ঢাকা ০৮:১০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

চার জেলায় শৈত্যপ্রবাহ, সর্বনি¤œ তাপমাত্রা তেঁতুলিয়ায়

  • আপডেট সময় : ০২:১৭:৩৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২১
  • ৮৬ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : পৌষের প্রথম সপ্তাহে শীতের পারদ অনেকটা কমে এসেছে দেশজুড়ে। জনজীবনে কাঁপন ধরাচ্ছে শীত। সারা দেশে শীত এখনো পুরোপুরি জেঁকে না বসলেও বেশ কয়েকটি জেলায় ভালোই কাঁপন ধরিয়েছে শীত। চার জেলার ওপর দিয়ে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। রাজধানী ঢাকাতেও এসেছে শীতের আমেজ। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, ৬ থেকে ৮ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বলে। আর তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে তাকে বলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ।
আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী মঙ্গলবার দেশের চার জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। পঞ্চগড়, যশোর, কুড়িগ্রাম ও চুয়াডাঙ্গায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে। এর পাশাপাশি কুয়াশা থাকায় এসব জেলার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সকাল থেকে সাধারণ মানুষ প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না। মঙ্গলবার সকাল ছয়টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় বিরাজ করছে। সুস্পষ্ট লঘুচাপটি উত্তর সুমাত্রা উপকূলের অদূরে দক্ষিণ আন্দামান সাগরে বিরাজ করছে। অস্থায়ী মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুস্ক থাকতে পারে। যশোর, পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম ও চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা প্রশমিত হতে পারে। সারাদেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। গতকাল মঙ্গলবার দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়। সেখানে ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে কক্সবাজারের টেকনাফে। সেখানে ২৮ দশমিক ২ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে বলেও জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
অধিদপ্তরের হিসাবে ঢাকা থেকে হারাচ্ছে শৈত্যপ্রবাহ : এদিকে তিন দিন ধরে রাজধানীতে শীত পড়ছে। বিশেষ করে ভোরে ও সন্ধ্যায় শীত অনুভূত হচ্ছে বেশি। ঘরের বাইরে বের হলে গরম কাপড় চাপাতে হচ্ছে গায়ে। তবে আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাব শুনলে এখন হয়তো অনেকে একটু অবাকই হবেন। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, গত পাঁচ বছরে ঢাকায় শৈত্যপ্রবাহ হয়েছে মাত্র একবার। আর আশপাশের এলাকা থেকে মূল ঢাকায় তাপমাত্রা থাকছে তিন থেকে চার ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। অর্থাৎ সাভার বা টাঙ্গাইলের তুলনায় ঢাকায় শীত পড়ছে কম। আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে শীতকালে সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে সেটি শৈত্যপ্রবাহ। গত সোমবার ঢাকার পাশের জেলা টাঙ্গাইলের তাপমাত্রা নেমেছিল শৈত্যপ্রবাহের কাছাকাছি, ১০ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেখানে ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে তাতেই রাজধানীবাসী শীতের আমেজ পেয়েছে।
