ঢাকা ১০:৫৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ জুন ২০২৫

চাহিদা বন্ধ না হলে মাদক আটকানো যাবে না: আইজিপি

  • আপডেট সময় : ০১:৩৯:৪০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ অক্টোবর ২০২১
  • ১০৭ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশকে মাদকমুক্ত করতে মাদকের চাহিদা বন্ধ করাই গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদ।
তার মতে, দেশে যদি মাদকসেবী না কমে, তাহলে যত চেষ্টাই চালানো হোক না কেন, তার ফাঁক গলে মাদক আসবেই।
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে বাংলাদেশ পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্ট পরিচালিত মাদকাসক্তি নিরাময় ও মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শ কেন্দ্র ‘ওয়েসিস’র উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এই মত প্রকাশ করেন বেনজীর।
পুলিশ মহাপরিদর্শক বলেন, প্রচলিত কোনো মাদকদ্রব্যই দেশে তৈরি হয় না। আসে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে। আর সীমান্ত দিয়ে সেই মাদক আসা ঠেকাতে কয়েকটি বাহিনী কাজ করলেও ফল সেভাবে আসছে না।
“আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হিসেবে আমরা যে কাজটা করার চেষ্টা করি, সেটা হচ্ছে মাদকের সাপ্লাই কাট। এসব দমনের জন্য ছয় থেকে সাতটা বাহিনী এক সঙ্গে কাজ করে। এছাড়া কাস্টমস বিভিন্ন পোর্টে মাদক দমনে কাজ করে। কিন্তু যদি ডিমান্ড থাকে, কোনো না কোনোভাবে দেশে মাদকের সাপ্লাই হবেই।”
“সে কারণে অবশ্যই আমাদের মাদকের ডিমান্ড কাট করতে হবে। ডিমান্ড কাট করতে হলে এসমস্ত যারা মাদকাসক্ত আছে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে,” বলেন তিনি।
বাংলাদেশে মাদকসেবীর সংখ্যার তুলনায় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের অপ্রতুলতার কথা তুলে ধরেন পুলিশ মহাপরিদর্শক।
তিনি বলেন, এনজিওসহ বিভিন্ন সংস্থার তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে মাদকাসক্ত মানুষের সংখ্যা ৮০ লাখ, আবার কেউ কেউ বলেন ১ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। ২০১৮ সালে জনস্বার্থ ইন্সটিটিউটের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বাংলাদেশে মাদকাসক্ত মানুষের সংখ্যা ৩৬ লাখ।
“কিন্তু বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি মাদক নিরাময় কেন্দ্রে মোট বিছানা আছে ৭ হাজার। তাহলে এত সংখ্যক মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের আমরা কত বছরে চিকিৎসা দেব?”
মাদকাসক্তদের পুনর্বাসনের জন্য ওয়েসিস প্রতিষ্ঠার পর পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে মানিকগঞ্জের কালিগঙ্গা নদীর পাড়ে আরেকটি মাদক নিরাময় কেন্দ্র বা হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।
মাদকের কুফল বর্ণনা করতে গিয়ে বেনজীর বলেন, “পুলিশে চাকরি করার সুবাদে দেখেছি- কী গরিব পরিবার, কী ধনী পরিবার, পরিবারের কেউ যদি মাদকাসক্ত হয়, তাহলে পরিবারটির কী অবস্থা হয়, তা দেখার দুর্ভাগ্য আমার অনেকবার হয়েছে।
“এই সমাজের অনেক সম্মানিত ব্যক্তির নীরব কান্না দেখতে হয়েছে আমাকে। এই গোপন কান্না এত কষ্টের, যা কারও সঙ্গে শেয়ারও করা যায় না সামাজিক মর্যাদার কারণে।”
মাদকের হাত থেকে তরুণ প্রজন্মকে রক্ষা করতে অন্যদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান আইজিপি।
পুলিশ হাসপাতালে ক্যান্সার ইউনিট প্রতিষ্ঠার দাবি সরকারের প্রতি জানিয়ে বেনজীর বলেন, পুলিশের কাজের ধরনের কারণে কিছু রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি। এর মধ্যে রয়েছে কিডনি, হৃদযন্ত্রের জটিলতা ও ক্যান্সার।
“প্রচুর লোক আছে যারা ক্যান্সারে আক্রান্ত। আমরা চেষ্টা করি তাদের সাধ্যমতো সাহায্য করার জন্য। ক্যান্সারের চিকিৎসা অনেক ব্যয়বহুল। একজন ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী মৃত্যুবরণ করার আগে তার পরিবারকে রাস্তায় বসিয়ে দিয়ে যায়।”
এই জন্য পুলিশ হাসপাতালে আগামী বছরের মধ্যে একটি ক্যান্সার ইউনিট করতে অনুষ্ঠানে উপস্থিত স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে দাবি জানান তিনি।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

