ঢাকা ০৯:২৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫

চিকিৎসা সেবায় পিছিয়ে মানসিক রোগীরা

  • আপডেট সময় : ১২:৪৫:৪২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • ৬৯ বার পড়া হয়েছে

স্বাস্থ্য ও পরিচর্যা ডেস্ক : মানসিক প্রতিবন্ধিতায় আক্রান্তদের চিকিৎসা না নেওয়ার পেছনে দায়ী সমাজের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। এছাড়া সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন বা স্টিগমার দুষ্টচক্রের প্রভাবের পাশাপাশি চিকিৎসা ব্যবস্থার অপ্রতুলতা রয়েছে। বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে এক সেমিনারে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়। নাসিরুল্লাহ সাইকোথেরাপী ইউনিট, এডিডি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, ইনোভেশন ফর ওয়েলবিয়িং ফাউন্ডেশন ও ডিজেবল চাইল্ড ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এর আয়োজন করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকোলজি বিভাগের সহযোগী প্রতিষ্ঠান নাসিরল্লাহ সাইকোথেরাপী ইউনিটের আটজন গবেষকের করা এক গবেষণা জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে। সেমিনারে জানানো হয়, মানসিক রোগের ক্ষেত্রে মানুষ কেন চিকিৎসা নিতে চায় না, এ প্রশ্নে যে তথ্যগুলো পাওয়া গেছে, তার মধ্যে রয়েছে, মানসিক অসুস্থ ব্যক্তিদের সম্পর্কে নেতিবাচক মূল্যায়ন, সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হওয়ার ভয়, চিকিৎসক ও চিকিৎসা সেবার অপ্রতুলতা, ব্যয়বহুলতা, অন্ধবিশ্বাস, লিঙ্গভিত্তিক সমস্যা ইত্যাদি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের নাসিরুল্লাহ সাইকোথেরাপী ইউনিট ‘কমিউনিটি-ভিত্তিক মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা প্রকল্পের পক্ষে এই গবেষণা পরিচালনা করে। এডিডি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা প্রকল্প এতে অর্থায়ন করে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ এবং সিলেটসহ মোট ৮টি বিভাগে গবেষণা করা হয়। দেশের কিশোর-কিশোরী (বয়সসীমা ১২ থেকে ১৭ বছর) এবং প্রাপ্তবয়স্ক (বয়সসীমা ১৮ এবং এর ঊর্ধ্বে) ব্যক্তিদের ওপর গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে। গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিরা ছিলেন- যাদের মানসিক সমস্যা আছে, যাদের মানসিক সমস্যা নেই এবং স্বাস্থ্য পেশাজীবী। সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের কর্মকর্তা ও কর্মচারী। যাদের মানসিক সমস্যা নেই-এই নমুনা শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত ছিল সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তিদের আত্মীয়-স্বজন, পরিবারের লোকজন এবং সমাজের মানুষজন। স্বাস্থ্য পেশাজীবী এবং সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের কর্মকর্তা ও কর্মচারী ছাড়া এই নমুনা শ্রেণিতে ছিল মানসিক স্বাস্থ্য পেশাজীবী (যেমন- সাইকিয়াট্রিস্ট, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট, কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট, সাইকিয়াট্রিক নার্স) এবং অন্য বিভাগের স্বাস্থ্য পেশাজীবী (যেমন- সাধারণ চিকিৎসক, নার্স, কবিরাজ, পল্লী চিকিৎসক ইত্যাদি)। গবেষাণায় দলভিত্তিক জরিপে বিভিন্ন পেশার ১৯৩ জন এবং ২৩ জন পেশাজীবীর ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।
এডিডি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মনোজ কুমার রায়। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ মনোবিজ্ঞান সমিতির সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান এবং যুক্তরাজ্যভিত্তিক এডিডি ইন্টারন্যাশনালের চিফ এক্সিকিউটিভ কর্মকর্তা মিজ ম্যারি এ্যান ক্লেমেন্টস।
গবেষণাপত্রটি উপস্থাপন করেন গবেষণাকর্মের মূল গবেষক মালয়েশিয়ার পুত্রা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা মনেবিজ্ঞান বিভাগের পিএইচডি গবেষক প্রদ্যুৎ রায় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক কামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। তিনজন বিশেষজ্ঞ আলোচক উপস্থাপিত গবেষণা প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। তারা হলেন- মানসিক স্বাস্থ্যের প্রাথমিক চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ ও ইনোভেশন ফর ওয়েলবিয়িং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মনিরা রহমান, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের কমিউনিটি ও সামাজিক সাইকিয়াট্রি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফারজানা রহমান দিনা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এএসএম আমানুল্লাহ। মানসিক রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসা নিশ্চিতে বক্তারা বেশ কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরেন। জেলা পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্য সেবাদানে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের আদলে সেবা প্রতিষ্ঠান চালু করা। মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতায় দেশব্যাপী ক্যাম্পেইন কর্মসূচির জন্য সরকারি সহযোগিতা। মানসিক স্বাস্থ্য প্রসঙ্গে সব প্রতিবেদন, প্রয়োজনীয় তথ্যসামগ্রী ব্রেইলে প্রকাশ করা। শিক্ষার্থীদের পাঠ্যসূচিতে মানসিক স্বাস্থ্যকে অন্তর্ভুক্ত করা। মানসিক স্বাস্থ্য সেবার জন্য পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ দেওয়া ইত্যাদি।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

