ঢাকা ০১:৫০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৫

চা-শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে পঞ্চম দিনের ধর্মঘট

  • আপডেট সময় : ০১:২৩:৩৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ অগাস্ট ২০২২
  • ৯৪ বার পড়া হয়েছে

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি : চা–শ্রমিকদের দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের পঞ্চম দিন গেল গতকাল বুধবার। ১২০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা মজুরি বাড়ানোর দাবিতে সারা দেশে চা-শ্রমিকেরা তাঁদের বিভিন্ন দাবি নিয়ে সভা, সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল চালিয়ে যাচ্ছেন।
গত মঙ্গলবার চা–শ্রমিকনেতাদের নিয়ে শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরীর দিনব্যাপী বৈঠক হয়। শ্রীমঙ্গলের শ্রম অধিদপ্তরের বিভাগীয় ওই কার্যালয়ে ওই বৈঠক হয়। কিন্তু সমঝোতা না হওয়ায় গতকাল বুধবার বিকেলে ঢাকার শ্রম অধিদপ্তরের কার্যালয়ে শ্রমিকপক্ষ ও মালিকপক্ষকে নিয়ে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে কথা ছিল। তিন পক্ষের ওই বৈঠকে যোগ দিতে চা–শ্রমিকনেতারা ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন।
নারী চা–শ্রমিক মূর্তি হাজরা বলেন, ‘আমরা আজ পাঁচ দিন ধরে চা–বাগানের কাজ না করে আন্দোলন করছি। গতকাল সারা দিন আমাদের নেতারা সরকারের সঙ্গে মিটিং করল। কিন্তু কোনো সমাধান হলো না। আজ আবার তাঁরা ঢাকা গেছেন মিটিং করতে। আমরা ন্যায্য দাবি নিয়ে আন্দোলন করছি। আমাদের শ্রমিকদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে চা–বাগানে কাজ করতে হয়। চা–বাগানের সেকশনে যেতে কত পথ হাঁটতে হয়। কত নালা, খাল পাড়ি দিয়ে আমরা চা–পাতা তুলি। রাতে যখন খাবার খেতে বসি, তখন মাছ, মাংস কিছুই থাকে না। কোনোরকমে ভাত খাই। আমাদের সন্তানেরা যখন বিভিন্ন জিনিস কেনার জন্য টাকা চায়, আমরা দিতে পারি না। গত সপ্তাহে দোকানে জিনিসের যে দাম ছিল, এক সপ্তাহের মধ্যে তার থেকে অনেক দাম দিয়ে কিনতে হয়। জিনিসেরও দাম বাড়বে, আমাদের মজুরি বাড়বে না, তাহলে আমরা কীভাবে বেঁচে থাকব।’
মূর্তি হাজরা আরও বলেন, ‘আমরা চা–শ্রমিকেরা শান্ত জাতি। আমরাও চাই না আন্দোলন করতে। আমাদের দাবি মেনে নিলে আমরা কাজে যোগ দেব।’
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল বলেন, ‘একটি বড় আশা নিয়ে আমরা ঢাকায় যাচ্ছি। আশা করছি, বৈঠক থেকে মালিকপক্ষ আমাদের শ্রমিকদের দুঃখ–দুর্দশার কথা চিন্তা করে মানসম্মত মজুরি নির্ধারণ করবে। গতকাল সারা দিন আমরা শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সঙ্গে বৈঠক করেছি। তিনি আমাদের ২৩ আগস্ট পর্যন্ত আন্দোলন বন্ধ করে অপেক্ষা করতে বলেছিলেন। আমরা সেটা মানিনি। পরে তিনি আবার আমাদের সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় আলোচনায় আজ ঢাকায় মালিকপক্ষকে নিয়ে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের প্রস্তাব দেন। আমরা বৈঠকের প্রস্তাবে রাজি হয়েছি। তবে দাবি না মানা পর্যন্ত সারা দেশের চা–শ্রমিকেরা কাজে যোগ দেবে না। আমাদের আন্দোলন সংগ্রাম চলবে।’
মৌলভীবাজার–৪ (শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য মো. আবদুস শহীদ বলেন, ‘কিছুদিন আগেও চা–শ্রমিকদের মজুরি ৫০০ টাকার দাবি আমি জাতীয় সংসদে উত্থাপন করেছি। আমি আজ বিভিন্ন চা–বাগানের শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁদের দাবিদাওয়া শুনেছি। এ বিষয়ে বাগানমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশীয় চা সংসদের চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তাঁদের বলেছি, মালিকেরা এগিয়ে এসে একটি মানসম্মত মজুরি দিয়ে শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানোর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সব মানুষকে নিয়েই এগিয়ে যেতে চান। এখন যদি দুই পক্ষের সমঝোতা না হয়ে বাগান বন্ধ থাকে, তাহলে দেশের ক্ষতি হবে। চা–পাতা উত্তোলন না হলে চা–বাগানে পাতাগুলো নষ্ট হবে। সরকারের শ্রম অধিদপ্তর এ সমস্যা সমাধানে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। মালিকপক্ষ ও শ্রমিকপক্ষকে সবকিছু বিবেচনা করে এ সমস্যা দ্রুত সমাধানে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।’

