ঢাকা ০১:৩৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০২ অক্টোবর ২০২৫

চালক পুলিশি হেফাজতে হাসপাতালে, নারীর মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষ

  • আপডেট সময় : ০২:৫৭:১৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২২
  • ১২৩ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রাইভেট কারের নিচে নারীকে টেনে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় চালক আজহার জাফর শাহ পুলিশি হেফাজতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ওই ঘটনায় নিহত নারী রুবিনা আক্তারের (৪৫) ময়নাতদন্ত শেষ হয়েছে। গতকাল শনিবার তাঁর মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। চালক আজহার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ছিলেন। ২০১৮ সালে তিনি চাকরিচ্যুত হন। মরাধরে আহত হওয়ার পর তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূর মোহাম্মদ এসব কথা বলেছেন। তিনি বলেন, পরিবারের পক্ষ থেকে গতকাল শুক্রবার গভীর রাতে রুবিনা আক্তারের ভাই জাকির হোসেন সড়ক পরিবহন আইনে মামলা করেছেন। রুবিনাকে গাড়ির নিচে টেনে নেওয়া চালক আজহার জাফর শাহকে মামলায় আসামি করা হয়েছে। গত শুক্রবার দেবর নুরুল আমিনের সঙ্গে মোটরসাইকেলে রুবিনা আক্তার রাজধানীর তেজগাঁওয়ের বাসা থেকে হাজারীবাগে বাবার বাড়ি যাচ্ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বিপরীতে টিএসসি অভিমুখী সড়কে একটি প্রাইভেট কার পেছন থেকে তাঁদের মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয়। এতে নুরুল আমিন মোটরসাইকেলসহ এক পাশে ছিটকে পড়েন। রুবিনা গাড়ির নিচে চাপা পড়েন। এ সময় গাড়ির বাম্পারে তাঁর পোশাক আটকে যায়। চালক গাড়ির নিচে আটকে যাওয়া রুবিনাকে নিয়ে বেপরোয়া গতিতে টিএসসি হয়ে নীলক্ষেতের দিকে যান। নীলক্ষেতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তোরণের কাছে গাড়িটি আটকে রুবিনাকে জীবিত উদ্ধার করেন পথচারীরা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার কিছুক্ষণ পর তিনি মারা যান। শুক্রবার বেলা তিনটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। পথচারীরা যখন রুবিনাকে উদ্ধার করেন, ততক্ষণে গাড়ির সঙ্গে তাঁর আটকে থাকা দেহটি টেনে চালক এক কিলোমিটারের বেশি পথ চলে গেছেন। এতে তাঁর শরীর ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়। এ সময় টিএসসি থেকে নীলক্ষেত পর্যন্ত সড়কের কোথাও কোথাও তাঁর দেহের পড়ে থাকা অংশ দেখা যায়। নীলক্ষেত এলাকায় গাড়ির চালক আজহার জাফর শাহকে আটক করে মারধর করেন পথচারীরা। গাড়িটিও ভাঙচুর করা হয়। তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রুবিনার দেবর নুরুল আমিন বলেন, পেছন থেকে ধাক্কা দিলে রুবিনা গাড়িটির নিচে আটকে পড়েন। ওই অবস্থাতেই গাড়িটি বেপরোয়া গতিতে সামনে ছুটে চলে। গাড়ির পেছনে ছুটতে থাকেন তিনি। দেখেন, গাড়ির বাঁ পাশের সামনের ও পেছনের চাকার মাঝখানে রুবিনা আটকে আছেন। নীলক্ষেতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গেট থেকে একটু সামনে পলাশী অভিমুখী সড়কে পথচারীরা গাড়িটি আটক করেন। রুবিনার স্বজনেরা বলেন, রুবিনার স্বামী ব্যবসায়ী মাহবুবুর রহমান দুই বছর আগে মারা যান। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া একমাত্র ছেলে আরাফাত রহমান খানকে নিয়ে তেজগাঁওয়ের হোন্ডা গলিতে থাকেন তিনি। স্বামীর মৃত্যুর পর বাড়িভাড়া ও স্বজনদের সহযোগিতায় ছেলেকে লেখাপড়া করাচ্ছিলেন। রুবিনার বাবা ল্যান্স নায়েক রফিকউল্লাহ। তাঁরা পাঁচ বোন ও দুই ভাই। তাঁদের বাড়ি হাজারীবাগ এলাকায়। স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি কিছুটা ভেঙে পড়েছিলেন। রুবিনাকে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে তাঁর বোন সুলতানা লিপি বলেন, ‘এ হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই। আমার বোনের মতো শত শত মানুষ এভাবে রাস্তায় মারা যাচ্ছেন, বিচার হচ্ছে না। সরকারের কাছে একটাই দাবি, সরকার যেন এসব হত্যার বিচার করে।’ রুবিনার ভাই জাকির হোসেনও দায়ী চালকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