গত ৩০ বছরে ঢাকার আবহাওয়ার গড় তাপমাত্রার রেকর্ড বলছে, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকার গড় সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ১২ থেকে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস হওয়ার কথা। কিন্তু গত ৬ বছরে ঢাকার গড় তাপমাত্রা নিলে তা কোনোভাবেই ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামেনি। ব্যতিক্রম ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি। ওই দিন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে বাংলাদেশে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়কে শীতকাল ধরা হয়। এ সময়ে ঢাকার সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ১২ থেকে ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকার কথা। চট্টগ্রামে ১৩ থেকে ১৬ ডিগ্রি। দেশের বেশির ভাগ এলাকায় শীতকালে ৬ থেকে ১০টি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। পাঁচ বছরে ঢাকায় মাত্র একবার শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে। শীতকালে ঢাকার সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ১৫ থেকে ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকছে। এ ব্যাপারে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ বলেন, ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোতে শৈত্যপ্রবাহ চলাকালীন ঢাকার তাপমাত্রা বেশির ভাগ সময় ১২ থেকে ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকছে। এমনকি সারা দেশে শৈত্যপ্রবাহ চললেও ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরে শৈত্যপ্রবাহ থাকছে না। এর বড় কারণ ঢাকার অতিরিক্ত জনসংখ্যা, ভবন-অবকাঠামো ও যানবাহনের কারণে সৃষ্টি হওয়া বাড়তি তাপমাত্রা। এখানে সব সময় দেশের অন্য যেকোনো গ্রামীণ এলাকার চেয়ে তাপমাত্রা তিন থেকে চার ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি থাকছে।
বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট-এই পাঁচ প্রধান শহরের তাপমাত্রার পরিবর্তন নিয়ে একটি গবেষণা করেছে। তাতে দেখা গেছে, বর্ষা মৌসুমেও রাজধানীসহ এই শহরগুলোর দিনের তাপমাত্রা গ্রীষ্মকালের মতো উত্তপ্ত থাকে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরে শীতকালে দিনের বেলা শরৎকালের মতো আধা উষ্ণ তাপমাত্রা থাকছে। গত ১৬ বছরে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা ও সিলেটের তাপমাত্রা বেড়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় গড়ে তিন ডিগ্রি আর চট্টগ্রামে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বেড়েছে।
এ ব্যাপারে কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ওই গবেষণা দলের দলনেতা আশরাফ দেওয়ান বলেন, ‘আমাদের গবেষণায় দেখেছি, দিনের বেলা ঢাকায় শৈত্যপ্রবাহের তাপমাত্রা আর হচ্ছে না। রাতের বেলা যে শীত নামে, তা শৈত্যপ্রবাহের পর্যায়ে নামছে না। গত দুই যুগে ঢাকার সবুজ এলাকা ও জলাভূমি কমে গিয়ে বেশির ভাগ এলাকা কংক্রিটে ঢেকে গেছে। ফলে সেখানে দিনের বেলা সূর্যের তাপ আসার পর তা রাতেও জমে থাকছে। ফলে রাতেও তাপমাত্রা খুব বেশি কমছে না।’
পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শহরে শীতের সময়ে শীত না থাকলেও বাড়তি কিছু বিপদ বেড়ে যায়। এ সময়ে শুষ্ক মৌসুমে নির্মাণকাজ বেড়ে যায়। ইটভাটাগুলো চালু হয়। ফলে শহরে জমে থাকা কুয়াশার সঙ্গে ধোঁয়া আর ধুলা মিলে ধোঁয়াশা তৈরি হয়, যা ঢাকার বাতাসকে মারাত্মকভাবে দূষিত করে ফেলে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ওই দূষিত বায়ুর মধ্যে রাজধানীবাসীকে বসবাস করতে হয়।
বিশ্বের বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা এয়ার ভিজ্যুয়ালের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, এক মাস ধরে ঢাকার বায়ুর মান অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় আছে। বিশ্বের প্রধান শহরগুলোর মধ্যে বায়ুর মানের দিক থেকে ঢাকা শীর্ষ ১০–এর মধ্যে ছিল। কয়েক দিন ধরে ঢাকা আবারও শীর্ষ পাঁচ শহরের তালিকায় উঠে আসে। গত সোমবার ঢাকার বায়ুর মানের সূচক বেশির ভাগ সময়জুড়ে ২০০–এর ওপরে ছিল। অর্থাৎ ওই বাতাস ছিল খুবই অস্বাস্থ্যকর। বিশ্বের প্রধান শহরগুলোর মধ্যে ঢাকা ছিল ২ নম্বরে। গতকাল রাত ১০টায় বায়ুমানের খারাপের দিক থেকে ঢাকা ছিল ৪ নম্বরে।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

