লাইফস্টাইল ডেস্ক : দিনের শুরুতে এক কাপ চা না হলে দিনটিই যেন অসম্পূর্ণ থেকে যায় অনেকের। আর এই শীতে উষ্ণতা পেতে গরম চায়ের তুলনা নেই। সুস্বাদু এক কাপ চা শীতের সকালটাকে মধুর করে তুলতে পারে। শুধু মন ভাল রাখতেই নয়, শরীর সুস্থ রাখতেও চা পানের বিকল্প কিছু নেই। চায়ের সবটুকু উপকারিতা বের করতে তা তৈরির একটি বিশেষ কৌশল আছে। এ শীতে কয়েক ধরনের চা খেলে স্বস্তির পাশাপাশি বেশ কিছু উপকার পাওয়া যেতে পারে। এর মধ্যে আছে আদা চা, দারুচিনি চা, গ্রিন টি, ব্ল্যাক টি ও হারবাল চা। চা ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়ানোর পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং হৃদযন্ত্র ভালো রাখে।
চায়ে ‘ট্যানিন’ নামক উপাদান থাকে। খাবার খাওয়ার পর চা পান করলে এই উপাদান শরীরে দ্রবীভূত হতে পারে না। তাই বলা হয়, যে কোনও খাবার খাওয়ার ৩০-৪০ মিনিট পর চা পান করলে শরীরে চায়ের স্বাস্থ্যগুণ মেলে। চায়ের মধ্যে ট্যানিন থাকে। যা শরীরে আয়রন দ্রবীভূত হতে দেয় না। তাই ছোলা, ডাল, মাছ, মাংস, ডিমসিদ্ধ ইত্যাদি আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পর চা পান একেবারেই অস্বাস্থ্যকর। চায়ের সঙ্গে অল্প বাদাম, আমন্ড, হালকা বিস্কুট খেলে ক্ষতি নেই। এখন বাজারে এসেছে নানা প্রকারের চা। দুধ-চিনি মেশানো চায়ের ককটেল নাকি লিকার চা কোনটি আপনার সারাদিনের ডায়েটে থাকলে ভাল, কেন ভাল সেটা জেনে চুমুক দিন।
হারবাল টি : ১. সিনেমন টি: চা পাতার সঙ্গে অল্প দারচিনি গুঁড়া মিশিয়ে পান স্মৃতিশক্তি ঠিক রাখে, সিস্ট (পিসিওএস)-এর সমস্যায় ভাল, ওজন কমায়, হার্ট ভাল রাখে, রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
২. তুলসি চা: সর্দি-কাশিতে তুলসি পাতা, মধু চায়ের সঙ্গে মিশিয়ে পান করলে উপকারী। ফুসফুসের কার্যকারিতা ঠিক রাখে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
৩. লবঙ্গ চা: চায়ের সঙ্গে লবঙ্গ থেঁতো করে পান করলে তা অ্যান্টিসেপটিক, অ্যান্টিভাইরাল, অ্যান্টি ব্যাকটিরিয়াল।
৪. আদা চা: ৪ গ্রাম আদা চায়ে মিশিয়ে পান করলে অনেক ভিটামিন, আয়রন, পটাশিয়াম, ফসফরাস ইত্যাদি মিনারেল মিলবে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। এটি ব্যথানাশক। টেনশন বা স্ট্রেস থেকে পেটের সমস্যা রোধ করে, অ্যালার্জি, ব্রংকাইটিস প্রতিরোধ করে। রক্তে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে।
৫. লেবু চা: ওজন কমায়, ক্লান্তি কমায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
গ্রিন টি : একজন প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ ব্যক্তি দিনে চার-পাঁচ কাপ গ্রিন টি পান করতেই পারেন নিঃসন্দেহে। এই চা ৭০ শতাংশ হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা কমায়। বিভিন্ন গবেষণার তথ্য, গ্রিন টি টাইপ ২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে। যাদের দাঁতে বা মাড়ির সমস্যা রয়েছে তাদের এই চা পানে অনেক উপকার মেলে। গ্রিন টি, মধু দিয়ে পান করা অনেক বেশি ভাল। মহিলাদের ৩০-বছর বয়সের পর হাড়ের ক্ষয় ও পেশি দুর্বলতা প্রতিরোধ করে। গ্রিন টিতে উপস্থিত ‘ক্যাথেচিন’ নামক ফ্লাভেনয়েড অত্যন্ত প্রয়োজনীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। গ্রিন টিতে অ্যান্টি অক্সিডেন্টের মাত্রা অনেক বেশি। এই চায়ে ক্যাফিনের