ফেনী সংবাদদাতা : ফেনীতে একটি বেসরকারি হাসপাতালে টনসিল অপারেশন করাতে গিয়ে চিকিৎসকের অবহেলায় এক শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফেনী মডেল থানার ওসি মো. শহীদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, মঙ্গলবার সকালে শহরের শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়কের অবস্থিত ‘ওয়ান স্টোপস মেটারনিটি ক্লিনিকে’ আতিফ ইসলাম নিশান নামের ওই শিশুর মৃত্যু হয়। মৃত ১৩ বছর বয়সী আতিফ নোয়াখালী জেলার সেনবাগ উপজেলার দক্ষিণ মোহাম্মদপুর এলাকার মোহাম্মদ শহীদ উল্যাহর ছেলে এবং মোহাম্মদপুর আনিছ হাফেজিয়া মাদ্রাসার হেফজ শাখার ছাত্র ছিল। আতিফের পরিবারের দাবি, ওয়ান স্টোপস মেটারনিটি ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ এবং চিকিৎসকের অবহেলায় তার মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় প্রশাসনের কাছে বিচারের দাবি জানায় তারা। এদিকে আতিফের স্বজনদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার রাতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। শিশুটির বাবা মোহাম্মদ শহীদ উল্যাহ বলেন, “গলার টনসিল অপারেশন করানোর জন্য চিকিৎসক কিশোর কুমার হাওলাদারের পরামর্শে আমার ছেলে আতিফকে সোমবার বিকালে ওয়ান স্টোপস মেটারনিটি ক্লিনিকে ভর্তি করি। “রাতে অপারেশনের আগে আমার ছেলেকে অ্যানেস্থেসিয়া দেন হাসপাতালের মালিক ও মেডিসিন চিকিৎসক নাজমুল হক ভূইয়া। অপারেশন শেষ করে চিকিৎসক কিশোর কুমার চলে যান। পরে অ্যানেস্থেসিয়ার চিকিৎসক নাজমুল আমাকে বলেন যে, আপনার ছেলের অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে।” কিন্তু হাসপাতালের স্টাফরা অপারেশন থিয়েটারের দিকে ঘন ঘন যাতায়াত করায় বিষয়টি সন্দেহ হয় জানিয়ে তিনি বলেন, “মূলত আমার ছেলেকে অ্যানেস্থেসিয়ার ইনজেকশন দেওয়ার পর সে আর চোখ খোলেনি। “মঙ্গলবার ভোর ৪টার দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাকে ডেকে বলে যে, রোগীর অবস্থা ভালো না তাকে দ্রুত কুমিল্লা বা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। সকালে ছেলেকে কুমিল্লার মর্ডান হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। “আতিফের টনসিল অপারেশন যিনি করেছিলেন কিশোর কুমার হাওলাদার। তিনি নোয়াখালী আবদুল মালেক মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক। আতিফের মৃত্যুর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ছেলেটির চিকিৎসায় কোনো ত্রুটি ছিল না। অপারেশনের পর শিশুটির জ্ঞান ফেরেনি। যে চিকিৎসক অ্যানেস্থিসিয়া দিয়েছেন, ওনার ত্রুটি থাকতে পারে।“ অ্যানেস্থেসিয়া দেওয়া চিকিৎসক নাজমুল হক ভূঁইয়া বলেন, তিনি মেডিসিন বিশেষজ্ঞ হলেও অ্যনেস্থিসিয়ায় তার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি বলেন, “শারীরিক দুর্বলতার কারণে অ্যানেস্থেসিয়া ইনজেকশন দেওয়ার পর আতিফের হার্টবিট ও অক্সিজেন লেবেল কমে যায়। যে কারণে তার আর জ্ঞান ফিরে আসেনি। রোগীর অবস্থা ভালো না হওয়ায় তাকে দ্রুত কুমিল্লা বা চট্টগ্রামে নিয়ে যেতে পরামর্শ দেওয়া হয়।” জেলা সিভিল সার্জন মো. শিহাব উদ্দিন বলেন, হাসপাতালে শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ পেয়ে মঙ্গলবার রাতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতি পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ফেনী মডেল থানার ওসি মো. শহীদুল ইসলাম চৌধুরী বলছিলেন, অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”