চার জেলায় শৈত্যপ্রবাহ, সর্বনি¤œ তাপমাত্রা তেঁতুলিয়ায়

আপডেট সময় : ০২:১৭:৩৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২১

প্রত্যাশা ডেস্ক : পৌষের প্রথম সপ্তাহে শীতের পারদ অনেকটা কমে এসেছে দেশজুড়ে। জনজীবনে কাঁপন ধরাচ্ছে শীত। সারা দেশে শীত এখনো পুরোপুরি জেঁকে না বসলেও বেশ কয়েকটি জেলায় ভালোই কাঁপন ধরিয়েছে শীত। চার জেলার ওপর দিয়ে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। রাজধানী ঢাকাতেও এসেছে শীতের আমেজ। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, ৬ থেকে ৮ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বলে। আর তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে তাকে বলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ।
আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী মঙ্গলবার দেশের চার জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। পঞ্চগড়, যশোর, কুড়িগ্রাম ও চুয়াডাঙ্গায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে। এর পাশাপাশি কুয়াশা থাকায় এসব জেলার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সকাল থেকে সাধারণ মানুষ প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না। মঙ্গলবার সকাল ছয়টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় বিরাজ করছে। সুস্পষ্ট লঘুচাপটি উত্তর সুমাত্রা উপকূলের অদূরে দক্ষিণ আন্দামান সাগরে বিরাজ করছে। অস্থায়ী মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুস্ক থাকতে পারে। যশোর, পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম ও চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা প্রশমিত হতে পারে। সারাদেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। গতকাল মঙ্গলবার দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়। সেখানে ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে কক্সবাজারের টেকনাফে। সেখানে ২৮ দশমিক ২ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে বলেও জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
অধিদপ্তরের হিসাবে ঢাকা থেকে হারাচ্ছে শৈত্যপ্রবাহ : এদিকে তিন দিন ধরে রাজধানীতে শীত পড়ছে। বিশেষ করে ভোরে ও সন্ধ্যায় শীত অনুভূত হচ্ছে বেশি। ঘরের বাইরে বের হলে গরম কাপড় চাপাতে হচ্ছে গায়ে। তবে আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাব শুনলে এখন হয়তো অনেকে একটু অবাকই হবেন। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, গত পাঁচ বছরে ঢাকায় শৈত্যপ্রবাহ হয়েছে মাত্র একবার। আর আশপাশের এলাকা থেকে মূল ঢাকায় তাপমাত্রা থাকছে তিন থেকে চার ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। অর্থাৎ সাভার বা টাঙ্গাইলের তুলনায় ঢাকায় শীত পড়ছে কম। আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে শীতকালে সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে সেটি শৈত্যপ্রবাহ। গত সোমবার ঢাকার পাশের জেলা টাঙ্গাইলের তাপমাত্রা নেমেছিল শৈত্যপ্রবাহের কাছাকাছি, ১০ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেখানে ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে তাতেই রাজধানীবাসী শীতের আমেজ পেয়েছে।