মাত্রা অনেক কম। চুল পড়ার সমস্যা কমে। মহিলাদের হরমোনাল সমস্যা রোধ করে। গ্রিন টিতে পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ফসফরাস, জিঙ্ক, ক্লোরাইড ইত্যাদি মিনারেল রয়েছে। তাই কিডনির সমস্যা থাকলে গ্রিনটি পান করা যাবে না। এছাড়া গ্রিন-টিও দিনে তিন-চার বার পান করা যেতে পারে। তবে অতিরিক্ত চা পান চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে করুন। গ্রিন-টি কিংবা ব্ল্যাক টি বড় কফি কাপে পান নয়। ছোট চা-এর কাপে (১৫০ এমএল) চা পান করুন । ক্ষতি নেই। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় গ্রিন টি দিনে দুইবার পান করা যেতে পারে, তবে তা বিশেষজ্ঞের পরামর্শমতো অবশ্যই।
হোয়াইট টি : একদম কচি চা পাতা থেকে যে চা তৈরি হয়, তাই হল হোয়াইট টি। এই চা সবচেয়ে দামি। এই লিকারের রং হালকা হলুদ বর্ণের হয়। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মাত্রা গ্রিন টি-এর চেয়েও বেশি।
ওলং টি : এই চা, একদম কচি চা পাতা থেকেই তৈরি তবে হোয়াট টির চেয়ে একটু আলাদা। এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে। এই চায়ের ঔষধি গুণ অনেক। ওজন কমায়। ক্লান্তি কাটায়। রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। ক্যানসার প্রতিরোধ করে। মন ভাল রাখতে সাহায্য করে।
ব্ল্যাক টি : বিশ্বে সবচেয়ে বেশি খাওয়া হয় ব্ল্যাক টি বা কালো চা। এতে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। কালো চা স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। তা ছাড়া এই চা নিয়মিত পান করলে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসে, তবে তা হতে হবে দুধ ছাড়া রং চা। যারা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান, তাদের জন্য অবশ্যই রং চাকেই বেশি প্রাধান্য দেওয়া উচিত। ব্ল্যাক টি দুধ ও চিনি ছাড়া পান করলে, তা দিনে চার বার পান করলেও ক্ষতি নেই।
চা থেকে সর্বোচ্চ উপকার পাওয়ার পন্থা :ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি আরও জানান, তবে চায়ের সবটুকু উপকারিতা বের করতে তা তৈরির একটি বিশেষ কৌশল আছে। আর সেই বিশেষ কৌশল হল ঠা-া পানিতে লম্বা সময় ভিজিয়ে রাখা।
যুক্তরাষ্ট্রের বিলাসবহুল চায়ের ব্র্যান্ড ‘কোলো’র প্রতিষ্ঠাতা নিকোল ডিন বলেন, “চায়ের পাতা থেকে স্বাদ আর পুষ্টিগুণ বের করার আদর্শ উপায় হলো ঠা-া পানি দিয়ে চা বানানো।” চা পাতাগুলো ঠা-া পানিতে ভিজিয়ে ফ্রিজে রেখে দিতে হবে ২৪ ঘণ্টা। পরে ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে নিতে হবে। সরাসরি চা পাতা না ভেজাতে চাইতে টি ব্যাগও ব্যবহার করা যায়। ব্যস, এইটুকুই কাজ। পানি ফুটানোরও প্রয়োজন নেই। ডিন আরও বলেন, “গরম পানিতে চা লম্বা সময় ফুটালে তা তেতো হয়ে যায়, তবে ঠা-া পানিতে চায়ের স্বাদের কোনো ক্ষতি হয় না। বরং চায়ের কোনো ক্ষতি না করেই তার স্বাদ বের করে আনে চমৎকারভাবে। আর এভাবে চা বানালে এতে থাকা ‘অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট’ ধীরে ধীরে পানিতে মেশে।” গবেষণাতেও দেখা গেছে যে, ‘ব্ল্যাক’, ‘গ্রিন’ এবং ‘ওলং’ চা ঠা-া পানিতে ভিজিয়ে তৈরি করলে তাতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট’য়ের মাত্রা বেশি থাকে।
চা পানে স্বাস্থ্যকর দীর্ঘজীবন
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