চিকিৎসা সেবায় পিছিয়ে মানসিক রোগীরা

আপডেট সময় : ১২:৪৫:৪২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২

স্বাস্থ্য ও পরিচর্যা ডেস্ক : মানসিক প্রতিবন্ধিতায় আক্রান্তদের চিকিৎসা না নেওয়ার পেছনে দায়ী সমাজের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। এছাড়া সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন বা স্টিগমার দুষ্টচক্রের প্রভাবের পাশাপাশি চিকিৎসা ব্যবস্থার অপ্রতুলতা রয়েছে। বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে এক সেমিনারে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়। নাসিরুল্লাহ সাইকোথেরাপী ইউনিট, এডিডি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, ইনোভেশন ফর ওয়েলবিয়িং ফাউন্ডেশন ও ডিজেবল চাইল্ড ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এর আয়োজন করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকোলজি বিভাগের সহযোগী প্রতিষ্ঠান নাসিরল্লাহ সাইকোথেরাপী ইউনিটের আটজন গবেষকের করা এক গবেষণা জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে। সেমিনারে জানানো হয়, মানসিক রোগের ক্ষেত্রে মানুষ কেন চিকিৎসা নিতে চায় না, এ প্রশ্নে যে তথ্যগুলো পাওয়া গেছে, তার মধ্যে রয়েছে, মানসিক অসুস্থ ব্যক্তিদের সম্পর্কে নেতিবাচক মূল্যায়ন, সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হওয়ার ভয়, চিকিৎসক ও চিকিৎসা সেবার অপ্রতুলতা, ব্যয়বহুলতা, অন্ধবিশ্বাস, লিঙ্গভিত্তিক সমস্যা ইত্যাদি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের নাসিরুল্লাহ সাইকোথেরাপী ইউনিট ‘কমিউনিটি-ভিত্তিক মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা প্রকল্পের পক্ষে এই গবেষণা পরিচালনা করে। এডিডি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা প্রকল্প এতে অর্থায়ন করে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ এবং সিলেটসহ মোট ৮টি বিভাগে গবেষণা করা হয়। দেশের কিশোর-কিশোরী (বয়সসীমা ১২ থেকে ১৭ বছর) এবং প্রাপ্তবয়স্ক (বয়সসীমা ১৮ এবং এর ঊর্ধ্বে) ব্যক্তিদের ওপর গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে। গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিরা ছিলেন- যাদের মানসিক সমস্যা আছে, যাদের মানসিক সমস্যা নেই এবং স্বাস্থ্য পেশাজীবী। সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের কর্মকর্তা ও কর্মচারী। যাদের মানসিক সমস্যা নেই-এই নমুনা শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত ছিল সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তিদের আত্মীয়-স্বজন, পরিবারের লোকজন এবং সমাজের মানুষজন। স্বাস্থ্য পেশাজীবী এবং সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের কর্মকর্তা ও কর্মচারী ছাড়া এই নমুনা শ্রেণিতে ছিল মানসিক স্বাস্থ্য পেশাজীবী (যেমন- সাইকিয়াট্রিস্ট, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট, কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট, সাইকিয়াট্রিক নার্স) এবং অন্য বিভাগের স্বাস্থ্য পেশাজীবী (যেমন- সাধারণ চিকিৎসক, নার্স, কবিরাজ, পল্লী চিকিৎসক ইত্যাদি)। গবেষাণায় দলভিত্তিক জরিপে বিভিন্ন পেশার ১৯৩ জন এবং ২৩ জন পেশাজীবীর ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।
এডিডি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মনোজ কুমার রায়। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ মনোবিজ্ঞান সমিতির সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান এবং যুক্তরাজ্যভিত্তিক এডিডি ইন্টারন্যাশনালের চিফ এক্সিকিউটিভ কর্মকর্তা মিজ ম্যারি এ্যান ক্লেমেন্টস।
গবেষণাপত্রটি উপস্থাপন করেন গবেষণাকর্মের মূল গবেষক মালয়েশিয়ার পুত্রা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা মনেবিজ্ঞান বিভাগের পিএইচডি গবেষক প্রদ্যুৎ রায় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক কামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। তিনজন বিশেষজ্ঞ আলোচক উপস্থাপিত গবেষণা প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। তারা হলেন- মানসিক স্বাস্থ্যের প্রাথমিক চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ ও ইনোভেশন ফর ওয়েলবিয়িং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মনিরা রহমান, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের কমিউনিটি ও সামাজিক সাইকিয়াট্রি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফারজানা রহমান দিনা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এএসএম আমানুল্লাহ। মানসিক রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসা নিশ্চিতে বক্তারা বেশ কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরেন। জেলা পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্য সেবাদানে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের আদলে সেবা প্রতিষ্ঠান চালু করা। মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতায় দেশব্যাপী ক্যাম্পেইন কর্মসূচির জন্য সরকারি সহযোগিতা। মানসিক স্বাস্থ্য প্রসঙ্গে সব প্রতিবেদন, প্রয়োজনীয় তথ্যসামগ্রী ব্রেইলে প্রকাশ করা। শিক্ষার্থীদের পাঠ্যসূচিতে মানসিক স্বাস্থ্যকে অন্তর্ভুক্ত করা। মানসিক স্বাস্থ্য সেবার জন্য পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ দেওয়া ইত্যাদি।