অন্তর্বর্তী সরকার ভালো কাজ করছে, আমাদের পথ দেখাচ্ছে: ফখরুল

চাহিদা বন্ধ না হলে মাদক আটকানো যাবে না: আইজিপি

আপডেট সময় : ০১:৩৯:৪০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ অক্টোবর ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশকে মাদকমুক্ত করতে মাদকের চাহিদা বন্ধ করাই গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদ।
তার মতে, দেশে যদি মাদকসেবী না কমে, তাহলে যত চেষ্টাই চালানো হোক না কেন, তার ফাঁক গলে মাদক আসবেই।
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে বাংলাদেশ পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্ট পরিচালিত মাদকাসক্তি নিরাময় ও মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শ কেন্দ্র ‘ওয়েসিস’র উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এই মত প্রকাশ করেন বেনজীর।
পুলিশ মহাপরিদর্শক বলেন, প্রচলিত কোনো মাদকদ্রব্যই দেশে তৈরি হয় না। আসে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে। আর সীমান্ত দিয়ে সেই মাদক আসা ঠেকাতে কয়েকটি বাহিনী কাজ করলেও ফল সেভাবে আসছে না।
“আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হিসেবে আমরা যে কাজটা করার চেষ্টা করি, সেটা হচ্ছে মাদকের সাপ্লাই কাট। এসব দমনের জন্য ছয় থেকে সাতটা বাহিনী এক সঙ্গে কাজ করে। এছাড়া কাস্টমস বিভিন্ন পোর্টে মাদক দমনে কাজ করে। কিন্তু যদি ডিমান্ড থাকে, কোনো না কোনোভাবে দেশে মাদকের সাপ্লাই হবেই।”
“সে কারণে অবশ্যই আমাদের মাদকের ডিমান্ড কাট করতে হবে। ডিমান্ড কাট করতে হলে এসমস্ত যারা মাদকাসক্ত আছে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে,” বলেন তিনি।
বাংলাদেশে মাদকসেবীর সংখ্যার তুলনায় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের অপ্রতুলতার কথা তুলে ধরেন পুলিশ মহাপরিদর্শক।
তিনি বলেন, এনজিওসহ বিভিন্ন সংস্থার তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে মাদকাসক্ত মানুষের সংখ্যা ৮০ লাখ, আবার কেউ কেউ বলেন ১ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। ২০১৮ সালে জনস্বার্থ ইন্সটিটিউটের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বাংলাদেশে মাদকাসক্ত মানুষের সংখ্যা ৩৬ লাখ।
“কিন্তু বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি মাদক নিরাময় কেন্দ্রে মোট বিছানা আছে ৭ হাজার। তাহলে এত সংখ্যক মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের আমরা কত বছরে চিকিৎসা দেব?”
মাদকাসক্তদের পুনর্বাসনের জন্য ওয়েসিস প্রতিষ্ঠার পর পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে মানিকগঞ্জের কালিগঙ্গা নদীর পাড়ে আরেকটি মাদক নিরাময় কেন্দ্র বা হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।
মাদকের কুফল বর্ণনা করতে গিয়ে বেনজীর বলেন, “পুলিশে চাকরি করার সুবাদে দেখেছি- কী গরিব পরিবার, কী ধনী পরিবার, পরিবারের কেউ যদি মাদকাসক্ত হয়, তাহলে পরিবারটির কী অবস্থা হয়, তা দেখার দুর্ভাগ্য আমার অনেকবার হয়েছে।
“এই সমাজের অনেক সম্মানিত ব্যক্তির নীরব কান্না দেখতে হয়েছে আমাকে। এই গোপন কান্না এত কষ্টের, যা কারও সঙ্গে শেয়ারও করা যায় না সামাজিক মর্যাদার কারণে।”
মাদকের হাত থেকে তরুণ প্রজন্মকে রক্ষা করতে অন্যদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান আইজিপি।
পুলিশ হাসপাতালে ক্যান্সার ইউনিট প্রতিষ্ঠার দাবি সরকারের প্রতি জানিয়ে বেনজীর বলেন, পুলিশের কাজের ধরনের কারণে কিছু রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি। এর মধ্যে রয়েছে কিডনি, হৃদযন্ত্রের জটিলতা ও ক্যান্সার।
“প্রচুর লোক আছে যারা ক্যান্সারে আক্রান্ত। আমরা চেষ্টা করি তাদের সাধ্যমতো সাহায্য করার জন্য। ক্যান্সারের চিকিৎসা অনেক ব্যয়বহুল। একজন ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী মৃত্যুবরণ করার আগে তার পরিবারকে রাস্তায় বসিয়ে দিয়ে যায়।”
এই জন্য পুলিশ হাসপাতালে আগামী বছরের মধ্যে একটি ক্যান্সার ইউনিট করতে অনুষ্ঠানে উপস্থিত স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে দাবি জানান তিনি।