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে ‘অবদান’ অস্বীকারেই নাখোশ ট্রাম্প

চা-শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে পঞ্চম দিনের ধর্মঘট

আপডেট সময় : ০১:২৩:৩৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ অগাস্ট ২০২২

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি : চা–শ্রমিকদের দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের পঞ্চম দিন গেল গতকাল বুধবার। ১২০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা মজুরি বাড়ানোর দাবিতে সারা দেশে চা-শ্রমিকেরা তাঁদের বিভিন্ন দাবি নিয়ে সভা, সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল চালিয়ে যাচ্ছেন।
গত মঙ্গলবার চা–শ্রমিকনেতাদের নিয়ে শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরীর দিনব্যাপী বৈঠক হয়। শ্রীমঙ্গলের শ্রম অধিদপ্তরের বিভাগীয় ওই কার্যালয়ে ওই বৈঠক হয়। কিন্তু সমঝোতা না হওয়ায় গতকাল বুধবার বিকেলে ঢাকার শ্রম অধিদপ্তরের কার্যালয়ে শ্রমিকপক্ষ ও মালিকপক্ষকে নিয়ে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে কথা ছিল। তিন পক্ষের ওই বৈঠকে যোগ দিতে চা–শ্রমিকনেতারা ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন।
নারী চা–শ্রমিক মূর্তি হাজরা বলেন, ‘আমরা আজ পাঁচ দিন ধরে চা–বাগানের কাজ না করে আন্দোলন করছি। গতকাল সারা দিন আমাদের নেতারা সরকারের সঙ্গে মিটিং করল। কিন্তু কোনো সমাধান হলো না। আজ আবার তাঁরা ঢাকা গেছেন মিটিং করতে। আমরা ন্যায্য দাবি নিয়ে আন্দোলন করছি। আমাদের শ্রমিকদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে চা–বাগানে কাজ করতে হয়। চা–বাগানের সেকশনে যেতে কত পথ হাঁটতে হয়। কত নালা, খাল পাড়ি দিয়ে আমরা চা–পাতা তুলি। রাতে যখন খাবার খেতে বসি, তখন মাছ, মাংস কিছুই থাকে না। কোনোরকমে ভাত খাই। আমাদের সন্তানেরা যখন বিভিন্ন জিনিস কেনার জন্য টাকা চায়, আমরা দিতে পারি না। গত সপ্তাহে দোকানে জিনিসের যে দাম ছিল, এক সপ্তাহের মধ্যে তার থেকে অনেক দাম দিয়ে কিনতে হয়। জিনিসেরও দাম বাড়বে, আমাদের মজুরি বাড়বে না, তাহলে আমরা কীভাবে বেঁচে থাকব।’
মূর্তি হাজরা আরও বলেন, ‘আমরা চা–শ্রমিকেরা শান্ত জাতি। আমরাও চাই না আন্দোলন করতে। আমাদের দাবি মেনে নিলে আমরা কাজে যোগ দেব।’
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল বলেন, ‘একটি বড় আশা নিয়ে আমরা ঢাকায় যাচ্ছি। আশা করছি, বৈঠক থেকে মালিকপক্ষ আমাদের শ্রমিকদের দুঃখ–দুর্দশার কথা চিন্তা করে মানসম্মত মজুরি নির্ধারণ করবে। গতকাল সারা দিন আমরা শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সঙ্গে বৈঠক করেছি। তিনি আমাদের ২৩ আগস্ট পর্যন্ত আন্দোলন বন্ধ করে অপেক্ষা করতে বলেছিলেন। আমরা সেটা মানিনি। পরে তিনি আবার আমাদের সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় আলোচনায় আজ ঢাকায় মালিকপক্ষকে নিয়ে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের প্রস্তাব দেন। আমরা বৈঠকের প্রস্তাবে রাজি হয়েছি। তবে দাবি না মানা পর্যন্ত সারা দেশের চা–শ্রমিকেরা কাজে যোগ দেবে না। আমাদের আন্দোলন সংগ্রাম চলবে।’
মৌলভীবাজার–৪ (শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য মো. আবদুস শহীদ বলেন, ‘কিছুদিন আগেও চা–শ্রমিকদের মজুরি ৫০০ টাকার দাবি আমি জাতীয় সংসদে উত্থাপন করেছি। আমি আজ বিভিন্ন চা–বাগানের শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁদের দাবিদাওয়া শুনেছি। এ বিষয়ে বাগানমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশীয় চা সংসদের চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তাঁদের বলেছি, মালিকেরা এগিয়ে এসে একটি মানসম্মত মজুরি দিয়ে শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানোর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সব মানুষকে নিয়েই এগিয়ে যেতে চান। এখন যদি দুই পক্ষের সমঝোতা না হয়ে বাগান বন্ধ থাকে, তাহলে দেশের ক্ষতি হবে। চা–পাতা উত্তোলন না হলে চা–বাগানে পাতাগুলো নষ্ট হবে। সরকারের শ্রম অধিদপ্তর এ সমস্যা সমাধানে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। মালিকপক্ষ ও শ্রমিকপক্ষকে সবকিছু বিবেচনা করে এ সমস্যা দ্রুত সমাধানে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।’