ব্যবসার বড় একটি অংশ চীনে রয়েছে।
বেইজিং আরো ঘোষণা করেছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কিত জাহাজগুলোর ওপর (মার্কিন মালিকানাধীন বা পরিচালিত জাহাজ) নতুন বন্দর ফি আরোপ করা হবে।
মে মাসে যখন উভয় দেশ একে অপরের পণ্যের ওপর তিন অঙ্কের শুল্ক প্রত্যাহারে সম্মত হয়, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে একটি নাজুক বাণিজ্যিক সমঝোতা চলছে, যা কার্যত দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য কার্যক্রমকে প্রায় স্থবির করে দিয়েছিল।
এই পদক্ষেপের পরও চীনা পণ্যের ওপর মার্কিন শুল্ক বছরের শুরু থেকে অতিরিক্ত ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, আর চীনে প্রবেশকারী মার্কিন পণ্যের ওপর নতুন ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
এরপর থেকে কর্মকর্তারা টিকটক, কৃষিপণ্য ক্রয়, বিরল খনিজ এবং আধুনিক প্রযুক্তি যেমন সেমিকন্ডাক্টর বাণিজ্য নিয়ে ধারাবাহিক বৈঠক করেছেন।
দুই পক্ষের মধ্যে এই মাসে দক্ষিণ কোরিয়ায় একটি সম্মেলনে আবারো বৈঠক হওয়ার কথা ছিল।
এসি/আপ্র/১১/১০/২০২৫