গত ৩০ বছরে ঢাকার আবহাওয়ার গড় তাপমাত্রার রেকর্ড বলছে, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকার গড় সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ১২ থেকে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস হওয়ার কথা। কিন্তু গত ৬ বছরে ঢাকার গড় তাপমাত্রা নিলে তা কোনোভাবেই ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামেনি। ব্যতিক্রম ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি। ওই দিন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে বাংলাদেশে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়কে শীতকাল ধরা হয়। এ সময়ে ঢাকার সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ১২ থেকে ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকার কথা। চট্টগ্রামে ১৩ থেকে ১৬ ডিগ্রি। দেশের বেশির ভাগ এলাকায় শীতকালে ৬ থেকে ১০টি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। পাঁচ বছরে ঢাকায় মাত্র একবার শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে। শীতকালে ঢাকার সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ১৫ থেকে ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকছে। এ ব্যাপারে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ বলেন, ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোতে শৈত্যপ্রবাহ চলাকালীন ঢাকার তাপমাত্রা বেশির ভাগ সময় ১২ থেকে ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকছে। এমনকি সারা দেশে শৈত্যপ্রবাহ চললেও ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরে শৈত্যপ্রবাহ থাকছে না। এর বড় কারণ ঢাকার অতিরিক্ত জনসংখ্যা, ভবন-অবকাঠামো ও যানবাহনের কারণে সৃষ্টি হওয়া বাড়তি তাপমাত্রা। এখানে সব সময় দেশের অন্য যেকোনো গ্রামীণ এলাকার চেয়ে তাপমাত্রা তিন থেকে চার ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি থাকছে।
বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট-এই পাঁচ প্রধান শহরের তাপমাত্রার পরিবর্তন নিয়ে একটি গবেষণা করেছে। তাতে দেখা গেছে, বর্ষা মৌসুমেও রাজধানীসহ এই শহরগুলোর দিনের তাপমাত্রা গ্রীষ্মকালের মতো উত্তপ্ত থাকে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরে শীতকালে দিনের বেলা শরৎকালের মতো আধা উষ্ণ তাপমাত্রা থাকছে। গত ১৬ বছরে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা ও সিলেটের তাপমাত্রা বেড়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় গড়ে তিন ডিগ্রি আর চট্টগ্রামে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বেড়েছে।
এ ব্যাপারে কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ওই গবেষণা দলের দলনেতা আশরাফ দেওয়ান বলেন, ‘আমাদের গবেষণায় দেখেছি, দিনের বেলা ঢাকায় শৈত্যপ্রবাহের তাপমাত্রা আর হচ্ছে না। রাতের বেলা যে শীত নামে, তা শৈত্যপ্রবাহের পর্যায়ে নামছে না। গত দুই যুগে ঢাকার সবুজ এলাকা ও জলাভূমি কমে গিয়ে বেশির ভাগ এলাকা কংক্রিটে ঢেকে গেছে। ফলে সেখানে দিনের বেলা সূর্যের তাপ আসার পর তা রাতেও জমে থাকছে। ফলে রাতেও তাপমাত্রা খুব বেশি কমছে না।’
পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শহরে শীতের সময়ে শীত না থাকলেও বাড়তি কিছু বিপদ বেড়ে যায়। এ সময়ে শুষ্ক মৌসুমে নির্মাণকাজ বেড়ে যায়। ইটভাটাগুলো চালু হয়। ফলে শহরে জমে থাকা কুয়াশার সঙ্গে ধোঁয়া আর ধুলা মিলে ধোঁয়াশা তৈরি হয়, যা ঢাকার বাতাসকে মারাত্মকভাবে দূষিত করে ফেলে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ওই দূষিত বায়ুর মধ্যে রাজধানীবাসীকে বসবাস করতে হয়।
বিশ্বের বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা এয়ার ভিজ্যুয়ালের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, এক মাস ধরে ঢাকার বায়ুর মান অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় আছে। বিশ্বের প্রধান শহরগুলোর মধ্যে বায়ুর মানের দিক থেকে ঢাকা শীর্ষ ১০–এর মধ্যে ছিল। কয়েক দিন ধরে ঢাকা আবারও শীর্ষ পাঁচ শহরের তালিকায় উঠে আসে। গত সোমবার ঢাকার বায়ুর মানের সূচক বেশির ভাগ সময়জুড়ে ২০০–এর ওপরে ছিল। অর্থাৎ ওই বাতাস ছিল খুবই অস্বাস্থ্যকর। বিশ্বের প্রধান শহরগুলোর মধ্যে ঢাকা ছিল ২ নম্বরে। গতকাল রাত ১০টায় বায়ুমানের খারাপের দিক থেকে ঢাকা ছিল ৪ নম্বরে।