চালক পুলিশি হেফাজতে হাসপাতালে, নারীর মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষ

আপডেট সময় : ০২:৫৭:১৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রাইভেট কারের নিচে নারীকে টেনে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় চালক আজহার জাফর শাহ পুলিশি হেফাজতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ওই ঘটনায় নিহত নারী রুবিনা আক্তারের (৪৫) ময়নাতদন্ত শেষ হয়েছে। গতকাল শনিবার তাঁর মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। চালক আজহার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ছিলেন। ২০১৮ সালে তিনি চাকরিচ্যুত হন। মরাধরে আহত হওয়ার পর তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূর মোহাম্মদ এসব কথা বলেছেন। তিনি বলেন, পরিবারের পক্ষ থেকে গতকাল শুক্রবার গভীর রাতে রুবিনা আক্তারের ভাই জাকির হোসেন সড়ক পরিবহন আইনে মামলা করেছেন। রুবিনাকে গাড়ির নিচে টেনে নেওয়া চালক আজহার জাফর শাহকে মামলায় আসামি করা হয়েছে। গত শুক্রবার দেবর নুরুল আমিনের সঙ্গে মোটরসাইকেলে রুবিনা আক্তার রাজধানীর তেজগাঁওয়ের বাসা থেকে হাজারীবাগে বাবার বাড়ি যাচ্ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বিপরীতে টিএসসি অভিমুখী সড়কে একটি প্রাইভেট কার পেছন থেকে তাঁদের মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয়। এতে নুরুল আমিন মোটরসাইকেলসহ এক পাশে ছিটকে পড়েন। রুবিনা গাড়ির নিচে চাপা পড়েন। এ সময় গাড়ির বাম্পারে তাঁর পোশাক আটকে যায়। চালক গাড়ির নিচে আটকে যাওয়া রুবিনাকে নিয়ে বেপরোয়া গতিতে টিএসসি হয়ে নীলক্ষেতের দিকে যান। নীলক্ষেতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তোরণের কাছে গাড়িটি আটকে রুবিনাকে জীবিত উদ্ধার করেন পথচারীরা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার কিছুক্ষণ পর তিনি মারা যান। শুক্রবার বেলা তিনটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। পথচারীরা যখন রুবিনাকে উদ্ধার করেন, ততক্ষণে গাড়ির সঙ্গে তাঁর আটকে থাকা দেহটি টেনে চালক এক কিলোমিটারের বেশি পথ চলে গেছেন। এতে তাঁর শরীর ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়। এ সময় টিএসসি থেকে নীলক্ষেত পর্যন্ত সড়কের কোথাও কোথাও তাঁর দেহের পড়ে থাকা অংশ দেখা যায়। নীলক্ষেত এলাকায় গাড়ির চালক আজহার জাফর শাহকে আটক করে মারধর করেন পথচারীরা। গাড়িটিও ভাঙচুর করা হয়। তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রুবিনার দেবর নুরুল আমিন বলেন, পেছন থেকে ধাক্কা দিলে রুবিনা গাড়িটির নিচে আটকে পড়েন। ওই অবস্থাতেই গাড়িটি বেপরোয়া গতিতে সামনে ছুটে চলে। গাড়ির পেছনে ছুটতে থাকেন তিনি। দেখেন, গাড়ির বাঁ পাশের সামনের ও পেছনের চাকার মাঝখানে রুবিনা আটকে আছেন। নীলক্ষেতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গেট থেকে একটু সামনে পলাশী অভিমুখী সড়কে পথচারীরা গাড়িটি আটক করেন। রুবিনার স্বজনেরা বলেন, রুবিনার স্বামী ব্যবসায়ী মাহবুবুর রহমান দুই বছর আগে মারা যান। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া একমাত্র ছেলে আরাফাত রহমান খানকে নিয়ে তেজগাঁওয়ের হোন্ডা গলিতে থাকেন তিনি। স্বামীর মৃত্যুর পর বাড়িভাড়া ও স্বজনদের সহযোগিতায় ছেলেকে লেখাপড়া করাচ্ছিলেন। রুবিনার বাবা ল্যান্স নায়েক রফিকউল্লাহ। তাঁরা পাঁচ বোন ও দুই ভাই। তাঁদের বাড়ি হাজারীবাগ এলাকায়। স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি কিছুটা ভেঙে পড়েছিলেন। রুবিনাকে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে তাঁর বোন সুলতানা লিপি বলেন, ‘এ হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই। আমার বোনের মতো শত শত মানুষ এভাবে রাস্তায় মারা যাচ্ছেন, বিচার হচ্ছে না। সরকারের কাছে একটাই দাবি, সরকার যেন এসব হত্যার বিচার করে।’ রুবিনার ভাই জাকির হোসেনও দায়ী চালকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।