নিজস্ব প্রতিবেদক : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে কোভিড ফিল্ড হাসপাতাল উদ্বোধনের পরেও রোগী ভর্তি নিতে পারছে না। অক্সিজেন সরবরাহ করার কাজ প্রস্তুত না হওয়া এবং কোন চিকিৎসক আর নার্সরা ডিউটি করবেন তা চূড়ান্ত করতে না পারায় এখনই রোগী নিতে পারছে না হাসপাতালটি।
করোনাভাইরসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় গত শনিবার দুপুর ১২টার দিকে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কোভিড ফিল্ড হাসপাতালটির উদ্বোধন করা হয়। সেসময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক বলেছিলেন, আজ থেকে রোগী ভর্তি করা হবে। কিন্তু রবিবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে মিলেছে ভিন্ন চিত্র। হাসপাতালটিতে ভর্তি হতে পারেননি একজনও। সবাইকে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
দেশে এক সপ্তাহর বেশি সময় ধরে করোনায় মৃত্যু দুইশোর বেশি। দৈনিক সংক্রমণ বেড়ে ১৫ হাজার পার হয় এই সময়ে। দ্বারে দ্বারে ঘুরেও হাসপাতালে ভর্তি হওয়া যাচ্ছিল না। কোনো কোনো হাসপাতালে ভর্তির সুযোগ পেলেও মুমূর্ষু রোগীদের জন্য আইসিউ মিলছিল না। এ বেহাল দশার সামাল দিতে প্রথমবারের ফিল্ড হাসপাতাল খোলার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কনভেনশন সেন্টারে কোভিড ফিল্ড হাসপাতালের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয় শনিবার। নতুন হাসপাতালে রোগী ভর্তি নেওয়ার ঘোষণা শুনে অনেকেই আসেন চিকিৎসার জন্য। কিন্তু ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও ভর্তি হতে পারছেন না। ফিরতে হচ্ছে খালি হতে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ফিল্ড হাসপাতাল উদ্বোধন করা হলেও এখনো রোগী ভর্তি নেওয়ার জন্য হাসপাতাল প্রস্তুত করা হয়নি। হাসপাতালটি বেড, সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন ও হাসপাতালে রোগী ভর্তি করার পরে দায়িত্ব পালনের জন্য রোস্টার তৈরি করা হয়নি। তবে হাসপাতাল চালুর খবরে সারাদিনে শতাধিক রোগী এসেছেন। তাদের মধ্যে যাদের অবস্থা কিছুটা ভালো তাদেরকে প্রয়োজনী চিকিৎসা শেষে বাসায় পাঠানো হয়েছে। আর যাদের অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ তাদেরকে অন্য হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
এ দিকে বিকালের মধ্যে রোগী ভর্তি নেওয়া হবে জানিয়ে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নজরুল ইসলাম গতকাল রোববার সকালে গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, অক্সিজেন সিলিন্ডার সমস্যা বিকালের মধ্যেই ঠিক হয়ে যাবে। তখন রোগী ভর্তি হওয়া শুরু হবে। যাদের অক্সিজেন সংকট বেশি, সেই রোগী ভর্তি নেওয়া হচ্ছে না। বাকিদের চিকিৎসা দিয়ে, পরামর্শ দিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
তবে বাস্তবাতা বলছে ভিন্ন কথা। এখনো শেষ হয়নি অক্সিজেন সরবরাহ লাইনের সংযোগ স্থাপনের কাজ। হাসপাতালের রিসিপশনে দায়িত্বরত এক কর্মকর্তা বলেছেন, আমরা রোগী ভর্তি নিচ্ছি না। অক্সিজেন সরবারাহ লাইন রেডি না, এখনো কাজ চলছে। তবে কাজ আজ সোমবারে শেষ করার কথা রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের ভেতরে প্রবেশের মুখে পাঁচজন আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। প্রবেশের তথ্য দিয়ে অনেকেই ভেতরে থাকা অভ্যর্থনা ও তথ্যকেন্দ্রে হাসপাতালের শয্যা ফাঁকা আছে কি না তার খোঁজ করছেন। ভেতরে চিকিৎসকেরা নার্সদের কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছেন। হাসপাতালের ভেতরে অক্সিজেন লাইন টানার জন্য শ্রমিকেরা কাজ করছেন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইতোমধ্যে অন্য হাসপাতালে ভর্তি থাকা অন্তত ২৫০ জন রোগী এই হাসপাতালে ভর্তির জন্য সিরিয়াল দিয়েছেন। তবে, নিয়ম অনুযায়ী তাদের ভর্তি নেওয়া হবে না। শুধুমাত্র যারা রেফার হয়ে এসেছেন কিংবা সরাসরি এসেছেন এমন মুমূর্ষু রোগী ভর্তি নেওয়া হবে।
মো. কামরুল ইসলামের বড় বোন কোভিড আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি। প্রতিদিন খরচ হচ্ছে প্রচুর টাকা। তাই ফিল্ড হাসপাতাল চালুর কথা শুনে এসেছেন বোনকে এই হাসপাতালে ভর্তি করার জন্য। তবে এই বিষয়ে হাসপাতালের পক্ষ থেকে এখনই কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি।
নতুন হাসপাতাল চালুর খবরে ঢাকার বাড্ডা থেকে অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে এসেছেন মো. মতিন মিয়া। করোনার কারণে তার রোগীর অবস্থা খারাপ। তাই ডাক্তাররা তাকে হাসপাতালে রাখতে পারছেন না। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। রোগী নিয়ে অন্য হাসপাতালে যাওয়ার আগে রিসিপশনে যারা জানতে চেয়েছেন কবে রোগী ভর্তি শুরু হবে, দায়িত্ব প্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তাই তাদের এই প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি।
চালু হয়েও হলো না বিএসএমএমইউর ফিল্ড হাসপাতাল
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