কৃষি ও কৃষক ডেস্ক: অনুকূল পরিবেশ থাকায় শেরপুরে প্রথমবার চিয়া সিড চাষ করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা শিমুল মিয়া। ৫০ শতাংশ বর্গা জমিতে মাত্র ৫ হাজার টাকা খরচ করে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখছেন তিনি। শিমুল শেরপুর সদরের কামারিয়া ইউনিয়নের সূর্যদী উত্তরপাড়ার মৃত মোজাফফর আলীর ছেলে।
শিমুল মিয়া একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। চাকরি করার সময় কাজের ফাঁকে ফাঁকে ইউটিউবে কৃষিবিষয়ক সংবাদ দেখে কৃষির প্রতি আগ্রহ বেড়ে যায়। চিয়া সিড ও বস্তায় আদা চাষসহ নতুন নতুন ফসল চাষাবাদে আগ্রহী হন। তার বিশ্বাস ঝুঁকি না নিলে সফল হওয়া প্রায় অসম্ভব। তাই চাকরি ছেড়ে দো-আঁশ মাটির ৫০ শতাংশ জমি বর্গা নিয়ে নামমাত্র শ্রম ও কম খরচে উচ্চ মূল্যের চিয়া সিড চাষ করেন।
শিমুল মিয়া জানান, গত ডিসেম্বর মাসে প্রথমবারের মতো বিদেশি উচ্চ মূল্যের ফসল চিয়া সিডের চাষ শুরু করেন। বর্গা নেওয়া ৫০ শতাংশ জমিতে চিয়া সিডের বীজ বপন, সার ও সেচসহ সব মিলিয়ে ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা ব্যয় হয়। বীজ বপনের পরে ৩ মাসের মধ্যে তার ক্ষেতের চিয়া সিড পরিপক্ব হয়। এরই মধ্যে ফসল কাটতে শুরু করেছেন। তার এ জমিতে ২০০ কেজি চিয়া সিড উৎপাদন হবে বলে তিনি আশা করছেন। গ্রেডিংয়ের ওপর ভিত্তি করে প্রতি কেজি চিয়া সিড ৫০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা দরে বিক্রি করা হয়। তিনি জানান, এক বিঘা জমিতে ২০০ গ্রাম থেকে ৩০০ গ্রাম চিয়া সিডের প্রয়োজন হয়। বীজ বপনের ৯০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে এ ফসল ঘরে তোলা যায়।
অন্য যে কোনো ফসলের থেকে চিয়া সিড চাষে খরচ কম, লাভ বেশি। এ ছাড়া এ ফসলে রোগবালাইয়ের আক্রমণ কম হয়। চিয়া সিডের দাম বেশি থাকা ও অল্প খরচে আবাদ করার সুযোগ থাকায় স্থানীয় কৃষক ও অনেক শিক্ষিত তরুণ চিয়া সিড চাষে আগ্রহী হয়েছেন।
স্থানীয় আজগর আলী জানান, তারা মাঠ-ফসল হিসেবে সাধারণত ধান, গম, ভুট্টা জাতীয় ফসল চাষ করেন। এতে লাভ বেশি হয় না, যতটা লাভ হয় চিয়া সিডে। তাই আগামীতে কিছুটা হলেও চিয়া সিড চাষ করবেন তিনি।
একই এলাকার কৃষাণী আলেয়া বেগম জানান, চিয়া সিডে খরচ কম কিন্তু লাভ বেশি। তাই অনেকে আগ্রহী হয়েছেন। এ ছাড়া শিমুল মিয়ার চিয়া সিডের ফলন দেখে এবং ভালো দাম ও চাহিদা থাকায় আগামী বছর থেকে এলাকার অনেক কৃষক-কৃষাণী চিয়া সিডের আবাদ করবেন।
কৃষক লাল মিয়া বলেন, ‘এটা আমাদের দেশে নতুন। আগে জানতাম না। তবে এখন দেখছি, অন্য ফসলের চেয়ে চিয়া সিডের ফলন বেশি। দামও ভালো আর অল্প সময়ে ফলন পাওয়া যায়। চাষ করা দরকার।’
কৃষক নূর ইসলাম বলেন, ‘আমরা গম, ভুট্টা, আলু চাষ করতাম তবে লাভ কম হতো। চিয়া সিডের লাভ বেশি। আশা করছি, আগামী বছর ১-২ একর জমিতে চাষ করবো।’
শেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘চিয়া সিড পুষ্টিকর খাদ্য। এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং ক্যানসার প্রতিরোধে কার্যকর। বর্তমানে এটি সুপার ফুড হিসেবে পরিচিত। শিমুল ভালো ফলন পেয়েছেন। এটি স্বল্পমেয়াদি ফসল, পানির প্রয়োজন কম। সেচের ঘাটতি আছে এমন এলাকায় চাষ করা যায়। কৃষকরা এ ফসল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। আমরা তাদের সহযোগিতা করছি।’
আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